আমার তুমি
পর্ব ৩৬
#তানিশা সুলতানা
ফ্লোরে হাঁটু মুরে বসে কান্না করছে তুলতুল। সায়ান চলে গেছে পাখির সাথে। একবারও পেছন ঘুরে তাকায় নি সায়ান।
তুলতুল সায়ানের একটা শার্ট পরে নিয়েছে। ভীষণ অসহায় লাগছে। এমনটা কেনো হয়? কেনো সব ঝামেলা রাগ অভিমান ভুলে সায়ান বুকে টেনে নেয় না? কেনো সব সময়,ভুল বোঝাবুঝি হয়?
আর ভাবতে পারছে তুলতুল। চুল খামচে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। এই অভিমান মেটাবে না তুলতুল। কিছুতেই না। আর অসহায়ের মতো পরে থাকবে না।
কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়ে তুলতুল।
সায়ান অফিসের কাজে বেরিয়েছে। বারো লাখ টাকা লোন নেবে আজকে। সেই টাকাটাই আনতে গেছিলো। পাখি ওর বাবা কাছে যাবে তাই পাখিকে সাথে করে নিয়ে গেছে।
মেজাজ বিগড়ে আছে সায়ানের। পাখি এটা সেটা নানা কথা বলছে কিন্তু সায়ান কানে তুলছে না।
হঠাৎ করে ইফাদকে দেখে সায়ান ভয় পেয়ে যায়। গলা শুকিয়ে আসছে।
এ এখানে চলে এসেছে? এবার?
তারাহুরো করে আড়ালে চলে যায় সায়ান ইফাদের সামনে পড়া যাবে না। ইফাদকে জানতে দেওয়া যাবে না যে ওরা এখানে।
লিফট থেকে নেমেই সায়ান একটা দোকানে ঢুকে পড়ে। পাখি সায়ানের দেখাদেখি ওই দোকানে যায়।
“এভাবে তারাহুরো করে আসলে কেনো?
পাখি সায়ানের কাঁধে হাত দেয়। চমকে ওঠে সায়ান। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। একটু হাসার চেষ্টা করে।
” ফফুল কিনবো তাই।
“কিন্তু এটা তো কসমেটিকসের দোকান।
ভ্রু কুচকে বলে পাখি। বিরক্ত হয় সায়ান।
” ভাই লাল নীল কালো সবুজ যত কালারের কাচের চুরি আছে সব গুলো এক মুঠ করে দিন।
দোকানদারকে বলে সায়ান।
“এগুলো দিয়ে কি করবে?
পাখি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে?
“ফেরি করবো বাংলাদেশ গিয়ে।
” কিন্তু
“জাস্ট সাট আপ পাখি। যাবে তো বাবার কাছে? যাও
ওপরেই উনি আছে।
রাস্তা দেখিয়ে বলে সায়ান। পাখি খানিকটা অপমানিত হয়৷ কোনো কথা না বলে চলে যায়।
সায়ান চুরি গুলোর দাম দিয়ে দোকান থেকে চলে যায়।
পিটপিট করে চোখ খুলে তুলতুল। মাথার ওপরের পেস্ট কালার ছাঁদের দিকে কিছুখন তাকিয়ে থাকে। বিষন্ন লাগছে সব কিছু। এখনো সায়ান আসে নি।
ফ্লোর থেকে উঠে খাটে গিয়ে বসে তুলতুল।
তুলতুলের ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে বাবা নামটা ভেসে উঠেছে। বিরক্ত হয় তুলতুল। বাবাকে সয্য হচ্ছে না। বাবার জন্যই সবটা হলো। কেনো করলো এমন বাবা? ওনার তো টাকা পয়সা কম ছিলো না৷ একটা মেয়েকে পড়ালে কি উনি ফকির হয়ে যেতো।
ওনার মেয়েটার তো মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারতো।
এসব ভাবনার মাঝেই ফোন কেটে যায়। আবার বেজে ওঠে ফোন। তুলতুল সময় নষ্ট না করে রিসিভ করে।
” বলো?
চোখ বন্ধ করে বলে তুলতুল।
“কেমন আছো তুমি?
” ভালো। তুমি?
“ভালো। তাদের জ্বর হয়েছে।
” ওহহহহ
“তোমার দাদিমায়ের শরীর খারাপ। দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতালে আছে।
” ওহহহহহ
“কিছু বলবে না? একবার আসবে না দেখতে?
” একবার কেনো? বাংলাদেশ ফিরে তো ওখানেই থাকতে
বাকি কথাটা শেষ করার আগেই কেউ ফোনটা টেনে নিয়ে যায়।চমকায় না তুলতুল। কারণ ও জানে কাজটা সায়ান ছাড়া আর কারোর না।
মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে তুলতুল। একবার তাকায়ও না। সায়ান কল কেটে দেয়।
“বেড থেকে নেমে দাঁড়া। সায়ান বলে।
তুলতুল পাল্টা কিছু বলে না। বেড থেকে নেমে বেলকনিতে চলে যায়। সায়ান আটকায় না।
বিছানায় গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দেয়। চুড়ি গুলো ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখে।
ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।
সায়ান ওয়াশরুম থেকে বের হতেই তুলতুল ঢুকে। চোখে মুখে পানি দেয়। সাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন ছিলো কিন্তু ড্রেস নেই বিধায় সাওয়ার নিতে পারলো না।
তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে বের হয়।
” আমাদের দেনমোহরের টাকা।
এক ব্যাগ টাকা তুলতুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে সায়ান। তুলতুল সেদিকে তাকায়ও না। চুপচাপ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখ মুছতে থাকে৷
সায়ান সরু চোখে তুলতুলের দিকে তাকায়।
“এতদিন আমার কাছে টাকা ছিলো না। থাকলে বিয়ের রাতেই দিয়ে দিতাম।
টাকা গুলো বাংলাদেশে গিয়েও দিতে পারতাম। কিন্তু এখান থেকেই দিলাম। কেনো দিলাম জানিস?
