#ডার্ক সাইড অফ এ বিউটিফুল লেডি
পর্ব ৭
#দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা
8.
আমি আবার গলা খাকারিয়ে বললাম,
– তুহিনের সাথে তোমার বিয়েটা তোমার পছন্দেই হয়েছিলো। তুমি ভেবেছিলে ভালো থাকবে সে বিশাল ঘরে। কিন্তু সেখানেও তোমার রূপ তোমার কাল হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
ও একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন আমার পরের কথা শোনার অপেক্ষায় আছে ও।
আমি চুপ থেকে বললাম, সে ঘরে আর যা কিছু অভাব না থাকলেও মেয়েদের সম্মানের খুব অভাব। তাই তো?
– হ্যাঁ, সে ঘরে মেয়ে মানেই শুধু কোন খেলনার বস্তু। বিছানা ছাড়া আর কোথাও যেন তারা জীবন্ত নয়। দামী কোন আসবাবপত্র শুধু।
– তাহলে তুমি বেরিয়ে আসতে৷ ডির্ভোস দিতে। তোমার নিজের নামেও অনেক সম্পত্তি ছিলো। তুমি যথেষ্ট ক্ষমতাবান মেয়ে।
– যত টা সহজ ভাবছেন হয়ত অতটা সহজ ছিলো না ব্যাপার টা।
– কারণ ওদের কাছে তোমার মাতাল অবস্থায় তোলা ভিডিও ছিলো। এইতো?
ওর হাত পা কাঁপছে । আমি খালিদার দিকে তাকালাম। ও বাইরে থেকে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। ও যেন কুঁকড়ে উঠছে।
-এই কথা আপনার কেন মনে হলো?
– কারণ তুমি বলেছিলে ঘুমের মধ্যে অন্য কেউ তোমাকে স্পর্শ করতো, স্বাভাবিক ঘুমের মধ্যে হলে তুমি জেগে উঠতে পারতে। কিন্তু তুমি জেগে উঠে প্রতিবাদ করতে পারতে না। যেটা সেদিন সূক্ষ্ম ভাবে এড়িয়ে গিয়েছো তুমি। কারণ তখন হয়ত তুমি মাতাল থাকতে।
তোমাদের ঘরে বিশাল বিশাল পার্টিতে তোমার মদ খাওয়ার অভ্যাস ছিলো। তুমি এখন যতটা শান্ত। ততটা শান্ত তুমি ছিলে না। তোমার লাইফস্টাইল ছিলো যথেষ্ট খারাপ। এমন কি তুমি ড্রাগস ও নিতে। তাই তুমি অনেক কিছুই জানতে ড্রাগসের সর্ম্পকে।
অস্থির গলায় বলল-
-এইসব আপনাকে কে বলল?
– তোমার সম্পর্কে খোঁজ যে নিয়ে এসেছি তা হয়ত তুমি বুঝতে পারছো।
ও এইবার চুপ করে রইলো।আমি আর কিছু বলছি না। কারণ বাকি কথা ওকেই বলতে হবে। না হলে প্রমাণ করা যাবে না কিছুই।
ও এইবার চিৎকার করে উঠল,
– হ্যাঁ আমার ড্রাগস নেওয়ার অভ্যাস ছিলো। কিন্তু সেটার সুযোগ যে সবাই নিতে পারবে তার অধিকার তো আমি কাউকে দিইনি।
ওরা আমাকে ব্যবহার করতো। বড় বড় ডিলের জন্য। ওরা আমাকে ব্যবহার করতো ওদের অন্যায়গুলো ঢাকতে, সাহায্য নেওয়া বড় বড় মন্ত্রীদের শান্ত রাখতে। সে ঘরের প্রতিটা ছেলেই ছিলো নোংরা চরিত্রের। আর সবাই জেনে তা চুপচাপ সহ্য করেছিলো। যেন এইসব অতি সামান্য ব্যাপার।
ওর গলার স্বর টা অদ্ভুত শোনাচ্ছে। যেন ভেজা মাটিতে আটকে আছে ওর স্বরটা।
খালিদা আবার কুঁকড়ে উঠলো।মেয়েদের এই ধরনের অত্যাচার ও মোটেও সহ্য করতে পারে না৷ কলেজ লাইফ থেকে তাই ও পুলিশে এসেছে।
– তারপর? অধরা হওয়াতে ওদের সে সুযোগে বাঁধা পড়লো?
