গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_৩০ : #Worth_it
লেখিকা : #Lucky
দরজার কাছে তাকাতেই দেখলাম দরজা বন্ধ করা। এটার কি মানে?
আর উনি এত যে ঘুমাচ্ছেন! উনি কি আজ অফিস যাবেন না, নাকি?
আমি শাওনের কাধে হাত দিয়ে নাড়িয়ে বললাম, “এইযে শুনছেন! উঠুন এখন আর আমার ওড়নাটা দয়া করে ছাড়ুন।”
শাওন নড়েচড়ে চোখ খুললো। যাক মহারাজ উঠল শেষ অব্দি।
শাওন চোখ খুলে বিষয়টা বুঝে সাথে সাথে উঠে বসল। হাতে এখনো ওড়নাটা ধরা। আমি নিজের কোমড়ে হাত রেখে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, আপনি নিজের বিছানার ধারে কাছে আমাকে যেতে দেন না অথচ এখানে আমার বিছানায় এসে ঠিকই ঘুমাচ্ছেন!
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, এখানে তোমার বিছানা বলে কিছুই নেই।
আমি রেগে কটমট করে উঠলাম। তারপর বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে চোখ পাকিয়ে বললাম, এজন্যই বুঝি আমার জামা কাপড় নিয়েও আপনি টানাটানি করবেন? এগুলোও আপনার?
শাওন এবার নিজের হাতের দিকে তাকালো। তারপর ওড়নাটা ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি ভ্রুকুচকে নিজের ওড়নাটা নিলাম আর জিজ্ঞেস করলাম, “স্নোবেল কোথায়?কি করেছেন ওকে?”
শাওন কিছু না বলে বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলল। আমি উওর জানার জন্য ওনার পিছনে পিছনে ছুটলাম। দরজা খোলার সাথে সাথে স্নোবেল ঘেউঘেউ শুরু করে দিল। শাওন ওকে পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগল কিন্তু আমি ফট করে ওনার হাতের কবজি চেপে ধরলাম। শাওন অবাক হয়ে হাতের দিকে তাকালো।
“ওকে বাহিরে রেখে দিয়েছিলেন কেন আপনি?! সারা রাত এভাবে ছিল ও!” আমি হা হয়ে বলে উঠলাম।
স্নোবেলও ঘেউঘেউ করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে লাগল।
উনি কিছু না বলে আমার হাতের দিকে তাকালেন। আমি বুঝতে পেরে ফট করে ওনার হাত ছেড়ে দিলাম।
শাওন আমার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর বের হয়ে গেল।
“অসহ্য। হুটহাট অনেক কিছু করে কিন্তু জিজ্ঞেস করলে কুমড়োপটাশ হয়ে থাকে! উওর দেয় না!” মনে মনে বলে আমি স্নোবেলের দিকে ঝুকলাম। মনেহয় ও সারারাতই বাহিরে ছিল।
‘কিন্তু উনি আমার সাথে কেন ঘুমাচ্ছিলেন!’ আমি স্নোবেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চিন্তা করতে লাগলাম।
আমি ফ্রেস হয়ে কলেজের জন্য রেডি হলাম তারপর নাস্তা করতে এলাম। ইদানিং উনি নিজে কুমড়ো খেলেও আমাকে ডিমই দিচ্ছেন। এটা ভাল। যেমন আজও ডিম।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে শব্দহীন হাতেতালি দিয়ে বললাম, ধন্যবাদ।
উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে তারপর নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন। অর্থাৎ গোমড়া মুখ করেই রইলেন।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে খেতে আরম্ব করলাম। খাওয়ার শেষেই শাওন আমাকে বলল, চলো।
আমার হঠাৎ মনে পরে গেল যে উনি আমাকে আর কোথাও যেতে দেবেন না। এখন কি করব আমি?
উফ অসহ্যকর বিষয় একটা।
“কি হলো!” শাওন বলল।
“আপনার সাথে আপনার অফিসে! কিভাবে থাকবো আমি?” আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, “কি সমস্যা থাকলে?”
