অন্যরকম বউ পর্ব ৪ (হানিমুন পর্ব)
#
হানিমুনের জন্য আমার পছন্দ সমুদ্র। তাই কক্সবাজারের নানা দিক নীলাকে বোঝাচ্ছি।বললাম, তবে এইবার উঠবো ‘মারমেইডে’,ক্সবাজারের ঐ ইট-পাথরের কনক্রিট ভালো লাগে না।মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যাবো একদিকে পাহাড় অন্যদিকে সমুদ্র আর সাথে মারমেইডে আমরা দুজন!
-তাহলে আপনি একাই যান খরচ বেঁচে যাবে।বাচ্চার কথা বলছিলেন না?বাংলাদেশ আমি মোটামুটি দেখেছি,সাতটা দেশ দেখাবেন তারপর বাচ্চা নিব। আমি হানিমুন করতে চাই একটা অন্যরকম জায়গায়। ক্সবাজার আমার ভীষন পছন্দ, আমি দুইবার গিয়েছি।এখন এমন একটা জায়গায় যেতে চাই যেখানে পাহাড়, নদী,ঝর্ণা ও বরফ সব থাকবে।
এরকম জায়গা আছে নাকি?থাকলে বলো,সম্ভব হলে যাবো।তবে আমারতো মনে হয়না এরকম কোন স্থান আছে।
-আমাদের খুব কাছেই আছে, আমরা সিকিম যাচ্ছি।শোনেন, ইমাজিন করেন গাছের না পাথরের পাহাড়! তাও একেবারে বরফে ঢাকা ঐখানে আমি ইয়াকের(তিব্বতি গরু) পিঠে আর আপনিও সাথে হাঁটছেন,সাপের মতো আঁকাবাঁকা পথ,তিস্তা নদী এবং অসংখ্য ঝর্ণা,আবার সাথে চাঁদের আলো সে আলোয় দুজন চা খাচ্ছি। হা করে আছেন কেন? কি ভাবছেন।
-আমারতো মনে হচ্ছে, আমি এখনই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।
-ঐসব প্রেম-ট্রেম আমি বুঝিনা,প্রেম আমার কাছে চায়ের মতো,প্রথমে তীব্রতা থাকে তারপর চুমুকে চুমুকে ঠান্ডা শরবতে পরিণত হয়।ঠান্ডা পানি তবুও খাওয়া যায় কিন্তু চা মিশ্রিত ঐ ঠান্ডা শরবত সহ্য হয় না।
আচ্ছা নীলা, তুমি আমার কোন কথা কি একটু স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারোনা? আচ্ছা তাহলে কি আমার বলা উচিত ছিলো, তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি?
-আপনাকে বলেছি না ভালোবাসা বলে কিছু নেই! ভালোবাসা আমার কছে কিসের মতো জানেন? ধরেন, মোবাইলের মতো,না থাকলে মনে হয় একা অসহায় লাগে আবার বেশি ঘাটলে মাথা ব্যথা করে,তবে হ্যাঁ আপনি বলতে পারেন, আমার সাথে অভ্যস্থ হয়ে যাচ্ছেন এবং সেটাই আপনার জন্য মঙ্গল।
দুজনেরই পাসপোর্ট ছিলো বাংলাবান্ধা দিয়ে আমরা শিলিগুড়ি হয়ে চুমো গাড়িতে করে গ্যাংটক যাচ্ছি। আমি বললাম, আচ্ছা একটা গাড়ির নাম চুমো হয় কিভাবে?
