# এক মুঠো রোদ .
# writer :নৌশিন আহমেদ রোদেলা
# পর্ব -৫
– টি-শার্ট পড়ার জন্য সাহসের প্রয়োজন হয় নাকি? কই? আমার তো হয় না। টি-শার্ট পড়ার জন্য দুটো হাতই যথেষ্ট।
– শাট আপ মিস রোজা!! আমি জিজ্ঞেস করেছি, আপনি আমার ড্রেস কেন পড়েছেন? এটা কোন ধরনের ম্যানের্স?
– আমাকে যে এখানে ধরে এনে আটকে রেখেছেন। এটা কোন ধরনের ম্যানার্স শুনি? তারওপর সারাদিনে খাবারটা পর্যন্ত দেন নি। পাষান কোথাকার!! (মুখ ফুলিয়ে)
রোজার কথায় মুহূর্তেই রাগটা নেমে গেলো মৃন্ময়ের। সত্যি তো, সারাদিনে মেয়েটার কথাটা মাথায়ই ছিলো না তার। এতোরাত হয়ে গেছে এখনও খেতে দেওয়া হয় নি তাকে। মৃন্ময় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে গেলো। রোজা চুপচাপ বসে পড়লো বিছানায়। খুব কান্না পাচ্ছে তার….কিভাবে বেরোবে সে এখান থেকে? বাবা, মা,রিদ সবাইকে বড্ড মনে পড়ছে তার। কিছুক্ষণ পরই দরজায় শব্দ হলো। রোজা চোখ তোলে তাকালো। মৃন্ময় খাবারের প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে টেবিলে খাবারটা রেখে বলে উঠলো মৃন্ময় –
– অনেক রাত হয়ে গেছে মিস.রোজা!খেয়ে নিন।
কথাটা বলে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা দিতেই পেছন থেকে কান্নাভেজা কন্ঠে বলে উঠলো রোজা-
– আমাকে যেতে দিন না প্লিজ। আমার এখানে একদম ভালো লাগছে না। আমি বাড়ি যাবো।
রোজার কথায় পেছন ফিরে তাকালো মৃন্ময়। মৃন্ময়কে তাকাতে দেখে আবারও বলে উঠলো রোজা-
– আমি আপনার সাথে ফাইট করতে পারছি না নায়কসাহেব। আপনার চোখ দেখে মনে হয় সত্যি অনেক বেশি ক্ষতি করেছি আপনার। কিন্তু সেটা যে কি, কিছুতেই ধরতে পারছি না আমি। আমার স্বপ্ন বাবার মতো জার্নালিস্ট হবো। বাবা মাঝেমাঝেই হাতে পায়ে হাজারও ক্ষত নিয়ে বাসায় ফিরে। তখন বাবার মুখে কষ্ট নয় অন্যরকম একটা প্রাপ্তির আলো ফুটে উঠে। যেনো পৃথিবীর সব পেয়ে গেছেন উনি, সব। আমি বাবার সেই প্রাপ্তিটা পেতে চাই। সেই খুশির ঝিলিকটা পেতে চাই। কিন্তু…কিন্তু বাবা সেই খুশির ঝিলিকটা আমাকে দিতে চান না। তাই একা এই পথে নেমেছিলাম…. জেদের বশে আপনার এই খবর ছাপিয়েছিলাম। কিন্তু বাবার মতো সেই উজ্জ্বলতা আমার চোখে মুখে আসে নি। সেই সুখ আমি পাই নি। কেন পাই নি?কেন? এই প্রশ্নটা বাবাকে করতে হবে….প্লিজ যেতে দিন আমায়…প্লিজ।
মৃন্ময় এবার নড়ে চড়ে উঠলো। ধীর পায়ে হেঁটে রোজার সামনে চেয়ার টেনে বসলো। রোজার কান্নাভেজা চোখে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো –
