# আরশিযুগল প্রেম .
# লেখনীতে — নৌশিন আহমেদ রোদেলা
#পর্ব — ৪১
আনিমুল সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ শেষেই তাড়াহুড়ো করে ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে শুভ্রতা। চোখে-মুখে তার উদভ্রান্ত ভাব। মনের মাঝে জমিয়ে রাখা এক খন্ড শীতল কান্না। ভার্সিটির গেইট পেরিয়ে বট তলায় রিকশা থামতেই বান্ধবীদের চোখে পড়ল শুভ্রতার। দিনটা শুক্রবার। চারদিকে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। এই নিস্তব্ধ ভার্সিটি চত্বরে বসে আছে প্রাণোচ্ছল চারটি মেয়ে। কিন্তু কারো মুখেই আজ কথা নেই, হাসি নেই, কান্নাও নেই। শুভ্রতা রিকশা ভাড়া মিটিয়ে ওদের কাছাকাছি এগিয়ে যেতেই চোখ তুলে তাকাল তনয়া। চোখের কোণায় কালি জমেছে তার। শরীর জুড়ে বিবাহিত নারীর চিন্হ। শুভ্রতা নিঃশব্দে তাদের পাশেই পা গুটিয়ে বসল। বেশ কিছুক্ষণ মৌন হয়ে বসে রইল প্রতিটি প্রাণ। বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে লাগল এক একটি দীর্ঘশ্বাস। কারো দীর্ঘশ্বাসে অসহায়ত্ব, কারো দীর্ঘশ্বাস আফসোস, আক্ষেপের সমাহার।
—-” তুই যদি আরেকটু আগে জানাতি। মাত্র একটা দিন আগে! তাহলেই হয়ত…..”
কথাটা শেষ না করে মাঝপথেই মৌন হয়ে গেল অর্পন। তার কথার রেশ ধরেই কথা বলল প্রেমা,
—-” সকালে গায়ে হলুদ আর সন্ধ্যায় বিয়ে। এই অল্প সময়ের মাঝে কিছু মাথাতেই আসছিল না। আর দুটোদিন সময় পেলেই হয়ত….”
প্রেমার কথায় চোখ তুলে তাকাল তনয়া। কথায় কথায় হেসে গড়িয়ে পড়া মেয়েটির মুখ আজ তিক্ত, বিক্ষিপ্ত। বড় বড় চোখদুটোতে অনুভূতিহীন চাহনি। তনয়া শান্ত গলায় বলল,
—-” ‘হয়ত’ বলে কিছু নেই। যা হওয়ার ছিল তা হতোই। যার মরার ছিল সে মরতই। হয়ত বলে নিয়তি থেকে পাড় পাওয়া যায় না। আরও দশদিন পেলেও এই ‘হয়ত’ শব্দটা হারিয়ে যেত না। ঘুরেফিরে আজকের মতই সান্ত্বনা বাণী হয়ে ফিরে ফিরে আসত।”
আবারও সবার বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। অর্পন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
—-” টিসি নিয়ে শহর ছাড়াটা কি খুব জরুরি তনু? তোকে ছাড়া এই ভার্সিটি চত্বরে মন বসবে না রে। অকারণ হাসির জন্য স্যারের কাছে বকা খাওয়াটাও হবে না। যাস না প্লিজ।”
তনয়া মৃদু হাসল। টলমলে চোখ দুটো এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে নিজেকে সামলালো। মৃদু গলায় বলল,
—-” আর যায় বলিস…. এই শহরটাতে আর থাকতে বলিস না প্লিজ। নিজের নামের সাথে অন্য এক পুরুষের নাম জড়িয়ে এই শহরটাতে থাকা চলবে না আমার। হুটহাট রাস্তাঘাটে ‘তাকে’ দেখার সৌভাগ্য হলে ভয়ানক কিছু করে ফেলব আমি। মৃত মনের শরীরটা মৃতের তালিকায় পড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না।”
পুষ্পি বুক ভরে শ্বাস টেনে নিয়ে বলল,
—-” আমি তনয়ার সিদ্ধান্তের সাথে একমত। ভাগ্যে যা ছিল তা তো হয়েই গিয়েছে। এখানে থাকলে ওর কষ্টটা বাড়বে বৈ কমবে না। তাছাড়া, ভাইয়া যেহেতু কুমিল্লায় জব করে সেহেতু ওর সেখানে থাকাটাই উত্তম। তাহলে সম্পর্কটা সহজ হয়ে আসবে।”
অর্পন নাক ফুলিয়ে বলল,
—-” সব সময় দাদিমা টাইপ কথা বলবি না পুষি। যে মানুষটাকে পছন্দই করে না তার সাথে সম্পর্ক সহজ করতে যাবে কোন দুঃখে? বিরক্তকর!”
