তুমিঅন্য কারো সঙ্গে বেঁধো_ঘর (২৭)
তাহেরা বেগমের রাতে ঘুম ভালো হয় নি।বারবার ঘুম ভেঙে গেছে।ঘুমে ধরেছে ভোররাতের দিকে। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে তার সকাল ১০:২৫ বেজে গেলো।
এতো দেরিতে ঘুম ভাঙ্গায় তাহেরা বেগম আঁতকে উঠলেন।
এতো বড় পরিবার থেকে আজ সম্বন্ধ আসছে,তাদের সামনে সেই অনুপাতে তো খাবার দিতে হবে।অথচ তিনি তো এখনো বিছানায়।নিজের উপর নিজের রাগ হলো খুব।তাড়াতাড়ি করে উঠে বের হয়ে দেখেন খাবারের ঘ্রাণ আসছে রান্নাঘর থেকে।
পা টিপে টিপে তাহেরা বেগম রান্নাঘরের দিকে গেলেন।গিয়ে দেখেন নিতু চুলায় পিঠা বানাচ্ছে ।টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন অনেকগুলো খাবারের ডিশ দেখা যাচ্ছে। হৃষ্টচিত্তে তাহেরা বেগম এসে দেখতে লাগলেন কি কি করা হয়েছে।
দেখে তিনি ভীষণ চমৎকৃত হলেন।ইতোমধ্যে বিফ রেজালা,চিকেন রোস্ট, কোরমা,মাটন,ইলিশ ভাজা,ডিমের কোরমা,চিংড়ি দিয়ে করলা ভাজি,দুই রকম ভর্তা,ফ্রাইড রাইস,চিলি চিকেন,চাইনিজ ভেজিটেবল, চিংড়ির মালাইকারি,দুধ পুলি,দুধ চিতই,পায়েস বানিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
এতো আইটেম দেখে তাহেরা বেগমের চমক লেগে গেলো। তিনি নিজেও এতো আয়োজন করতেন না নিশ্চিত। মনে মনে ভীষণ ভালো লাগলো তার।
তবুও কিচেনে ঢুকে বললেন,”এসব আদিখ্যেতা দেখাতে কে বলছে তোমাকে?আমার মেয়ে যখন, আমার তো ঠেকা পড়েছে।আমার কাজ আমি নিজেই করতাম।তোমার এতো দয়া দেখিয়ে কাজ করতে হবে না আমার মেয়ের জন্য। কে জানে কোন খাবারে কি মিশিয়ে রেখেছ!”
নিতুর সারা শরীর ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে আছে। সারা মুখ লাল হয়ে গেছে সেই রাত থেকে চুলার পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে করতে। তাহেরা বেগমের কথা শোনার পর নিতু বললো, “এই যে এখানে পাটিসাপটা পিঠা বানানোর ডো করা আছে,ক্ষীর করা আছে।ক্ষীর দিয়ে বাকি পিঠা আপনি বানিয়ে নিন।আমি এখনো পোলাও করি নি,তাও করে নিন আপনি। বাকি আপনার যা ভালো লাগে তা করুন”
তাহেরা বেগমকে সেখানে রেখেই নিতু রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলো। রুমে এসে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো নিতু।সারা শরীর ভীষণভাবে কাঁপছে। তামিম রাতে বাসায় ফিরে নি।নিতু সারারাত তাই জেগে ছিলো তামিমের অপেক্ষায়। জেগে থাকতে থাকতে নিতুর মনে হলো অযথা বসে থেকে কি লাভ,এর চাইতে কাজ করা শুরু করি,তাহলে সময় কেটে যাবে।সকালেও আমাকেই করতে হবে এসব।আগেই করে রাখি বরং।
এই ভেবেই নিতু রাত থেকে রান্না করা শুরু করে দিলো।
শরীরের সকল ক্লান্তি, যন্ত্রণা চাপিয়ে একটা চিন্তায় মাথায় উঁকি দিতে লাগলো, “তামিম বাসায় ফেরে নি রাতে।”
নিতু নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। সারারাত নিজেকে অনেকভাবে কন্ট্রোল করে রেখেছে। তামিমকে কল দেয় নি তাই।কিন্তু এখন যেনো আর পারছে না।বেহায়া মনটা উদগ্রীব হয়ে উঠেছে তামিমকে কল দিতে।
বাহিরে রোদ উঠেছে, কেমন তেজহীন।
নিতুর মনে হলো তার সাথে সাথে আজ সূর্যের ও বুঝি মন খারাপ। শীত আসি আসি করছে,শেষ রাতের দিকে কিছুটা ঠান্ডা পড়ে। সেই ঠান্ডায় নিতু তামিমকে ভীষণভাবে জড়িয়ে ধরে। আজ ভীষণ মনে পড়ছে এসব।
নিতু জানালা খুলে দিয়ে তামিমকে কল দিলো।
রিং হচ্ছে কিন্তু ফোন তুলছে না কেউ।নিতু আবারও কল দিলো। ফোনটা এবার সুইচ অফ।
বুক ছিরে একটা হতাশার নিশ্বাস বের হয়ে এলো। ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষের সাথে ঘর বাঁধার পরেও যদি সেই ঘরে সুখ না থাকে তবে সেখানে মিথ্যে সম্পর্ক বয়ে বেড়ানোর মানে কি?
