গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_৪৩ : #50_Shades_of_Blue
লেখিকা : #Lucky
(এক্সট্রা)
“আমি আপনার সাথে আপনার অফিসে যাব।”
“কেনো! কলেজ এমনিই মিস গেছে এতদিন।” বলতে বলতে কপাল কুচকে ফেলল সে।
“চলুন না প্লিজ।”অনুনয় করে বললাম আমি।
“না।” শাওন ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিজের টাই ঠিক করতে করতে বলল।
আমার মেজাজটাই গরম হয়ে গেল। কারণ সবসময় সে যা বলবে সেটাই আমাকে করতে হবে! এমন কেন?
মাঝে মাঝে ত আমার কথাও শুনতে পারে!
আমি মুখ গোমড়া করে বসে রইলাম। তার দিকে তাকালাম না।
সে নিজের মত রেডি হয়ে নিয়ে বলল, “জলদি করো! দেরি হচ্ছে আমার।”
“আজকে যাই না! আজকেই শুধু!” বায়না ধরে বসলাম।
“কি চলছে তোমার মাথার মধ্যে?” সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল শাওন।
“প্লিজ প্লিজ। শুধু আজকে।” এগিয়ে গিয়ে ওনার হাত ধরে হেলিয়ে বললাম আমি।
উনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। অর্থাৎ সে রাজি।
.
অনেক দিন পর আবার তার অফিসে এলাম। এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য হলো ওই সুইটি নামক মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করা।
আসলে আমি জানতে চাই যে ওই মেয়ে কোন ফ্লোরে কাজ করে! বলা ত যায় না শাওনের আশেপাশে এসে ঘুরঘুর করলে! ওর সাথে বোঝাপড়ার দরকার।
চিন্তা করতে করতেই শাওনের কেবিনের কাচের দরজাটা খেয়াল না করায় টাক লেগে যাওয়ার মত অবস্থা হলো।
মনে পরতেই আমি চোখমুখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।
কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে টাক লাগলো না
আমি অবাক হয়ে প্রথমে এক চোখ খুললাম।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে দরজাটা খুলে ধরে আছে।
“কি চিন্তা করতে করতে হাটো!”
আমি শুধু মৃদু হেসে ভিতরে ঢুকলাম।
“আপনি কিভাবে বুঝলেন আমার লেগে যাবে!”
“এর আগেও ত খেয়েছ। ভেবেছিলাম টাক খেয়ে যদি মাথা ঠিক হয়। কিন্তু না! যেমন তেমনি আছে।”
শোনার সাথে সাথে মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেল। তবে এটা সত্যি যে এর আগে তার এই দরজায় দুইবার বারি খেয়েছি আমি।
“অপমান করলেন?”
শাওন কিছু না বলে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো।
আমি এখন কোন বাহানায় ওই মেয়ের সাথে দেখা করবো! ঠোঁট উলটে চিন্তা করতে লাগলাম।
“কি?”
আমি একটু চমকে শাওনের দিকে তাকালাম। আর মেকি হেসে বললাম,”কই! কিছুনা।”
শাওন নিজের কাজে মনোযোগ দিতে দিতে বলল, “এখানে এসে বসো।”
আমি তা না করে চেয়ার টেনে নিয়ে কাচের জানালার সামনে বসলাম। আমার প্রিয় একটা জায়গা এটা।
আমি চেয়ারের উপরে দুইপা ভাজ করে উঠিয়ে বসলাম আর দৃষ্টি বাহিরে আবদ্ধ করলাম।
যদিও সুইটির সাথে কথা বলাটা গুরুত্বপূর্ণ। কি চায় ও! চলে গিয়ে আবার এখন ফিরে আসতে চাচ্ছে কেনো! আর বিয়ে করতে গিয়েও বা ভাংলো কেনো! সৌরভ ত ভালো ছেলে।
মেয়েটা মোটেও সুবিধার না। তাছাড়া আমি চাই ওর বিয়েটা হোক। তাহলে আমার শাওনের দিকে ওই রাক্ষসী আর তাকাবে না। কিন্তু সৌরভকে ও যদি সত্যিই বিয়েটা না করে!
