#ভ্যাম্পায়ার বর
পর্ব ১৭_বোনাস_পার্ট
#M_Sonali
শ্রাবণের কোল থেকে নেমে চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো চাঁদনী। এ কোথায় এসে গেছে কিছুই বুঝতে পারছে না ও। চারি দিকে চোখ বুলিয়ে হা করে তাকিয়ে সবকিছু দেখতে লাগল চাঁদনী। যেনো এক স্বপ্নপুরীতে দাঁড়িয়ে আছে ও।
চাঁদনীর সামনে বিশাল বড় একটা রাজপ্রাসাদ। রাজপ্রাসাদের পিছন সাইডে রয়েছে ঘন কালো জঙ্গল। হয়তো এখানে এর আগে কেউ আসেনি। প্রসাদের দুই পাশেও রয়েছে জঙ্গল। সামনে বিশাল এক সমুদ্র। দেখে মনে হচ্ছে এটা কোন দ্বীপে দাঁড়িয়ে আছে ওরা। কিন্তু এই এতটুকু সময়ের মধ্যে ওরা কি করে এখানে আসলো তার কিছুই মাথায় ঢুকছেনা চাঁদনীর। হঠাৎ চাঁদনী আশেপাশে তাকিয়ে দেখল শ্রাবণ ওর আশেপাশে কোথাও নেই। চাঁদনীর বুকের মধ্যে কেমন একটা ভয় শুরু হলো। চাঁদনীর শিরদাঁড়া বেয়ে গড়িয়ে পড়ল শীতল স্রোত। যেন গলা শুকিয়ে আসছে ওর। কোথায় চলে এসেছে আর শ্রাবণই বা ওকে রেখে কোথায় উধাও হয়ে গেল। এসব কথা ভাবতেই যেন আরো বেশি ভয় করছে চাঁদনীর। চাঁদনী কাঁপা কাঁপা গলায় শ্রাবনকে ডাকতে ডাকতে বলতে লাগল
— শ্রাবণ আপনি কোথায় শ্রাবন। প্লিজ আপনি কোথায় প্লিজ আমার সামনে আসুন। আমার ভীষণ ভয় করছে শ্রাবন। আমায় এভাবে এখানে রেখে কোথায় উধাও হয়ে গেলেন আপনি। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান, খুব ভয় করছে আমার। এটা কোন জায়গা শ্রাবন।
কথাগুলো বলতে বলতে কান্না করে দিল চাঁদনী। এর আগে হয়তো কোনদিনো এ পরিমাণ ভয় পায়নি চাঁদনী।
কান্না করতে করতে মাটিতে বসে পরলো চাঁদনী। ভয়ে ওর সারা শরীর থর থর করে কাঁপছে।ও বুঝতে পারছে না এখানে একা ও কিভাবে এল। আর শ্রাবণই বা ওকে রেখে কোথায় চলে গেল।
— প্লিজ শ্রাবন আপনি ফিরে আসুন। প্লিজ শ্রাবণ আর এভাবে আড়ালে থাকবেন না। আমার ভীষণ ভয় করছে শ্রাবণ। আপনি কোথায় শ্রাবন প্লিজ এখানে আসুন।
হঠাৎ কাধে কারো হাতের ছোঁয়া পাওয়ায় উপর দিকে ফিরে তাকায় চাঁদনী। শ্রাবন হাসিমুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। শ্রাবন কে দেখতেই লাফ দিয়ে উঠে শ্রাবনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে শুরু করে চাঁদনী। কান্নার জন্যে যেন কথা বলতে পারছে না ও। শ্রাবন চাঁদনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
— এই পাগলি এভাবে কাদছো কেনো? আমি তো এখানেই ছিলাম, দেখছিলাম তোমার সাহস কত টুকু। কিন্তু তুমি যে এত ভিতু সেটা ভাবতেও পারিনি আমি। শেষে কিনা একটা ভীতুর ডিম কে বিয়ে করলাম আমি। আহ্হারে ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।
ইনসেন্ট লুক করে কথাগুলো বলল শ্রাবণ। শ্রাবণের কথা শুনে মুহূর্তেই রেগে গেলো চাঁদনী। তারপর কোমড়ে হাত দিয়ে শ্রাবনের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল
— শয়তান, বান্দর, ফাজিল, তুমি আমাকে কি বললে আমি ভীতু না আমি ভিতু? তবে রে দেখাচ্ছি তোমাকে মজা।
কথাগুলো বলতে বলতেই শ্রাবণের বুকে কিল ঘুষি মারা শুরু করলো চাঁদনী। চাঁদনীর কান্ডে শ্রাবন হাসতে হাসতে সমুদ্রের পানির দিকে দৌড় দিল। তার পর সমুদ্রের পানিতে নেমে পড়লো শ্রাবণ। শ্রাবন এর পিছু নিয়ে চাঁদনীও সমুদ্রের পানিতে নেমে পরলো।তারপর দুজন দুজনকে পানি ছিটিয়ে দিয়ে খেলতে লাগল। রাগের ঠেলায় চাঁদনী ভুলেই গেছে যে ও শ্রাবনের সাথে তুমি তুমি করে কথা বলছে।
