বজ্জাত বউ .
লেখিকা বিলকিস
পর্ব ৭
আহাদ: মিষ্টি তোর ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে। ক্যান্সারে ফলে তোর তোর ব্রনে ৭০% ডেমেজ হয়ে গিয়েছে।
মিষ্টি : হা হা হা। তুই মজা করিস না। বল না ভাইয়া তুই আমার সাথে মজা করিস।
আহাদ: আমি কোনো মজা করিছি না বোন বলে আহাদ কাঁদতে লাগলো।
মিষ্টি: শোন না ভাইয়া আমার মনে হয় কি আমার রিপোট বদল হয়েছে। তুই অন্য জন্যের রিপোট এনেছিস না তুই ভালো করে দেখ।
আহাদ: না রে বোন আমি ভালো করে দেখে বলছি। আমি প্রথমে সেটা মনে করে ছিলাম। তারপর নিজের ল্যাবে গিয়ে পরীক্ষা করেছি। কোনো ভুল হয়নি। তবে তুই চিন্তা করিস না আমি বিদেশে ডাক্তার দের সাথে কথা বলে তোর চিকিৎসা করবো। তুই ভালো হয়ে যাবি ( মিষ্টিকে জরিয়ে বললো)
মিষ্টি: না ( আহাদকে ধাক্কা দিয়ে) কোনো চিকিৎসা হবে না।
আহাদ: মিষ্টি আমি বলছি তোকে সুস্থ করে তুলবো বলে আহাদ অঝোরে কাঁদতে লাগলো।
মিষ্টি: ভাইয়া তোর বোন আর ছোটো নেই রে যে চকলেট দিয়ে মন ভুলাবি। আর ভাইয়া তুই কাঁদছিস কেনো। ( আহাদে চোখের পানি মুচে দিয়ে) ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে দেখ আমি একটু কাঁদছি না। আমি হাসছি হা হা হা বলেতে আহাদ মিষ্টিকে আবার জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। মিষ্টিও আহাদ জরিয়ে ধরে রাখলো।
মিষ্টি: এই ভাইয়া বল তো আমার সাথে এমন কেনো হলো।
আহাদ: তোর কিছু হতে দেবো আমি।
মিষ্টি: এই ভাইয়া আর কাঁদবি কিন্তু। ভাইয়া আমাকে একটা প্রমিজ করবি।
আহাদ: কি প্রমিজ।
মিষ্টি: তুই আমার ক্যান্সরে কথা আম্মু, বাবা, বড় বাবা, বড় মা কাউকে বলবি না প্রমিজ কর ( আহাদের দিকে এক হাত বারিয়ে দিয়ে বললো)
আহাদ: না মিষ্টি আমি পারবো না।
মিষ্টি: দেখ ভাইয়া আমি তো অল্প কিছু দিন বাঁচবো তারপার মরে যাবো না। এর আগে আমার জন্য বাবা, আম্মু, বড় মা, অনেক কষ্ট পেয়েছে। আসলে আমি দুষ্ট মি বসে অনেক লোকের ক্ষতি করেছি তার জন্য সবাই কে কথা শুনতে হয়েছে। কথার শুনার পর অনেক কষ্ট পেয়েছি। আমি আর ওদের কোনো কষ্ট দিতে চাই না। আর বাবা যদি আমার অসুখে কথা শুনে তাহলে বাবা সহ্য করতে পারবে না। তাই তুই আমাকে প্রমিস কর তুই আমার অসুখে কথা বাড়ির কাউকে বলবি না।
আহাদ: না মিষ্ট এ রকম প্রমিজ আমি করতে পারবো।
মিষ্টি: আমার মাথায় হাত রেখো বল তুই কাউকে বলবি না( আহাদে হাতটা মিষ্টির মাথায় উপর ধরে)
আহাদ: মিষ্টি তুই জেদ করছিস।
মিষ্টি: আমি কেনো জেদ করছি না তুই কাউকে বলবি না। একটা মুত্য পথো যাএী কথা তোকে রাখতে হবে।
আহাদ: না বোন এ কথা বলিস না। তোর ভাই তোকে বাঁচাবে দেখিস।
মিষ্টি: ভাইয়া আমাকে মিথ্যা সান্তনা দিস না। আমি জানি আমি আর বাঁচবো না। আর তুই মাথায় হাত রেখে কথা দে ভাইয়া কথা দে বলবি না।
আহাদ: মিষ্টি ঠিক আছে আমি কাউকে বলবো বলে আহাদ মিষ্টি ধরে কাঁদতে লাগলো মিষ্টি ও আহাদকে জরিয়ে কাঁদতে লাগলো। হঠৎ করে আহাদ দরজায় দিকে চোখ যেতে আহাদ বললো
আহাদ: দিশা
মিষ্টি: দিশা মানে বলে আহাদকে ছেড়ে দরজায় দিকে তাকলো। তাকিয়ে দেখে দিশা দুচোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।
দিশা: স্যার আমি যা শুনলাম তা কি সত্যি স্যার ( আহাদে সামনে এসে বললো)