– দেখুন মিস রোজা! আপনি আমার কি ক্ষতি করেছেন বা কতটুকু করেছেন সেটা আমি আপনাকে বলতে পারবো না। কিন্তু আমি চাইলেও আপনাকে ছাড়তে পারবো না। রুজি খুব বিশ্রী একটা চাল চেলেছে। ও মিডিয়াকে বলেছে আমরা লিভিং রিলেশনশিপে আছি কিন্তু সেটা সত্যি নয়। ওর এই বাজে খেলাটাকে বন্ধ করতে হলে আমাকেও একটা বাজে খেলা খেলতে হবে। আর সেজন্য আপনাকে দু’দিন এখানেই থাকতে হবে। দু-দিন পর খবর ছাপা হবে,, রুজি আপনাকে আটকে রেখে এমন একটা বাজে খবর ছাপাতে বাধ্য করেছিলো। আর তার সাক্ষী দিবেন আপনি… আপনি দিতে বাধ্য। ব্যস! কাহিনী খতম।
রোজা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কি ভয়ানক চাল চালতে চলেছে মৃন্ময়। রোজা একটা ঢোক গিলে বলে উঠলো,
– এই দুটো দিন আমায় ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হবে? তাহলে তো শ্বাসবন্ধ হয়ে এমনিই মরে যাবো আমি।
রোজার কথা কানে যেতেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো মৃন্ময়। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ওপাশ থেকে কল পিক হতেই গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো মৃন্ময়,
– বাড়ির সব কাজের লোকদের দু’দিনের ছুটি দিয়ে দাও সোহেল।
মৃন্ময়ের কথায় চরম রকম বিস্মিত সোহেল। কিছুটা সন্দেহী মন নিয়ে বলে উঠলো সে,
-ঠিক আছে স্যার। কিন্তু হঠাৎ…কেনো?
– তোমাকে যা করতে বলা হয়েছে তুমি তাই করো সোহেল। আমি বেশি কথা পছন্দ করি না তা হয়তো তুমি ভালো করেই জানো,রাইট?
কথাটা বলেই ফোন কেটে দিলো মৃন্ময়। এদিকে রোজার আত্মা শুকিয়ে কাঠ। এই মৃগীর উদ্দেশ্যটা কি? বাড়ি ফাঁকা করতে চাইছে কেন? ওর সাথে কিছু করবে না তো? হে আল্লাহ, এই নায়ক ফায়ক কে তো বিশ্বাস নেই। এদের চরিত্রটায় তো শরীরের উপর ঢলে পড়া টাইপ। এখন রোজার কি হবে? সে ভয়ে ভয়ে সন্দেহী চোখে মৃন্ময়ের দিকে তাকালো। মৃন্ময় তাকাতেই লাফিয়ে বিছানার উপর উঠে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
– নো হাংকিপাংকি। আমি কিন্তু কেরাটে জানি। যদিও ছোটবেলা শিখেছিলাম তবুও আই স্টিল রিমেম্বার এভ্রি স্টেপস্…
রোজার কান্ডে মৃন্ময় খানিকটা ভরকে গেলো। কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলো,
– মানে? মিস রোজা, আপনি লাফাচ্ছেন কেন? নিচে নামুন।
– নাহ! একদম না। আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিচে নামিয়ে কার্য সিদ্ধি করবেন,তা হবে না। কিছুতেই না। আপনি কি মনে করেন? বাড়ির কাজের লোকদের কেন ভাগাচ্ছেন আমি বুঝি না?
মৃন্ময় এবার রোজার লাফালাফির কারণ বুঝতে পারলো। হাত ভাজ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সরু চোখে তাকিয়েই বলে উঠলো,
– ওহ! তাই নাকি?আপনি এতো ইন্টেলিজেন্ট? আই এম ইম্প্রেসড্। তো আমাকেও একটু বোঝান কেন ভাগাচ্ছি তাদের।
কথাগুলো বলেই এগুতে লাগলো মৃন্ময়। রোজা সেদিকে তাকিয়ে বার কয়েক ঢোক গিলে নিয়ে ধীরে ধীরে পেছনে সরে যেতে লাগলো। মৃন্ময় ভ্রু নাচিয়ে আবারও বলে উঠলো,
– কি হলো বলুন…কেন ভাগাচ্ছি?