প্রেমা বিরক্তি নিয়ে বলল,
—-” আহ! না বুঝে উলোটপালোট কথা কেন বলছিস অর্পন? চুপ কর তো।”
তারপর আবারও নীরব হয়ে গেল পাঁচটি প্রাণ। ঘন্টাময় বিনাবাক্যে বসে থেকে বিকালের দিকে উঠে দাঁড়াল সবাই। তনয়ার শেষ বিদায়ের কথাটা মনে হতেই পা’দুটো আটকে আটকে আসতে লাগল। গেইট পেরিয়ে রিকশা নেওয়ার আগে হুট করেই তনয়ার ডানহাতটা চেপে ধরল শুভ্রতা। তনয়া চোখ তুলে তাকাতেই রুদ্ধ গলায় বলল,
—-” আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না তনু। নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে। আমায় একটা শাস্তি দিয়ে যা। বড় কোনো শাস্তি!”
তনয়া হাসল। শুভ্রতার হাতের ওপর নিজের বামহাতটা রেখে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল। মৃদু গলায় বলল,
—-” তোর শাস্তি হল তুই সারাজীবনই তোর ভাইটাকে এভাবেই ভালোবেসে যাবি, প্লিজ। বিয়ে করতে আসা বরের কাছে নিজের ভাইয়ের ভালোবাসার দাবি রাখতে ক’জন পারে বল?”
শুভ্রতা অসহায় কন্ঠে বলল,
—-” এই পৃথিবীতে তোরা দু’জন ছাড়া একমাত্র আমিই জানি তোকে ছাড়া ভাইয়া কতটা অসহায়। ভাইয়ার জন্য হলেও ভালো থাকিস।”
তনয়া আবারও হাসল। ধরা গলায় ফিসফিস করে বলল,
—-” আর এই পৃথিবীতে একমাত্র তোর ভাইই জানে তাকে ছাড়া আমি কতটা প্রাণহীন, শূন্য। এখন আর অনুভূতিগুলো কাজ করে না। সবকিছু ফিকে আর রংহীন লাগে তবুও আমি ভালো থাকব। তুইও ভালো থাকিস। তোর ভাইটাকে সামলে রাখিস। আসছি!”
