#অন্যরকম তুমি
পর্ব ২২
#তানিশা সুলতানা
সাদি ড্রাইভ করছে আর ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে বসে আছে। খিধেয় পেট চো চো করছে। সেই গতকাল বিকেলে খেয়েছিলো আর এখন পর্যন্ত পেটে কিছুই পরে নি। কেনো যে সাদির ওপর রাগ দেখাতে গিয়ে না খেয়েই চলে আসলো?
নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে ছোঁয়ার। ইচ্ছে করছে দুই গালে দুটো নিজে নিজে চর খেতে।
“এনি পবলেম?
সাদি মন দিয়ে ড্রাইভ করতে করতেই আচমকা বলে ওঠে।
ছোঁয়া সাদির কথা শুনেও না শোনার ভান করে থাকে। কি বলবে লোকটাকে? বলবে আপনার ওপর রাগ করে আমি না খেয়েই চলে এসেছি। আর লোকটা হেংলা ভাববে। ঢং দেখাবে। ছোঁয়া মোটেও হনুমানটার ভাব দেখবে না।
দাঁতে দাঁত চেপে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে ছোঁয়া।
হঠাৎ সাদি গাড়ি থামিয়ে দেয়। ছোঁয়া নরে চরে আশেপাশে তাকায়। ভেবেছিলো হয়ত স্কুলে চলে এসেছে। কিন্তু নাহহ। একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামিয়েছে সাদি।
ছোঁয়া মুখ ফিরিয়ে গাড়ির সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। হয়ত ওনার কোনো কাজেই গাড়ি থামিয়েছে। ছোঁয়ার জন্য থামাইনি নিশ্চয়।
সাদি দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়া সেদিকে এক পলক তাকিয়ে আবারও চোখ বন্ধ করে। মনে মনে হাজারটা গালি দিতে থাকে সাদিকে।
” এটা খেয়ে নাও
ছোঁয়ার কোলের মধ্যে খাবারের প্যাকেট রেখে বলে সাদি। চমকে ওঠে ছোঁয়া। চোখ বন্ধ করে পাঁচ মিনিটে প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিলো ছোঁয়া।
সাদি আবারও ড্রাইভ করা শুরু করে। ছোঁয়ার ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে।
“পানি?
সাদির দিকে তাকিয়ে বলে।
সাদি চোখের ইশারায় পানির বোতল দেখিয়ে দেয়।
ছোঁয়া কুলি করে প্যাকেট ছিড়ে। বিরিয়ানি দেখে ছোঁয়ার মনটা পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। চোখ দুটো টিকটিক করে ওঠে।
তোরাহুরো করে প্যাকেট খুলে গাপুসগুপুস করে খাওয়া শুরু করে দেয়। সাদি আড়চোখে একবার ছোঁয়ার দিকে তাকায়।
” কেউ নিয়ে যাচ্ছে না তোমার খাবার। আস্তে আস্তে খাও।
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে। ছোঁয়া কানেই তুলে না সাদির কথা।
“ইডিয়েট একটা
সাদি বিরবির করে বলে।
স্কুলের গেইটের সামনে গাড়ি পার্ক করে ভেতরে যায় সাদি আর ছোঁয়া।
পাশাপাশি হাঁটতে থাকে দুজন।
ছোঁয়ার খুব ইচ্ছে করছে সাদির হাতটা ধরে হাঁটতে। কিন্তু সাহস করে উঠতে পারছে না।
সাদির পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতেও পারছে না। তাই সাদির পিছু পিছু হাঁটছে।
” হেই কিউটি নাম কি তোমার?
সাদা শার্ট কাঁধে স্কুল ব্যাগ ঝোলানো একটা ছেলে মিষ্টি হেসে ছোঁয়াকে জিঙ্গেস করে। বয়স খুব বেশি না। হবে হয়ত উনিশ বিশ।
ছোঁয়া এক পলক তাকিয়ে আবার নিজের মতো হাঁটতে থাকে।
“এই মেয়ে নামটা তো বলো?
