#অন্যরকম তুমি
পর্ব ২৫
#তানিশা সুলতানা
বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে সিমি। মেয়েকে নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই ও। হিমুকে বলাতে হিমুও দ্বিমত করে নি। সিমির সিদ্ধান্তকেই সম্মান করেছে।
সাদির বাড়িতেই কটা দিন থেকে যাবে সিমি। মেয়েকে রেখে এক পা নরবে না। এদিকে পরি সিফাতকে এক মিনিটের জন্যও চোখের আড়াল করতে চাই না। যেনো চোখের আড়াল করলেই হারিয়ে যাবে।
একদিনের মধ্যেই সাদি ছোঁয়ার জন্য স্কুল ড্রেস বানিয়ে এনেছে। সাথে সাদা জুতো।
সকাল সকাল ছোঁয়া স্কুল ড্রেস পড়ে চুলে দুটো বিনুনি গেঁথে ব্যাগ কাঁধে জুলিয়ে স্কুলের দিকে রওনা হয়। সাদি ওর জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়েছিলো সেটাও খেয়ে যায় না।
তিন রাস্তার মোরে ছোঁয়া দাঁড়িয়ে আছে প্রভার অপেক্ষায়। দশ মিনিট পর প্রভা আসে। তারপর দুজন হাঁটতে থাকে।
স্কুলের বাম সাইডে একটা উকিলের চেম্বার দেখতে পায় ছোঁয়া। বাবার থেকে শুনেছিলো উকিলরা না কি ডিভোর্স করিয়ে দেয়৷ তাই স্কুল ছুটির পরে উকিলের সাথে কথা বলতে যাবে।
স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেই দিনকার সেই ছেলে গুলোকে। ছোঁয়া ওদের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটে। ছেলে গুলো ছোঁয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।
ছোঁয়ার ভীষণ রাগ হয়। কেনো তাকিয়ে থাকবে ওর দিকে? নজর লেগে যাবে না?
“প্রভা চল তো আমার সাথে।
প্রভার হাত ধরে টেনে ছেলে গুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ছোঁয়া। তিনটা ছেলে ওখানে। তিনজনই নরে চরে দাঁড়ায়।
” পবলেম কি আপনাদের? আমি জানি আমি সুন্দর তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন? আমার নজর লেগে যাবে না? আমাকে কালো করে দেওয়ার ধান্দা না???
কোমরে হাত দিয়ে রাগী কন্ঠে বলে ছোঁয়া। ছেলে গুলো বড়বড় চোখ করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
“বোঝো ঠেলা…
বললাম না তাকাতে আর এনারা চোখ বড়বড় করে তাকালো। বলি জীবনে কি মেয়ে দেখেন নাই???
চিল্লিয়ে বলে ছোঁয়া। প্রভা করুন চোখে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।
” আমরা যে তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম এটা তুমি কি করে বুঝলে?
সোহান নামের ছেলেটা বলে।
“আমাকে কি কালা মনে হয়? কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে আর এটা আমি বুঝতে পারবো না? হাউ ফানি।
মুখ বাঁকিয়ে বলে ছোঁয়া।
” কোন ক্লাসে পড়ো মামনি?
রনি নামের ছেলে এক গাল হেসে বলে।
“কোন ক্লাসে পড়ে এটা প্রশ্ন করাতে দাঁত কেলানোর কি হলো? জীবনেও তো মনে হয় ব্রাশ করেন না।
ছেলেটা থমথমে খেয়ে যায়।
” কি হচ্ছে এখানে?
কর্কশ গলায়র কথা শুনে চমকে ওঠে ছোঁয়া। এক লাফে প্রভার পেছনে গিয়ে লুকায়। প্রভার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ছেলে গুলো কোনো দিকে না তাকিয়ে এক দৌড় দেয়। এই ধানি লঙ্কাকে বিশ্বাস নেই৷ যদি উল্টা পাল্টা বলে গণধোলাই খাওয়ায়।
“ভাইয়া দেখেন না ছোঁয়া অযথা ঝগড়া করছিলো।
প্রভা এক গাল হেসে বলে। সাদি ভ্রু কুচকে তাকায়।
” সামনে এসো।
ধমক দিয়ে বলে সাদি। ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে গুটিগুটি পায়ে প্রভার পেছন থেকে সামনে গিয়ে দাঁড়ায় মাথা নিচু করে।
“সকালে খেয়ে আসো নি কেন? আমি কি অফিস বাদ দিয়ে তোমার খাবার নিয়ে তোমার পেছনে ঘুরবো?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি।
” সসরি
রিনরিনিয়ে বলে ছোঁয়া।
“হিজাব ছিলো না ড্রেসের সাথে?
সাদি প্রশ্ন করে।
” হুমম ছিলো।
“তো তোমার হিজাব কই? এক্সট্রা ওড়না কই? ফিটার খাওয়া শিশু তুমি?