শুভ্রতার টলমলে চাহনির প্রতিত্তরে নির্মল হাসল তনয়া। শুভ্রতার হাতটা ছেড়ে দিয়ে ধীর পায়ে হারিয়ে গেল রাস্তার বাঁকে। শুভ্রতা সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। ভালোবাসা নামক স্বর্গীয় অনুভূতির বিভৎস এক পরিণতির আমৃত্যু সাক্ষী হয়ে রইল। বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস।
দিনের শেষ সূর্যটা পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। আকাশটা রক্তিম রঙে ছেয়ে আছে। ছোট্ট বেলায় গ্রামে বেড়াতে গেলেই রহিমের মা নামক বৃদ্ধার কাছে লাল আকাশের হাজারও গল্প শুনত শুভ্রতা। বৃদ্ধা মুখভর্তি পান নিয়ে জ্ঞানী জ্ঞানী চোখে তাকাত। মাথা ভর্তি মেহেদী রাঙা চুলগুলো তেলের সংস্পর্শে এসে চিকচিক করত। বৃদ্ধা মনোযোগ দিয়ে নকশিকাঁথায় সূচ গাঁথতেন। মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে বলতেন, ‘এই রঙ কোনো ফাও রঙ না গো বুবু। এই রঙের পেছনে বহুত কিচ্চা আছে। হাসান-হোসেনের নাম শুনছ না গো?’ শুভ্রতা মাথা নেড়ে অসম্মতি জানাত। শুভ্রতা অসম্মতি জানাতেই চোখ বড় বড় করে তাকাত রহিমের মা। তার চাহনি দেখে মনে হত, হাসান-হোসেনকে না চিনে বিশাল বড় অন্যায় করে ফেলেছে শুভ্রতা। শুভ্রতাও অপরাধীর মত মাথা নিচু করে বসে থাকত। রহিমের মা আবারও গল্প টানতেন। হাসান-হোসেনের পরিচয় থেকে শুরু করে তাদের ভয়ানক মৃত্যুর গল্প ফাঁদতেন। সেসবের বর্ননায় শুভ্রতা কেঁপে কেঁপে উঠত। রহিমের মা বলত, আকাশের এই লাল রঙটা আসলে রঙ না। এগুলো শহীদ ইমাম হোসেনের রক্ত। শুভ্রতা তখন গভীর ভাবনা নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত। আজও তাকিয়ে আছে। রহিমের মায়ের রসালো গল্পের কথাগুলো যে সম্পূর্ণ বানোয়াট তা সে আরো অনেক বছর আগেই জেনেছে । তবুও তাকিয়ে রইল। মিথ্যা বানোয়াট গল্পগুলো নিয়ে ভাবতে ভালো লাগছে। ঘন্টার পর ঘন্টা নিশ্চুপ বসে থেকে শেষ বিকেলের সূর্য ডোবা দেখল। সাদাফ পাশে বসে গালে ঠান্ডা আইসক্রিমের ছোঁয়া দিতেই ভাবনা কাটল তার। চমকে উঠে পাশে তাকিয়ে আরো একদফা চমকে গেল। বিস্ময় নিয়ে বলল,
—-” তুমি?”
সাদাফ আইসক্রিমের প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
—-” কেন? অন্য কাউকে এক্সপেক্ট করছিলে?”
—-” না। কিন্তু তুমি….?”
সাদাফ হাসল। তনয়া চলে যাওয়ার পর উদ্দেশ্যহীন হাঁটতে হাঁটতে কখন যে ধানমন্ডি লেকের পাশের এই বেঞ্চেতে বসে পড়েছে নিজেও খেয়াল করে নি শুভ্রতা। সাদাফ ধানমন্ডি মূলত শুভ্রতার জন্যই এসেছিল। লেকের কাছে এসে শুভ্রতাকে কল করার জন্য ফোন বের করতেই আকাশ পানে মগ্ন থাকা শুভ্রতাকে চোখে পড়ল তার। শুভ্রতাকে এমন নিবিষ্ট চিত্তে বসে থাকতে দেখেই দুটো আইসক্রিম কিনে পাশে বসেছে সে।
—–” আইসক্রিম গলে যাচ্ছে তো, মুখে দাও। মন খারাপ কেন? কি ভাবছিলে?”
আইসক্রিমে কামড় বসিয়ে সাদাফের দিকে তাকাল শুভ্রতা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—-” ভাইয়া আর তনয়ার কথা ভাবছিলাম। আমি তনয়ার জায়গায় থাকলে কি করতাম সেটাও ভাবছিলাম।”
সাদাফ হেসে বলল,
—-” কি করতে?”
