অন্যরকম বউ
পর্ব ৩
বিয়ের তৃতীয় রাতে ডিনার করতে যাচ্ছি নতুন বউয়ের সাথে, মাঝপথে নীলা বললো, আরও তিনজনকে দাওয়াত দিয়েছি।আমি ভাবলাম, শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়-স্বজন হবে মনে হয়, না হলে ওর বান্ধবীরা হবে হয়তো।কৌতূহল বশত জিজ্ঞেস করলাম, তিনজন কারা?
-আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড, আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।
গাড়িটা বিদ্যুৎগতিতে বামে থামালাম।সত্যি মাথায় রক্ত উঠে গেছে।শোন ফাজলামির একটা সীমা আছে! বিয়ের পর প্রথম বউকে নিয়ে খেতে যাচ্ছি আর কিনা সাথে থাকবে তোমার তিন এক্স! এটা কেও করেছে জীবনে না শুনেছে?
-শাহেদ সাহেব এতে আপনারই লাভ বেশি,আর আপনি নিশ্চয় বুঝে গেছেন, আমার মাথার বেশ কিছু তার ছেঁড়া!
-আমি তোমার এসব পাগলামি আর নিতে পারছি না,নামো গাড়ি থেকে নিচে আসো।
নীলা নিচে এসে যেই সোডিয়াম আলোর নিচে দাঁড়ালো ওকে দেখেই আমি হতবিহ্বল হয়ে গেলাম, অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ওকে!স্থির ও সাবলীল ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি কি বলবো বা বলা উচিৎ বুঝতে পারছি না,নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
-এসবের মানে কি নীলা?
-চলেন যেতে যেতে বলি,এটা পাবলিক প্লেস গাড়ির ভেতরে চলেন।আপনাকে কিছু কথা বলবো একটু মনোযোগ দিয়ে শুনবেন, মাঝখানে কথা বলবেন না।বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে বড় সংকট হলো “সত্য সংকট”।আপনারা পুরুষ মানুষ সব ভুলবেন কিন্তু বউয়ের অতীত কিছু জানলে তা কখনো ভুলবেন না, এজন্য বাসররাতে যে তিনজনের কথাটা বলেছিলাম সেটা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।আপনি ভদ্রতার খাতিরে হয়তো বলতেন না কখনো কিন্তু আমি জানি ভুলতেনও না কখনো, বরং মনে মনে তিলকে তাল করতেন।
আমি গাড়ি চালাচ্ছি আর ভাবছি কথাগুলো মিথ্যাও না,এসব গত তিনদিনেই কতবার যে ভেবেছি! আসলে সবারই কম বেশি অতীত থাকে।কেউতো স্বর্গ থেকে মর্তে যাতায়াত করে না,বরং রঙমাখা মুখোশধারী মানুষগুলো বেশি ভয়ংকর!
-নামো তোমার রেস্টুরেন্টে চলে এসেছি।
নীলা আমার সাথে তিনজনকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে,
-উনি আমারদের এলাকার রাশেদ ভাই,নবম শ্রেণিতে আমাকে রক্ত দিয়ে লেখা একটা চিঠি দিয়েছিলেন(যদিও আমি জানতাম রক্ত তার শরীরের না), তারপর রেগুলার আমার স্কুলগেট এবং সন্ধ্যায় আমাদের বাড়ির বারান্দার পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতেন।পরে একদিন আমার বড় ভাই….
