#অন্যরকম বউ পর্ব ২
নতুন বউয়ের ভেজা চুলের পানিতে সকালের ঘুম ভাঙলো। চোখ মেলে আমি রোবটের মতো তাকিয়ে রইলাম।সাদা শাড়ি লাল পাড়ে স্বয়ং জান্নাত হতে হুর দাঁড়িয়ে আমার সামনে। আলতো করে জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিতে দিতে তার কর্কষ কণ্ঠ কানে ভেসে আসলো
-এখন প্রায় দুপুর আপনি কি উঠবেন দয়া করে, আপনার চা।
-কি চা? আমি সকালে কিন্তু দুধ চা খাই।
-ওসব চলবে না, আমি আম্মার কাছ থেকে গ্রিন টি সাথে কাঁচা হলুদ দিয়ে চা বানিয়ে রাখছি ওটাই খেতে হবে। আর ঠাণ্ডা চা-ই খেতে হবে।
-শোন এতো শাসন আমি নিতে পারবো না। আর এরকম হুরের মতো সুন্দরী বউয়ের কাছ থেকে তো নাই। এটা কী বানিয়েছো?ওয়াক থু, এটা চা না বিষ।
-আপনাকে বলছি না এমন উল্টাপাল্টা উপমা দিবেন না, প্রথমতো আমি খুশি হতাম যদি বলতেন- তোমাকে শিশিরে ভেজা সদ্য প্রস্ফুঠিত ফুলের মতো লাগছে আর দ্বিতীয়ত ওটা বিষ না ঔষধি চা, সকালে উঠে তিন গ্লাস পানির পর এই চা নিয়মিত চলবে।
আমি কি বিয়ে করে আনছি না থানার বড় লেডি দারোগা ধরে আনছি? মনে মনে ভাবতে ভাবতে কথা পাল্টানোর জন্য বললাম
-রাতে ঘুম হয়েছে ভালো?
-বালিশের জন্য ঘাড়ে একটু ব্যাথা, তবে বেশ ভালো ঘুম হয়েছে। আমার পাশে কেও নাক ডাকলে ঘুম ভালো হয়।
আমি এবার সত্যি কনফিউজড এই মেয়ে কি সাইকো নাকি ইচ্ছা করে মজা নিচ্ছে। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-কি বললে তুমি? নাক ডাকার শব্দে তোমার ঘুম ভালো হয়? তুমি কি ঠিকঠাক আছো?
-হ্যাঁ আমি ছোটবেলায় বাবার সাথে ঘুমাতাম, বাবা প্রচণ্ড শব্দে নাক ডাকতেন। অভ্যাস হয়ে গেছে। তবে আপনি অতো জোরে ডাকেন না তবুও চলবে।
সাত সকালে আমার মাথা এবার সত্যি ঝিম ঝিম করছে। আর আমি ভাবছি জেলখানার কয়েদি থেকে হে মাবুদ এখন নিজেকে পাগলা গারদের সদস্য মনে হচ্ছে। আচ্ছা এরকম বউও হয়? আবার কানে আসলো
-শোনেন, নাস্তাটা করে আমাকে একটু উদ্ধার করেন। ডিম আর পরাটা এনে রেখেছি।
-নাস্তার প্লেট নিয়ে এবার খুব বিনয়ের সাথে বললাম নীলা আমিতো ডিম পোচ খাই। আর পরোটা তেলে ভাজা।
-দুটোই বাদ দিতে হবে, এমনিই আপনার ভুড়ি কিছুটা বেড়েছে, ভুড়িওয়ালা মানুষ দেখলে আমার বমি আসে। তেল ছাড়া পরোটা খেতে হবে আর পোচ করা ডিমে জীবাণু থাকে, কথা কি পরিষ্কার? আমি তাড়াতাড়ি বিধবা হতে চাই না।
-খাদ্য কষ্টের কথা কিছুটা লাঘব হলো শেষের বাক্যটা শুনে। মেয়েটা মনে হয় আমাাকে ভালোবেসতে শুরু করেছে। একটু আশান্বিত হয়ে আদর মাখা কণ্ঠে বললাম আচ্ছা জান এদিকে আসো।
-আপনি না আমার থেকে সাত বছরের বড়! এসব জঘন্য জান, বাবু, সোনা-রুপা, কলিজা বলা চলবে না। আমার আকিকা দেওয়া সুন্দর একটা নাম আছে ওটা বলবেন। এসব আপনার সাথে যায় না আমারও ভালো লাগে না।
কিভাবে রে ভাই, বউয়ের মন কিভাবে জয় করা যায়? আমার নাক ডাকা পছন্দ কিন্তু জান ডাক পছন্দ না এই মেয়েকে আমি কিভাবে পটাবো।
আমি আস্তে করে ঘর থেকে বাইরে বের হতে যাবো, পেছন থেকে আবার সেই বাজখাঁই কণ্ঠ
-শোনেন স্যান্ডেল পরে যান।
আমি একপ্রকার দৌড়ে বাসার সামনের টং দোকানে গিয়ে একহাতে দুধ চা আর একহাতে সিগারেট খেতে খেতে আবার চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমার মুখে যদি গন্ধ পায় খুন করে ফেলবে মনে হয়। বাড়তি আরও এক কাপ চা ও চুইনগাম না পেয়ে সুপারি চিবাতে চিবাতে বাসায় ঢুকলাম। আমার মা বললেন বাবা শোন এদিকে এসে বসতো
-বউমার মতো মেয়ে হয় না, মাশাল্লাহ সাত সকালে উঠে আমার সাথে ফজরের নামাজ পড়েছে। তার পর নাস্তা বানানো, তোর বাবাকে নাস্তা করানো তারপর ঔষধ খাওয়ানো সব করেছে। আমাকে বলে কি জানিস -আম্মা আমি আপনার মেয়ের মতো এখন থেকে আপনার ছুটি। সমস্ত ঘর ঘুরে ঘুরে লিস্ট করেছে কোথায় কি লাগবে। আমাকে নিয়ে নাকি নিউমার্কেট যাবে ওসব কিনতে। আর এতো বিনয়ী…….
আচ্ছা থামো থামো এতোখন তা-ও নিতে পারছিলাম এখন সত্যি মাথা ঘুরছে। আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখন বাবা বললেন
-শোন তুইতো একটা গাধা, আমার মেয়ে ছিলোনা আল্লাহ শোনার টুকরো একটা মেয়ে পাঠিয়েছে।ভেড়ার মতো থেকোনা, মেয়েটার দিকে খেয়াল রেখো।
আরে শাবাশ একদিনও শেষ হয়নি এর মধ্যেই কেল্লাফতে। আমি পড়ছি ফাটা বাঁশের চিপায়।সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে নিজেকে বামপন্থী মনে হচ্ছে।তবে ভেতর থেকে একটা অজানা প্রশান্তি কাজ করছে আর দৈববাণী কানে ভাসছে সত্যি শাহেদ তুই একটা বউ পেয়েছিস-অন্যরকম বউ।
(চলবে…………..