শুভ্রতা হেসে বলল,
—-” সুইসাইড টুইসাইড করে ফেলতাম নির্ঘাত।”
সাদাফ শক্ত গলায় বলল,
—-” এতো দুর্বল কেন তুমি? মৃত্যু কখনও কোনো কিছুর সমাধান হতে পারে না। ভালোবাসো ভালো কথা। তাই বলে, ভালোবেসে মরে যেতে হবে এমন কোন কথা নেই। মৃত্যুর থেকে বেঁচে থাকাটা বেশি কঠিন শুভ্রা। আজ যদি তনয়া সুইসাইড করত তাহলে তার ভালোবাসাটাও তার মৃত্যুর সাথে সাথেই মারা যেত, মিথ্যে হয়ে যেত। ভালোবাসাটাকে অসম্মান করা হত। ক’জন মানুষ বেঁচে থাকার যুদ্ধটা চালিয়ে গিয়েও ভালোবাসাটাকে আগলে রাখতে পারে, বল তো? কিন্তু তনয়া পারবে। যতদিন সে বেঁচে থাকবে ততদিন শুভ্রবকে তার মনে পড়বে। জ্বলবে, কষ্ট পাবে তবুও বেঁচে থাকবে। ভালোবাসাটাকে বাঁচিয়ে রাখবে। তারমানে, নিজের কষ্টগুলোর চেয়ে ভালোবাসাটা তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যারা সুইসাইড করে তাদের কাছে ভালোবাসার থেকে নিজেদের পার্থিব কষ্টটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তোমার কাছেও কি ভালোবাসা থেকে কষ্টটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? ”
শুভ্রতা মাথা নাড়ল। কিন্তু কপাল কুঁচকে বলল,
—-” তাই বলে এভাবে বাঁচা সম্ভব?”
সাদাফ হেসে বলল,
—–” ভালোবাসলে সম্ভব। তাই জীবনে যায় হয়ে যাক না কেন কখনও সুইসাইডের কথা মাথায় আনবে না। মনে থাকবে?”
শুভ্রতা বিমর্ষ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। সাদাফ উৎফুল্ল গলায় বলল,
—-” তোমার দাদু তো ফিরেছে আজ, তাই না?”
—-” হু।”
—-” আরাফকে সাথে নিয়ে কালই তোমাদের বাসায় যাচ্ছেন বাবা-মা। পৃথা তো লাফানোর উপর আছে। তার তিন ভাবির মাঝে তুমি আর বড় ভাবি তার বেশি প্রিয়। পারলে এখনই তোমায় বাসায় ধরে নিয়ে যায় সে ……যদিও সম্ভব হলে আমিও তাই করতাম।”
কথাটা বলে মিষ্টি হাসল সাদাফ। সাদাফের হাসিতে শুভ্রতার মনের কালো মেঘটা যেন দৌঁড়ে পালাল। কপাল কুঁচকে বলল,
—-” তোমার ঠোঁটের কালারটা আগে খুব ভালো লাগত আমার। একদম ডার্ক রেড। কিন্তু এখন আর ভালো লাগছে না।”
সাদাফ ভ্রু কুঁচকে বলল,
—-” কেন? রঙ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে?”
—-” উহু। রঙ বদলায় নি। কিন্তু বারবার মনে হচ্ছে, সিগারেট খেয়ে ঠোঁটটাকে এমন বেহাল দশা বানিয়েছ তুমি। না জানি টিনেজে তোমায় কত সুন্দর লাগত।”
শুভ্রতার কথায় শব্দ করে হেসে উঠল সাদাফ। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে শুভ্রতার গোলগাল মুখটির দিকে তাকিয়ে রইল।
____________________
ঘড়িতে দশটা বাজে। বসার ঘরে শেফার রিসেশন নিয়ে ঘরোয়া আলোচনা চলছে। শেফার রিসেপশন নিয়ে আনিমুল সাহেবের মধ্যে বেশ উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। উনি মনে মনে নিজের নাতনির ধুমধাম বিয়ের ছক আঁকছেন। তার বাপ-দাদার বংশের একমাত্র মেয়ে হলো শুভ্রতা। প্রায় দুই পুরুষ পর ঘরে কন্যা সন্তান নামক জান্নাত দান করেছেন আল্লাহ। আনিমুল সাহেবের ধারণা শুভ্রতা তার দোয়ারই ফল। প্রথমবার হজ্জে গিয়ে নাতনীর আশায় কান্নাকাটির পরই তো শুভ্রতা গর্ভে এলো। প্রায় একশো বছর পর তাদের ঘরে কন্যা সন্তান জন্ম নিল। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সেদিনই প্রথম চুপিচুপি চোখের পানি ফেলেছিলেন আনিমুল হক। ছোট থেকেই এই নাতনীটির প্রতি তার প্রগাঢ় মায়া। শুভ্রতা বেশ কিছুক্ষণ বড়দের সাথে বসে থেকে ঘুমানোর জন্য উঠে যেতেই তাকে নিজের রুমে ডেকে পাঠাল শুভ্রব। শুভ্রতা রুমে যেতেই দরজাটা সামান্য বেজিয়ে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। শুভ্রতা ভাইয়ের পেছন পেছন বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই শুভ্রতার দিকে ফিরে তাকাল শুভ্রব। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল,
—–” খুব বেশি ব্যথা পেয়েছিলি সেদিন?”
