#অন্যরকম তুমি পর্ব ৫৪
#তানিশা সুলতানা
“আমি পারছিলাম না তোমাকে অন্য কারো সাথে সয্য করতে। পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। বুঝতেই পারি নি ” জোর করে কারো মন জয় করা যায় না”
হিমু হু হু করে কেঁদে ওঠে। সিমির পাশে হাঁটু মুরে বসে পড়ে।
“কেনো এলে আমার জীবনে? কেনো পাল্টে দিলে জীবনটা? আমি মরে যাচ্ছি সিমি।
কখনো কোনো কিছুতেই জোর করি নি তোমায়। কারণ আমি বিশ্বাস করতাম দিন শেষে তুমি আমারই হবে। কিন্তু হলে না। কেনো হলে না?
হিমু দুই হাতে ঝাঁকড়া চুল গুলো খামচে ধরে। সিমি এখনো চোখ বন্ধ করে বসে আছে৷ কি হয়ে গেলো এটা? যেই মানুষটাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতো সেই মানুষ টাই এইভাবে ঠকালো?
কি করে পারলো?
” তোমার হিমু সব সময় তোমার খবর দিতো আমায়। আমি মিথ্যে বলি নি সিমি। মা অসুস্থ ছিলো। ভাই দেশ ছাড়লো। তনু মায়ের কথা শুনতো না। মায়ের একমাত্র বিশ্বস্ত আমিই ছিলাম।
তারওপর প্রতিনিয়ত হিমুর সাথে লেপ্টে থাকতে।জাস্ট অসয্য লাগতো।
সিফাত চোখ মুখ কুঁচকে কিছুটা দুরে সরে যায়। পরি কেঁদে ওঠে। সিফাত ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
“মা কি হয়েছে?
পরি আধো আধো করে চোখ খুলে।
” বাবা তুমি এসেছো?
পরির মুখে হাসি ফুটে ওঠে। জাপ্টে ধরে সিফাতের গলা।
“আমার মা চাই না বাবা। আমার শুধু তোমাকে চাই। মায়ের কাছে যাবো না আমি।
ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে পরি। সিফাত পরির মাথায় চুমু খায়।
পরির কান্নায় সিমিও চোখ খুলে। বাবা মেয়ের দিকে তাকায়। কি সুন্দর দৃশ্য। ইসসস কত কিছু মিস করে গেছে সিমি। নিজের হাতে বড় করে তুলতে পারে নি মেয়েকে। মেয়ের ছোট বেলা উপভোগ করতে পারে নি।
হিমু দিকে তাকায় সিমি।
” খুব বিশ্বাস করতাম তোমায়। এটা ঠিক করো নি।
খুব শান্ত গলায় বলে সিমি। তারপর উঠে সিফাতের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
“মায়ের কোলে আসবে না সোনা?
পরির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে সিমি৷ পরি অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় সিমির।
” সরি মা। আমি বাবার সাথে থাকবো।
মাথা নিচু করে বলে পরি। সিমি আলতো হাসে। সিমির ঠোঁটের কোনে হাসি দেখে পরিও হেসে ফেলে। সিফাত মুখ বাঁ কায়। এতদিন কাঁদিয়ে ভালোই হাসা হচ্ছে।
“যাবেন এখান থেকে? না কি মুখ বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন?
কটমট চোখে তাকিয়ে বলে সিমি। সিফাত আলতো করে সিমির হাতটা মুঠোয় পুরে নিয়ে চলে যায়। হিমু অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে।
” একতরফা ভালোবাসা হচ্ছে একপ্রকার
বিষের মতো, যে বিষ প্রাণ করলে আপনি মরবেন না কিন্তু সারাজীবন দাঁপড়াতে থাকবে।”
প্রতি মুহুর্তে মৃত্যুর যন্ত্রণা উপভোগ করতে থাকবে।
হিমু মনে মনে প্রার্থনা করে। এই এক তরফা ভালোবাসার কবলে যেনো আর কেউ না পড়ে।
গাড়িতে বসে আছে ওরা। পরিকে খাইয়ে দিচ্ছে সিমি। সিফাত দেখছে সিমিকে। নাকটা লাল হয়ে আছে৷ মনে হচ্ছে যখন তখন কেঁদে ফেলবে। পরি গভীর মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে। যেনো ওর কাছে খাওয়ার থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই।
“কোথায় যাবে বলো? তোমার বাড়ি?
সিফাত সোজা হয়ে বসে সিট বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলে।
” এখানেই থেকে যাবো।
ওড়নার কোনা দিয়ে পরির ঠোঁট মুছে দিয়ে বলে সিমি। সিফাত ভ্রু কুচকে তাকায় সিমির দিকে।
“বুঝলাম না।
” আপাতত বাড়ি ফিরতে চাইছি না।
“তাহলে কোথায় যাবে?
