#অন্যরকম তুমি
পর্ব ২৩
#তানিশা সুলতানা
সিমি পরিকে নিয়ে যাবে কিন্তু পরি যাবে না। খুব মন খারাপ হয়ে যায় সিমির। মায়ের থেকে বাবা বড় হয়ে গেলো। চোখের কোনে চিকচিক করছে পানি।
পরি সিফাতের কোলে ঘাপটি মেরে বসে আছে। খুব শক্ত করে সিফাতের গলা আকড়ে ধরেছে। যেনো ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে।
“মামনি মায়ের সাথে চলে যাও।
সিফাত পরির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে।
” আমার মাকে চাই না পাপ্পা। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না।
কান্না করে দেয় পরি। থরথর করে কাঁপছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব ভয় পেয়ে গেছে।
সিমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পরির দিকে। চোখ থেকে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু ধারা। গলা ধরে আসছে।
“সিমি ও এভাবে যাবে না। তুমি চলো। আমি ওকে গাড়ি ওবদি দিয়ে আসছি।
মাথা নিচু করে বলে সিফাত। পরি মুখ লুকায় সিফাতের বুকে। আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সিফাতের গলা।
সিমি তাচ্ছিল্য হাসে।
” আমি তোমার মতো অমানুষ নই। তুমি পেরেছিলে দুধের শিশুকে মায়ের থেকে ছিনিয়ে আনতে। কিন্তু আমি পারবো না বাবার থেকে মেয়েকে আলাদা করতে।
লম্বা দম নেয় সিমি। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়।
“দুই দিন সময় দিলাম। আমার মেয়েকে বুঝিয়ে আমার কাছে ফিরিয়ে দেবেন। আর আপনি অনেক দুরে কোথাও চলে যাবেন। যাতে আমার মেয়ে চাইলেও আপনার এই ঘৃনৃত মুখটা না দেখতে পারে।
চলে যায় সিমি। পরিকে আকড়ে ধরে সিফাত। ছেলেদের না কি কাঁদতে নেই। কিন্তু এখন যে খুব কান্না পাচ্ছে সিফাতের। দম বন্ধ হয়ে আসছে। মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কেউ নেই যার কাছে নিজের কষ্টের কথা বলে নিজেকে হালকা করবে।
মাথায় হাত বুলিয়ে ” আমি আছি তো সব ঠিক করে দেবো”
বলার মতো কেউ নেই।
মহান আল্লাহ তায়ালার নিখুঁত সৃষ্টির এই দুনিয়াটা বিষাক্ত লাগছে। ছুটে যেতে ইচ্ছে কাটছে শান্তির দেশে।
যেখানে কেউ ভুল বুঝবে না।
“পাপ্পা আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না৷
সিফাত মেয়ের মাথায় চুমু খায়।
” আমাকে যে তোমায় ছাড়তেই হবে মা। আমি যে খুব খারাপ মানুষ।
মনে মনে বলে সিফাত।
পাশের রুমে দরজা বন্ধ করে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে সিমি। এতো বছর পরে হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় সিফাতের সাথে কাটানো মধুর দিন গুলো। যে দিন গুলোতে কোনো দুঃখ ছিলো না।
কতো ভালোবাসা ছিলো দুজনের মধ্যে। আচ্ছা এতোটা ভালোবাসার পরে কি করে পারলো ছেড়ে দিতে?
একবারও কি অনু সূচনা হয় নি?
লাউডস্পিকারের এতো বছরের প্রিয় গানটা ছাড়ে সিমি।
বন্ধ দরজা অন্ধকার রুম নিস্তব্ধ পরিবেশ।
“যদি থাকতে তুমি বাঁচতে আমার লাগতো না কঠিন।
যদি থাকতে তুমি কাটতো আমার দিন গুলো রঙিন।
যদি থাকতে তুমি সামনে তোমার এনে দিতাম সব যা যা চাইতে তুমি।
তুমি বলার আগে বুঝতাম আমি যখন মন খারাপ করে থাকতে তুমি।
এমন হবে কোনো দিন আমি আগে ভাবিনি,
যে আমার ছাড়া বাঁচতো না আর সে কেনো বিলিন?
সব গুলো ক্লাস শেষ করে স্কুলের সামনে থাকাটা ফুসকা স্টলে যায় ছোঁয়া আর প্রভা। ফুসকা ছোঁয়ার মারাক্তক পছন্দ। ফুসকা হলে আর কিছুই লাগে না।
” মামা কড়া করে ঝাল দিয়ে তিন প্লেট ফুসকা দিন।
বলেই ছোঁয়া চেয়ারে বসে পড়ে।
“এই ছোঁয়া আমি এতো ঝাল খেতে পারি না।
প্রভা কাচুমাচু হয়ে বলে।
” তোর জন্য কে অর্ডার করেছে?
