#আমার তুমি
পর্ব ৩২
#তানিশা সুলতানা
“কেনো গেছিলি বল আমায়? কতোটা টেনশনে ছিলাম আমি। জানটা বেরিয়ে যাচ্ছিলো আমার। তোর কিছু হয়ে গেলে আমি কি করতাম? মাকে কি বলতাম?
সায়ান তুলতুলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বিচলিত কন্ঠে বলে।
তুলতুল তাচ্ছিল্য হাসে।
মাকে কি বলবেন এটার জন্যই আমার খোঁজ চলছিলো? কতোটা গুরুত্ব আমার আপনার কাছে।
” চলে এসেছি তো।
তুলতুল বলে। সায়ানকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরায়।
তুহিন আর পাখি তাকিয়ে আছে। পাখির চোখ টলমল করছে।
তুলতুল পাখির দিকে এক পলক তাকায়।
সায়ান চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে।
“টেনশন করবেন না। আপনাকে ডিভোর্স না দিয়ে আমি কোথাও যাবো না।
ঝুলিয়ে রাখা দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা এসব আমার ক্যারেকটার নয়।
আমি হয়ত শক্ত করে ধরি নয়ত মুক্ত করে দেই।
তুলতুল মুচকি হেসে বলে।
সায়ান সরু চোখে তাকায় তুলতুলের দিকে। কি হলো হঠাৎ করে এই মেয়েটার? এমন কেনো করছে?
তুলতুল পাখির কাছে যায়।
” সরি আপু
ভুল করে থাকলে মাফ করে দেবেন। আর খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স পেপারে আমি সাইন করে দেবো।
কান্না করবে না প্লিজ।
পাখির চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে তুলতুল। পাখি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
“তুহিন ভাইয়া চলেন কফি খেয়ে আসি।
” হুমম চলো।
পাখি যাবে?
তুহিন পাখিকে জিজ্ঞেস করে।
“নাহহ আসলে আমি আর সায়ান একটু বেরোবো। অনেক আগেই যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তুলতুলকে পাওয়া যাচ্ছিলো না বলে সায়ান যায় নি এতখন।
পাখি সায়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।
” বেপার না আপু
তোমরা যাও।
এনজয় করো। তুহিন ভাইয়া চলো।
বলেই তুলতুল বড়বড় পা ফেলে চলে যায়। বুকে চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে। এটাই হওয়ার ছিলো। কোনো অধিকার নেই তুলতুলের।
পাখির জন্য সায়ান আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। পাখিকেই সায়ানের পাশে মানায়।
সায়ান এতখনে ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তুলতুলের বোকাবোকা কথা গুলো হজম করেছে। আজকে রক্ত নিতে হবে। পাখিই দেবে রক্ত। তাই কোনোরকমে সিনক্রিয়েট করতে চায় না সায়ান।
তুলতুলকে এক ধমক দিলে তুলতুল আরও পাগলামি করবে সায়ানের রাগ আরও বেরে যাবে শেষমেশ রক্ত নেওয়ার ইচ্ছেটাই মরে যাবে।
আজকেই রক্ত নেওয়ার শেষ ডেট। আজকের পর আর রক্ত নিতে হবে না সায়ানের ইনশাআল্লাহ।
তুলতুলের চলে যাওয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে সায়ান।
পাখি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সায়ানের পাশে বসে।
তুলতুল যথাসাধ্য চেষ্টা করছে হাসিখুশি থাকার। এটা সেটা নিয়ে তুহিনের সাথে বেশ মজা করছে। উপরে উপরে হাসিতে ফেটে পড়ছে কিন্তু ভেতরে রক্ত হ্মরণ হচ্ছে। কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে।
“তুমি সেদিন ভাইয়া বললা কেনো সায়ানকে? কেনো বলো নি উনি তোমার বর?
তুহিন কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে।
” বিবাহিত বললে আপনি তো ফ্লাট করতে না। মিস করতাম তো। তাই বলে নি। জাস্ট এটেনশন পাওয়ার জন্য।
এক গাল হেসে বলে তুলতুল।
যদিও তুহিন তুলতুলের কথা বিশ্বাস করে নি। তুলতুল আর যাই হোক এটেনশন পাওয়ার জন্য এসব করবে না।
“তারপর নেক্সট প্লান কি?
” অনেক কিছু
“যেমন
“একটা বছর নষ্ট হয়ে গেছে আমার। এবার বাংলাদের ফিরে ভার্সিটিতে এডমিশন নেবো। চারটা টিউশনি নেবো। হোস্টেল উঠবো। সায়ানের বাড়িতে আর থাকবো না।
ছোট থেকেই ব্যাংকার হওয়ার খুব ইচ্ছে আমার। তো চেষ্টা করবো স্বপ্ন পূরণ করার।
” ডিভোর্স?
“অলমোস্ট পেপার রেডি হচ্ছে। হাতে চলে আসলেই সাইন করে দেবো।
” তারপর?