আমি আকাশ পাতাল চিন্তা করতে করতে অনেক সময় পার করে ফেললাম।
আচমকা শাওন আমার চেয়ারটার দুই হ্যান্ডেলে ওর দুই হাত রাখতেই আমি চমকে গেলাম।
“কি হয়েছে!” সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল সে।
“কিছুনা।” আমি সাথে সাথে মাথা নেড়ে বললাম।
উনি আমার দিকে আরেকটু ঝুকে বললেন,”সকাল থেকে এমন বিহেভ করছ কেন?”
“আ..আপনার মাথা ঠিক আছে! এভাবে ঝুকে আছেন! কেউ এসে পরলে?”
“পারমিশন ছাড়া কেউ আসেনা। কি হয়েছে?” সিরিয়াস মুখোভঙ্গিতে তাকিয়ে বলল শাওন।
আমি কটাক্ষ করে বললাম, “বললাম ত কিছু না।”
উনি তাও একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলেন। হয়তো বিশ্বাস করে উঠতে পারেন নি।
আমি চেয়ার থেকে নামার জন্য ওনার এক হাত সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বললাম, “সরুন না। কেউ এসে যাবে।”
শাওন হাত ত সরালই না বরং মুখটা আমার মুখের কাছে নিয়ে এসে ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে বলল, “ভাল ভাবে জিজ্ঞেস করে হবে না তারমানে?”
আমি চমকে চেয়ারের সাথে লেপ্টে গেলাম, “মা…মানে?”
উনি হুট করে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি অনেক বেশিই চমকে গেলাম।
“ন…নামান আমাকে।” নামার চেষ্টা করে বললাম আমি।
উনি কথায় কান না দিয়ে আমাকে কেবিনের মধ্যেকার রুমে নিয়ে এসে নামিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে দিলেন।
“আ…আপনার মাথা ঠিক আছে?” আমি একটা ঢোক গিলে পিছিয়ে গেলাম।
“মাথা ঠিক থাকবে না কেনো!” উনি আমার দিকে আগাতে আগাতে নিজের টাই টা ঢিলে করতে লাগলেন।
এ কেমন জ্বালাতন! আমার ত আসাই ভুল হয়ে গেছে।
পিছাতে পিছাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকতেই আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
“আ…আমি কলেজে যাব।”
উনি ওনার টাই-টা ঢিলে করে নিয়ে একদম আমার কাছে এসে গেলেন।
আমি চোখ নামিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম।
উনি হুট করে আমাকে কোলে তুলে বিছানার দিকে নিয়ে আসতে লাগলেন।
বলতে গেলে এখানে আসার শখ আমার ষোলো আনা পূর্ন হয়ে গেছে। এখন কি করব আমি!
সৌভাগ্যবসত তখনি দরজায় নক পরলো। আমি চমকে দরজার দিকে তাকালাম।
“মিটিং বাদ দিয়ে তুই কি করছিস?ইদানীং তোর জন্য আমি বকা খাচ্ছি।” বলল সুমনা।
আমি ওনার দিকে তাকালাম। উনি অনেক বেশিই বিরক্ত গেছেন।
কিন্তু আমি ত হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
সুমনাকে অনেক গুলো চুম্মা দিতে মন করছে।
আমার মুখে হাসি দেখে শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো।
সাথে সাথে আমার মুখের হাসি উবে গেল।
“ঘুমাচ্ছিস! আগে ত জীবনেও এত অলস ছিলি না!” বাহির থেকে বলল সুমনা।
আমি মুখ চেপে হাসতে লাগলাম।
“Yeah yeah, I’m coming.” আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল শাওন। তারপর আমাকে নামিয়ে দিলো।
আমি একটু সরে গেলাম।
“জলদি কর।” বলে সুমনা চলে গেল।
সাথে সাথে উনি আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলেন।
আমি চমকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে হাপাতে লাগলাম।
উনি মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
.
