#ভ্যাম্পায়ার বর
পর্ব ২৩
#M_Sonali
রাত 1.30 মিনিট
চাঁদনীর রুমের জানালার ভিতর দেয়ে রুমে এসে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবন। শ্রাবনের চুলগুলো কেমন উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে ফুলে আছে। শ্রাবণ অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে তার মায়াবীনি চাঁদনীর ঘুমন্ত মুখের দিকে। চাঁদনীর মুখটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে, কিন্তু অসম্ভব সুন্দর লাগছে চাঁদনীকে।চাঁদনীর সারা শরীর যেন ফর্সা ধব ধবে লাগছে দেখতে। কিন্তু চোখের নিচে পড়ে আছে হালকা কালি। চাঁদনীর চোখের-নিচে-কালি দেখতেই বুকের ভেতর ধক করে উঠলো শ্রাবণের। শ্রাবণ গুটিগুটি পায়ে চাঁদনীর পাশে গিয়ে বসল। তারপর চাঁদনীর ঘুমন্ত মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চাঁদনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
— আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও চাঁদপাখি। আজ আমার জন্যে তোমার জীবনের এই অবস্থা। আমি কখনই চাইনি তোমার অবস্থা এমন হোক। আমি যদি আগে জানতাম যে আমার কারনে তুমি এতটা অসুস্থ এবং মৃত্যুর দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে!তাহলে কখনোই আমি তোমার জীবনে আসতাম না। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও চাঁদপাখি।
কথাগুলো বলতে বলতে শ্রাবনের দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা ঝরতে লাগল। শ্রাবণের চোখ থেকে পানি পড়লো চাঁদনীর মুখের উপর। মুখে পানি পরতেই ঘুম ভেঙে গেল চাঁদনীর। চাঁদনী কে জেগে উঠতে দেখে চোখের জল মুছে ফেলল শ্রাবণ। তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল
— ঘুমিয়ে পড়েছ চাঁদ পাখি আজকে আমার জন্য অপেক্ষা করো নি?
— আপনি কখন এসেছেন শ্রাবণ? আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানি না! আপনাকে দেখতে এমন লাগছে কেন, আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?
চাঁদনীর কথা শুনে মুচকি হেসে নিচ থেকে উঠে চাঁদনীর পাশে বসে চাঁদনীকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে শ্রাবন বলল
— আমার কিছুই হয়নি জান আমি ঠিক আছি। আমার কিছুই ভালো লাগছিল না তোমাকে দেখছি এখন ভালো লাগছে সব কিছু। আমার একটা কথার উত্তর দেবে চাঁদ পাখি?
— কি কথা বলুন!
— আমি যদি তোমার খুব প্রিয় কোন জিনিস তোমার থেকে কেড়ে নেই আর আমি তোমার কাছ থেকে চিরদিনের মতো হারিয়ে যাই, তাহলে তুমি কি করবে?
— আপনি এসব আবোল তাবোল কি বলছেন শ্রাবণ? আমি তো আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছিনা! আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে কোথাও কষ্ট হচ্ছে আপনার? আপনি এভাবে কেন কথা বলছেন আমার সাথে! আমার কোন প্রিয় জিনিস কেড়ে নেবেন আপনি? আর আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন কেন, আপনি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবেন শ্রাবণ?
চাঁদনীর কথার উত্তরে শ্রাবান আর কোন কিছু বলল না। চাঁদনী কে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরে চাঁদনীকে নিয়ে ভালবাসার রাজ্যে ডুব দিলো।
,
,
রাত 3:05 মিনিট
চাঁদনী ঘুমিয়ে আছে বিঘোরে,আর শ্রাবণ এক নজরে তাকিয়ে আছে তার চাঁদনীর দিকে। শ্রাবণের চোখ থেকে গড়িয়ে পরছে টপটপ করে নোনা পানি। শ্রাবণের কলিজাটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে। কারন আজকেই চাঁদনীর সাথে তার শেষ দেখা। আজকের পরে আর কখনো চাঁদনী সামনে আসবে না শ্রাবন। হারিয়ে যাবে কোন এক অচিন দেশে যেখান থেকে কেউ আর খুজে পাবেনা শ্রাবনকে। শ্রাবণও আর কোনদিন ফিরবেনা চাঁদনীর জীবনে।
এসব কথা ভাবতেই বুকটা চিরে কান্না হয়ে বেরিয়ে আসছে শ্রাবণের। শ্রাবন পারছে না তার চাঁদনীকে ছেঁড়ে যেতে আবার পারছেনা চাঁদনী কে আঁকড়ে ধরতে। শ্রাবণের এতটাই কষ্ট হচ্ছে যে ওর মনে হচ্ছে যেন মৃত্যু যন্ত্রণাও হয়তো এই যন্ত্রণার চাইতে অনেক সুখের। এতটা কষ্ট যেন সহ্য করতে পারছে না শ্রাবণ।
বাকি রাতটুকু চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে থেকেই কাটিয়া দিলো শ্রাবণ। ভোরবেলা চাঁদনীর ঘুম ভাঙতেই শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে দেখল শ্রাবন ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। অন্য কোন দিকে যেন খেয়াল নেই শ্রাবণের। শ্রাবণের চোখ দুটো অশ্রু জলে ভেজা। চাঁদনী অবাক হয়ে শ্রাবন কে জিজ্ঞেস করল
— কি হয়েছে আপনার শ্রাবন, আপনি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? আর কেনই বা এভাবে কান্না করছেন আপনি?