“সবসময় চিল্লাবেন ত, আমি জানি।” মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম।
“তুমি যেমন তোমার সাথে তেমনই করি, এখন বেশি কথা না বলে চলো। দেরি হচ্ছে আমার।” শাওন নিজের কোটটা হাতে নিতে নিতে বলল।
শাওনের টেবিলে ওর মুখামুখি সামনের চেয়ারে বসে আছি। উনি ওনার ল্যাপটপ আর ফাইল নিয়ে ব্যস্ত। অর্থাৎ উনি আমাকে বসিয়ে রাখার জন্য এনেছেন।
আমি বিরক্ত হয়ে ওনার পাশে গিয়ে ল্যাপটপের ক্রিন টা নামিয়ে দিলাম।
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কি সমস্যা তোমার!
“খাব আমি, খিদে পেয়েছে।” চোখ সরু করে বলে উঠলাম আমি।
কিন্তু শাওনকে দেখে মনে হলো যেন আমি ওকে খেতে চেয়েছি!
“এখন চুপচাপ থাকো।” সিরিয়াস হয়ে বলল শাওন। তারপর আবার ল্যাপটপের ক্রিনটা উঠাতে গেল। আমি চোখ পাকিয়ে আবার ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিলাম।
শাওন এবার রেগে আমার দিকে তাকালো। আমিও যথেষ্ট রেগে আছি।
“আমাকে রাগিও না।” শাওন বলল।
আমি হা হয়ে মনে মনে বললাম,’রেগে গিয়ে বলে কিনা রাগিও না!’
উনি ল্যাপটপ খুলে কাজে লেগে পরলেন। আমি এসে আবার আমার চেয়ারে বসলাম। কিছুক্ষণ রেগে এদিক ওদিক তাকিয়ে তারপর ব্যাগটা কাধে নিলাম আর উনি কিছু বলার আগেই আমি বের হয়ে এলাম।
একদম অফিসের বাহিরে এসে হাটতে হাটতে চিন্তা করতে লাগলাম যে এখন কোথায় যাওয়া যায়! বাসাতে গেলেই ভাল হবে কিন্তু তার আগে আইচক্রিম খেলে বেশি ভালো হয়। চিন্তা করেই আমি পিছনে ঘুরে থমকে গেলাম। শাওন রেগে দাঁড়িয়ে আছে।
উফ গরিলাটা আমার সাথে নতুনভাবে এগুলো কি শুরু করল!
“তোমার সাহস দিন দিন অনেক হচ্ছে।” শাওন সিরিয়াস চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি কিছু না বলে নাক মুখ কুচকে বিরক্তির সাথে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
“চলো এখন।” শাওন কড়া চোখে তাকিয়ে বলল।
ওনার সাথে তর্ক করেও লাভ নেই। কারণ উনি আমাকে নিয়ে তবেই যাবেন।
তাই চোখ ছোট ছোট করে ঠোঁট উলটে বললাম, খিদে পেয়েছে বলেছিলাম না! তাও ত আপনি কানে শুনতে পান না!
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, এখন আবার কি খাবা!
আমি একটা বড়সড় হাসি দিয়ে বললাম, কতগুলা চিপস আর একটা কোক।
“তুমি বড় হবা না?” শাওন অবাক হয়ে বলল।
আমি ওনার কথায় উত্তর না দিয়ে একটা দোকান দেখিয়ে বললাম, ওইযে অইখানে আছে চিপস।
উনি দোকানের দিকে তাকিয়ে বিরক্তির সাথে বললেন, “এখানেই থাকো। আমি আনছি।” বলেই উনি দোকানের দিকে যেতে লাগলেন। কিন্তু আমি ত দাঁড়িয়ে থাকার মত মানুষ না। আমিও পিছন পিছন চলে এলাম।
এসে শাওনের পাশে দাড়িয়ে দোকানদারকে বললাম, মি.টুইস্ট দিবেন পাঁচটা আর কোক তিনটা।
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যা খাও তারপর ডায়রিয়া বাধাও।
আমি ওনাকে পাত্তা না দিয়ে আর কি কেনা যায় দেখতে লাগলাম। দোকানদার চিপস আর কোক একটা বড় পলিথিনে ভরে আমার দিকে এগিয়ে দিল৷ আমি খুশি মনে নিয়ে নিলাম। শাওন একটা এক হাজারের নোট দোকানদারকে দিলো।
“সরি স্যার, ভাংতি ত নেই।” বিব্রতকর কন্ঠে বলল দোকানদার।
“আমার কাছেও নেই।” শাওন গম্ভীর গলায় বলল।
গরিলার কাছে সব এক হাজারের নোট। অন্যদিকে দোকানদারের কাছে ভাংতি নেই। তারমানে আমাকে সব ফেরত দিয়ে যেতে হবে?