পানি ছেটাতে ছেটাতে শ্রাবণ এসে জড়িয়ে ধরলো চাঁদনীকে। চাঁদনীর সেদিকে কোন খেয়াল নেই। চাঁদনী তো শ্রাবনকে কিল-ঘুসি আর বকা দিতেই ব্যস্ত। কিন্তু শ্রাবণ ব্যস্ত চাঁদনীকে দেখতে, শ্রাবনের চোখ যেনো চাঁদনীর দিকে আটকে গেছে। চোখ সরাতেই পারছে না শ্রাবন।
জামা কাপড় ভিজে পুরো গায়ের সাথে লেপ্টে আছে চাঁদনীর। শ্রাবণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে তার চাঁদনীকে। হঠাৎ শ্রাবনের কি হলো শ্রাবন চাঁদনীর ঠোঁটদুটো আঁকড়ে ধরলো। ঘটনার আকস্মিকতায় থমকে গেল চাঁদনী। অবাক হয়ে কিছুক্ষন বোঝার চেষ্টা করলো কি হচ্ছে ওর সাথে। তারপর যখন খেয়াল হল তখন নিজেকে শ্রাবনের থেকে ছাড়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করতে লাগল চাঁদনী।একের পর এক কিল ঘুষি লাগাতে লাগলো শ্রাবনের গায়ে।
কিন্তু সেদিকে শ্রাবণের কোন গুরুত্ব নেই সেতো চাঁদনী ঠোঁট দুটো নিয়ে ব্যস্ত। বেশ কিছুক্ষণ পর ক্লান্ত হয়ে থেমে গেল চাঁদনী। চাঁদনীকে চুপ করে যেতে দেখে শ্রাবণ ওকে ছেড়ে দিল। তারপর এক ঝটকায় কোলে তুলে নিল শ্রাবণ চাঁদনীকে। চাঁদনী শুধু অবাক চোখে শ্রাবণ এর দিকে তাকিয়ে আছে। কোন কিছু বলছে না ও। ওর রাগও হচ্ছে না আবার কোনো ভালো লাগাও কাজ করছে না। শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে শ্রাবনকে ও। রাতের অন্ধকারে অন্যরকম লাগছে যেন আজ শ্রাবনকে।
চাঁদনী এতক্ষণ খেয়ালই করেনি শ্রাবণ শুধু একটা স্যান্ডো গেঞ্জি পড়ে আছে গায়ে। সাথে পড়েছে একটা থ্রি কটার প্যান্ট। বাদামি চোখগুলো যেন রাতের অন্ধকারের মাঝেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চাঁদনী হা করে তাকিয়ে আছে শ্রাবনের চোখের দিকে। শ্রাবন চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তারপর চাঁদনীকে কোলে নিয়ে প্রাসাদের ভিতরে ঢুকে গেল।
প্রাসাদের ভেতর ঢুকতেই চাঁদনী শ্রাবনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে প্রাসাদের চারিদিকে চোখ বোলাতে লাগলো। প্রাসাদের বাইরে থেকে যতটা সন্দর দেখায় তার চাইতে হাজারগুণ বেশি সুন্দর প্রাসাদের ভেতর টা। চাঁদনী অবাক হয়ে চারি দিকে চোখ বুলিয়ে দিখছে সবকিছু। প্রাসাদের ভিতরের সব যেন ঝকঝক করছে। যেন হিরা মুক্তা দিয়ে তৈরি সবকিছু। এত সুন্দর প্রাসাদ আগে কখনই দেখেনি কখনো কল্পনাও করেনি চাঁদনী।
শ্রাবণ চাঁদনীকে কোলে নিয়ে সোজা উপরতলায় চলে গেল। তারপর একটা বিশাল বড় রুমে নিয়ে গিয়ে চাঁদনী কে কোল থেকে নামিয়ে দিল। চাঁদনি অবাক হয়ে চারি দিকে দেখছে কথা বলার ক্ষমতা যেন হারিয়ে ফেলেছে চাঁদনী। চোখ বুলিয়ে দেখছে আর অবাক হয়ে যাচ্ছে, এতটা সুন্দর জায়গাও পৃথিবীতে থাকতে পারে কখনো ভাবতে পারেনি চাঁদনী।
চাঁদনী কে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল শ্রাবণ। তারপর চাঁদনীর অনেক কাছাকাছি চলে আসলো। চাঁদনীর যখন খেয়াল হলো চাঁদনী শ্রাবণকে সরিয়ে দিয়ে বলল
— আপনি কি করছেন শ্রাবণ, আপনার সাথে তো আমার এমন কোনো কথা ছিল না। আপনি কি ভুলে গেছেন আমরা বাবা-মাকে জানানোর আগে আমাদের স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে জরাবো না। আপনাকি সে কথা ভুলে গেছেন শ্রাবণ?