এবার কালো শার্ট পড়া অন্য একটা ছেলে বলে।
ছোঁয়া কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। পেছনে ঘুরে। পাঁচটা ছেলে আর তিনটা মেয়ে ছোঁয়ার পেছনে। সবাই ছোঁয়ার নাম শোনার জন্য ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
” পরিচয় দেওয়ার সময় নাই। এখান থেকে পঞ্চাশ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে দশ মিনিট হেঁটে ফুল নগর এলাকায় গিয়ে জিজ্ঞেস করিয়েন সাদমান চৌধুরীর বউ কে?
তাহলেই পরিচয় পেয়ে যাবেন।
মুখ বাঁকিয়ে বলে ছোঁয়া। সবাই হা হয়ে তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার দিকে। কি বললো কেউ ঠিক বুঝতে পারলো না।
ছোঁয়া জীভ বের করে দুই কানে হাত দিয়ে ভেংচি কাটে ওদের।
“এখানে কেনো তুমি? তাড়াতাড়ি এসো।
সাদি ছোঁয়ার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে। ছোঁয়া বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।
পেছনে তাকিয়ে ওদের হাতের ইশারায় সাদিকে দেখায়।
ওরা হা করে তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার দিকে।
আগে থেকে পিন্সিপালের সাথে কথা বলে রেখেছিলো সাদি। তাই আর ভর্তি নিয়ে কোনো ঝামেলা হয় না। স্যার ছোঁয়াকে আজকে থেকেই ক্লাস করতে বলে। ছোঁয়া গদগদ হয়ে যায়।
পিন্সিপালের রুম থেকে বের হয়ে সাদি ছোঁয়াকে জিজ্ঞেস করে আজকে থেকেই ক্লাস করবে কি না?
” অবশ্যই একটা ক্লাসও আমি মিস করতে চাই না।
সাদি ছোঁয়াকে ক্লাস রুমে নিয়ে যায়। ছেলে মেয়ে সব এক সাথে বসেছে। বিরক্ত হয় সাদি। ছেলে মেয়ে এক সাথে কেনো বলবে?
একটা মেয়ে একা বসেছে। সাদি ছোঁয়াকে নিয়ে ওই মেয়েটার কাছে যায়।
“এক্সকিউজ মি আপু
মেয়েটা উঠে দাঁড়ায়।
” কিছু বলবেন ভাইয়া?
“তোমার পাশে ওকে বসতে দিবা? ও নতুন।
” হ্যাঁ। কেনো দিবে না।
“ধন্যবাদ আপু। তোমার বাসা কোথায়?
” ফুল নগর।
“ওয়াও গ্রেট
আমাদের বাসাও ফুল নগর। ছুটির সময় এক সাথে যেয়ো। কেমন?
” ঠিক আছে।
“ওকে একা ছেড়ো না। এক সাথে থেকো দুজন।
মেয়েটা মিষ্টি হেসে মাথা নারায়৷ ছোঁয়া ভ্রু কুচকে ওদের কথা শুনছে।
সাদি ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকায়।
” ওর মাথায় একটু পবলেম আছে বুঝলে। একটু আতটু বাঁদরামি করবে। মারাক্তক কোনো বাঁদরামি করলে আমাকে কল করবা কেমন?
মেয়েটার কানের মাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে সাদি। খিলখিল করে হেসে ওঠে মেয়েটা। ছোঁয়া নাক ফুলিয়ে ওদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।
সাদি মেয়েটার খাতায় নিজের নাম্বার লিখে দেয়।
“আসছি
ছোঁয়ার দিকে বলে ফোন দেখতে দেখতে চলে যায়।
ছোঁয়া মুখ বাঁ কায়।
” ভাবখানা দেখো যেনে শাহরুখ খান। করলা একটা।
গাল ফুলিয়ে মেয়েটার পাশে বসে ছোঁয়া।
“হেই আমি প্রভা। তুমি?
” আমি ছোঁয়া।
আর কিছু বলার সুযোগ পায় না। তার আগেই স্যার চলে আসে।
সিমি আর সিফাতের মাঝে ঝগড়া চলছে। কেউ কারো কথা শুনছে না। যে যার মতো বলেই যাচ্ছে। পরি দুজনের মাঝখানে বসে একবার সিমির দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার সিফাতের দিকে তাকাচ্ছে। দুজনের চিৎকার চেচামেচিতে বেচারা পরির মাথা ধরে যাচ্ছে।
পাক্কা এক ঘন্টা বকবক করার পর দুজনই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সিমি আর সিফাত।
চলবে……..