আমি কপাল কুচকে হা হয়ে রইলাম।
শাওন বিরক্ত হয়ে দোকানদারকে হাজারের নোট ধরিয়ে বলল, ওকে লাগবে না।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, চলো এখন।
আমি এবার অনেক বেশিই হা হয়ে গেলাম আর বললাম, “এতগুলো টাকা আপনি দিয়ে দিবেন?”
“বেশি কথা না বলে চলো।” শাওন মানিব্যাগ ঢুকতে ঢুকতে বলল।
“এগুলার দাম ত দুইশোও হবেনা! তাহলে আরো কিনি!” আমি ভ্রু নাচিয়ে বললাম।
শাওন রেগে বলল, বেশি কথা বললে এগুলো সব ফেরত দিয়ে যাব।
শুনে মন খারাপ লাগলেও পরক্ষনেই হেসে বললাম, তাহলে দিয়ে দিলেই ভাল, তাও এত গুলো টাকা অপচয় করা ঠিক না।
বলেই আমি সব আবার দোকানদারের কাছে ফেরত দিয়ে এক হাজারের নোটটা নিলাম আর শাওনের দিকে এগিয়ে দিলাম।
এবার শাওন অবাক হয়ে গেল।
“কি হলো নিন!” আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, আমার যথেষ্ট টাকা আছে।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে হাসিমুখে বললাম, যথেষ্ট আছে বলেই হয়ত মূল্য বুঝতে পারেন না। তবে যথেষ্ট আছে বলে আপনার অবহেলাও করা উচিত না। কারন সেটা আজ থাকলেও কাল না-ও থাকতে পারে। যেমন আমাকে দেখুন! আগে সব ছিল এখন কিছুই নেই।
আমার কথায় উনি কিছুসময় থমকে তাকিয়ে রইলেন।
আমি ভ্রু উঁচু করে বললাম, কী?
শাওন টাকাটা নিয়ে আবার দোকানের লোককে দিলেন আর ফেরত দেওয়া চিপস আর কোকের ব্যাগটা নিয়ে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে সিরিয়াস হয়ে বলল, “আমি খুব ভালো করেই জানি কোনটার মূল্য কি। আর এটাও জানি কোনটা ধরে রাখতে হবে আর কোনটা ছেড়ে দিতে হবে। তাই না থাকার প্রশ্নই আসেনা। কারন যেটা আমার সেটা আমারই থাকবে। আর বাকি রইল অবহেলা! I know where It’s Worth to spend.”
বলেই আমার হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে গেল শাওন।
আমি ঘাড় একটু বাকিয়ে ওনার কথাটা বুঝতে চেষ্টা করতে লাগলাম। পিছন থেকে দোকানদার ছেলেটা হাসিমুখে বলে উঠল, স্যার মনে হয় আপনাকে অনেক ভালোবাসে, তাইনা ম্যাম!
আমি হকচকিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম। তারপর চোখ বড়সড় করে দোকান থেকে বের হয়ে এলাম আর মনে মনে বলতে লাগলাম, “মাথা খারাপ নাকি দোকানদারের! গরিলাটা নাকি আমাকে ভালোবাসে! টাকা আছে তাই উড়াচ্ছে। কবে যে আমাকেও উড়িয়ে দেয় ঠিক নেই। গরিলা একটা।”
শাওন আমার সামনে সামনে হাটছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগলাম। দোকানদারের কথাটা আমাকে অন্যমনস্ক করে দিল। আর আমি আস্তে আস্তে বলে উঠলাম, ভালোবাসে! এটা কি সত্যি হতে পারে!
