#বিচ্ছেদ পর্ব ১৮
আশিক স্থির চোখে তাকিয়ে আছে ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে। এতো গভীর আনন্দ কতোদিন আগে তাকে ছুঁয়ে গেছে মনে করতে পারছেনা…
“হয়তো আরো একবার তোমার সঙ্গে, গোটা শহর ঘুরে ঘুরে খুঁজে বের করতে পারি একটা শিউলি গাছ…কুয়াশা ভোরে ধোয়া ওঠা কফির মগে দিতে পারি আয়েশি চুমুক…গভীর আনন্দে ঘুরতে পারি একুশের বইমেলায়… সেই পুরনো দিনের মতো।”
আশিক গভীর মনোযোগ দিয়ে আবার পড়লো মেইলটা।
রিয়া লিখেছে তাকে।বিশ্বাস হতে চাইছে না।
যদিও রিয়াকে মেইল পাঠাবার পর থেকেই প্রতি মূহুর্ত্যে রিয়ার কাছ থেকে এইরকম একটা মেইল পাবার আশা নিয়ে অপেক্ষা করেছে আশিক।
মেইলটা রিয়াই করেছে।
এটা রিয়ার স্টাইল। এভাবেই লিখতো ও।
একবার আশিকের জন্মদিনে লিখেছিলো,
“মায়ের জন্য আজ আমার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা রইল….কারণ এরকম একটি দিনে তিনি তোমাকে জন্ম দিয়েছিলেন।”
একটু আলাদা অন্যদের থেকে।
বিয়ের পর রিয়া ভোর বেলা শিউলি কুড়োবে বলে বায়না ধরেছিলো। আশিকদের বাসার আশে-পাশে কোন শিউলি গাছ ছিলোনা।
ওরা ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে শিউলি গাছ খুঁজে বের করেছিলো। রিয়া কি যে খুশী হয়েছিলো সেদিন !
রিয়া কি সত্যিই ফিরবে তার জীবনে ?
নিজেকেই যেন প্রশ্ন করলো আশিক।
রায়নার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে দু’দিন হলো। প্রথম দিন ইংলিশ ছিল। ওর প্রিপারেশন খুবই ভাল।
রায়না সব বিষয়েই ভালো নম্বর পায়।
রিয়া মহা ব্যস্ত থাকে বছরের এই সময়টাতে। স্কুলের পরীক্ষার আগে থেকে শুরু হয় প্রশ্নপত্র তৈরী করার মধ্য দিয়ে ওর ব্যস্ততা।
এরপর পরীক্ষা, খাতা দেখা, রেজাল্ট শীট তৈরী করা। নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকেনা। তার মধ্যে রায়নার পরীক্ষা।
ওকেও তো একটু পড়াতে হয়।
প্রথম পরীক্ষার দিন সকালে আশিক ফোন করেছিলো মেয়েকে উইশ করার জন্য।
পরীক্ষা শুরুর দিন থেকে অবশ্য প্রতিদিনই সকালে ফোন করছে রায়নার সঙ্গে কথা বলার জন্য।
মেয়েকে উইশ করে সেদিন জানতে চেয়েছে রিয়া কেমন আছে।
রিয়া আশিককে মেইল করেছে।
কিন্ত এখন পর্যন্ত কথা হয়নি। স্কুলের ঝামেলা শেষ হলে দেখা যাবে। আশিক ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট্ট একটা মেইল পাঠিয়েছে রিয়াকে।
আজ পরীক্ষার হলে একটি মেয়ে হট্যৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। ক্লাস নাইনে পড়ে মেয়েটি।
সকালে ঠিকমতো খায়নি, তার উপর পরীক্ষার টেনশনে মাথা ঘুরে উঠেছিলো।
তাড়াতাড়ি তাকে ধরে সিক রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। ভিপি ম্যাডাম দেখতে এসে একটু রাগ করলেন, ‘এতটুকুন সব মেয়েরা, এখনই ডায়েটিং করে…ঠিকমতো খায়না…কি করে এতো ধকল সহ্য হবে শরীরে ?’