আত্মসম্মানী নিতু অথচ আজ মনে প্রাণে চায় একবার তামিম তাকে আগের মতো ভালোবাসুক,নিতু নিজের জান ও দিতে পারে তামিমের জন্য।
কিন্তু তা কিছুতেই হচ্ছে না আর।গত এক সপ্তাহ ধরে তামিমের মন ভীষণ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।নিতুর সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে তামিম।
নিতু সব সয়ে যাচ্ছে।ভালোবাসা কি এরকমই?
ভীষণ প্রতিবাদী মনোভাবাপন্ন একটা মেয়েকে কি ভীষণ বেহায়া,নির্লজ্জ করে দিচ্ছে!
নিতুর তাতে মোটেও আফসোস নেই।তবুও চায় তামিমের মন ঠিক হয়ে যাক।
বিয়ের আগে তামিম যেমন ছিলো তেমন হয়ে যাক তামিম এখন আবার। এজন্যই বুঝি মানুষ বলে,”যাকে ভালোবাসো তাকে বিয়ে করো না।ভালোবাসার মানুষের দেওয়া অবহেলা সহ্য করা যায় না।অন্যের দেওয়া আঘাতের ক্ষত সহজেই মুছে যায় কিন্তু প্রিয় মানুষের দেওয়া আঘাতের ক্ষত মুছে গেলেও স্মৃতিতে তা তাজা হয়ে থাকে আজীবন। “
মেহমান আসলো সাড়ে এগারোটার দিকে।দিশা গিয়ে বসার রুমে আড্ডায় মেতে গেছে।তাহেরা বেগম মেহমান রেখে আসতে পারছেন না।নিতু একা একা সব গরম করা,ওনাদের সামনে সার্ভ করা কুলাতে পারছে না।
শেষে বাধ্য হয়ে দিশাকে কঠিন গলায় বললো, “দিশা,এদিকে উঠে আসো।ওনাদের নাশতার ব্যবস্থা করতে হবে তো।বসে বসে কি কথা বললেই ওনাদের সমাদর করা হবে?মা মুরুব্বি মানুষ আছেন,উনি কথা বলুক।এদিকের কাজে সাহায্য করো তুমি।”
দিশার মাথায় রক্ত উঠে গেলো নিতুর কথা শুনে।দিশা কিছু বলার আগে সামিম বললো, “বে-আক্কেলের মতো কথা বলতে বসে গেছো মেহমানের নাশতার ব্যবস্থা না করে! তোমরা রিলেটিভ, তোমার উচিত ছিলো এই ব্যাপার সচেতন থাকা।ভাবী একা সব করছে তুমি বসে রয়েছ কেনো এখানে?যাও ভাবীর কাছে।”
দিশা নিজের বাবার বাড়ির মানুষের সামনে সিনক্রিয়েট করতে পারলো না। এখন সে কিছু করলে সব বাবা মায়ের কানে উঠবে।দিশার বাবা ভাইয়েরা এসব পছন্দ করেন না।জানতে পারলে ভীষণ অপমানিত হবে দিশা।নিজের রাগ সামলে উঠে গেলো নিতুকে সাহায্য করতে।