” জানি না।
“না জানলে
সিমি চোখ পাকিয়ে সিফাতের দিকে তাকাতেই সিফাত চুপ করে যায়।
” যেমনটা বলবে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ড্রাইভ করা শুরু করে সিফাত।
পরি গুটিশুটি মেরে আবারও মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। সিমি আড়চোখে সিফাতকে দেখতে থাকে।
পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ছোঁয়ার। পিটপিট করে চোখ খুলে নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে। কারো শক্ত বাঁধনে নিজেকে আবিষ্কার করে ছোঁয়া। যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ছোঁয়াকে। ছোঁয়ার ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।
বিয়ের এত দিন পরে নিজের বরের বুকটাকে বালিশ বানাতে পেরেছে। ইসসস আগে কেনো হলো না? ঘুমটা অন্য দিনের তুলনায় ঢের বেশি ভালো হয়েছে। মনে হচ্ছে এমন শান্তির ঘুম কখনো ঘুমায় নি।
এখনো আলো ফুটে নি। হয়ত সবে মাএ আজান দিয়েছে। পাখি গুলো জেগে গেছে।
নীল ড্রিম লাইটের আলোতে সাদির মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ঘাড় ব্যাঁকা করে শুয়ে থাকায় এক পাশ দেখা যাচ্ছে। কপালে চুল গুলো লেপ্টে আছে। ছোঁয়া হাত উঁচু করে সাদির কপালের চুলগুলো পেছনে ঢেকে দেয়৷ খুব সাবধানে সাদির কপালে চুমু খায়।
নরে চরে ওঠে সাদি। চমকে যায় ছোঁয়া। তারাহুরো করে সরে আসতে চায় সাদির থেকে কিন্তু সেটা পারে না। তার আগেই কোমর জড়িয়ে ধরে ছোঁয়াকে আটকে দেয় সাদি। অসহায় চোখে সাদির দিকে তাকায় ছোঁয়া। সাদি ঘুম ঘুম চোখ খুলে টেনেটুনে একটুখানি খুলে ছোঁয়াকে দেখে। তারপর আবার চোখ বন্ধ করে ছোঁয়াকে পাশে শুয়িয়ে দিয়ে ছোঁয়ার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দেয়।
ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
“কককি করছেন?
ছোঁয়া আমতা আমতা করে বলে।
” ভালোবাসা বাসি করছি।
সাদি ঘুম ঘুম কন্ঠে উওর দেয়।
গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে ছোঁয়ার। ঘুম ঘুম কন্ঠের কথা এরকম হয়? জানা ছিলো না ছোঁয়ার। কখনো শোনা হয় নি আগে।
“ছাড়ুন প্লিজ। এমনিতেও
ছোঁয়া থেমে যায়। সাদি মুচকি হাসে। সেই হাসিরও অদ্ভুত শব্দ হয়। আবারও কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। লোকটা জ্বালাচ্ছে কেনো এত?
” এমনিতেও কি?
কথা কম্পিলিট করো।
ঘাড়ে নাক ঘসে বলে সাদি। ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে দুই হাতে সাদিকে ঠেলে উঠে দাঁড়ায়। ফ্লোরে শাড়িটা পড়ে আছে। ছোঁয়া সেটা নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। সাদি ছোঁয়ার বালিশটা টেনে নিয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে।
ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে তাতে পিঠ ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে ছোঁয়া। ইসসসসস কি যন্ত্রণা দ্বায়ক অনুভূতি।
ছোঁয়া আতঙ্কে আছে৷ শাশুড়ী মা কল করে বলেছে ঝামেলার কথা। এটাও বলেছে ছোঁয়াকে নিয়ে যাবে। সাদিকে ছাড়া থাকবে কি করে ও? দম বন্ধ হয়ে তো মরেই যাবে।
গোছল সেরে চুল গুলো মুছতেও ভুলে গেছে ছোঁয়া। সাদির একটা শার্ট পড়েছে এখন। কারণ এখানে ছোঁয়ার কোনো জামা নেই৷ শর্ট ফ্রকটা কিনে ছিলো ছোঁয়া আর কালো শাড়ি গিফট করেছিলো ইভা।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ফুরফুরে সকালটা উপভোগ করছে ছোঁয়া আর সাথে টেনশন করছে। শাশুড়ী বোধহয় নামাজ পড়েই কল করেছে। ছোঁয়া গোছল সেরে বোর হওয়ার পরেই কল পায়।
হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পায় ছোঁয়া। বুঝে যায় এটাই সাদি।
“বাড়িতে ঝামেলা হয়েছে।
ছোঁয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে।
” হুমম ভাইয়া বলেছে।
সাদিও ছোঁয়ার মতো দাঁড়িয়ে বলে।
“এবার কি হবে?
ছোঁয়া সাদির দিকে তাকিয়ে বলে।
” কিচ্ছু হবে না। তুমি বাড়ি চলে যাবে বাবার সাথে।
সাদি সোজাসাপ্টা বলে দেয়। ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। চাইলো সমাধান দিয়ে দিলো বাঁশ
“আমি চলে গেলেই তো বেঁচে যান আপনি। তাই না?
কাঠ কাঠ গলায় বলে ছোঁয়া।
” একদম তাই।
সাদি উৎফুল্ল হয়ে বলে।
“থাকবোই না আমি। এখনি চলে যাবো।
ছোঁয়া চলে যেতে নেয়। সাদি হাত ধরে ফেলে। ছোঁয়া মনে মনে খুশি হয়। এখন নিশ্চয় বলবে ” আমি তো মজা করছিলাম ইডিয়েট”
“যাবে যাও। শার্টটা তো দিয়ে যাও। ১২০০ টাকা দিয়ে কিনছি। ফ্রী তে পায় নি।
ছোঁয়ার হাসি হাসি মুখটা চুপসে যায়। বড়বড় চোখ করে তাকায় সাদির দিকে।
চলবে…….