রিয়া হেসে ফেললো ম্যাডামের কথা শুনে।
ম্যাডাম বললেন,
— হেসো না রিয়া । এটাই করে ওরা। দাড়াও আগামী বছরের শুরুতে প্যারেন্টস মিটিং এ এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে অভিভাবকদের সঙ্গে।
ডায়েটিং করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে যাবে মেয়েরা !
আমরা তো এমন ছিলাম না ? এখনকার মেয়েরা এমন কেন বলো তো ?’
এদিকে আবার অসুস্থ মেয়েটিকে তিনি আদর করে গ্লুকোজ পানি খাওয়ালেন নিজ হাতে। তারপর একটু সুস্থ হয়ে উঠলে আবার পরীক্ষার হলে পাঠাবার ব্যবস্থা করলেন।
রিয়া ভিপি ম্যাডামকে যতো দেখে ততো মুগ্ধ হয়।
ওর মাঝে মাঝে মনে হয় তিনি এই স্কুলের সকলের মা।
তিনি না থাকলে এই স্কুল মা হারা হয়ে যাবে।
রাতে ঘুমোতে যেতে দেরী হচ্ছে রিয়ার গত ক’দিন যাবৎ। পরীক্ষার খাতা চেক করতে করতে বেশ রাত হয়ে যায়। ডিসেম্বরেই রেজাল্ট দেয়া হয় তাদের স্কুলে। কাজেই যেসব পরীক্ষা হয়ে গেছে, সেগুলোর খাতা দেখাও শুরু করে দিয়েছে ওরা।
সাধারণত ; ডিসেম্বরের বিশ তারিখের মধ্যেই রেজাল্ট হয়ে যায় ওদের স্কুলে। এবার ছুটিতে রায়নাকে নিয়ে কোথাও একটা বেড়াতে যেতে হবে।
গ্রামের দিকে গেলে কেমন হয় ?
ভালোই হবে মনে হয়।
গ্রামের শীত একটু অন্যরকম।
সকালের নরম রোদে পিঠ লাগিয়ে বসে রোদ পোহানো আর গরম গরম ভাপা পিঠা খাওয়ার মজাটাই আলাদা।
গাছ থেকে সতেজ শাক্-সবজি তুলে রান্না করে খেতে দারুণ লাগে।
নদীর পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি…
এই আনন্দগুলো অবশ্যই রায়নাকে দিতে হবে। রিয়া পাতলা কম্বলটা গায়ে টেনে নিয়ে আলোটা নিভিয়ে দিল।
আজ রায়নার রেজাল্ট দিয়েছে।
সব বিষয়েই খুব ভাল নম্বর পেয়েছে। সে খুব খুশী। বাবাকে রেজাল্ট জানানোর জন্য অস্থির হয়ে আছে।
এক নম্বরের জন্য প্রথম হতে পরেনি।
ক্লাসে দ্বিতীয় হয়েছে। রিয়া বলেছে,
— তাতে কি হয়েছে ? পাঁচটা শাখা মিলে দ্বিতীয় হয়েছো এটা কম কি ?