-আপনি এক কাজ করেন আপনি আমার হাতে একটা চুমো দেন তাহলে মনে হয় কিছুটা বুঝতে পারবেন।কপালে তো দিবেন না,নাকি?কারন ঐ যে সৌরভ ভাই।আর ওটা চুমো না সুমো গাড়ি।
দূর আমি ভাবি কি?আর হয় কি?আমি তোমার ঐ সৌরভ ভাইয়াকে নিয়ে ভাবছি না। আমার মন অত ছোটনা, বলেই ভাবলাম, মিথ্যা বললাম নাকি?যাইহোক আমরা যে ড্রাইভারের গাড়িতে যাচ্ছি উনার নাম সুস্মা তামাং।তার কথা আমি না বুঝলেও কেন যেন নীলা সব বুঝতেছে।আমরা যে হোটেলে গ্যাংটক উঠলাম তার নাম “থে এলগিন নর-খলিল, গ্যাংটক – সিঙ্কে”। আমি ভাবছি হায় আল্লাহ আমি মারমেইড, মারমেইড করছিলাম আর এ কোথায় আসলাম!সবুজের সমারোহ আর অভিজাত্যের অদ্ভুত এমন যোগসাজশ আমি জীবনে কল্পনাও করিনি!সাথে সাথে নীলার কথা মনে পড়লো কারন এটা ওর পছন্দ ছিল।
তামাং সাহেব কালকে সকালে আমাদের লাচুং গ্রাম দেখাতে নিয়ে যাবে বলে বিদায় নিলো।গ্যাংটকে আসার পর থেকে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে সবকিছুতেই চীনের গন্ধ পাচ্ছি।আমার আরও মনে হচ্ছে, নীলার পছন্দই বেস্ট।কোতুহল বশত জিজ্ঞেস করলাম
– আচ্ছা তুমি কি আগে এসেছো এখানে?
-হ্যাঁ, এটা আমার এখানে দ্বিতীয় হানিমুন।
আমার মনটা সত্যি খুব খারাপ হয়ে গেল, এই ভেবে যে, ও তো যা বলে সব সত্যি বলে।আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, কি বলছো এসব?সত্যি এটা তোমার দ্বিতীয় হানিমুন?
-দ্বিতীয় বললেও ভুল হবে, আমি কতবার যে গুগলে সিকিম সম্পর্কে পড়েছি, ভিডিও দেখেছি বলে বোঝাতে পারবো না।ঐ দিক দিয়ে বললে দ্বিতীয় বার কমই বলেছি,আর আমাকে কি আপনার রোবট মানবী মনে হয়?তবে এক্ষেত্রে আপনি একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন।এককথায় এখানে আসতে রাজি হবার জন্য।
যাক কিছুটা স্বস্তি পেলাম।আরো ভালো লাগছে, অদ্ভুত রকমের শীত! নীলা কাঁপতে কাঁপতে কম্বলের নীচে আশ্রয় নিলো।আমিও একই পথ ধরলাম।ওকে আরো একটু বেশি কাছে পাচ্ছি, শীতের কারনে, এজন্য শীতকে বন্ধুই মনে হচ্ছে,আর এখন শীতটাও কম লাগছে। শীতকে এতোটা ভালো কখনো লাগেনি!এভাবে ভালোই এগোচ্ছিলাম হঠাৎ সেই কর্কষ কন্ঠ!
-আচ্ছা আপনি এতো নড়েন কেন?হাত এক জায়গায় রাখতে পরেন না?
আমি যথারীতি রানআউট হয়ে মাথা নীচু করে ভাবছি, শাহেদ মেয়েদের মন বোঝা অত সহজ না!বড় বড় মনীষী কুপোকাত হয়েছে, বড় বড় ডাকাত,ব্যবসায়ী বা রাজনৈতিক ব্যক্তি ধরাশায়ী হয়েছে এই নীলাচলে, আর তুমি কে হে?
-আচ্ছা আপনি কি জানেন এই গ্যাংটক আর সিকিমে একই সময়ে কত দর্শণার্থী আসে এবং অবস্থান করে?
-আমি এক সেকেন্ড পরে বললাম, আমাকে বলছো? পরক্ষণেই ভাবলাম, আমি আছি কি যন্ত্রনায় আর সে জানতে চাইছে কি?
-সরল স্বীকারোক্তি,না।
-প্রায় আট লাখ!
আমি বললাম, হুম। আমি ভাবছি, এরকম একটা স্বর্গীয় পরিবেশে এসেও একজন বউ তার নব্য স্বামীর সাথে এতোটা কঠোর হতে পারে?যাক অনেক ঘটনার পর রাতটা শেষমেষ ভালোই কাটলো।আমরা সকাল সকাল গোসল করে রেডি হচ্ছি এমন সময় ফোন বেজে উঠলে ফোন রিসিভ করতেই ম্যানেজার কুষল বিনিময় করে বললো, Sir. Your driver is waiting for you downstairs।আমি জবাবে, খুব দ্রুত নামছি জানালাম।পরক্ষণেই নীলার কন্ঠ
-এই যে শুনছেন একটু বাথরুমে আসবেন?
(চলবে……..