ভাড়াটিয়া পর্ব ১৯
সুইটি বসে আছে ড্রয়িংরুমের সোফায়। ঘরে এ মুহূর্তে কেউ নেই। ফাতেমা নামের মেয়েটা দরজা খুলে কিছু সময় ধরে তাকিয়ে ছিলো। তারপর ভিতরে ছুটে গেছে। হয়ত সবাইকে খবর দিতে। সুইটি কী বলবে একটু গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
সুইটি ঠিক জানে না। ওনারা কেমন আচরণ করবেন? খুব ভালো আচরণ করবে এমন আশা কী করা যায়? না, যায় না! সুইটি তাদের কী বিপদে না ফেলেছিলো! তা কী কোনো মানুষ ভুলতে পারে?
সুইটি অবশ্য সব ধরনের শাস্তি মেনে নিতে রাজি আছে। ওনারা পুলিশ কে খবর দিতে পারে। তাতে অবশ্য খুব একটা সমস্যা হবে না। মা কে নিয়ে সুইটির এখন আর চিন্তা নেই। মায়ের অপারেশন হয়ে গেছে।
সুইটির খারাপ লাগছে রায়হান ছেলেটার জন্য। ছেলেটা মনে হয় ওকে সত্যি ভালোবেসেছিলো। ভালোবাসা পেয়েও সুইটি নিতে পারল না। সবাই সব কিছু পায় না। বা সবাই ধরে রাখতে পারে না। সুইটিও সেই অভাগাদের দলে যারা পেয়েও হারায়!
আনোয়ারা বেগম বেশ উত্তেজিত হয়ে গেছেন! শাহিন সাহেব তাকে শান্ত করলেন। রায়হান এখন কোথায় আছে কে জানে? বাসায় না থাকলেই ভালো হয়। অবশ্য শাহিন সাহেবের বেশ ভালো লাগছে! তিনি আশা করেননি সুইটি মেয়েটা বাসায় চলে আসবে।
মিলন খন্দকার যখন ওদের সন্ধান পাওয়ার খবরটা জানাল। শাহিন সাহেব জানতে পারলেন। আসলাম আর রাশিদা সুইটির বাবা মা নয়। ও রুবিনার মেয়ে! শুনে খুব খারাপ লেগেছিল! রুবিনার মেয়েটা শেষপর্যন্ত এমন হলো?
কেন জানি ওনার মনে হচ্ছিল কোনো একটা কারণ আছে। না হলে রুবিনার মেয়ে কখনো এমন হওয়ার কথা না। ডিটেইলস জানার পর দেখলেন। রুবিনা হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসার জন্য ত্রিশ লাখ টাকা দরকার। ওনার বুঝতে বাকি রইল না আসল ঘটনা কি?
তারপরই মিলন কে বললেন, সুইটি কে না ধরার জন্য। তিনি দেখতে চান মেয়েটা কি নষ্ট হয়ে গেছে না-কি এখনো ভালো আছে।
হাসপাতালে গিয়ে রুবিনার চিকিৎসার খরচটা দিয়ে দিলেন। ডাক্তার কে জানালেন সুইটি তারই মেয়ে। রুবিনার অবশ্য শাহিন কে চেনার মতো অবস্থা নাই! তবে পুলিশ পুরোটা সময় ধরে সুইটি কে ঠিকই নজরে রেখেছে।
শাহিন সাহেব আর আনোয়ারা ড্রয়িং রুমে আসলেন। সুইটি মাথা নিচু করে বসে আছে। চেহারায় কেমন লজ্জার একটা ছাপ। দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা অনুতপ্ত!
সুইটি কে দেখার পর আনোয়ারার একটু মায়াই হলো। তবে রাগটা তার এখনো পড়েনি! গায়ের জ্বলুনিটা মিটেছে।
শাহিন সাহেব একটু হাসি দিয়ে বললেন, “কেমন আছ?” আনোয়ারা কিছু বলল না। আগুন দৃষ্টিতে একটু তাকালেন।
সুইটি একটু হাসার চেষ্টা করল। হাসতে পারল না! কেমন জানি খারাপ লাগছে ওর। এমন ভালো মানুষ দুইজন কে দেখে! এত বড়ো অপরাধ করার পরও সুইটির সাথে কী আন্তরিকতা নিয়ে সমাচার জিজ্ঞেস করছেন! এ কি সত্যি? সুইটি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না।
সুইটি ধরা গলায় বলল, “আমি জানি, আমার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। আপনাদের মতো মানুষ কে আমি কষ্ট দিয়েছি! বিশ্বাস করেন, আমি নিরুপাধি হয়ে এমন কাজ করেছি। আমার অন্য কোন পথ ছিল না।”
আনোয়ারা বেগম বিরক্তি স্বরে বললেন, “আবার নতুন নাটক করতে এসেছ?”
শাহিন সাহেব আনোয়ারা কে বললেন, “শুনি ও কি বলতে চায়। বলো মা।”
সুইটি বলল,” আমি বুঝি আপনার অবস্থা! আপনাদের সব টাকা আমি ফেরত দিতে পারব না! আমার কাছে পুরো টাকাটা নেই! দশ লাখ টাকা আছে। আর সব গয়নাগুলো নিয়ে এসেছি।”
হাত জোর করে ক্ষমা চাইল সুইটি। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,” আপনারা আমাকে যে শাস্তি দিবেন আমি তা মেনে নিবো।”
আনোয়ারা বললেন,” কেন তুমি এমন করলে! তোমার টাকার দরকার তুমি একবার আমাকে বলে দেখতে পারতে। আমি তো তোমাকে আমার মেয়েই ভেবেছিলাম। “
সুইটি হাউমাউ করে কেঁদে উঠল! আনোয়ারা ও শাহিন সাহেব দুইজনেই হতবাক হয়ে গেলেন! আনোয়ারার খুব মায়া হলো! কেন জানি উনি মানুষের কষ্ট সহ্য করতে পারেন না! মেয়েটা তাদের সাথে কত বড়ো একটা অন্যায় করল তা সব এক মুহূর্তে ভুলে গেলেন! উনি সুইটির পাশে গিয়ে বসলেন। মাথায় হাত রেখে বললেন,” কাঁদিস না রে মা।”
অনেকটা সময় নীরব কাটল। কেউ কোনো কথা বলল না। আনোয়ারা বেগম সুইটির পাশে বসে রইলেন মাথায় হাত দিয়ে।
শাহিন সাহেব ফাতেমা কে ডাকলেন, “ফাতেমা।”
ফাতেমার জবাব,” জি বাবা।”
“চা নাস্তা দিয়ে যা তো মা।”
শাহিন সাহেবের মনটা ভালো হয়ে গেছে! আনোয়ারা এত সহজে সব কিছু মেনে নিবে তিনি ভাবেননি। মেয়েটার মধ্যে সত্যি একটা মায়া আছে!
Nabil Mahmud