ওনার মিটিংয়ের সময়টুকুর মধ্যেই আমি ওই সুইটিকে খুঁজে বের করব বলে ঠিক করলাম।
তাই আমি সব ফ্লোরে ওই মেয়েকে খুজে বেড়াতে লাগলাম।
কিন্তু খুজে খুজে হয়রান হলেও পেলাম না।
বরং নিজেই হাপিয়ে উঠলাম।
আজ কি ছুটি নিয়েছে নাকি!
ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসে কেবিনে ঢুকতেই শাওন বলল, কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম। মিটিং কখন শেষ হলো ওনার।
উনি উওরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।
“এই ত এদিকেই ছিলাম।” আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম।
“সারা ফ্লোর ঘুরে ঘুরে কি খুজছিলে?”
আমি একটু থতমত খেয়ে গেলাম। উনি জানলো কিভাবে!
উনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে উওরের অপেক্ষা করতে লাগলেন।
আমি একটা ক্ষীণ স্বরে বলে দিলাম, “সুইটিকে খুজতে।”
“why?” শাওনের দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ হয়ে গেল।
“ও কি চায় সেটা জানতে আর ও আপনার কোনো ক্ষতি…”
“তোমাকে আমি বলেছি না এসব আমি হ্যান্ডেল করে নেব?”
“আমি ত…”
“তুমি ত কি? ফার্স্টলি ও যেটা চায় ও কোনোদিনো পাবে না, সেকেন্ডলি ও কারো ক্ষতি করতে পারবেনা। আর এখানে ওকে খুঁজেও লাভ নেই। ও আর এই কম্পানিতেই নেই। তাছাড়া নিজেই নিজেকে সামলাতে পারো না আবার ওকে কি বুঝাবা?”
“বের করে দিয়েছেন?” হতবাক হয়ে গেলাম আমি।
শাওন একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল।
আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, “ও চলে গিয়ে আবার আসতে চাচ্ছে এজন্যই ত আমি ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। ও নাকি নিজের বিয়েও ভেঙে দিয়েছে। আমি চাচ্ছিলাম যে…।”
“ওর বিয়ে ভেঙে গেছে অনেক আগেই। সৌরভ ভেঙে দিয়েছে। ও না।” বলল শাওন।
“কেনো? সৌরভ কেনো…” হা হয়ে বললাম আমি।
“সৌরভকে নিয়ে এত মাথা ব্যথা কিসের তোমার?”
আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম। ওকে নিয়ে কিসের মাথাব্যথা করলাম।
“জেলাস জেলাস!” আমি মুখ খুলে কিছু বলার আগেই পিছন থেকে সুমনা বলে উঠল।
আমি সুমনার দিকে ঘুরলাম। হয়তো মাত্রই কেবিনে ঢুকলো সুমনা।
“কখন এসেছ?” সুমনা হাসি মুখে বলল।
“সকালেই।” আমিও হেসে উওর দিলাম।
“ইডিয়ট।” আমার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল শাওন।
“ও~~ তাই ত বলি মিটিং বাদ দিয়ে ওই রুমে কি করছিলো!” ভ্রু উঁচু করে বলল সুমনা।
“Shut up.” বিরক্ত হয়ে বলল শাওন।
আমি লজ্জা পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
“কি জানতে চাও বলো? চা খেতে খেতে সব আমিই বলবো চলো।” সুমনা মুচকি হেসে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল।
শাওন সরু চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল সুমনা কি বলছে।
“আমরা চা খেতে যাচ্ছি।” বলেই সুমনা শাওনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমাকে নিয়ে বের হয়ে গেল।
.