মেঘের মতো গর্জন তুলে বলে সাদি। ছোঁয়া কেঁপে ওঠে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। বুকটা থুববুক করছে। যখন তখন গালে ঠাস করে চর পড়বে। চর খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয় ছোঁয়া। প্রভা গুটিশুটি মেরে এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে।
” সাদমান হয়েছে তোমার? চলো লেট হচ্ছে।
ফোন টিপতে টিপতে মেঘা নামের মেয়েটা এগিয়ে এসে বলে। মেঘাকে দেখে ছোঁয়া গাল ফুলায়। সাদি চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নেয়।
“হুমমম
ছোঁয়ার হাত টেনে হাতের মধ্যে খাবারের বক্সটা ধরিয়ে দিয়ে হনহনিয়ে চলে যায়। মেঘা এক পলক ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে সাদির পেছনে চলে যায়। প্রভা হা করে তাকিয়ে আছে মেঘার দিকে।
” এই ছোঁয়া কি কিউট রে মেয়েটা। সাদি ভাইয়ার সাথে যা মানিয়েছে না। ফাটাফাটি।
খুশিতে গদগদ হয়ে ছোঁয়ার হাত জড়িয়ে ধরে বলে প্রভা।
“খুব খুব মানিয়েছে।
মলিন গলায় বলে ছোঁয়া।
” চল কেন্টিনে বসে খেয়ে নিবি তুই। তারপর ক্লাসে যাবো।
“খাবো না রে।
খাবারের বক্সটা রাস্তায়ই ফেলে দেয় ছোঁয়া। তারপর প্রভাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায় ক্লাসের দিকে চলে যায়।
প্রভা বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।
পরি কিছুতেই সিফাতকে ছাড়া খাবে না। সিমি ভাত মেখে পরির মুখের সামনে ধরে আছে।
” মা আমি যদি খেয়ে ফেলি তাহলে বাবা আর খাবে না। না খেলে বাবার পেট ব্যাথা করে।
মলিন মুখে বলে পরি। সিমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। বাচ্চা মেয়ে। ছোট থেকে বাবার কাছে বড় হয়েছে। টান তো থাকবেই।
“যাও বাবাকে ডেকে আনো।
মুচকি হেসে বলে সিমি। পরি খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। সিমির গাল টেনে চুমু খায়।
সিমিও পরির কপালে চুমু খায়।
সিফাত উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।
” বাবা ওঠো। তাড়াতাড়ি ওঠো বাবা। খাবো তো আমরা।
পরি দৌড়ে এসে সিফাতের পিঠ জড়িয়ে ধরে বলে।
“তুমি মায়ের সাথে খেয়ে নাও মা। আমি খাবো না।
ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে বলে সিফাত।
” তুমিও খাবে। মা বসে আছে ভাত নিয়ে তাড়াতাড়ি চলো না বাবা।
সিফাতকে টেনে তুলে পরি। সিফাত ঘুম ঘুম চোখে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। দুই মিনিটেই ফ্রেশ হয়ে চলে আসে।
পরি সিফাতের হাত টেনে খাবার টেবিলের কাছে নিয়ে যায়। সিমি সিফাতের জন্য ভাত বেরে বসে আছে। থমকে যায় সিফাত। সিমি ওর জন্য খাবার সার্ভ করবে এটা ওর ভাবনার বাইরে।
“পরি মা চলে এসো। ভীষণ খিধে পেয়েছে আমার।
সিমি ভাত মাখতে মাখতে বলে।
পরি দৌড়ে গিয়ে সিমির কোলে বসে পড়ে। সিফাতও গুটিগুটি পায়ে গিয়ে বসে পড়ে।
আজকে সিমি নিজের হাতে রান্না করেছে। গরুর মাংস পোলাও সাদা ভাত আর ইলিশ মাছ ভর্তা ইলিশ মাছ ভর্তা সিফাতের ভীষণ পছন্দ। পোলাও পছন্দ না সিফাতের। কিন্তু পরি আর ছোঁয়ার ভীষণ পছন্দ।
ছুটির পরে প্রভাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় ছোঁয়া। তারপর উকিলদের চেম্বারের দিকে পা বাড়ায়।
চেম্বারের সামনে বড়বড় করে লেখা ” মেহেদি মাহমুদ সৈকত”
ছোঁয়া বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস টেনে নক করে।
দরজা একটু ফাঁকা করে মুখটা ভেতরে ঢুকিয়ে বলে
“মে আই কাম ইন স্যার??
সৈকত ফাইল দেখছিলো।
” ইয়েস কাম ইন।
মুখ না তুলেই বলে।
ছোঁয়া ভেতরে ঢুকে পড়ে।
“বসি?
এবার সৈকত মাথা তুলে তাকায়। বাচ্চা মেয়ে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে।
” হুমম
ছোঁয়া এক গাল হেসে বসে পড়ে।
“তো বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
কলমের মুখ আটকে বলে সৈকত।
“আমি ডিভোর্স পেপার বানাতে চাই।
ছোঁয়া কাচুমাচু হয়ে বলে।
” বাবা মায়ের?
“নাহহহ আমার।
” কিহহহহহহহ?
“হুমম। আমার বিয়ে হয়েছে এক মাস। বড় আপির বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। সে বিয়ে করবে না বলে পালিয়েছিলো। দেন জোর করে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে একটা জলহস্তির সঙ্গে।
গাল ফুলিয়ে বলে ছোঁয়া। সৈকত গালে হাত দিয়ে বসে।
” তারপর?
“তারপর সে অন্য একটা মেয়ের সাথে নিকনিক করে আর আমাকে ঠাস ঠাস থাপ্পড় মারে। এই দেখুন এখনো গালটা লাল হয়ে আছে।
গাল এগিয়ে দিয়ে বলে ছোঁয়া।
সৈকতও একটু এগিয়ে এসে দেখে।
” এখন আপনি আমার ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে দিন।
“নাম কি তোমার পিচ্চি?
সৈকত খাতা বের করে বলে।
” এই ইডিয়েট
চমকে ওঠে ছোঁয়া। এক দৌড়ে সৈকতের পেছনে গিয়ে বসে পড়ে।
“একদম বলবেন না আমি এখানে। প্লিজ প্লিজ
ফিসফিস করে বলে ছোঁয়া। সৈকত গোল গোল চোখ করে একবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ছোঁয়ার দিকে তাকাচ্ছে।
চলবে……..