আশিক ফোন করেছে। প্রচন্ড উৎফুল্ল হয়ে কথা বলছে বাপ-মেয়ে। আশিক খুব খুশী মেয়ের রেজাল্টে।
স্পিকার অন করে কথা বলছে রায়না।
আশিক বলছে,
—তোমার মাকে আমার পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ। তোমার জন্য তোমার মা এতো কষ্ট করেছেন বলেই তুমি এতো ভালো রেজাল্ট করেছো।
রায়না কল কল করে কথা বলে যাচ্ছে তার বাবার সঙ্গে। রিয়া চায়ের মগ আর পেপার নিয়ে শোবার ঘরের বারান্দায় চলে এলো।
আজ থেকে স্কুল ছুটি।
ছুটির কয়টা দিন গ্রামে যাবে ঠিক করলো।
আজ বিকেলে বাবা এসে রায়নাকে নিয়ে যাবে ও বাসায়। রিয়া কাল সকালে রহিমা খালাকে নিয়ে একবারে যাবে। রিয়ার বড় বোনও আসবে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে।
তারপর ওরা সবাই মিলে একসঙ্গে রিয়ার দাদা বাড়ী যাবো।
আজ রাতে কোরআন শরীফের অনুবাদ নিয়ে বসতে হবে। এ ক’দিন যা ঝামেলা গেল যে এ ব্যাপারটা নিয়ে ভাববারও সময় পায়নি রিয়া।
আশিকের সঙ্গে কথা বলতেও হবে।
বিকেলে রায়না তার নানাভাই এর সঙ্গে চলে গেল নানার বাসায়। খুব খুশী সে, বহুদিন পর নানাু-নানুর সঙ্গে একা সময় কাটাতে যাচ্ছে।
যদিও আগামীকালই মা চলে আসবে।
তবুও আজ সে একা যাচ্ছে।
মা তাকে একটু বড় ভাবছে তাহলে !
নানুবাসায় যাওয়ার পথে নার্সারী আছে একটা,সেখানে রিক্সা থামিয়ে ২/৩ গাছের চারা কিনলো। আজ নানু বাসায় গিয়ে ছাদে গাছ লাগাবে। রায়না খুব খুশী আজ।
সারাদিন খুব আনন্দে কাটছে তার।
আগামীকাল চিটাগং থেকে নেহা আপুরা আসবে।
কি মজা !
বড় খালামনি কত্তো আদর করে ওকে। নেহা আপু, নেহাল ভাইয়া সবাই আসবে। ওরা একসঙ্গে গ্রামে বোড়াতে যাবে। এবার গ্রামে গেলে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা শিখবে রায়না।
নেহাল ভাইয়া বলেছে,
— রায়না তোকে এবার মাছ ধরা শিখিয়ে দেবো।
রায়না খুব দুঃচিন্তায় আছে। কারণ,তার তো কোন বড়শী নেই !
তবে নানাভাই বলেছেন,ওখানে সব ব্যবস্থা করা আছে।
রায়না পুরোটা বিকেল ছাঁদে গাছ লাগিয়ে কাটালো।
বুয়া সাহায্য করেছে। এমনকি নানা ভাইও সঙ্গে সঙ্গে থেকেছেন।
রায়নার ভীষণ ভাল লাগছে নিজ হাতে গাছ লাগাতে পেরে। সন্ধ্যার আগে আগে সে সদ্য লাগানো গাছ গুলোতে পানি দিলো।
রিয়া আছরের নামাজ শেষ করে কোরআন শরীফের অনুবাদ নিয়ে বসলো।
২য় পারা, সুরা বাকারার ২২৬ নম্বর আয়াত থেকে পড়তে শুরু করলো,” যারা স্ত্রীর সাথে সংগত না হওয়ার শপথ করে,তারা চার মাস অপেক্ষা করবে।অতঃপর যদি তারা মিলে যায়,তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
(২২৭) আর যদি তারা তালাক দেয়ার সংকল্প করে তবে আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।”
রিয়া পড়তে লাগলো… “(২৩০)অতঃপর সে যদি তালাক দেয় তবে অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী তার জন্য বৈধ হবে না;অতপর সে (২য় স্বামী) যদি তালাক দেয় আর উভয়ে মনে করে যে, আল্লাহ্ র নির্দেশিত পথে চলতে পারবে তবে তাদের পূর্ণমিলনে কোন দোষ হবে না। এগুলো আল্লাহ র সীমারেখা। জ্ঞানী লোকদের জন্য তিনি এগুলো স্পষ্ট বর্ণনা করেন।”