সুমনার থেকে আমি খুটিনাটি সব জেনে নিলাম।
মোট কথা হলো শাওনের বাবা, সুইটির বাবা আর সৌরভের বাবা – এরা অনেক ভালো তিন ফ্রেন্ড।
সৌরভের বাবা শাওনকে অনেক পছন্দ করতেন। কারণ সে তার পড়াশুনা নিয়ে ছোট থেকেই সিরিয়াস। এদিকে সৌরভকে তেমন না বলে নিজের ছেলেকে কারণে অকারণে শাওনের উদাহরণ দিয়ে দিয়ে পচিয়ে দিয়েছিলেন।
বুঝিনা আজকালকার বাবা মা এসব কেন করে! তুলনা করার এই বিষয়গুলো শিশুদের মনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে তা তারা বুঝেই না। এই কারণেই সৌরভ শাওনকে পছন্দই করত না। হয়তো এখনো করে না। এদিকে সৌরভের বাবা নিজের ছেলের প্রতি অবহেলা করে শাওনকে নিজের কম্পানিই হ্যান্ডেল করতে দিয়ে দেয়। কারণ তার ধারণা তার ছেলের দ্বারা এসব হবে না। এমন অদ্ভুত বাবা আমি বাবার জন্মে দেখিনি। বলতে গেলে এখন সম্পূর্ন কম্পানি শাওন, সুমনা, রবিন এরাই চালাচ্ছে। যদিও সৌরভের যথেষ্ট যোগ্যতা আছে।
আর বাকি রইলো সুইটির বিষয়টা। তাকে পটিয়ে নিয়েছিল সৌরভ প্রতিশোধের লক্ষ্যেই। একটা হাসিখুশি ছেলেকে পেয়ে সুইটিও সব ভুলে গেল। হাসিখুশি ছেলেকেই যখন পছন্দ তাহলে কেন শাওনকে নিয়ে খেলল?
কিন্তু পরে যদিও এদিক থেকে সৌরভও ছেড়ে দিলো ওদিক থেকে শাওনকেও আর পেল না।
কিন্তু সুইটা ভান টা এমন ধরেছিল যে, ওর বিয়ে বাসা থেকে জোর করে ঠিক করা হয়েছিল। কেমন মেয়েরে বাবা! চার বছরের রিলেশন ভেঙে চলে গেল!
না জানি শাওনকে কতটা কষ্ট দিয়েছে ওই মেয়ে! ইচ্ছে হচ্ছে ওকে মেরেই ফেলি। একজনকে দিয়ে হয়না!
.
.
“কি ভাবছ?”
আমি শাওনের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। আবছা অন্ধকারেও বুঝলাম সে আমার দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“ঘুমান নি?”
“জেগে আছ কিসের জন্য!”
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে শাওনের দিকে পাশ ফিরে ওর গাল স্পর্শ করলাম।
উনি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।
“আমি আপনাকে ছেড়ে কোনোদিনো যাব না। আর আপনাকে কষ্টও দেব না।” মৃদু হেসে বললাম আমি।
উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তারপর আমার হাতটা ধরে গাল থেকে নামিয়ে হাতে ঠোঁট ছুয়ে দিলেন।
আমি চমকে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
তখনি উনি আমার খুব কাছে চলে আসলেন। আর আমি লজ্জায় কুকড়ে গেলাম।
“কি খেয়ে এত লজ্জা বাড়ে তোমার?” আমার কানে কানে বলল শাওন।
আমি সাথে সাথে ওনার বুকে মাথা গুজে দিলাম।
___________________
মাত্র কয়েকদিন আগেই ত আমরা দুইজন দুইজনকে সহ্য করতে পারতাম না। আর এখন দুইজন দুইজনকে ছাড়া থাকতে পারিনা। সময়ের ব্যবধানে কতটা পরিবর্তন এসে গেছে! ভেবেই অবাক লাগে।
আমি ওনাকে পেয়ে সত্যিই অনেক খুশি। কারণ আমি ওনার মত একজনকে পেয়েছি।
যদিও প্রায় দেড় বছর হয়ে যাচ্ছে আমাদের বিয়ের তাও সব নতুনই লাগে। মাত্র কয়েকদিন মনে হয়।
– “কি ভাবছ?”