তারপর ওনার হাতের দিকে তাকালাম। আর নিজের অজান্তেই ওনার হাত ধরার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম। কিন্তু ওনার ফোনটা সাথে সাথে বেজে উঠলো। আর আমি হাত না ধরে সরিয়ে নিলাম। উনি ফোন তুলে কানে দিয়ে কোনো একটা ক্লাইন্টের সাথে কথা বলতে লাগলেন। আমি মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি কথা বলতে বলতে একটু এগিয়ে গিয়ে আবার আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। আর ভ্রুকুচকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরলেন আর বললেন, দাড়িয়ে আছ কেন?
আমি অবাক হয়ে ধরে থাকা হাতের দিকে তাকালাম। উনি আমার হাত ধরেই নিয়ে যেতে যেতে ফোনে কথা বলতে লাগলেন আর আমি অনেক খুশির সাথে ধরে থাকা হাতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাটতে লাগলাম। আর মাঝে মাঝে ওনার দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। উনি ফোনে সিরিয়াস হয়ে কথা বলে যাচ্ছেন আর আমার হাত ধরে মোটামুটি দ্রুতই হাটছেন। ওনার সাথে পা মিলাতে না পারার কারনে আমি হালকা পিছিয়ে আছি। আর আমার কানে একটা কথাই বাজছে, স্যার মনে হয় আপনাকে অনেক ভালোবাসে। ভালোবাসে!
আমি ওনার টেবিলের সামনে বসে চিপস খাচ্ছি। উনি কোনো মিটিংয়ে গেছেন এখনো আসছেন না। বোরিং লাগছে।
একটু পরেই দরজা খোলার শব্দ হতেই আমি হাসি মুখে পিছনে ফিরলাম। কিন্তু পিছনে ফিরেই হাসি গায়েব হয়ে গেল। সুইটি রেগে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি কি বলব বা কি করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
আমি উঠে দাড়ালাম আর ওর দিকে একরাশ অসস্তি নিয়ে তাকালাম। যদিও কাল ওর চুল টানতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু আজ হালকা ভয় লাগছে। এজন্য না যে ও আমাকে কিছু করে ফেলবে। কিন্তু এজন্যই যে ও যদি শাওনকে আমার থেকে নিয়ে যায়!
“তুমি! Are you even qualified?” সুইটি তীব্র রাগের সাথে টিটকারি মেরে বলল।
আমি ভ্রুকুচকে ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই ও আবার বলতে লাগল।
“শাওনকে ভালোবাসার নাটক করবা না একদম। শাওন যে তোমাকে জীবনেও ভালোবাসবে না তা আমি তা। because তুমি ওর টাইপের মেয়েই না।” রেগে অগ্নিমূর্তি হয়ে বলল সুইটি।
আমি এবার স্বাভাবিক ভাবেই বলে উঠলাম, আমি যে টাইপই হই না কেনো, আমার চরিত্র ঠিকই আছে। আজ একজন কাল আরেকজন এভাবে চলি না।
“হোয়াট!” সুইটি রেগে গেল।
“আপনার না একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে? তাও কেন শাওনের জীবনে আসতে চাচ্ছেন।” আমি রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম।
সুইটি রাগে গজগজ করতে করতে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, বিয়ে ভেঙে দিয়েছি আমি। আর সবটা আমি শীঘ্রই শাওনকে জানাবো। শুধু আমি সব জানানোর সুযোগটা পাচ্ছিনা। আর সত্যিটা শাওন জানলে পর তোমার এই তেজ আর থাকবে না। তখন শাওনের জীবনে কে থাকবে আর কে থাকবে না সেটাও বুঝতে পারবা।”
আমি লাস্ট কথাটার মানে ঠিক বুঝলাম না। তাই চিন্তায় পরে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
সুইটি আঙুল তুলে রাগী গলায় বলল, just you wait and see!