দুইহাতের তালু দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলল, স্বর টা দ্রুত চেইঞ্জ হয়ে গেল। বলল-
– হ্যাঁ। তাই ওরা কেউই অধরাকে পছন্দ করতো না। তাছাড়া মেয়ে হওয়াটাও ওদের পছন্দ না। ছেলে হলে ওদের হতো। মেয়ে হওয়াতে ও শুধু আমার মেয়ে হয়েই রয়ে গেল। আমি ওকে নিয়ে সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতাম। আমি ড্রাগস নেওয়া ছেড়ে দিলাম। তখনিই আমি বুঝতে পারি ওরা কতটা নোংরা মনের।
– কিন্তু অধরাকে খুন করলে কেন? যে গল্পটা বলেছিলে সেটা কি সত্য?
ও এইবার চুপ হয়ে গেল। হয়ত ও নিজেই বুঝতে পারছেনা কি বলবে এখন।
– তুমি কি সত্যিই অধরাকে খুন করেছিলে? নাকি ওরা খুন করে তোমার উপর দোষ চাপিয়েছিলো?
এই প্রথম ওর চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো। খালিদা অস্থির হয়ে উঠেছে। যেন ও বিশ্বাসই করতে পারছে না।
– তোমাকে কিসের জন্য এই শাস্তি দেওয়া হয়েছিলো?
কোন শব্দেই যেন ওর ভেতরে চলা তুফানটা সরিয়ে বেরিয়ে আসতে পারছে না। ও অনেকক্ষণ ধরে চুপ করে আছে দেখে খালিদা রুমে ঢুকে বলে উঠলো,
– তোমার সাথে যদি কোন অন্যায় হয়ে থাকে তার শাস্তিও তারা পাবে। তুমি নির্দ্ধিধায় বলো। তোমার কোন দোষ না থাকলে তোমার মুক্তির ব্যবস্থা আমি করব।
ও এইবার চোখ তুলে তাকালো, বলল,
– হ্যাঁ অধরাকে ওরাই খুন করেছিলো।
আমি আর খালেদা চোখাচোখি হলাম, ও বলতে শুরু করল,
– সেদিন তুহিন আমাকে খুব জোর করছিলো পার্টিতে নিয়ে যাওয়া জন্য৷ আমি রেডি হচ্ছি না দেখে খুব চিৎকার চেচামেচি শুরু করল। এই শুনে ওর মা আর দুই ভাই সবাই এসে আমাকে শাসাতে লাগল, বলল –
-আমি না গেলে ওরা অধরাকে অত্যাচার করবে, আমি যাচ্ছিলাম না তাও। ওরা আমার সামনেই অধরাকে বার বার বালতিতে ডুবাতে থাকে।
তারপর, একসময় নাকে মুখে পানি গিয়ে নিশ্বাস আটকে যায় অধরার, আমাকে ভয় লাগাতে গিয়ে ওরা আমার অধরাকে মেরেই ফেলে৷
বলতে বলতে ও ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। আমারো চোখের কোণে পানি জমল। খালিদাও যেন থমকে গেল। হয়ত কত মানুষের মৃত্যু দেখে ও কিন্তু এমন নির্মম হত্যাতে নির্বাক হচ্ছে সেও।
-এরপর ওকে বালতিতে ফেলে রাখা হয়। এক্সিডেন্ট দেখানো হয়। এরপরও যখন আমি বেপরোয়া হয়ে উঠলাম তখন ওরা আমাকে আমার মেয়ের খুনী বানিয়ে দেয়। কাজের মেয়েকে টাকা দিয়ে ওরা সাক্ষী বানায়।
দুইহাতে মুখ ঢেকে ফেলল ও।
এতক্ষনের ইমোশনাল গল্প শোনার পরও আমার মস্তিস্ক আবার বলছে, এইবার আমার ওকে প্রশ্ন করার পালা।
আমি চেয়ার টেনে আরেকটু সামনে গিয়ে বসলাম,
– সে কাজের মেয়েকে কে সরিয়েছিলো?
-ওরাই, ওরা শুধু আমাকে ভয় লাগাতে চেয়েছিলো।
– মিথ্যা।
ও এইবার চোখ তুলে তাকালো, আমি আবার বললাম,
– সে বাড়ির কাজের ছেলে জনি তোমাকে সাহায্য করতো। তাই তো?