– আ আ আপনি..
– হ্যা! আমি?
মৃন্ময়কে ওর দিকে ঝুঁকে পড়তে দেখেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো রোজা। মুখে দু’ হাত চেপে বলে উঠলো,
– প্লিজ সরুন প্লিজ! কিছু করবেন না প্লিজ! প্লিজ!
বেশকিছুক্ষণ যাওয়ার পরও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে একচোখ খোলে তাকালো রোজা। মৃন্ময় কিছুটা দূরে ল্যাবট্যাব হাতে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। রোজা অবাক চোখে মৃন্ময়ের দিকে তাকাতেই বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো মৃন্ময়,
– আপনার ম্যান্টালিটি এতো চিপ কেনো হ্যা? একেই বলে চুরের মন পুলিশ পুলিশ। আমার তো এখন এই রুমে ঘুমোতেই ভয় করছে। আপনি আবার আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন না তো? সব মেয়েরা এক টাইপ…একদম ন্যাকার ষষ্ঠী। “ক” বললে কলকাতা বুঝে যাওয়ার মতো বুদ্ধি তাদের। আপনার সাথে কিছু করার জন্য বাড়ির মেইডদের ছুটি দেওয়ার প্রয়োজন নেই আমার। ওদের ছুটি দিলাম যেনো আপনি এই দু’দিন পুরো বাড়িটা ঘুরে বেড়াতে পারেন। আর তখন আপনাকে কিস করতে নয়…এগিয়ে ছিলাম আমার ল্যাবট্যাবটা নিতে। যেভাবে লাফাচ্ছিলেন কখন না আমার ল্যাবট্যাবের উপর উঠে যেতেন আপনি। যত্তসব আজাইরা।
কথাগুলো বলে একমুহূর্ত দাঁড়ালো না মৃন্ময়। সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগালো সে। রোজা তো লজ্জায় লাল। ছিহ্ কি সিনক্রিয়েটটায় না করলো ও…..কিছুক্ষণ এসব ছাইপাঁশ ভেবে প্লেটটা হাতে নিয়ে খাওয়ায় মেতে উঠলো সে।
মৃন্ময় শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। চোখদুটো বন্ধ। চোখে ভাসছে বাবা-মার আবছা চেহারা। এই তো ১২ বছর আগেই মাকে হারিয়ে একদমই এতিম হয়ে গেলো মৃন্ময়। সেই ছোট্ট বয়সেই কতোটা সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। সম্পদের যেমন অভাব ছিলো না ঠিক তেমনি অভাব ছিলো না লোভাতুর অসংখ্য চোখের। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুলগুলো দু’হাতে পেছনের দিকে ঠেলে দিলো সে। শাওয়ারের পানি কি নির্মলভাবে ধুয়ে দিচ্ছে ওর দু’গাল বেয়ে পড়া নোনা নোনা জল। মৃন্ময়ের ওয়াশরুমটা সম্পুর্নই কাঁচের… পর্দাটা সরালেই রুমের ভেতরের সবকিছুই স্পষ্ট হয়ে উঠে। কিন্তু রুম থেকে ওয়াশরুমের ভেতরটা দেখার সুযোগ নেই মোটে। মৃন্ময় একহাতে গাঢ় খয়েরী রঙের পর্দাটা ঠেলে দিলো। রোজা বিছানায় পা গুটিয়ে বসে খাচ্ছে….মৃন্ময় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময়ের চোখে মেয়েটাকে একেক সময় একেক রকম লাগে। সেদিন শাড়িতে পরিপূর্ণ নারী রূপে দেখেছিলো সে। দুপুরে লাল স্কার্টে কোনো এক উচ্ছ্বসিত তরুনি আর এখন?অগোছালো এক পাগলাটে মেয়ে। যার লম্বা চুলের বাহার ছড়িয়ে আছে পুরো বিছানায়। বেসাইজ টি-শার্ট আর গালের ওই টোল!! কি মাতাল করা প্রাণোবন্ততা সারা গায়ে। মৃন্ময়ের কেনো জানি এই মেয়ের প্রতি মায়া হয়….বড্ড মায়া। যে মায়ার তাড়নায় ইচ্ছে করেও কঠিন হতে পারছে না সে। কিছুতেই না। কিন্তু কেনো হচ্ছে এমন? কেনো? এই কৃত্রিমতার ভীরে মেয়েটির স্বচ্ছতায় কি টানছে তাকে?