আমি শাওনের দিকে তাকালাম।
উনি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
“কিছুনা, কোথায় যাব আমরা আজকে? তাও আবার এত সকালে সব ব্যাগ গুছিয়ে?” আমি সরু চোখে তাকিয়ে বললাম।
“গেলেই দেখতে পাবা।” মুচকি হেসে বলল শাওন।
তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
সকাল সকাল বের হবার কারণ হয়তো জ্যাম নেই। যাক ভাল। স্নোবেলটা আমার কোলের উপর লাফাচ্ছে। সেও অনেক আবেগে আপ্লুত।
উনি একটা সুন্দর বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালেন।
“এটা কোথায় এসেছি আমরা?” আমি শাওনের দিকে তাকালাম।
“Our Home.” শাওন মৃদু হেসে বলল।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি একটা ঘর চেয়েছিলাম আর উনি আমার বলা সেই কথাটা মনে রেখে দিয়েছেন!
উনি সীট বেল্ট খুলতে খুলতে আমাকে নামার জন্য ইশারা করলেন।
আমরা একসাথে গাড়ি থেকে নামলাম।
তারপর কেচি গেট খুলে বাড়িটায় ঢুকলাম। বাড়িটার চারিদিকে দেওয়াল দিয়ে ঘেটা আর সামনে সুন্দর গার্ডেন আছে।
বাড়িটা দোতালা। ডিজাইন দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এটা উনি নিজে করেছেন।
উনি হঠাৎই আমাকে কোলে তুলে নিলেন।
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম, কি করছেন আপনি!
উনি মিষ্টি হেসে আমাকে ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলেন। তারপর কোল থেকে নামিয়ে আমার হাত ধরলেন।
বাসাটা সত্যিই অনেক সুন্দর। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো নিচতলায় একটা সুইমিং পুল আছে। এটা দেখেই আমি খুশি হয়ে গেলাম।
উনি আমাকে বেডরুম, ড্রয়িং রুম, কিচেন রুম সব ঘুরিয়ে দেখালেন। উনি একটা Dog house ও রেখেছেন স্নোবেলের জন্য৷
স্নোবেল দৌড়ে সেখানে গিয়ে ঢুকলো।
“আমরা আজ থেকে এখানেই থাকব।” শাওন বলল।
আমি খুশিতে এগিয়ে গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম, “অনেক অনেক খুশি আমি। সত্যিই অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।”
শাওনও আমাকে জড়িয়ে ধরল।
আমরা একসাথে রান্নাঘরে এসে ঢুকলাম।
“আমি রান্না করব।” বললাম আমি।
উনি ফ্রাইপ্যান গ্যাসের উপর দিতে দিতে বললেন, “No need.”
“গরিলা একটা।” মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম আমি।
উনি ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালেন।
“কি বললা তুমি!” শাওন বলল।
-“আপনি যেটা, সেটাই ত বললাম।”
উনি সাথে সাথে আমার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলেন।
আমি চমকে গেলাম, “ক…কি করছেন আপনি!”
“রোম্যান্স।” মুচকি হেসে বলল শাওন।
আমি চোখ বড়সড় করে শাওনের দিকে তাকালাম।
উনি আমার গালে হাত ডুবিয়ে দিলেন।
আমি সাথে সাথে ঠেলা দিয়ে ওনাকে সরিয়ে দিয়ে চোখ পাকিয়ে বললাম, আবার শুরু আপনার!