শুভ্রতা মাথা নাড়ল। শুভ্রব ফুঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—-” ভাইয়ের প্রতি রাগ হচ্ছে খুব?”
শুভ্রতা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না দমিয়ে মাথা নেড়ে বলল,
—-” উহু।”
শুভ্রব আবারও চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। তনয়ার বিয়ের পরের দিন ঘুম ভাঙার পর তানভীর যখন ফোন দিয়ে সন্ধ্যার কাহিনী বলল তখন আর রাগটা চেপে রাখতে পারে নি শুভ্রব। রুমে ঢুকে ধুম করেই চড় বসিয়েছে শুভ্রতার গালে।
—-” এমন পাগলামো কেন করেছিলি সেদিন? অতগুলো মানুষের সামনে তনয়ার মায়ের থাপ্পড় খেতে আত্মসম্মানে লাগে নি? বরের সামনে গিয়ে অকপটে হবু বউয়ের প্রেমিকের কথা বলে কেউ? ছেলে যদি বিয়ে ভেঙে দিত, তখন?”
শুভ্রতা মাথা তুলে তাকাল। অস্পষ্ট গলায় বলল,
—-” বিয়ে ভাঙার জন্যই তো বলেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ ওর মা এসে টেনে নিয়ে গেল বলে…..”
শুভ্রব শক্ত গলায় বলল,
—-” এসব পাগলামো করতে কে বলেছে তোকে? অতোগুলো মানুষের সামনে আমার বোন থাপ্পড় খেয়েছে শুনে আমার কেমন লেগেছে বল তো? তোর ওই কথাতে তনয়ার সংসারে যদি ঝামেলা সৃষ্টি হয় কখনও?”
শুভ্রতা মন খারাপ করে বলল,
—-” তুই যে কষ্ট পাচ্ছিলি ভাইয়া! তোকে ওভাবে দেখে যা ঠিক মনে হয়েছে তাই করেছি। কিন্তু চড়টা খেয়ে লাভ কিছু হলো না। বিয়েটা ভাঙলোই না।”
শুভ্রতার কথায় হেসে ফেলল শুভ্রব। প্রতিত্তরে বলার মত কিছুই খুঁজে পেল না। ভাইয়ের প্রতি বোনের এই নির্মল ভালোবাসাটাকে কি আর চোখ রাঙানো যায়? শুভ্রব মৃদু গলায় বলল,
—-” আমি কষ্ট পাচ্ছি না। দাদুকে একটু দেখা দিয়ে ঘুমোতে যা। সারাদিন অনেকবার জিগ্যেস করেছেন তোর কথা।”
শুভ্রতা মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানাল। শুভ্রতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে শুভ্রবের হঠাৎই জিগ্যেস করতে ইচ্ছে করল, ‘ খুব বেশি ভালোবাসিস আমায়, তাই না?’ কিন্তু জিগ্যেস করা হল না। উত্তরটা শুভ্রবের চিরকালের জানা। জানা প্রশ্নটা বার বার করার কোনো মানে হয় না। ভালোবাসাটা প্রচার করার কোনো বিষয় না।
#চলবে….
[ কবে যে শেষ করতে পারব গল্পটা। ফিনিসিং টাস্ক এসেও আসছে না। দুঃখজনক ব্যাপার।]