#গল্প————————- (শেষ পর্ব )
#চার আনার জীবন . .
এমন সময় মায়ের রুমে এলো পিয়াস,আর এসেই আমার চুলের মুঠি ধরে বেডরুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
মা পেছন পেছন ছুটে এসে চিৎকার করে দরজা খুলতে বললো, কিন্তু পিয়াসের কান পর্যন্ত মায়ের চিৎকার পৌঁছালো না। ও তখন আমার হাত দুটো পিছমোড়া দিয়ে বাঁধতে ব্যস্ত।
তারপর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে কিল ঘুষি লাথি মারতে থাকে, প্রচণ্ড মারলো একটা সময় অজ্ঞান হয়ে যাই আমি।
যখন জ্ঞান ফিরলো তাকিয়ে দেখলাম আমি হাসপাতালের বেডে। মা আর তিথি আমার পাশে বসে কাঁদছে।
মা:- তোর এখন কেমন লাগছে মা?
আমি তাকিয়ে থাকতে পারলাম না চোখে খুব ব্যাথা আর মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে।
পরেরদিন,
অচেনা কন্ঠে আমাকে কেউ ডাকছে, অনেক কষ্টে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলাম পুলিশ সঙ্গে ডাক্তার ও আছে।
পুলিশ বলছে একটু উঠে বসতে পারবেন?
আমি অসাড় হয়ে গেছি নিজেকে নড়াতে পারছি না।
পুলিশ:- ঠিক আছে আপনি শুয়েই কথা বলেন। আপনার উপর যে শারীরিক নির্যাতন হয়েছে সেই রিপোর্ট পেয়ে আমরা এসেছি। আপনি কি আপনার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে চান? তাহলে আমরা একশন নিব।
আমি বললাম না তাঁর বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। পুলিশ চলে গেল।
মাকে বললাম আমার বুকের মানিক কে আমার কোলে একটুখানি দিবেন? তিথির কোলে থেকে আমার পাশে শুইয়ে দিলো। ওকে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে চিৎকার করে কাঁদলাম।
মা:- মারে ওকে দিয়ে দে ও ভয় পাবে।
তারপর তিথি নিয়ে গেলো।
দুইদিন পর ডাক্তার বললো রোগীকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন। প্রেসক্রিপশন টা মায়ের হাতে দিয়ে বললো ওষুধ গুলো চালিয়ে যেতে, না হলে আবার ব্লিল্ডিং হতে পারে? সিজারিয়ান রোগীকে এভাবে আঘাত করা ঠিক হয়নি।
কাউন্টারে বিল পরিশোধ করে এসেছে শশুর। এবার আমাকে বাসায় নিয়ে যাবে।
মাকে বললাম আপনাদের বাড়িতে আমি আর ফিরে যাবো না। মা অনেক বোঝাতে লাগলো যাওয়ার জন্য।
প্লিজ মা আমাকে অনুরোধ করবেন না।
মা বারবার বলতে থাকলো মারে এই অবস্থায় তুই বাবার বাড়ি যাস না। তোর বাবা-মাকে কি জবাব দেবো, আর কিভাবেই বা মুখ দেখাবো আমরা?
মার কথা শুনে কিঞ্চিৎ হাসি পেলো!
মনে মনে বললাম বাবার বাড়ি??
সে তো অনেক আগেই মন থেকে ধুয়ে মুছে দিয়েছি।
আরেকটা বিষয় খেয়াল করলাম,এই কয়দিনে শশুর-শাশুড়ি আর তিথি ছাড়া পিয়াস কে একবারও দেখিনি। ভালোই হয়েছে ওঁর মুখটা আমি আর দেখতে চাইনা।
শশুর শাশুড়ি আবারও তাড়া দিতে থাকলো বাড়িতে যাওয়ার জন্য। মাকে বললাম কোন বাড়িতে যাব আমি? যে পরিচয়ে ওই বাড়িটাকে নিজের বাড়ি ভাবতাম সেই সম্পর্কটা আমি মুছে দিতে চাই।। শশুর বললো তোর বউ পরিচয়ে যেতে হবে না, তুই আমার মেয়ের পরিচয়ে যাবি।
মাকে বললাম ঠিক আছে আপনাদের কথা আমি রাখবো, তাঁর আগে বলেন তো মা কোন অপরাধে আমার শাস্তি হলো?