উনি আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসতেই আমি মৃদু হেসে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলাম।
বের হয়ে সুইমিং পুলের কাছে এলাম। উফ এখনি নেমে পরতে ইচ্ছে করছে।
আমি পানিতে পা ডুবিয়ে বসে পরলাম।
সেই মুহুর্তে উনিও এসে আমার পাশে বসে পরলেন আর আমার হাত ধরলেন।
আমি মৃদু হেসে ওনার কাধে মাথা রাখলাম।
দুপুরের খাবার পরেই ওনার ফোন আসায় উনি কথা বলতে বলতে উপরে চলে গেলেন।
আমি টিভি ছেড়ে বসে চ্যানেল চেঞ্জ করতে লাগলাম। হঠাৎই চলে এলো সেই ‘ফিফটি শেইডস অব গ্রে’ নামের মুভিটা।
একটু আগেই কেবল শুরু হয়েছে হয়ত।
উনি পিছন থেকে এসে আমার হাত থেকে রিমোট টেনে নিয়ে টিভিটা অফ করে দিলেন।
আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম আর ভ্রুকুচকে ফেললাম।
উনি রাগমিশ্রিত চোখে তাকিয়ে বললেন, “এসব দেখে বেড়াও তুমি? মানা করেছি না!”
“বাহ! এসব মুভি আপনি দেখতে পারেন আর আমি দেখলে সমস্যা?” বলেই মুখ ভেংচি দিলাম আমি।
উনি দাতে দাত চিপে বললেন, “আমি এসব ফালতু মুভি দেখিনা।”
আমি সরু চোখে তাকিয়ে বললাম, “তাহলে জানলেন কিভাবে এই মুভিতে ওসব অসভ্যতা আছে?”
“কিছু জিনিস এমনিই বোঝা যায়। কমন সেন্স লাগে।” উনি বললেন।
“হুহ! আমাকে গাধা পেয়েছেন? আমি বুঝিনা মনে করেন?” মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম আমি।
“না, তুমি এখন আর গাধা নেই। এখন ত তুমি দিন দিন গাধা থেকে গরু হচ্ছ।” গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল শাওন।
“কি? আর আপনি ত গরিলা থেকে শিম্পাঞ্জি হচ্ছেন।” মুখ ফুলিয়ে বললাম আমি।
“Shut up.” বলল শাওন।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে সামনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বুকের কাছে দুই হাত গুজে নিলাম।
উনি চলে যেতে গিয়ে থেমে দাড়ালেন।
“Wait a minute!” অবাক হয়ে বলল শাওন।
আমি প্রশ্ন সূচক চোখে শাওনের দিকে ঘুরে তাকালাম।
উনি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালেন।
এখন আবার কি হলো! আমি না বুঝে তাকিয়ে রইলাম।
“তুমি কিভাবে জানলা এই মুভিতে অসভ্যতা আছে?” শাওন বলল।
আমি হকচকিয়ে গেলাম আর একটা ঢোক গিললাম।
এখন কি হবে আমার!
উনি আমার দিকে ঝুকে আমার দুই পাশে দুই হাত রেখে গম্ভীর চোখে আমার দিকে তাকালেন।
আমি এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম,”আ.. আপনিই ত বললেন কিছু জিনিস দেখা লাগে না এমনিই বুঝা যায়। ক…কমন সেন্স।”
“Stop lying.” রেগে বলল শাওন।
আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম, “স..সত্যি বলছি আমি।”
“কবে দেখছ?” শাওন জিজ্ঞেস করল।
উফ এত সমস্যা কি দেখলে! তাও ত পুরোটা দেখিও নি। জঘন্য।
“কি চুপ করে আছ কেন? কবে দেখেছ?” রেগে বলল শাওন।
“হ্যা দেখেছি। ত কি হয়েছে দেখলে! মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে!” রেগে বললাম আমি।
“হোয়াট?” শাওন দাতেদাত চিপে বলল।
“আমি এখন কি বাচ্চা আছি যে দেখলে সমস্যা।” বললাম আমি।
“না মানে না। কেনো দেখেছ?” শাওন রেগে আমার আরো কাছে চলে এলো।
আমি চোখ বড়সড় করে নিজের মুখ পিছিয়ে নিয়ে বললাম,”এ..এত রেগে যাচ্ছেন কেনো?”