চাঁদনীর কথার উত্তর না দিয়ে শ্রাবণ চাঁদনীকে শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলল
— যাও চাঁদ পাখি ফ্রেশ হয়ে এসো, আমি এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
শ্রাবণের কথা শুনে কেমন যেন লাগছে চাঁদনীর। কিন্তু চাঁদনীর এখন প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। ক্ষুধায় কথা বলতে ইচ্ছা করছে না, তাই আর কথা না বাড়িয়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
15 মিনিট পর চাঁদনী ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো শ্রাবন ওর দিকে অশ্রু ভেজা নয়নে তাকিয়ে আছে। চাঁদনী শ্রাবনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকাল। তারপর কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই শ্রাবন এসে চাঁদনীকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো।
শ্রাবনের এমন কাণ্ড দেখে চাঁদনী অবাক হয়ে শ্রাবনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
— কি হয়েছে আপনার আপনি এমন আচরণ কেন করছেন শ্রাবণ? আমাকে বলুন আপনার কি হয়েছে আপনি এভাবে কাঁদছেন কেন শ্রাবন?
— তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও চাঁদ পাখি, মাফ করে দিও আমায়। আমি জানি তুমি চাইলেও হয়তো কখনো আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না। কিন্তু আমার এ ছাড়া আর কোন উপায় নাই চাঁদপাখি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও অনেক ভালোবাসি তোমায় আমি চাঁদ পাখি, অনেক বেশি ভালোবাসি আমি তোমায়।
কথাগুলো বলেই চাঁদনীর কোমরে কিছু একটা পুশ করলো শ্রাবণ। সাথে সাথে চাঁদনী জোরে “আহ” শব্দ করে শ্রাবনের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাল। তারপর শ্রাবনের বুকে মাথা রেখে অজ্ঞান হয়ে গেল। সাথে সাথে শ্রাবণ চাঁদনীকে কোলে তুলে নিল। তারপর চাঁদনীর কপালে চুমু দিয়ে দরজা খুলে চাঁদনীর আব্বু আম্মুকে ডেকে বলল
— আঙ্কেল আন্টি আপনারা তারাতারি হাসপাতালে চলে আসুন। আমি চাঁদনীকে নিয়ে যাচ্ছি।
কথাগুলো বলেই আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না শ্রাবন। চাঁদনীকে কোলে নিয়ে হাওয়ার বেগে ছুটে গেল হাসপাতালে। যেনো মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলো হাসপাতালে শ্রাবন চাঁদনীকে নিয়ে। তারপর ডাক্তার এবং নার্সদের ডেকে চাঁদনীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। চাঁদনীর বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে প্রচুর পরিমাণে ব্লাড যাচ্ছে চাঁদনীর। চাঁদনী কে তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হলো। ততক্ষণে চাঁদনীর আব্বু-আম্মু হাসপাতালে চলে এসেছে। তাদের আসতে দেখে ডাক্তারের কাছে চলে গেল শ্রাবন। ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এসে বলল
— প্রেসেন্ট এখন বিপদমুক্ত কিন্তু তার পেটের বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে।
শ্রাবন ডাক্তারের কথাটা শুনে মুখে মলিন হাসি ফুটিয়ে কোথায় যেনো চলে গেল। শ্রাবনকে চলে যেতে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো চাঁদনীর বাবা মা। এর মাঝে চাঁদনীর মাকেও সবটা বলেছেন চাঁদনীর বাবা,,,
(শ্রাবন কি তবে চিরদিনের মতো হাড়িয়ে গেলো তার চাঁদনীর জীবন থেকে। আর কি কখনো এক হবে না ওরা)
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
পর্বটা এর চাইতে বড় করতে পারলাম না তাই দুঃখিত।