ওর চোখ গুলো যেন আবার দ্রুত নড়ছে, বার বার এইদিক ওদিক করছে৷ সত্য মিথ্যা মেশানো গল্পে ও নিজেই যেন আটকে পড়ছে।
বললাম, সত্যটা বলো।
– হ্যাঁ, সে কাজের মেয়েটাকে খুন করেছিলো জনি। আমাকে বাঁচাতে। ওরাও ভাবলো এই সুযোগে ভয় দেখিয়ে আবার আমাকে দিয়ে –
থেমে গেল ও, আমি ওকে সময় দিচ্ছি। ওর মধ্যে অদ্ভুত দোটানা চলছে। দেখাতে চাইছে না তাও যেন বেরিয়ে আসছে। খালিদা আলতো করে বলল-
-তারপর?
আমিও বলে উঠলাম, তুমি আমাকে বলেছিলে, পানির রূপ দিয়ে তুমি ওদের খুন করেছিলে সেটা কীভাবে?
নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে ও। বলল-
– আমি চুপচাপ হয়ে গেলাম, আমি সে মহিলার কাছ থেকে তার সব প্রিয় মানুষ ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিলাম, যে আমার কাছ থেকে আমার প্রিয় মানুষ ছিনিয়ে নিয়েছে।
তাই আমি একে একে সবাইকে খুন করেছি জনির সাথে মিলে।
-কীভাবে?
-আমি বাড়ি ফাঁকা হওয়ার অপেক্ষা করতাম। যখন বাড়িতে যাকে পেয়েছি। তাকে খুন করতাম। প্রথমে করেছিলাম তুহিনের বাবাকে।
সেদিন বাড়িতে কেউ ছিলো না, সে সুযোগে উনি আমাকে ডাকেন উনার মদের গ্লাস আর বরফ দিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি গেলাম,
-আর তুমি জানতে কীভাবে সব পুরুষদের আর্কষণ করতে হয়।
– আমার তেমন কিছু করতে হতো না, শুধু আঁচল নিচু হলেই সবাই ধরে নিতো –
– তারপর?
– সুযোগ বুঝে জনি এসে পেছন থেকে হাত চেপে ধরে, তারপর জনি উনাকে বাথরুমে নিয়ে যায়। বিশাল বাথরুমে তাকে চিৎ করে ফেলতাম। আমি গায়ের উপর চড়ে বসতাম, তারপর আমার সুতির শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলত জনি।
নাক বরাবর সরু ধারায় পানি ফেলতাম, সুতির কাপড়ের কারণে অক্সিজেন এমনিতে আটকে যেত, তার উপর সরু ধারায় ফেলা পানি দ্রুত অক্সিজেনের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতো। এইভাবে মিনিট দুয়েকের মধ্যে মারা যায় মানুষ।
খুনের এমন অভিনব কৌশল শুনে আমি আঁতকে উঠলাম। সাথে খালিদাও।
এরপর জনি সব কাপড়চোপড় দ্রুত চেঞ্জ করে আবার বিছানায় শুইয়ে দেয়। জনির সব ঘরে যাওয়ার আর সবার কাপড় চোপড় ধোয়ার পারমিশন ছিলো।
তাই কারো মনে সন্দেহ আসতো না।
যতক্ষণে সবাই জানতে পারত আর পোস্টমর্টাম হতো ততক্ষণে শুধু নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়াটাই কারণ থাকতো।
খালিদা এইবার আমার দিকে তাকালো ও যেন বলতে চাইছে — এই মেয়ে ভয়ংকর!
আমি কেন যেন মানতে পারছিলাম না।
– তারপর?
– তুহিনের দুই ভাই কেও, বাসায় কেউ না থাকলে তখন দেখা করার ইঙ্গিত দিতাম, তারা নিজেরাই রচনা করত তাদের মৃত্যু।
আমি আর জনি মিলে একই ভাবে ওদেরও মুখের উপর সুতির কাপড় দিয়ে নাক বরাবর পানি দিয়ে –
আমি বলে উঠলাম, এই ধরনের টর্চার কে বলা হয় waterboarding । আর্মিদের মধ্যে এই ধরনের টর্চার চালু ছিলো, এরপর একটা সময়ের পর এইটাকে লিগ্যালি ব্যান করে দেওয়া হয়।
খালিদা বলে উঠল,
– আমাদের পুলিশ টর্চারে একটা আছে যেটা তে কপালের উপর অনবরত বিন্দু বিন্দু পানি টর্চার করা হয়। এইটা দীর্ঘ সময় ধরে
করলে –
খালিদা কথাটা শেষ করার আগে ময়ূরাক্ষী আবার বলে উঠলো,
– আর সে টর্চারটা যদি বরফ দিয়ে করা হয়?
-চলবে
আজ রাতে শেষ পর্ব পেয়ে যাবেন।