রিয়ার গলা শুকিয়ে আসছে।
মাথা ঝিম ঝিম করে উঠলো।
রিয়া কোরআন শরীফ বন্ধ করে উঠে পড়লো।
মূল বিষয়টা বুঝতে পারলেও পুরোপুরি স্পষ্ট হলোনা রিয়ার কাছে।
পূর্ণমিলন সহজ কোন ব্যাপার নয় এটুকু বুঝতে পারছে।
সে এক কাপ চা খেলো।
অস্থির লাগছে রিয়ার। বিষয়টা পরিষ্কার হওয়া দরকার।
রিয়া গুগলে তালাক লিখে সার্চ দিলো।
অনেকক্ষণ ধরে এটার উপরে যাবতীয় সঠিক তথ্য এবং সেই তথ্যের ব্যাখা জানার চেষ্টা করলো। রিয়া বোখারী শরীফের ২য় খন্ডের ৭৯১ পৃষ্ঠায় কোরআন শরীফে দেয়া তালাকের ব্যাখাটা পেয়ে গেলো।
রিয়া ব্যাখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়লো,
“যখন কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দেয়,তখন তার স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যায়।সে তখন তার স্ত্রীকে আর ফিরিয়ে নিতে পারেনা স্ত্রী হিসেবে। ইদ্দত পালনের সময়েও না, শেষেও না।
যদি সে তার স্ত্রীকে আবার ফিরিয়ে নিতে চায় এবং স্ত্রীও পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরে আসতে চায়,তাহলে তার স্ত্রীকে অন্য একজন ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে এবং ২য় স্বামীর সঙ্গে সহবাস করতে হবে। তারপর ২য় স্বামী যদি তাকে কোন কারনে তালাক দেয় বা তার মৃত্যু ঘটে, তাহলে এই নারী তার প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে আসতে পারবে। তা না হলে নয়।
শুধুমাত্র একটি চুক্তির মাধ্যমে কাউকে বিয়ে করে (সহবাস ছাড়া) ২য় স্বামী থেকে তালাক নিয়ে প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়া যাবেনা। এটাকে ইসলাম সমর্থন করে না।”
রিয়ার অবসন্ন লাগতে লাগলো।
বুকের ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে ওর।
এমন কঠিন অবস্থার সম্মুখিন হতে হবে কোনদিন ভাবেনি। রিয়া কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না।
সন্ধ্যার ছায়া নেমে এসেছে ঘরে।
রিয়া চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।
আকাশ-পাতাল ভাবছে।
কোন কূল-কিনারা খুঁজে পেলো না।
এতো অদ্ভুত, এতো কঠিন নিয়ম কেন?
এটা নিয়েই ভাবছে রিয়া।
কতো কিছুই জানিনা আমরা, না জেনেই কতো কি করে বসে থাকি, ভাবলো রিয়া।
নিজের উপর রাগ হলো ওর।
যখন আশিকের সঙ্গে ডিভোর্স হয়েছিলো, তখন তো উচিৎ ছিলো,ডিভোর্স সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়টা নিয়ে খোঁজ -খবর করা, এই বিষয়ে ভালমতো জানার চেষ্টা করা।
তারপর ডিভোর্সের মতো এতো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেয়া। রিয়া সেটা করেনি। তখন তো রাগ, জেদ,অভিমান এগুলো নিয়েই বেশী ভেবেছে রিয়া।
আর তখন আশে পাশের আত্মীয় পরিজন অনেকেই ওর সিদ্ধান্তকেই সাপোর্ট করেছিলো, বাবা-মা ছাড়া।
আজ রিয়া ভালো করে বুঝতে পারছে, বাবা-মা কেন এতোবার বলেছিলেন, আশিকের কাছে ফিরে যেতে।
আচ্ছা, আশিকও কি তার মতোই কোন কিছু না জেনেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো ?
নাকি সব জেনেই করেছিলো ?