চাঁদনীর কথা শুনে চাঁদনীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চাঁদনীর ঘারে মুখ গুজে শ্রাবন বলল
— আমি কোন কিছু ভুলিনি চাঁদ পাখি। কিন্তু তোমাকে আজকে আমার চাই। আমি তোমার স্বামী হই চাঁদপাখি। এটুকু চাওয়া কি আমি তোমার কাছে চাইতে পারিনা চাঁদ পাখি? আমাকে দুরে সরিয়ে দিও না প্লিজ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি চাঁদপাখি প্লিজ।
শ্রাবণের কথা শুনে চাঁদনী কি বলবে সেটা চাঁদনীর মাথায় আসছেনা। চাঁদনী কিছু বলবে তার আগেই শ্রাবন ওকে আবার কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো।
,
,
রাত ২.১০ মিনিট
শ্রাবনের বুকে বিভোরে ঘুমিয়ে আছে চাঁদনী। আর শ্রাবন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চাঁদনীর দিকে। শ্রাবণের মনে হচ্ছে সারা জীবন যদি এভাবে চাঁদনীকে দেখে তবুও যেন ওর মন ভরবে না। সারাক্ষণ শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে চাঁদনীর দিকে। শ্রাবন চাঁদবীর কপালে আলতো করে চুমু একে দিলো। সাথে সাথে লাফিয়ে উঠলো চাঁদনী। তারপর শ্রাবনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে, গায়ে চাদর জরিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে। আর গল গল করে বমি করতে লাগল চাঁদনী। চাঁদনীকে এভাবে বমি করতে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেল শ্রাবন।
বমি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে নিচে পড়ে যেতে নিলো চাঁদনী। পরে যাওয়ার আগেই শ্রাবণ গিয়ে চাঁদনীকে ধরে ফেলল। তারপর হাত মুখ ধুয়ে দিয়ে কোলে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে অস্থির কন্ঠে বলল
— চাঁদ পাখি কি হয়েছে তোমার, তুমি এভাবে বমি করছিলে কেন? তোমার কি খারাপ লাগছে, কি হয়েছে চাঁদ পাখি আমাকে বল? কোথায় খারাপ লাগছে তোমার?
শ্রাবণের কথা শুনে সে কথার উত্তর না দিয়ে চাঁদনী বললো
— আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে শ্রাবণ, আমাকে কিছু খেতে দেন। খুবই খারাপ লাগছে আমার অসম্ভব খিদা লাগছে মনে হচ্ছে সব কিছু খেয়ে ফেলি। শ্রাবণ আমাকে কিছু খেতে দেন আমার খুব ক্ষুদা লেগেছে।
চাঁদনীর কথা শুনে কিছুটা অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে শ্রাবণ বলল
— ঠিক আছে চাঁদপাখি তুমি উঠে ফ্রেশ হয়ে আসো আমি তোমার খাবার নিয়ে আসছি।
কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল শ্রাবণ। চাঁদনী উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
একটু পর খাবার হাতে রুমে ঢুকলো শ্রাবণ। অনেকগুলো ফল আর কিছু মিষ্টি খাবার নিয়ে এসেছে শ্রাবন চাঁদনীর জন্য। চাঁদনী খাবারগুলো দেখেই যেন পাগলের মতো ছুটে আসলো শ্রাবনের কাছে।তারপর শ্রাবণের হাত থেকে সবগুলো খাবার নিয়ে রাক্ষসের মত খাওয়া শুরু করলো।
শ্রাবণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল চাঁদনীর খাওয়ার দিকে। চাঁদনীর খাওয়া দেখে যেন মারাত্মক রকমের অবাক হলো শ্রাবণ। এভাবেও কোনো মানুষ খেতে পারে তা আগে কখনো শ্রাবন দেখেনি হয়তো।