বলেই সুইটি বের হয়ে চলে গেল। আমি থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম। কি সত্যি জানার বাকি! শাওন সেই সত্যিটা জানলে কি আমাকে সত্যি সত্যি ছেড়ে দেবে!
এটা চিন্তা করতেই বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।
জীবনে কি আমি সবাইকেই হারিয়ে ফেলব! কিন্তু এটা ত সত্যি আমি ওনার জন্য হয়ত মানানসই না! কিন্তু তাও কি উনি আমাকে একটুও মেনে নিতে পারবেন না?
চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরতে লাগল। কিন্তু এসব চোখের জলের কোনো মূল্য নেই। একটা নিঃশ্বাস মুখ দিয়ে বের করে দিয়ে আমি চোখ মুছলাম। তারপর চেয়ারে বসে সুইটির বলা কথা গুলো চিন্তা করতে লাগলাম।
অনেকক্ষণ পর শাওন এসে কেবিনে ঢুকলো। আমি তাকালাম না। উনি নিজের চেয়ারের কাছে যেতে যেতে আমাকে বললেন, লাঞ্চ টাইম এখন।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে তারপর টেবিল থেকে চিপস গুলো সরিয়ে সোফায় রাখলাম।
“কি হয়েছে!” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি কোনো উওর দিলাম না। নিজের মত চেয়ারে এসে বসে রইলাম।
শাওন আরো কিছু বলার আগেই একজন কেবিনের দরজায় নক করল।
আমি ঘাবড়ে গেলাম যে সুইটি কি এখন কিছু বলবে শাওনকে? এজন্য এসেছে!
“Yeah, come in.” শাওন বলতে বলতে চেয়ারে বসল।
আমি ভীত চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। কিন্তু আমার ধারণা ভুল হলো। খাবার দিতে এসেছে এক লোক। দেখে আমি সস্তি পেলাম।
সেদিন সারাদিন আর কোনো কথাই বললাম না। চুপচাপ বসে রইলাম। শাওন কাজের ফাকে কয়েকবার আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো। কিন্তু আমার মাথায় ওই একটা জিনিসই ঘুড়তে লাগল যে সত্যিটা কি হবে? আর উনি কি সত্যিই আমাকে ছেড়ে দেবেন?
চুপচাপ গাড়িতে বসে আমি সীট বেল্ট বাধলাম। শাওন উপহাস করে বলল, যাক এতদিনে তোমার বেশি কথা বলা বন্ধ হলো।
আমি ওনার কথার কোনো উওর দিলাম না। জালানা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন আমার এক বাহু ধরে টান দিতেই আমি ওনার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালাম।
“কি হয়েছে তোমার?” শাওন সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞেস করল।
আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে শক্ত মুখ করে বললাম, কিছু হয়নি। তাছাড়া আমি কথা বললেই ত সমস্যা, তাই এখন যেহেতু বলছি না, সেহেতু সমস্যা হবার ত কথা না।
আমি আবার জালানার দিকে তাকালাম। ইদানীং উনি জালানাও খুলে রাখেন দেখছি। ওনার না জানালা খোলাতে সমস্যা?!
শাওন গাড়ি স্টার্ট দিলো।
বাসায় ফিরে অনেক সময় নিয়ে গোসল করলাম। তবে যতই চেষ্টা করছি না কেন মাথা থেকে চিন্তাটা সরছেই না। এত চাপ আমি সত্যিই আর নিতে পারছি না।
গোসল সেরে মাথায় তোয়ালে পেচিয়ে বের হয়ে এলাম। সাথে সাথে শাওনকে রুমে দেখতে পেলাম। উনি আমাকে দেখে ভ্রুকুচকে বললেন, “এত সময় গোসল করেই ত তুমি….”