৯.
সোফায় চুপচাপ বসে আছে আরু। একবার আড়চোখে বাবার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ভাবির দিকে তাকাচ্ছে সে। ঘরের মাঝে পিনপতন নীরবতা। এই নীরবতাকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়াল ঘড়িতে সকাল সাতটার ঘন্টা বেজে উঠলো তুমুল গতিতে। আরু বার কয়েক ঢোক গিলে নিয়ে গুটিসুটি হয়ে বসে রইলো। এবার ভাইয়াও এসে দাঁড়ালো পাশে। তার গায়ে অফিসে যাওয়ার পোশাক।আরু আড়চোখে তার জুতোজোড়ায় দেখতে পেয়েছে শুধু। আর উপরে তাকানোর সাহসই হয়নি তার। আরুকে চুপ থাকতে দেখে কড়া গলায় বলে উঠলো ভাবি,
– এভাবে বোবাদের মতো বসে আছিস কেন শুনি? একটা কথা জিগ্যেস করেছি তোকে। উত্তর দে। কাল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়ানোর কারণ কি?
পাশ থেকে ভাইয়া মিনমিনিয়ে বলে উঠলো,
-আহা! ছাড়ো না। বাচ্চা মেয়ে! তারওপর এতো জ্বর।
– চুপ! একদম চুপ! তোমার আস্কারা পেয়েই বখে গেছে মেয়েটা। সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে রাতে বাসায় ফিরেছে কই শাসন করবে তা না…তারওপর মাখামাখি কথা? সারাটা দিন খাওয়া না দাওয়া না…এইযে,এখন যে এমন হার কাঁপানো জ্বর হয়েছে তাতে কষ্টটা কার হচ্ছে শুনি? আমার? বোনের খেয়াল না রাখতে পারলে কথা বলবে না তুমি। দিন দিন শুকিয়ে কাঠ হচ্ছে… সেদিকে খেয়াল আছে তোমার? অনার্সে উঠে গেছে এখনও বাচ্চাপানা যায় না।।শুধু মাত্র তোমার আস্কারায় ভার্সিটিতে চান্স পেলো না ও।
– আহা! এতো রাগ করছো কেনো? ভালো কলেজেই তো পড়ছে। কেমিস্ট্রির মতো একটা সাবজেক্টে পড়া তো চারটে খানি কথা না।
– দেখেছেন বাবা? আপনার ছেলের কথা শুনুন। শাসন না করে তিনি মেয়েটাকে ফেলটুস স্টুডেন্ট হওয়ার জন্য উৎসাহিত করছে।
বাবা কিছু না বলে মুচকি হাসলেন। লিনার রাগটা বরাবরই একটু বেশি। একবার রেগে গেলে আর রক্ষে নেই। আরু এবার মুখ ফিরিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলো,
– ভাবি? ক্ষুধা পেয়েছে। একটু খেতে দিবে প্লিজ।
আরুর কথাটা কানে যেতেই মুখটা খুশি খুশি হয়ে গেলো লিনার। ঝটপট রাজ্যের খাবার নিয়ে আরুর সামনে দিয়ে বললো,
– আয়… আমি খাইয়ে দিই। গায়ে কতো জ্বর! এতো জ্বর নিয়ে শরীরে শক্তি থাকে নাকি?এদিকে আয় জলদি।
আরু বাধ্য মেয়ের মতো ঘাড় নেড়ে ভাবির কথা মেনে নিলো। এই সবগুলো খাবার যে সে আরুর পেটে ঢুকিয়েই ছাড়বে তা আর নতুন কিছু না। ভাবির এসব ভালোবাসাময় অত্যাচারে ছোট থেকেই অত্যাচারিত হয়ে আসছে আরু। ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে প্রায় পাঁচবছর…. এখনো সন্তানের মা হতে পারে নি ভাবি। তাই আরুকে নিয়েই তার যতো যত্ন। খাওয়া শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো আরু। মাথাটা বড্ড ভারি ভারি লাগছে তার। ঘুমের আবেশে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এলো আরুর কিছুক্ষণ পরই ফোনের রিংটোনের বাজখাঁই শব্দে ঘুম ছুটে গেলো তার। ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়েই ফোনটা রিসিভ করলো সে। সাথে সাথেই ওপাশ থেকে প্রিয়ন্তীর ভয়ার্ত কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
– হ্যালো প্রিয়?