নাশতার পর লুবনাকে নেওয়া হলো পাত্রের সামনে। নিতু ভালো করে পাত্রের দিকে তাকালো। কেমন বিশ্রীভাবে লোকটা লুবনাকে দেখছে।নিতুর অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। লোকটার দিকে তাকালেই কেমন চরিত্রহীন মনে হয়। চোখ দিয়ে লুবনার মাথা থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত পরখ করে ফেলেছে সে।এরপর নিতুর দিকে তাকালো। নিতু চমকে ভেতরের দিকে চলে গেলো। মনের ভেতর সতর্ক সংকেত বেজে উঠেছে নিতুর।এখানে লুবনাকে কিছুতেই বিয়ে দেওয়া উচিত নয়।
আর একবার ও নিতু ওদের সামনে গেলো না।মেহমান বিদায় নিলো তিনটের দিকে।যাবার সময় বলে গেলো, পাত্রী তাদের পছন্দ হয়েছে। আগামী শুক্রবার তারা এনগেজমেন্ট করতে চায়।
সবাই যাওয়ার পর নিতু লুবনার দিকে তাকালো। লুবনাকে ভীষণ আনন্দিত লাগছে।ছেলে লুবনার হাতে ৫ হাজার টাকা দিয়েছে। লুবনা দিশাকে ফিসফিস করে বললো, “তোমার ভাই ভীষণ রোমান্টিক ভাবী,আমার হাতে টাকা দেয়ার সময় কেমন করে আমার হাতটা ধরেছিলো,আমার ভাবতেই শরীর শিউরে উঠছে কেমন! “
বলেই লজ্জা পেলো লুবনা।নিতু শুনে হতাশ হলো। লুবনাকে নিতু জিজ্ঞেস করলো, “তুমি রাজি বিয়েতে?”
লুবনা বিরক্ত হয়ে বললো, “রাজি না হবার কি আছে।এরকম ধনী ছেলে কি সবসময় এসে বসে থাকবে আমার জন্য? “
নিতু আর কিছু না বলে সামিমের কাছে গেলো। কোনো ভণিতা ছাড়া বললো, “এই বিয়েটা কি বন্ধ করা যায় না?”
সামিম হেসে বললো, “লাভ হবে না।মা’কে আমি হাজার বার বুঝিয়েছি।মা কিছুতেই শুনবে না।আমি লুবনাকেও বলেছি,সেও স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে।দিশা এদের সবার ব্রেইন ওয়াশ করে দিয়েছে। কোনো কথা এদের মাথায় ঢুকছে না। “
নিতু ভীষণ কষ্ট পেলো এসব শুনে।কিন্তু লুবনার রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে শুনে তাহেরা বেগম আর তার মেয়ের কতো প্ল্যানিং শুরু হয়ে গেছে এখনই।
নিতু নিজের রুমে চলে গেলো। তামিমের ফোন এখনো বন্ধ।নিতুর হঠাৎ করেই এই পৃথিবী কেমন অসহ্য লাগতে লাগলো। এতো বড় পৃথিবীতে তার একান্ত আপন বলে কেউ নেই!
সকালে কলিং বেলের শব্দে নবনীর ঘুম ভাঙলো। দরজা খুলে দেখে মেঘ দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে একটা সাদা টি-শার্ট, একটা নীল জিন্স।অথচ কি ভীষণ ফ্রেশ লাগছে তাকে!মেঘের মুখখানা এতো আদুরে মনে হচ্ছে কেনো আজ হঠাৎ করে!