— চাঁদ পাখি একটু ধীরে ধীরে খাও, এভাবে খেলে গলায় আটকে যাবে তো খাবার। একটু ধীরে ধীরে খাও সুস্থভাবে খাও এগুলো সব তোমার জন্য অন্য কারো জন্য নয়।
শ্রাবণের কথার দিকে তাল না দিয়ে চাঁদনী বললো
— প্লিজ আমাকে আটকাবেন না শ্রাবণ আমার ইচ্ছে করছে দুনিয়ার সব খাবার খেয়ে ফেলতে। খুব ক্ষুদা লেগেছে আমার আমার জন্য আরো খাবার নিয়ে আসুন শ্রাবণ। আমি আরো খাবো।
শ্রাবণ কিছুতেই বুঝতে পারছেনা চাঁদনী কেন এমন করছে। এভাবে খাবার খাচ্ছে কেন। কিন্তু শ্রাবন অবাক চোখে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে উঠে গেল চাঁদনীর জন্য আরও খাবার আনতে। কিছুক্ষণের মাঝেই আরো ফল আর মিষ্টি নিয়ে ফিরে আসলো শ্রাবন। চাঁদনী সেগুলোও নিয়ে একের পর এক সব খেতে শুরু করলো।
সব কিছু খাওয়া শেষ হলে চাঁদনী আর কোন কথা না বলে বিছানায় শুয়ে চুপ করে ঘুমিয়ে পড়ল। শ্রাবণ অবাক চোখে বোঝার চেষ্টা করল এতক্ষণ কি হলো চাঁদনীর সাথে। চাঁদনী এভাবে কেনইবা খাবার গুলো খেলো। কোন মানুষ একা প্রায় দশজন মানুষের খাবার কিভাবে খেতে পারে কিছুই ঢুকছে না শ্রাবনের মাথায়।
শ্রাবণ আর কিছু না ভেবে থালা-বাসন গুলো সব গুছিয়ে রেখে চাঁদনীর পাশে এসে চাঁদনীকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে রোদের আলো চোখে পড়তে ঘুম ভাঙলো চাঁদনীর। চাঁদনী ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে উঠে বসে হাই তুলতে তুলতে চারি দিকে তাকালো। তাকিয়ে দেখল একটা অনেক সুন্দর রুমের মাঝে রাজপালঙ্কের মতো বিছানায় বসে আছে ও। চাঁদনী মনে করার চেষ্টা করলো ও এখানে কিভাবে এসেছে। তারপর ধীরে ধীরে গত রাতের সবকিছু মনে পড়ে গেল চাঁদনীর। চাঁদনী তখন বিছানা ছেড়ে উঠে বাইরে বের হলো। রুম থেকে বাইরে বের হতেই চাঁদনী দেখল শ্রাবণ ওর জন্য খাবার নিয়ে রুমে আসছে। শ্রাবনের হাতের খাবারগুলো দেখে চাঁদনী অবাক হয়ে বলল
— এই এত খাবার আপনি কার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন শ্রাবণ? এখানে কি আমরা ছাড়াও আরও 50 জন মানুষ আছে নাকি?
চাঁদনীর কথা শুনে শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে বলল
— কেন তুমি খাবে
— আমাকে দেখে কি আপনার রাক্ষস মনে হয় শ্রাবণ? এই এতগুলো খাবার আমি খাব? আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে, এতগুলো খাবার তো 50 জন মানুষও খেতে পারবে না। বাপরে বাপ আমাকে কি আপনি রাক্ষস মনে করেছেন?
— কাল রাতেই তো তুমি এতো গুলো খাবার খেলে চাঁদনী। এখন আবার বলছো তুমি এত খাবার খেতে পারবে না? কি হয়েছে তোমার বলো তো আর কালকে রাত্রে ঐ ভাবে বমি ই বা করলে কেন?
শ্রাবণের কথা শুনে অবাক হয়ে চাঁদনী বলল
— কি বলছেন কি আপনি শ্রাবণ? কালকে আবার আমি কখন খাবার খেলাম? কাল আপনার সাথে এখানে আসার পরে তো সমুদ্রে স্নান করলাম। তারপরে কি হয়েছে আমার কিছুই মনে নেই আর আপনি বলছেন আমি কাল রাতে খাবার খেয়েছি। আমিতো সকালে উঠে ভেবেছি আপনি হয়তো কালকে আমায় কোলে করে নিয়ে এসে রুমে শুইয়ে দিয়েছেন?