সায়ান টাকা গুলো বিছানার ওপর নামিয়ে রাখে। বা হাত দিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে তুলতুলের পেছনে দাঁড়িয়ে তুলতুলের ঘাড়ে থুতনি রাখে।
তুলতুল হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে থাকে।
” আমি তোকে একদম নিজের করে চাই? আর তা এখনই। আর পাঁচটা স্বাভাবিক দম্পতির মতো থাকতে চাই।
তুলতুলের ঘাড়ে ঠোঁট ছুয়িয়ে বলে সায়ান।
তবুও তুলতুল কিছু বলে না। চোখ বন্ধ করে নেয়।
“আমি জানি তুই আমার সাথে স্বাভাবিক হতে চাস। তাই আর তোর থেকে পারমিশন নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না।
তুলতুলকে কোলে তুলে নেয় সায়ান। খাটের মাঝখানে শুয়িয়ে দেয়।
” তোর জন্য ড্রেস এনেছি আমি। সেগুলোই পড়বি। সাজুগুজু করে বাইরে যাওয়া যাবে না। শাড়ি পড়া যাবে না।
হ্যাঁ পড়বি বেডরুমে। সাজবি আমার জন্য। আমাকে দেখাবি।
বুঝেছিস?
তুলতুলের পাশে চিৎ হয়ে শুয়ে বলে সায়ান।
“আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না।
তুলতুল স্পষ্ট গলায় বলে।
” তো?
“ডিভোর্স দিতে চাই।
সায়ান মৃদু হাসে। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে তুলতুলকে। চমকে ওঠে তুলতুল। সায়ান তুলতুলের ঘাড়ে নাক ঘসে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় তুলতুল।
“আর আমি বেবি চাই।
সায়ান তুলতুলের কানে ফিসফিস করে বলে। বড়বড় চোখ করে তাকায় তুলতুল সায়ানের দিকে। সায়ানের চুল ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না। কারণ সায়ান ওর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে আছে।
” দদদেখুন
তুলতুল কাঁপা কাঁপা গলায় বলে।
“দেখা দেখতেই তো চাই।
সায়ান একটু হেসে বলে। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে তুলতুল। বজ্জাত লোক একটা।
শ্বাস আটকে আসছে তুলতুলের।
” এএএটা ঠিক
তুলতুল বলতে গিয়ে বলতে পারে না। কথা গুলো আটকে আসছে। সায়ানের ছোঁয়া বেহায়া হয়ে যাচ্ছে ধিরেধিরে।
শার্টের ভেতর হাত গলিয়ে দেয় সায়ান। দুজনের ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে নেয়। তুলতুল চেয়েও আটকাতে পারে না।
ঘড়ির কাটায় বারোটা বেজে এক মিনিট। তুলতুল সায়ানের দিকে পেছন ফিরে শুয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এমনটা হবে ভাবে নি৷ হঠাৎ কি হলো সায়ানের?
সায়ানের মুখটা উজ্জল হয়ে উঠেছে। বেশ ফুরফুরে দেখাচ্ছে ওকে।
তুলতুলের দিকে তাকিয়ে শুয়ে ছিলো সায়ান। হঠাৎ ঘড়ির কাটা টিকটিক করতেই। সায়ান তুলতুলের থেকে চোখ ফেরায়। নিধারিত সময় চলে আসাতে ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে।
“হ্যাপি বার্থডে তুলতুল।
সায়ান তুলতুলকে টেনে বসিয়ে বলে। তুলতুল মাথা নিচু করে আছে। কোনো রিয়েক্ট করে না।
সায়ান চুড়ির প্যাকেট আনে। সেখান থেকে নীল আর খয়েরী চুরি নেয়। তুলতুলকে কোলে বসিয়ে পরম যত্নে তুলতুলের হাতে চুরি পড়িয়ে দিতে থাকে।
“,এমনটা কেনো করলেন?
লাল হয়ে যাওয়া চোখ দুটো মেলে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে তুলতুল। কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ফুলে গেছে। এখনো পরনে সেই সায়ানের শার্ট। তবে এবার উল্টো করে পড়েছে। কোনো রকমে গায়ে জড়িয়েছে। উল্টো এটা খেয়াল ছিলো না তুলতুলের।
সায়ান মৃদু হাসে।
” বললাম বেবি চাই আমার। তাই এমনটা করলাম
তুলতুলের মাথায় চুমু দিয়ে বলে। মুহুর্তেই চোখে মুখে ভয়ংকর রাগ ফুটে ওঠে তুলতুলের। এরা পেয়েছে কি? ইচ্ছে হলে বিয়ে দিয়ে দেবে বাবা। আবার বরের ইচ্ছে হবে বেবি নিতে হবে৷ তুলতুলের কি নিজের কোনো সিদ্ধান্ত নেই?
ও কি মানুষ না?
“আর আমার ডিভোর্স চাই। অনেক হয়ে গেছে আর না।
চেচিয়ে বলে তুলতুল।
“আজ তোর জন্মদিন। অনেক কিছু প্লান করেছি তোর জন্য। অনেক হিসেব মেলানো বাকি। এর মধ্যে আমাকে রাগিয়ে দিস না। তাহলে শাড়ির মতো তোকেও জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবো।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।
চলবে………..