নবনীর ইচ্ছে হলো মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখতে।কিন্তু তা সম্ভব হলো না।
হাশেম আলী রুম থেকে বের হয়ে বললেন,”মাস্টার আসছে নবনী?ভিতরে আইতে দে,কাইল আসলো না।আমি তো চিন্তায় পইরা গেছি।একলা একটা মানুষ, কোন অসুখ টসুখ হইছে কি-না কে জানে।স্যার,আপনের মেসের ঠিকানা একটু দিয়া যাইয়েন।আপনের কোনো অসুবিধা হইলে যাতে দেখতে যাইতে পারি।”
নবনী ঠোঁট কামড়ে হাসলো মেঘের দিকে তাকিয়ে,এবার জব্দ হবে মেঘ। অথচ মেঘ যেনো আগে থেকেই জানতো এরকম কিছু হবে।একটা কাগজ বের করে হাশেম আলীকে দিয়ে বললো, “এই নেন চাচা,এটাই আমার ঠিকানা। “
নবনী হতভম্ব হয়ে গেলো দেখে।মেঘ নবনীর দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বললো, “একটু পানি দিবেন প্লিজ।”
তারপর ফাল্গুনীদের রুমে গিয়ে বললো, “আমার স্টুডেন্টরা কই,পড়তে বসে যাও সবাই।”
ফাল্গুনী আর চৈতালীর সাথে মেঘের ভীষণ ভাব হয়ে গেছে। দুজনে গাল ফুলিয়ে রইলো। চৈতালী বললো,”ভাইয়া,তুমি গতকাল আসো নি কেনো?আমরা তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।জানো গতকাল আপা আমাদের পড়িয়েছে। তোমার নামে অনেক বাজে কথা বলেছে আপা।”
ফাল্গুনী গলার স্বর নিচু করে বললো, “ভাইয়া,আমি বলি বাকিটা। আপা বলেছে,তুমি নাকি আমাদের ঘোড়ার আন্ডা পড়াও।পড়াতে পারো না মোটেও।অযথা সময় নষ্ট করো।আমরা দুজন তাই গতকাল থেকে আপার সাথে কথা বলি না।”
মেঘ তাকিয়ে দেখে নবনী এসে দাঁড়িয়ে আছে পিছনে। ফাল্গুনীর চুলের ঝুটি ধরে বললো, “এই তাহলে আসল ঘটনা তাই না,এজন্য আমার সাথে কথা বলা হয় নি। তোদের স্যারের সামনে বলছি এবার,তোদের স্যার একটা গণ্ডমূর্খ, কিছুই পারে না। “
মেঘ মুচকি হাসলো নবনীর কথা শুনে। তারপর নিজের ছাত্রীদের উদ্দেশ্য করে বললো, “তোমরা বলো তো,খালি কলসি বাজে বেশি,এর ইংরেজি কি হবে?”
দু’জনে সমস্বরে চিৎকার করে এর ইংরেজি বললো।নবনী টেবিলের উপর ধপ করে গ্লাসটা রেখে দিয়ে চলে গেলো। দুই বোন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো। তাদের প্রিয় স্যারকে নিয়ে বাজে কথা বলার উচিত জবাব পেয়েছে।
মেঘ পকেট থেকে তিনটা ডেইরি মিল্ক চকলেট বের করে দুজনকে দিয়ে বললো, “এটা তোমাদের আপার জন্য।আমি চলে গেলে দিবে তোমরা। এবার পড়তে বসো।”
নবনী রুমে বসে একটা বই পড়ছে।মেঘের টেক্সট এলো তখন।নবনী পড়ে দেখে মেঘ লিখেছে, “ভীষণ তৃষ্ণা পেয়েছে। “
নবনী রিপ্লে দিলো,”পানি রেখে এসেছি,খেয়ে নিলেই হয়।”
মেঘ আবার মেসেজ দিলো,”এ তৃষ্ণা যে কাউকে দেখার তৃষ্ণা, আকণ্ঠ জলপান করলেও কি এই তৃষ্ণা মিটবে?”
নবনীর কেমন লজ্জা লাগলো এটা পড়ে, সারা শরীর যেনো অবশ হয়ে গেলো,নিশ্বাস ভারী হয়ে এলো। বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম করতে লাগলো। লজ্জায় নবনী আর বের হতে পারলো না। এই মানুষটা এতো ঠোঁটকাটা কেনো?
হুট করে কি কথা থেকে কি কথায় চলে যায়!
সে কি বুঝে না এসব শুনলে নবনীর কেমন ঘোর ঘোর লাগে,নিজেকে পাগল পাগল মনে হয়!