রিয়ার ধারনা, আশিকও রাগের মাথায় ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।
বেশীর ভাগ মানুষই তাই করে।
কিন্তু করা একেবারেই উচিৎ নয়, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কোন ছেলে-খেলার জিনিস নয়।
পবিত্র একটা সম্পর্ক এটা।
এই সম্পর্ককে অনেক যত্নের সাথে পরিচর্যা করতে হয়। রক্তের সম্পর্কগুলোর মাঝে যা কিছুই ঘটুক.. ফিরে ফিরে আসে বেশীর ভাগ সময়ই।
কিন্তু যে সম্পর্কের ভিত্ কলমা বা মন্ত্র পড়ে, কাগজে সই করে সৃষ্টি হয়,তারপর দু’জন মানুষের শরীর এবং মনের আদান-প্রদানের মধ্যে দিয়ে যে সম্পর্কের ভিতকে আরো শক্ত করতে হয়, সেই সম্পর্ককে যত্ন আর পরিচর্যা ছাড়া কি ধরে রাখা যায় ?
রিয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
এতোটা বোঝার ক্ষমতা বা মন তার কেন ছিলোনা এগারো বছর আগে ?
রায়নার মুখ মনে পড়লো !
বাবা-মা দু’জনকেই পাশে চায় মেয়েটা।একজন সন্তানের পক্ষে খুব ন্যায্য চাওয়া। বাবা-মায়ের কোন অধিকার নেই সন্তানকে এভাবে বঞ্চিত করা।
তবুও,অপরিনামদর্শি বাবা-মায়েরা শুধু নিজেদের কথা ভেবেই আলাদা হয়ে যায়।
রিয়া-আশিক যেমন করেছিলো।
রায়নার একটু সুখের জন্য কতো কিছুই না করার চেষ্টা করে রিয়া। অথচ,সেদিন একবারও ভাবেনি, যেভাবে আজ ভাবছে।
কিন্তু আসলেই কি চাইলেই সব করা যায় ?
রিয়া কতোটুকু করতে পারে ?
রিয়া মেয়েকে সুখী সুন্দর একটা জীবন দিতে চায় কিন্তু নিজেকে এতোটা অসম্মানিত করে কি চায় ?
অসম্মানই বটে।
আশিকের সঙ্গে নতুন করে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে চাওয়ার জন্য রিয়া কি এমন কিছু করবে যা তার জন্য মর্যাদা হানিকর ? একেবারেই অনভিপ্রেত ?
রাতে মা ফোন করে জানতে চাইলেন, সকালে কখন আসবে রিয়া। কাল নয় পরশুদিন মার ওখানে যাবে রিয়া মাকে জানিয়ে দিলো।
রিয়ার এই মুহুর্ত্যে যা মানসিক অবস্থা তাতে সবার সঙ্গে হৈ চৈ করার মতো অবস্থায় নেই।
রাতে ভিপি ম্যাডামকে ফোন করে সকালে দেখা করতে চাইলো। ম্যাডাম সকালে যেতে বললেন তার বাসায়।
সারারাত ঠিক মতো ঘুমোতে পারলো না রিয়া।
এপাশ-ওপাশ করলো।
ঘুরে-ফিরে রায়না আর আশিকের মুখ মনে পড়তে লাগলো।
রাতটা খুব দীর্ঘ মনে হলো।
আশিক গভীর মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে পুরো বিষয়টা। ওর চোখ ল্যাপটপের স্ক্রিনে।
গতকাল রাতে নিউইয়র্কে বসবাসরত সব স্কুল-বন্ধুদের গেট-টুগেদার ছিল।
তুমুল আড্ডার সময় বন্ধুরা আশিককে খোঁচাখুঁচি শুরু করেছিল আর কতোকাল এরকম একা থাকবে বলে।
বন্ধুদের এই কথার জবাবে আশিক স্বানন্দে জানিয়েছিল, তার জীবনের হারিয়ে যাওয়া আনন্দকে নতুন করে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনার কথাটা।
সবাই খুব খুশী হয়েছিলো শুনে।
তবে শামীম বলছিল কিছু নিয়মের কথা।
নতুন করে শুরু করতে কিছু নিয়ম মানতে হবে এবং সেই নিয়ম নাকি যথেষ্ট কঠোর।
আশিক কিছুটা জানে। তবে আজ ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছে। রিয়াকে ফিরে পেতে চেয়েছে, কিন্ত এই দিকগুলোর কথা ভাবেনি একেবারেই।
কিন্তু ভাবতে হবে অবশ্যই।
আশিকের মধ্যে ধর্ম নিয়ে কোন ধরনের গোঁড়ামী নেই, তবে আশিক ধর্মীয় নিয়মগুলো যতোটা সম্ভব ভালো ভাবে মেনে চলার চেষ্টা করে।
তাই আশিক জেনে বা না জেনেও কোন ধরনের ভুল কাজ করতে চায়না।তালাকের উপরে কোরআন শরীফে পরিষ্কার নির্দেশনা আছে।
এতোক্ষণ,সেটায় পড়ছিলো সে।
অস্থির বোধ করছে আশিক।জানার মধ্যেও এতোকিছু অজানা ছিলো ?
