#ডিভোর্স ১ম পর্ব
ফারহানা ধরেই নিয়েছিলো রুহী এবার রেজাল্ট ভাল করবে না, কারন ওর মন ও শরীর দুটোর উপর দিয়ে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে গেছে। প্রথমতঃ বাবা মায়ের ডিভোর্স, এবং রহীকে নিয়ে টানাটানি তো কোর্ট পর্যন্ত গড়ালো, অবশেষে মায়ের কাছেই থাকতে দিলো রুহীকে, তবে সব খরচ বাবা দেবেন। রুহীর অবশ্য এসব কোন কিছু গায়ে লাগেনি, কারন ও আজ পর্যন্ত ওর বাবা মা কাউকেই ওর সামনে ঝগড়া করতে দ্যাখেনি। শুধু যেদিন ওকে কোর্টে যেতে হলো, সেদিন বুঝলো কোন একটা ঝামেলা আছে।যদিও ওর বাবা মা আর ও একই গাড়ীতে কোর্টে গিয়েছিল, ও খেয়াল করছিলো বাবা মা কেউ কোন কথা বলছে না। গাড়ী থেকে নেমে বাবা অন্যদিকে চলে গেল মা আরেকদিকে রুহীকে সাথে নিয়ে।
উকিল ওকে বারবার শিখিয়ে দিচ্ছিলো বিচারক জিজ্ঞেস করলে, ও যেন বলে মায়ের কাছে থাকবে, কিন্তু রুহী তো বাবা মা দুজনের সাথে থাকতে চায়।
রুহী অবাক হয়ে দেখলো, ওর বাবা এবং মা দুই প্রান্তে দাঁড়ানো, বিচারক ওকে জিজ্ঞেস করলো তুমি কার কাছে থাকতে চাও? ও একবার বাবার দিকে আরেকবার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো বাবা মায়ের সাথে থাকতে চাই।
যেহেতু ওর বয়স আঠারো হয়নি, তাই বিচারক মায়ের কাছে থাকার আদেশ দিলেন। তবে পড়াশুনা এবং যাবতীয় খরচ বাবা দেবেন।
সেদিন কোর্টের বারান্দায় বাবাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিল, ওর মা কথা দিয়েছিলো যখন মন চাইবে তখন বাবার কাছে যেতে পারবে। মা ও কেঁদেছিল, শুধু বাবা ছিল নির্লিপ্ত। ভাল থেকো, সুখে থেকো বলে মা বাবাকে বিদায় দিয়েছিল। এই ঘটনা রুহীর মনে গভীর দাগ কেটে দিয়েছিল।
ও বুঝতে পেরেছিল বাবা আর মায়ের ডিভোর্স হয়ে গেল।
কিন্তু কারনটা ওর জানা নেই, প্রায় অসম্ভব এই ঘটনাটাই ও প্রত্যক্ষ করলো।
বাসায় এসে না খেয়েই ও ঘুমিয়ে পড়েছিল, ওর মাও ওকে ডাকেনি। তবে ফারহানা খুব স্বাভাবিক ছিল, মুক্তির আনন্দ ওর মনে। আর সহ্য করতে পারছিলো না, রায়হান যে ওর সাথে এতবড় প্রতারণা করতে পারে ও মানতেই পারছিলো না। পৃথিবীতে যাকে সবচাইতে আপন ভেবেছে, বিশ্বাস করেছে, ভালবেসেছে অন্ধের মত, বাবার অমতেই একপ্রকার ওকে বিয়ে করে। ফারহানার বাবা সেলিম তালুকদার রিয়েল এস্টেট কোম্পানির কর্ণধর, ঢাকা শহরে বিশাল সম্পদের মালিক। কোনভাবেই রাজী ছিলেন না এই বিয়েতে। শুধু ফারহানার মুখের দিকে তাকিয়ে রাজী হয়েছিলেন।
ফারহানা ওর বাবার একমাত্র সন্তান। ওকে জন্ম দিতে গিয়েই ওর মা মারা যান, তারপর থেকেই সেলিম ফারহানার বাবা ও মা। অনেকেই আবার বিয়ের কথা বলেছেন, কিন্তু সেলিম সায় দেন নাই। বলেছেন আমার মেয়ের কোন সৎ মা চাই না।
একরোখা হওয়ার কারনে আর কেউ সাহস করে বলেন নি।এভাবেই তো পঁচিশ বছর পার করেছেন, ফারহানা ততদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করেছে। একসাথেই পড়তো রায়হান আর ফারহানা, তখন থেকেই প্রেম, তারপর পরিনয়।
ফারহানা আর রায়হান ছিলো যেন ইউনিভার্সিটির সেরা প্রেমিক প্রেমিকা। ফারহানা একদিন ওর বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল, বাবা ও হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রায়হান। সেলিম যা বোঝার তখনই বুঝে গিয়েছিল।
ডিনারের সময সেলিম ফারহানাকে জিজ্ঞেস করলো, শুধুই বন্ধু না অন্যকিছু? ছেলেটা কি করে? এখনও কিছু করেনা বাবা, তবে ব্রিলিয়ান্ট, খুব তাড়াতাড়ি রেজাল্ট দেবে, ওর আত্মবিশ্বাস আছে ভাল করবে, এবং ইউনিভার্সিটিতে টিচার হিসেবে যোগ দেবে। ফারহানা জানালো ওর বাবাকে। তুমি এত কথা জানলে কিভাবে? বাবা আমরা দুজনে বসেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারন আমরা একে অপরকে ভালবাসি এবং বিয়ে করতে চাই। সেলিম খাওয়া বন্ধ করে উঠে পড়লো, যাওয়ার সময় বলে গেল আমি আমার বন্ধুর ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দেবো ভেবে রেখেছিলাম, বড় ব্যবসায়ী।
ভাল করে ভেবে দেখো বিষয়টি, জীবনতো একটাই। বারবার পরিবর্তন করা যাবে না।
ফারহানার জেদের কাছে ওর বাবা অসহায় হয়ে অবশেষে বিয়েতে মত দিয়েছিল। বিশাল আয়োজন করে বিয়ে দিয়েছিলো, কোন কিছুর কমতি ছিলো না। জামাইকে ফ্লাট আর গাড়ী উপহার দিয়েছিলো।
অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ওদের রেজাল্ট দিয়ে দিল। রায়হান ফার্সক্লাস ফার্স্ট হয়ে ইউনিভার্সিটিতে নিয়োগ পেল। ফারাহানাও ওর বাবার কম্পানির ডাইরেক্টর হিসেবে যোগ দিলো।
ইতিমধ্যে পারহানার কোলজুড়ে পৃথিবীতে আসলো রুহী। নামটা রুহীর বাবাই রেখেছিলো, সেলিম তালুদারের আনন্দ আর ধরে না, একমাত্র নাতনি, ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করলো ছয় দিনের দিন। নাতনির নামে লিখে দিলো ওয়ারীতে নির্মিতব্য এপার্টমেন্ট, ওটার নামও রাখলো ” রুহী এপার্টমেন্টস “।
চলবে………….
শওকত জাহিদ
সকল পর্বের লিংক একসাথে