মেঘ যাওয়ার সময় জোর গলায় বললো, “চাচী,ভীষণ তৃষ্ণা পেয়েছে আমার,নবনী ম্যাডামের কাছে একটু লেবুর শরবত চাইলাম,দিলেন না তো উনি।বেশি ব্যস্ত মনে হয় উনি।আচ্ছা থাকুক,আমি বাহিরে কোথাও ভ্যান থেকে খেয়ে নিবো। “
রাবেয়া বেগম রান্না চড়িয়েছেন,মেঘের কথা শুনে তিনি ভীষণ লজ্জা পেলেন।ছুটে এসে বললেন,” না না বাবা,দাঁড়াও।শরবতটা খেয়ে যাও বাবা।”
ফাল্গুনী আর চৈতালী এসে বললো, “স্যার তো সেই কখন,সকালে এসেই শরবত চেয়েছে, আপা দিলোই না মা।”
রাবেয়া বেগম মেয়ের ব্যবহারে ভীষণ লজ্জিত হলেন।নবনীর রুমে গিয়ে দেখেন নবনী আপনমনে হাসছে।মেয়েকে ধমক দিয়ে বললেন,”মাস্টারে তোর কাছে সেই কখন এক গ্লাস শরবত চাইছে,তুই দিলি না ক্যান?এক্ষন তুই শরবত বানাইয়া দিবি নবনী।আমার হাতের মাইর খাবি নইলে।মাস্টার মানুষের সাথে এরকম বেয়াদবি আমি সইয্য করমু না।ওনারা সম্মানী মানু।সম্মান দিতে শিখ।”
নবনী হতভম্ব হয়ে বললো, “উনি কখন শরবত চাইলো আবার? মিথ্যা কথা মা।”
রাবেয়া বেগম রেগে বললেন,”হ, উনি এতো বড় মানুষ এক গ্লাস শরবতের জন্য মিথ্যা কথা কইবো?উনি মনে হয় জীবনে শরবত চোখে দেখে নাই,এই দুনিয়ায় তুই একমাত্র শরবতওয়ালি হইছস,তোর হাতের শরবত খাওয়ার জন্য এখন উনি মিথ্যা কথা কইতাছে।আমার দুই মাইয়া ও তো মিথ্যুক, ওরা ও কইছে তোর কাছে ওগো স্যার শরবত চাইছে তুই দেস নাই।একটা এতিম পোলা,এতিমের প্রতি তোর দেখি কোনো মায়াদয়া নাই।এতো বড় চাকরি আল্লাহ দেখবো না,অন্তরের মায়াদয়াই আল্লাহ দেখবো। “
নবনী মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,”মা,তুমি এরকম রিয়েক্ট করছ কেনো,সামান্য একটা ব্যাপার এটা।”
রাবেয়া বেগম রেগে বললেন, “তুই কি শরবত বানাইতে যাবি না-কি আমি রান্নাঘরের হাতা আইনা তোরে মারমু?”
নবনী কথা না বাড়িয়ে ছুটে গেলো রান্নাঘরের দিকে। তারপর শরবত বানিয়ে মেঘের সামনে নিয়ে গেলো। বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম করছে,নবনীর মনে হলো সবাই যেনো সেই শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
মেঘ নিচু স্বরে বললো, “এতোক্ষণে তৃষ্ণা মিটেছে আমার বিবিজানকে দেখে “
তারপর জোরে বললো,”চিনির কৌটায় মনে হয় লবণ রেখেছেন চাচী,উনি তো চিনির বদলে লবণ দিয়ে রেখেছেন। উহু,এতো লবণাক্ত শরবত! তবুও খেয়ে নিচ্ছি,আমার কপালে তো বাসার বানানো খাবার জোটে না।বাহিরের খাবার সুস্বাদু হলেও বাসার খাবার স্বাস্থ্যকর। তা যতোই লবণাক্ত হোক।”
তারপর বিদায় নিয়ে মেঘ চলে গেলো। রাবেয়া বেগম মেয়ের দিকে এমনভাবে তাকালেন,নবনীর মনে হলো সে আর এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকলে বুঝি ভস্ম হয়ে যাবে।নিজের রুমে গিয়ে নবনী দরজা লাগিয়ে দিলো তাড়াতাড়ি।
মনে মনে মেঘের গুষ্ঠি উদ্ধার করে ফেললো।ঠিক করলো আজ অফিসে গিয়ে মেঘের সাথে একচোট ঝগড়া করে নিবে।
চলবে….
রাজিয়া রহমান