“জ্বর বাধাব না। আপনার চিন্তা করতে হবে না। আর বাধালেও আপনার আমাকে কষ্ট করে সেবা করতে হবে না।” আমি শাওনকে থামিয়ে দিয়ে একটা শুকনা হাসির সাথে কথাগুলো বললাম।
“What’s wrong with you!” শাওন আশ্চর্য হয়ে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি কিছু না বলে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন কিছু একটা বলার আগেই ওর ফোন বেজে উঠল। শাওন আমার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর ফোন রিসিভ করে বেরিয়ে গেল।
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বেলকোনির কাছে এসে দাড়ালাম।
একটু পরেই শাওন দরজায় টোকা দিয়ে বলল, ডিনার করতে আসো।
আমি চুপচাপ ডিনার করলাম। আর ডিনারের সময় ওনার চাহনিতে যা বুঝলাম তা হলো, উনি আমার এই চুপচাপ থাকাটা ঠিক হজম করতে পারছেন না।
আমি ডিনার সেরে এসে বেলকোনির এক কোনায় থাকা বড় সোফার মত চেয়ারে উঠে বসলাম। স্নোবেল আমার পায়ের কাছে এসে বসল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসি দিলাম। তারপর দুইহাতে হাটু জড়িয়ে ধরে রেলিং এ মাথা হেলিয়ে দিলাম। আর অনেক আকাশ পাতাল চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টেরও পেলাম না।
সকালে ঘুম ভাঙতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। কিন্তু আমি ত বাহিরে ছিলাম! … তারমানে উনি রাতে আমার রুমে এসেছিলেন! নাকি আজও আমার সাথে ঘুমাচ্ছেন?!
আমি ফট করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম আর সাথে সাথে হা হয়ে গেলাম। সত্যিই উনি আজও আমার সাথে ঘুমাচ্ছেন। তাও আবার আমার ওড়না ওনার হাতের মুঠোয় চেপে ধরে ঘুমোচ্ছেন। আমি ওনার দিকে পাশ ফিরলাম। সত্যিই আশ্চর্যের। উনি আমার বিছানায় কেন ঘুমাচ্ছেন?
তবে হয়ত আমি এইভাবে ওনার সাথে আর বেশিদিন থাকতে পারব না। এটা ঠিক যে আমি ওনার জন্য পারফেক্ট না কিন্তু এটুকু জানি যে আমি ওনাকে ছাড়তে পারব না। না, আসলে আমি ওনাকে ছাড়তেই চাই না। একদমই না। কিন্তু উনি কি চান?
চিন্তা করতে করতে আমি এক হাত বাড়িয়ে ওনার গাল স্পর্শ করে ফেললাম। আর তখনি শাওন আস্তে করে চোখ খুলে তাকালো। আমি হকচকিয়ে গেলাম। শাওন ভ্রুকুচকে আমার হাতের দিকে আড়চোখে তাকালো।
আমি ফট করে হাত সরিয়ে নিয়ে হাসার ভান করে বললাম, ম..মশা, হেহে মশা ছিল।
শাওন স্বাভাবিক ভাবেই আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম আর একটা ঢোক গিলে মনে মনে বললাম, ‘এখন আবার কি হলো?’
শাওন উঠে বসল আর আমার ওড়নাটা ছেড়ে দিল। উনি খাট থেকে নামতে যাওয়ার সাথে সাথে আমি ওনার এক হাত আমার দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলাম। শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো।
আমি রাগী চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনি রাতে রাতে এসে আমার সাথে ঘুমান কেনো!
আমার প্রশ্ন শুনে শাওন এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে ঝুকে আসলো আর আমার দুইপাশে দুই হাত রাখলো।
আমি চোখ বড়সড় করে মাথাটা একটু পিছনে সরিয়ে নিলাম।
শাওন সিরিয়াসভাবে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার কি মনে হয়, কেন?
আমি চোখ বড়সড় করেই তাকিয়ে রইলাম। একদিকে হার্টও জোরে জোরে বিট করছে। অন্যদিকে সারা শরীরও কাপছে কারন হালকা ভয়ও লাগছে।
শাওন কপাল কুচকে বলল, “আমি কাছে আসলে এত কাপাকাপি শুরু করো কিসের জন্য! আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলব নাকি?”
(চলবে..
পর্ব ৩১ – ৪০