চাঁদনীর কথার কিছুই বুঝতে পারছেনা শ্রাবণ। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে শ্রাবণ নরম সুরে বলল
— ওহ সরি চাঁদ পাখি আমি তোমার সাথে এমনি একটু মজা করছিলাম। রাগ করোনা প্লিজ। এখন চলো রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নেবে। তোমার হয়তো খুব ক্ষুদা লেগেছে তাই না?
শ্রাবনের কথা শুনে চাঁদনী আর কিছু বলল না। ওর কেন যেন কিছু ভালো লাগছেনা মাথা ঘুরছে ভনভন করে। তাই রুমে চলে এলো, তারপর ফ্রেশ হয়ে অল্প একটু খাবার খেয়ে নিলো চাঁদনী।শ্রাবন অবাক হয়ে চাঁদনীর আচরনগুলো দেখছে। এক রাতের মধ্যে হঠাৎ কি হল চাঁদনীর?
সকালে খাওয়া-দাওয়া শেষে চাঁদনী বেশ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে গেল। ওকে আর খাবারের সম্পর্কে কোন কথা বলল না শ্রাবন। সারাদিন দুজনের খুনসুটি ভালোবাসায় কেটে গেল। সন্ধ্যাবেলা শ্রাবণ আর চাঁদনী একসাথে বসে আছে। চাঁদনী শ্রাববনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
— আচ্ছা শ্রাবণ সত্যি করে একটা কথা বলবেন প্লিজ?
— অবশ্যই বলবো, বল কি জানতে চাও চাঁদ পাখি?
— আপনি আসলে কে শ্রাবণ? আমার কেন জানি না ইদানীং আপনাকে খুব সন্দেহ হয়। আর আজকে তো একটু বেশিই সন্দেহ হচ্ছে। কারণ কোন মানুষ এত দ্রুত একজনকে কোলে নিয়ে অন্য জায়গায় যেতে পারে না। আমরা এখন যে জায়গাটাতে আছি এই জায়গাটা আসলে কোথায় আর তাছাড়া এখানে আমরা এত দ্রুত এলামই বা কি করে? আমি সবকিছু জানতে চাই শ্রাবণ, আপনার আসল পরিচয়টা আমাকে বলুন প্লিজ?
চাঁদনীর কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল শ্রাবণ তারপর বলল
— তোমাকে একদিন না একদিন সত্যিটা জানাতেই হবে চাঁদ পাখি। তাই আমিও আর চাইনা তোমার থেকে কোন কিছু লুকাতে। তুমি আমার স্ত্রী আমি তোমাকে সারা জীবনের জন্য চাই। তোমাকে হারানোর ভয় থাকে সবসময় আমার মনে। আজকে আমি তোমাকে সব বলবো আমার ব্যাপারে। কিন্তু তুমি আমায় কথা দাও তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না সবকিছু জানার পর? কারন আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না চাঁদপাখি। মরে যাব আমি তোমায় ছাড়া।
করুণ দৃষ্টিতে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল শ্রাবণ। শ্রাবণ এর কথা শুনে চাঁদনী কিছু বলবে তার আগেই শ্রাবনের হঠাৎ কি যেন হল। শ্রাবন চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ থেকে আবার চোখ খুললো। শ্রাবণ চোখ খুলতেই শ্রাবণের চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেল চাঁদনী। শ্রাবণের চোখ দুটো গারো লাল রঙের হয়ে আছে এবং খুব হিংস্র। এর আগে কখনো শ্রাবণের এমন রুপ দেখেনি চাঁদনী। চাঁদনীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় শ্রাবন বললো
— চোখ বন্ধ করো চাঁদনী,আর আমি না বলা পর্যন্ত একদম চোখ খুলবে না।
শ্রাবনের কথার প্রতিউত্তরে কেন যেন চাঁদনীর কিছু বলতে ইচ্ছা করল না। তাই চাঁদনী শ্রাবণের কথামতো চোখটা বন্ধ করে ফেললো। সাথে সাথে শ্রাবন চাঁদনীকে কাঁধে তুলে নিল। আর হাওয়ার বেগে ছুটতে লাগল কোন দিকে যেন। চাঁদনী ভয়ে চোখ খোলার সাহস পাচ্ছে না তবে বুঝতে পারছে হাওয়ায় ভেসে চলেছে দূরে কোথাও।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,