– হ্যালো আরু! আরিফ ভাইয়া বাসায় আছে রে?থাকলে আমাদের বাসায় একটু পাঠা না প্লিজ…
-ভাইয়া তো অফিসে কিন্তু কেনো বল তো। এতো ভয় পাচ্ছিস কেন?
– আমাদের বাসার পাশের ফাইভ স্টার হোটেলটায় ভাঙচুর চলছে আরু। এতো এতো গুন্ডায় ভরা এই মোড়। এখন নাকি ওই রাফিন চৌধুরী নিজে এসেছে। আমি বাসায় একা। বাবা -মা তো গ্রামে গিয়েছে…আমার খুব ভয় লাগছে আরু!
রাফিনের নামটা শুনেই চট করে ওঠে বসলো সে। ঠোঁটে চাপা হাসি টেনে নিয়ে বলে উঠলো,
– ভয় পাস না। আমি আসছি!
– তুইই (অবাক হয়ে) তুই এসে কি লাভ হবে? ভয় আরো বেড়ে যাবে।
– তুই একটু বেশিই ভয় পাচ্ছিস প্রিয়। চুপচাপ বস, আমি আসছি।
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো আরু। ঝটপট ওড়নাটা নিয়ে ভাবির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ভাবি ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলেন,
– কি?
– ভাবি? বাসায় বসে বসে জ্বর আরো বেড়ে যাচ্ছে আমার। শুয়ে বসে থেকে বিরক্ত হয়ে গেছি, মাথাটা ভার ভার লাগছে। রাস্তা দিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করে আসি? প্লিজ।
ভাবি কিছুক্ষণ আরুর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-ঠিক আছে, চল। আমিও যাবো।
– এমা! না না। তোমায় যেতে হবে না। আমি তো এই আশেপাশেই হাঁটবো। ফোনটাও তো সাথে নিচ্ছি। তুমি ফোন দিয়ে তো জানতেই পারবে কোথায় আছি। সাথে যেতে হবে না। বাবা বাসায় একা না? কখন কি লাগে। তুমি থাকো আমি যাই…বাই।
কথাটা বলে লিনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই একরকম ছুটে বেরিয়ে গেলো আরু। লিনা কিছুক্ষণ দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শশুড়ের রুমের দিকে হাঁটা দিলো। আরু হাঁটছে, দ্রুত হাঁটছে। আরু বুঝতে পারছে সে রাফিনের প্রেমে পড়ে গিয়েছে। রাফিনের নামটা শুনলেই কেমন একটা কম্পন অনুভূত হয় সারা শরীর জুড়ে। সবার মুখে রাফিনকে ভয় পাওয়ার হাজার কারণ শুনলেও কেনো জানি আরুর মোটেও ভয় লাগে না তাকে। বরং রাফিনকে দেখলেই তার গাল টেনে দিতে ইচ্ছে হয় আরুর। কিন্তু এই নির্ভয়তার ভবিষ্যৎ কি হতে পারে জানা নেই আরুর। রাফিনের নৃশংসতার কথা জানা নেই আরুর। এতো অজানার মাঝে আরুর জানার সীমা যে খুবই সীমিত। খুব।
# চলবে…