ফিরে পাওয়ার আনন্দে আচ্ছন্ন আশিকের মন বিষর্ন্ন হয়ে উঠলো। কি হবে এখন ?
রিয়াকে ছেড়ে নতুন করে যখন শুরু করেছিল নীলার সাথে,তখন রিয়ার কষ্ট হয়েছিল নিঃসন্দেহে। আজ খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছে আশিক।
রিয়াকে ফিরে পেতে গেলে যা করতে হবে সেটা কি মেনে নিতে পারবে সে ?
প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে আশিকের।
আজ এতোদিন বাদে আশিকের মনে হচ্ছে, দাম্পত্য জীবনে যতো ঝামেলায় আসুক না কেন,খুব ভেবে চিন্তে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ সকল দম্পতির।
যদি এমন হয়, আর কোন ভাবেই একসাথে থাকা যাচ্ছে না এবং আবার কোনদিন ভুল ভেঙে ফিরে আসার কোন সম্ভবনাও নেই, তবেই শুধুমাত্র ডিভোর্স দেয়া উচিৎ একে অপরকে।
কারণ, ইসলামে তালাককে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম জায়েজ কাজ হিসেবে ধরা হয়।
নিকৃষ্টতম জায়েজ এজন্য বলা হয় কারণ, স্বামী-স্ত্রীর সামান্য ভুলে,রাগে বা দোষের পরিপ্রেক্ষিতে তালাকের মতো ঘটনা ঘটে।
তারপর, কোন এক সময় কোন কোন দম্পতির ভুল ভাঙে এবং তারা আবার পূর্ব সম্পর্কে ফিরতে চায়।
এই ফিরে আসাটা তখন আর খুব সহজ হয়না।
কারণ, একজন নারীর পক্ষে অন্য কাউকে বিয়ে করে (সহবাস সহ), আবার ২য় স্বামীর থেকে তালাক নিয়ে ১ম স্বামীর কাছে ফিরে আসাটা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হলো আশিকের।
তবে, কেউ যদি ২য় বিবাহ করে ( সহবাস ছাড়া) ২য় স্বামীর কাছ থেকে কোন কারণ ছাড়াই তালাক নিয়ে ১ম স্বামীর কাছে ফিরে যায়,সেটা জায়েয হবেনা।
কারণ,ইসলাম এটাকে সমর্থন করেনা।
আশিক নিজেকে ধিক্কার দিলো মনে মনে, তাদেরও কি অদৌ এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিলো ?
এভাবে আলাদা হওয়ার মতো ?
শুধুমাত্র রাগ আর জেদের বসে সম্পর্কটাকে তিক্ত করে তুলেছিল ওরা। আজকের দিনের কথা একবারও মাথায় আসেনি।
রায়নার জন্মের পরই তো তাদের বিচ্ছেদ ঘটেছিল।
কেন তখন রায়নার কথাটা একবারও ভাবেনি আশিক ?
আজ যেমন ভাবছে ???
(চলবে )
#উপন্যাস_বিচ্ছেদ
#কাকলী_প্রকাশনী
#প্রকাশকাল_গ্রন্থমেলা_২০১৮
#লেখক_মাশাওফি_আমিন
মাশাওফি আমিন
১৭.০৫.২০২১