“কেনো তুই না তিন প্লেট বললি?
” সবগুলোই আমার জন্য। তুই খেতে চাইলে অর্ডার দে।
ছোঁয়া ফোন দেখতে দেখতে বলে। প্রভা ভ্রু কুচকে কিছুখন তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার দিকে। তারপর নিজের জন্য অর্ডার দেয়।
খাওয়া শেষ করে দুজনে হাঁটতে থাকে ফুটপাতের রাস্তা ধরে। উদ্দেশ্য আজকে হেঁটেই বাসায় যাবে।
প্রভা নিজের বয়ফ্রেন্ডের গল্প শোনাচ্ছে ছোঁয়াকে। ছোঁয়াও মন দিয়ে শুনছে।
হঠাৎ ছোঁয়ার চোখ যায় মেইন রোডের পাশে থাকা কফি শপের সামনে সাদি দাঁড়িয়ে আছে। আর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভীষণ সুন্দরী একটা রমনি। সাদিকে আঙুল তুলে কিছু বলছে। আর সাদি বারবার হাত ধরার চেষ্টা করছে।
কিন্তু মেয়েটা ধরতে দিচ্ছে না।
বুকের ভেতর ধক করে ওঠে ছোঁয়ার। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকে ওদের। কি সুন্দর মানিয়েছে। সাদির সাথে তো ছোঁয়া বেমানান। ছোঁয়া কোনো দিক দিয়েই সাদির যোগ্য না।
মুচকি হাসে ছোঁয়া।
“এই ছোঁয়া ওই দেখ তোর ভাইয়া?
প্রচার কথায় চমকে ওঠে ছোঁয়া। ভ্রু কুচকে তাকায় প্রভার দিকে।
” এদিকে কি দেখছিস? সামনের দিকে তাকা।
প্রভা ছোঁয়ার মুখটা সামনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়।
“আমার বর উনি। ভাই না।
বিরবির করে বলে ছোঁয়া। প্রভা সেটা শুনতে পায় না। বড়বড় পা ফেলে সাদির দিকে এগিয়ে যায় প্রভা। ছোঁয়া ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।
” হেই ভাইয়া।
প্রভাকে দেখে চমকে ওঠে সাদি।
“ততুমি এখানে?
মেয়েটির দিকে এক পলক তাকিয়ে রিনরিনিয়ে বলে সাদি।
” আমি আর ছোঁয়া এদিক দিয়েই বাড়ি যাচ্ছিলাম।
এক গাল হেসে বলে প্রভা।
“সাদমান এটা কে?
মেয়েটা বুকে হাত গুঁজে সরু চোখে সাদির দিকে তাকিয়ে বলে।
” মেঘলা তুমি এখন যাও। আমি পরে কথা বলবো তোমার সাথে।
মেয়েটা কপালে তিনটে ভাজ ফেলে সাদির দিকে তাকিয়ে থাকে।
“ও কোথায়?
সাদি জিজ্ঞেস করে
” ওই তো
প্রভা দুরে দাঁড়িয়ে থাকা ছোঁয়াকে দেখিয়ে বলে।
“চলো
প্রভা আর সাদি ছোঁয়ার কারো আসে। ছোঁয়া তাকায় না সাদির দিকে।। মাথা নিচু করে থাকে।
সাদি ছোঁয়ার বাম হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নেয়। ছোঁয়া চমকে ওঠে। তাকায় সাদির দিকে।
” এই রাস্তায় কখনোই আসবা না। হেঁটে কেনো বাড়ি ফিরতে হবে? আমি তো টাকা দিয়েই এসেছিলাম। তাহলে? একদম পন্ডিতি করবা না বলে দিলাম।
সাদি ছোঁয়ার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলে। ছোঁয়া মুখ থেকে একটা শব্দও বের করে না। চুপ চাপ মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকে। প্রভা ছোঁয়ার পাশে হাঁটছে।
পরি অসুস্থ হয়ে গেছে। ভীষণ জ্বর এসেছে মেয়েটার। ছোঁয়া পরির পাশে বসে আছে। বাড়ি ফিরে সাদির সাথে একটা কথাও বলে নি। সাদিও বলে নি। সিমি কপালে এক হাত দিয়ে পরির হাতটা ধরে বসে আছে।
নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
সিফাত ডাক্তার আনতে গেছে।
ছোঁয়া চোখে জ্বালা করছে। শরীরটা ভারি ভারি মনে হচ্ছে। ছোঁয়া খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে আবারও জ্বর আসবে।
চলবে
.