মা কেঁদে দিল বললো,মারে তোর কোনো অপরাধ নাই। বাড়িতে চল সবকিছু বলবো।
তাদের কথা রাখতে আবার ফিরে আসলাম।
মাকে বললাম আমি ওই বেডরুমে থাকবো না, আমাকে অন্য কোন রুমে দেন।
মা বললেন তুই তোর সন্তান কে তোর রুমেই থাকবি, এখানে কোন অত্যাচারী কুলাঙ্গারের জায়গা হবে না। তারপর রুমে ঢুকতেই ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজের মুখটা দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম, এটা কি আমি?? চোখদুটো সামান্য খোলা আর সারা মুখ ফুলে কালচে হয়ে আছে।
তোমার মুখ দেখতে হবে না বলেই তিথি টেনে সরিয়ে নিলো। কিন্তু আমার একটুও কষ্ট হয়নি, শুধু মা-বাবার কথা মনে পড়ছিলো যদি তাদের একটু দেখাতে পারতাম? বলতাম দেখ মা আমি কতটা অধৈর্য যার শাস্তি স্বরুপ আমার এই চেহারা আর শরীরের ব্যাথা না হয় বাদই দিলাম।
+++++++++++++++++++++
কোন অপরাধে শাস্তি পেয়েছি সেটা জানতে পারলাম।
সেদিন তিথি জহিরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। তারপর তিথি কে জহির বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে আসে। আর তখনই পিয়াসের মুখোমুখি হয় তারা।
পিয়াসের নানান প্রশ্নে ওঁরা ঘাবড়ে যায়, তখন জহির পিয়াস কে বলে আমাদের সম্পর্কের কথা ভাবি সবটা জানে।
ব্যাস তাতেই তাঁর মনে হয়েছে আমি তাঁর বোনকে জহিরের সঙ্গে মিশতে প্রশ্রয় দিয়ে, তার জীবন নষ্ট করে দিচ্ছি।
তাদের পরিবারের সম্মান নষ্ট করছি।
কৌতূহলবশত জানতে চাইলাম তিথি তোমার ভাইয়া কোথায়? এই কয়দিনে তাকে তো একবারও দেখলাম না।
তিথি:- ভাইয়াকে বাবা রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। বলেছে ওকে আর কোনদিন বাড়িতে ফিরিয়ে আনবে না।
আমরা তোমাকে অনেক ভালোবাসি ভাবি, তুমি এখান থেকে চলে যেও না। তাছাড়া রেহানকে ছাড়া মা-বাবা থাকতে পারবে না।
সপ্তাহখানেক পর শশুর একটা দলিল হাতে দিয়ে বললেন,পড়ে ডান পাশের এইখানটাতে সই করে দাও।
অনেক প্যাঁচানো প্যাঁচানো লেখা তবুও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যতটুকু পড়লাম তাতে চোখের পানি আটকে রাখতে পারছিলাম না। ওখানে লেখা শশুরের নিজ মালিকানা পঁয়তাল্লিশ শতাংশ সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ সম্পত্তি আমার নামে দান পত্র করা হয়েছে।
শশুরের কাছে গিয়ে বললাম বাবা এগুলো কেন করছেন? আমি এসব কিছুই চাইনা।
শশুর:-তুই না বলেছিলি কোন পরিচয়ে তুই এই বাড়িতে থাকবি? আমি বলেছিলাম তুই আমার মেয়ের পরিচয়ে থাকবি,তাই তোকে মেয়ের স্বীকৃতি দিলাম।
পিয়াস যদি স্বাভাবিক জীবনে না ফেরে, ওঁর ছায়া তোর জীবনে পড়তে দিব না। তবুও তুই দাদুভাই কে নিয়ে চলে যাস না, আমরা বাঁচতে পারব না।
একমাস পর ঘরোয়াভাবে জহিরের সঙ্গে তিথির বিয়ে হলো।
তিথি চলে যাওয়ায় বাড়িটা ফাঁকা হয়ে গেল।
মা সবসময় মনমরা হয়ে থাকে, মাঝে মাঝে রেহানকে নিয়ে এদিক সেদিক যায় ঘরে ফিরলে আবার সেই চোখের পানি।
বাবাকে একদিন বলেছিলাম আপনার ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাবা চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো, ওই ছেলের আমার বাড়িতে জায়গা হবেনা।
মা চুপিচুপি কয়েকদিন পর পর পিয়াসের পছন্দের খাবার তৈরি করে নিয়ে ছেলেকে দেখতে যায়।
কিন্তু আমি কখনো যাইনি, আমার যেতে ইচ্ছে করে না।
ছয়মাস পর মা একদিন বললো, বৌমা ডাক্তার বলেছে পিয়াস আগের চেয়ে অনেকটা স্বাভাবিক। তোর শশুরকে বলে যদি বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করতি বলেই হুঁ হুঁ করে কেঁদে দিল। একেই বলে মায়ের মন।
চিন্তা করে দেখলাম কেন শুধু আমার জন্য তাদের বাড়ির ছেলে রিহ্যাবে পড়ে থাকবে? আর আমার রেহান বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হবে?
ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। চার আনার জীবনে দুই আনাই শেষ আর বাকি দুই আনা যেভাবেই হোক কাটুক না।
রিক্স না নিলে যেমন জীবনে সফল হওয়া যায় না, তেমনি করে ঘাত-প্রতিঘাত ও জীবনে থাকবে।
তাই রিক্সটা নিয়েই নিলাম বাবাকে অনেক অনুরোধ করে পিয়াস কে বাড়িতে নিয়ে আসলাম।।
রেহান কে বুকে জড়িয়ে অনেকক্ষন কাঁদলো পিয়াস।।
কেন জানিনা আজ আমারও খুব ভালো লাগছে।
মা ও খুশি, রেহান বাবা বাবা করছে। অনেকদিন পর বাড়িটা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
রাত একটা বাজে এখনো রুমে আসেনি পিয়াস। বেরিয়ে খুজতে লাগলাম বাড়ির কোথাও পেলাম না।
সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতেই দেখলাম পিছন ফিরে বসে আছে। আমি গিয়ে পিঠে হাত রাখতেই পাশ ফিরে জড়িয়ে ধরলো।
বললো আমাকে ক্ষমা করতে পারবে রিমি?
ক্ষমার কথা বলছো কেন?
তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, আছে প্রত্যাশা। আমি চাই বাকি জীবনটা তুমি স্বাভাবিকভাবে আমাদের আগলে রাখো।
সমাপ্ত___।
লেখা——— Rozina ড়সে
নীল চিরকুট গল্পের লিংক
https://kobitor.com/category/uponas/nil/
বিশ্বাস অবিশ্বাস গল্পের লিংক
https://kobitor.com/category/uponas/bissas/
প্রতিশোধ গল্পের লিংক