এই নীলা তুমি বসো,তোমাকে আর পরিচয় দিতে হবে না,আমি নিজেই দিচ্ছি,ভাই আমি রাশেদ।করমর্দন করতে করতে আমি বললাম, আমি শাহেদ।বলেই ওয়েটার ডেকে অর্ডার দিলাম।তারপর নীলা আবার বলা শুরু করলো,
-উনি রাসেল ভাই।ভয়ংকর আবেগী মানুষ,দুইমাস সতেরো দিন কলেজ যেতে পারিনি উনার জন্য।বিষের বোতল নিয়ে ঘুরতেন,আর বলতেন তুমি রাজি হও না হলে বিষ খাবো।পরে কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের দুই পরিবার ডেকে নিয়ে বিষয়টা সুরাহা করেছিলেন।
আমার নিজেকে যে ক্যামন লাগছে বলে বোঝানো খুব কঠিন অস্বস্তিও লাগছে আবার কেন যেন একটু একটু ভালোও লাগছে।রাসেল সাহেব বেশ লজ্জায় পড়ে গেছেন।আমি স্বাভাবিক করার জন্য বললাম, নেন খাবার চলে এসেছে
-খেতে খেতে নীলা বললো, আর উনি আমার ইউনিভার্সিটির এক বছরের সিনিয়র, সৌরভ ভাই।কাজে- অকাজে প্রচুর ঘুরেছেন আমার পেছনে,নোট চাওয়ার আগে এনে দিতেন,বিকেলে হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন,আমরা ঢাকার কয়েকটি জায়গা ঘুরতেও গিয়েছিলাম একসাথে। একটা সময় আমিও কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ি উনার উপর কিন্তু ঐযে আমাকে সহ্য করা একটু কঠিন।পরে শুনলাম উনার ইয়ারমেট রুনা আপুর সাথে সম্পর্ক হয়েছে।ভাইয়া, আপু কেমন আছে?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে, তোমাকে বলা হয়নি গতমাসে আমাদের মেয়ে হয়েছে, বলছিলেন সৌরভ সাহেব।হঠাৎ বললেন আপনি সৌভাগ্যবান শাহেন সাহেব।আমি বললাম, কেন?সৌরভ সাহেবের সহজ স্বীকারোক্তি নীলা …
তিনজনকে বিদায় দিয়ে নীলা বললো, চলেন কফি খাবো এখন দু’জনে,আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম, রাত এগারোটা বাজে।নীলা বললো, আমি আম্মাকে এসএমএস দিয়ে রেখেছি। উত্তরে যা বলেছেন আপনার শুনতে ভালো লাগবে না,তাও বলবো।
-বলো
-আম্মা লিখেছেন তোমার সাথে আছে, আমাদের চিন্তা নেই। মা,যখন ইচ্ছা এসো।চলেন এখন দুজনে মিলে কফি খাবো মানে আমি খাওয়াবো।
কফি খেতে খেতে আমি ভাবছি, ঐ তিনজনের কথা।হঠাৎ দুইজন বাদ দিয়ে যেই সৌরভ সাহেবের কথা মনে করছি, সেই কানে আসলো
-নিশ্চয় ভাবছেন নীলা কেমন যেন না?ভাবছেন সৌরভ ভাইয়ের সাথে আমার কি রকম বা কতদূর সম্পর্ক ছিলো?আমরা রুম ডেটিং করেছি বা কোথায় ঘুরতে গিয়ে একসাথে থেকেছি কিনা?ঠিক না?
আমি ভয় পেয়ে গেছি ওর কথা শুনে, এই মেয়ে আমার মনও পড়তে পারে নাকি।পরক্ষনেই ভাবলাম ও তো যা ভাবিনি তাও বলে দিচ্ছে!
-শোনেন, উনারা আমাকে যতটা ভালবাসতো তার থেকেও বেশি ভয় পেত,তবে সৌরভ ভাই আমার কপালে একদিন কিস করেছিল।আপনি চাইলে কপালটা আজীবন বাদ রাখতে পারেন।
আমি ভাবছি, এরকম মেয়েও দুনিয়ায় হয়?ভাবতে ভাবতেই বলে ফেললাম, নীলা তুমি আমার অতীত কিছু জানতে চাও না?
-নীলার সহজ উত্তর,না!
-কেন?
-আমি জানি ওটা আপনি নিজ থেকেই বলবেন তাও তিন দিনের মধ্যে।
ওর কথা শোনার পর,আমার এক্স শিলার কথা বলার জন্য হাঁকুপাঁকু শুরু হয়ে গেছে ভেতরে!
-কফি খেতে খেতে নীলাকে বললাম, উত্তরায় আমাদের একটা ফ্ল্যাট আছে।তুমি চাইলে আমরা ওখানেও উঠতে পারি।
-কেন এই বাসায় কি সমস্যা? এখানে সারাক্ষণ আব্বা-আম্মা আছে,আবার শাসন করার মতো তোমার ছোটভাই শিহাব আছে,সরাক্ষণ স্বামীর সাথে পুতুপুতু আমার ভালো লাগে না।সংসারে সবরকম লোক লাগে বুঝেছেন।
নীলার কথাগুলো শুনতে কর্কষ লাগে কিন্তু ভেতরে একটা অধিকার বা আপন করে নেবার প্রশান্তির বিষয় আছে।আমি বললাম,
– বচ্চা নেবে না?
-এখনই বাচ্চা তাও এই কফি শপে?
চলবে ……