“ভাল মুভি দেখো সেটাতে সমস্যা নেই। কিন্তু এসব দেখলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। তাই যেটা বললাম সেটা যেন মাথায় থাকে।” গম্ভীর গলায় বলল শাওন।
আমি চোখ পিটপিট করে তাকালাম।
উনি একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমার কাছ থেকে সরে চলে যেতে লাগল।
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। উনি কি মুভির হিরোর জন্য জেলাস!
মানে আমি ওই হিরোকে ওভাবে জামাকাপড় ছাড়া দেখেছি এতেই ওনার এত সমস্যা? মানে এত জেলাস!
আমি একটা শয়তানি হাসি দিলাম। কারণ এখন আমার ওনাকে আর একটু জ্বালাতে ইচ্ছে করছে।
আমি জোরে জোরে ওনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলাম, “ইস, ওই ছেলেটাকে কি হটই না লাগছিল যখন… ওই ছেলেটা নিজের….!”
“Shut up, Mila.” উনি অনেক রেগে গেলেন।
আসলে রেগে না, অনেক বেশিই জেলাস হয়ে গেলেন।
আমার অনেক মজা লাগছে।
আমি সোফা থেকে উঠে ওনাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললাম, “আমি ত সব দেখেছি।”
“চুপ করতে বলেছি তোমাকে।” শাওন রেগে বলল।
আমি নিজের হাসি আটকে ওনার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললাম, “আমি ত ছবিও রেখে দিয়েছি নিজের কাছে।”
শাওন রেগে আমার হাত থেকে ফোনটা নিতে এগিয়ে আসতেই আমি হাতটা পিছনে নিয়ে বললাম, “ফোনের ছবি ত ডিলিট করে দিবেন, কিন্তু আমি যে সব দেখে ফেলেছি তা কিভাবে ডিলিট করবেন!” মুচকি হেসে বললাম আমি।
উনি হুট করে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।
আমি চমকে গেলাম,”ক..কি করছেন?”
“50 shades of Blue মুভি করব আজ আমি তোমার সাথে।” রাগী চোখে তাকিয়ে বলল শাওন।
আমি হকচকিয়ে গেলাম। Blue আবার কোনটা! ভাল মুভি ত মনে হয় না!
আমি শাওনের ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বললাম,”এ..একদম না, কি সব বলছেন আপনি! এ…এমন কিছু করবেন না।”
“তুমি দেখতে পারলে আমি করতে পারব না কেনো!” শাওন বলল।
“আ…আপনি নাকি ওসব মুভি দেখেন নি!” হা হয়ে বললাম আমি।
“দেখিনি। কিন্তু তোমার ত খুব শখ অন্য ছেলেকে ওভাবে দেখার! তোমাকে শিক্ষা ত দেওয়া উচিত।” শাওন গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল।
“নামান আমাকে।” চোখ বড়সড় করে বললাম আমি।
“মানা করেছিলাম না আমি! তখন ত শোনোনি।” বললেন উনি।
“আ…আমি আর জীবনেও দেখব না। সত্যি বিশ্বাস করুন।” ঢোক গিলে বললাম আমি।
“It’s too late Mila.” উনি দুষ্টু হাসি দিয়ে বললেন।
আমি বুঝলাম যে উনি এখন আমাকে ছাড়বেন না।
আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে উনি মোটেও সুবিধার না। আজ ব্লু, গ্রিন, রেড সবই হবে মনে হচ্ছে!
এই ভরদুপুরে! ছি! আমার ওনাকে জ্বালানোই উচিত হয়নি। নিজের দোষে নিজেই ফেসে গেলাম।
(চলবে….