“বললাম
” নতুন করে জীবন সাজাতে চাও না?
তুলতুল এবার কথা বলায় বেশ বিরক্ত হচ্ছে।
“আমার কফি শেষ। উঠি এবার?
ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।
তুলতুল হাই তুলে উঠে দাঁড়ায়।
” বিল দিয়ে দিয়েন।
বলেই হনহনিয়ে চলে যায় তুলতুল।
তুহিন শব্দ করে হেসে ফেলে। মেয়েটা সত্যিই অদ্ভুত।
অচেনা জায়গা, অচেনা হাসপাতাল, অচেনা ডাক্তার। পেশেন্টের প্রচুর ভির। তাই রক্ত নিতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। পাঁচ ঘন্টা সময় লেগে যায়।
তুলতুল রুমে এসে ঘুমিয়েছে। মাথা ব্যাথায় টনটন করছে। কফি খাওয়ার পর যদিও একটু ভালো লাগছিলো কিন্তু চোখ খোলা থাকলেই সায়ানের চিন্তা মাথায় আসে। আর মাথায় চিনচিন ব্যাথা করে।
তাই ঘুমিয়েছিলো।
সাড়ে পাঁচঘন্টা করে তুলতুলের ঘুম ভাঙে। শুয়ে শুয়েই পুরো রুমে এক বার চোখ বুলায়। নাহহহ সায়ান এখনো আসে নি। আসবেই বা কি করে? ভালোবাসার মানুষটির সাথে ঘুরতে বের হয়েছে যে। তাকে ছেড়ে কি আসতে ইচ্ছে করে?
শাড়ি চেন্জ করতে গিয়েও করে না তুলতুল। ঘুমানোর ফলে কুচকে গেছে৷ টেনেটুনে ঠিক করে নেয়। মাথাটা একটু আঁচড়ে নেয়।
সকাল থেকো কফি ছাড়া আর কিছুই খাওয়া হয় নি৷ ভীষণ খিধে পেয়েছে। কিন্তু তুলতুলের কাছে টাকা নেই। এখানে কিচেনও নেই। তাই পেটে হাত দিয়ে তুলতুল বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
চার দেয়ালে বন্দি থাকতে জাস্ট অসয্য লাগে।
“ইডিয়েট খাস নি কেনো?
হঠাৎ করে ধমক খাওয়াতে চমকে ওঠে তুলতুল। চট করে পেছনে ঘুরে। সায়ান খাবার ট্রলি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
চোখ মুখে রাগ বিদ্যমান।
তুলতুল কোনো কথা না বলে ট্রলি থেকে খাবার নিয়ে বেলকনির দোলনায় বসে খাওয়া শুরু করে।
সায়ানের দিকে একবার ফিরেও চায় না।
সায়ান তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ এতে পরিবর্তন কেনো? সায়ান তো কিছু করে নি। বা বলেও নি?
তাহলে এমন কেনো করছে?
পবলেম কি ওর?
চেয়েও জিজ্ঞেস করতে পারছে না সায়ান। জিজ্ঞেস করলেই ত্যাড়াব্যাকা করে উপর দেবে এটা জানা আছে সায়ানের।
খাবারের ট্রলিটা এক পাশে রেখে সায়ান তুলতুলের পাশে এসে বসে।
” পবলেম কি?
তুলতুল উওর না দিয়ে খেতে থাকে।
“রাগিয়ে দিস না আমায়।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।
তুলতুল খাওয়া বন্ধ করে। সায়ানের দিকে তাকায়।
” আপনি এখন রেগে নেই?
চোখ পিটপিট করে প্রশ্ন করে তুলতুল।
“জাস্ট সয্য হয় না তোকে।
তুলতুল একটু হাসে।
” জানি আমি। তাই চলে যাওয়ার প্লান করে ফেলেছি। খুব দ্রুতই চলে যাবো।
মুখে খাবার পুরে বলে তুলতুল।
সায়ান তুলতুলের থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। তুলতুল ভেংচি কাটে। একটুও অবাক হয় নি তুলতুল। ও মনে মনে জানতো এমনটা হলেও হতে পারে। সেটাই হলো।
সায়ান আচমকা তুলতুলকে দোলনার সাথে চেপে ধরে। রাগে থরথর করে কাঁপছে।
তুলতুল ফোঁস করে শ্বাস নেয়।
“কিস করবেন আমায়?
এটা তো জীবনেও করবেন না্ তাহলে কথায় কথায় আমাকে চিপে ধরে কি বোঝাতে চান?
আপনার অনেক শক্তি?
তুলতুল সায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।
” দেখুন মিস্টার আমার সাথে এরকম চিপে থেকে কোনো লা
আর কিছু বলতে পারে না তুলতুল। তার আগেই সায়ান নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের ভাজে তুলতুলের ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে দেয়। স্তব্ধ হয়ে যায় তুলতুল। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। খামচে ধরে সায়ানের শার্টের কর্লার।
চলবে…….