মিষ্টি: আরে দিশা তুমি ভুল শুনেছো ( চোখ মুছে বললো)
দিশা: স্যার আপনি বলুন আমার ভাবির কি হয়েছি। ঠিক আছে বলবেন নাতো আমি রিপোট দেখি নিচ্ছি বলে টেবিল উপর থেকে রিপোট টা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো।
মিষ্টি: আরে দিশা রিপোট টা দাও।
দিশা: না ভাবি আমি আমার ভাবিকে ছেড়ে থাকতে পারবো বলে মিষ্টিকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
মিষ্টি: আরে পাগলি মেয়ে মানুষকি আজীবন বেচে থাকে। থাকে না তো তাহলে আমি ও থাকবো না।
দিশা: না ভাবি আমি তোমাকে কোথায় যেতে দিবো না। আমি বরং ভাইয়া কে ফোন করে বলে তোমার বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাবো।
মিষ্টি: না দিশা তুমি তোমার ভাইয়া ফোন করবে না।
দিশা: না ভাবি আমি স্যার নয় য়ে তোমার কথা মানবো বলে ফোনটা নিয়ে পরশ কল করতে যাবে তখনি মিষ্টি দিশা কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললো
মিষ্টি: তোমার ভাইয়া দিব্যি তুমি কাউকে কিছু বলবে না।
দিশা: না ভাবি বলে অঝোরে কাঁদতে লাগলো।
মিষ্টি: তুমি যদি তোমার ভাইয়া কে ভালোবাসো তাহলে বলবে না বলে মিষ্টি রিপোট টা হাতে নিয়ে দৌড়ে আহাদের আফিস রুমে থেকে বের হয়ে রাস্তা এসে দাড়ালো। আকাশে দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো আর বলতে লাগলো কেনো করলে এটা তুমি বলো। কি ক্ষতি করেছি আমি তোমার। তুমি উওর দিচ্ছো না কেনো খোদা উওর দিচ্ছো না কেনো। বলে রাস্তার উপর বসে কাঁদতে লাগলো।
এদিকে আহাদ দিশা কে বললো
আহাদ: দিশা তুমি মিষ্টিকে দেখো ও কোথায় গেলো।আর আমি স্যারে সাথে কথা বলে চিকিৎসা ব্যস্থায় করি।
দিশা : হ্যা আমি যাচ্ছি ( চোখ মুছে বললো) তারপর রুম থেকে বের হয়ে মিষ্টিকে খুজতে লাগলো। হঠ্যাৎ করে আকাশ থেকে বৃষ্টির পড়তে লাগলো। আর বৃষ্টিতে মিষ্টি ভিজে গেলো।
মিষ্টি: আমি কাঁদছি কেনো। না না আমি কাঁদবো। একটু কাঁদবো না আমার তো এখন অনেক কাজ করতে হবে। আমি কাঁদলে হবে না। বলে মিষ্টি রাস্তায় পাশ হাটতে লাগলো। দিশা মিষ্টিকে খুজতে খুজতে রাস্তায় এসে দাড়ালো।
দিশা: কোথায় গেলো ভাবি। সামনে দিকে একটু যেয়ে দেখি। বলে হাটতে লাগলো।
রাস্তায় কিছু বাচ্চারা বৃষ্টিতে ভিজছিলো আর ফুটবল খেলছিলো হঠ্যৎ করে বলটা মিষ্টির পায়ে কাছে এসে থামলো। বাচ্চা গুলো মিষ্টির কাছে এসে বললো
বাচ্চা গুলো: আপু আপু তুমি আমাদের বলটা দাও না।
মিষ্টি ওদের দিকে না তাকিয়ে সামনে দিকে চলে গেলো।
বাচ্চা গুলো: যা বাবা বল চাইলাম বলতো দিলো না কথা বললো না। এই চল আমরা খেলা শুরু করি।
এদিকে দিশা রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে বাচ্চা গুলো কাছে এসে বললো
দিশা: এই যে শোনো এই দিকে একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পড়ে একটা মেয়েকে যেতে দেখেছো।
বাচ্চা গুলো: হ্যা দেখেছি এই দিকে গেছে।( হাত দিয়ে সামনে দিকে দেখিয়ে বললো)
দিশা: সামনের দিকে
বাচ্চা গুলো : হ্যা
দিশা: ধন্যবাদ তোমাদের বলে দিশা সামনের দিকে হাটতে লাগলো। ও তো ভাবি। ভাবি ভাবি বলে ডাকতে ডাকতে মিষ্টির পেছন থেকে হাতটা ধরে বললো
দিশা: ভাবি আমি তোমাকে কখন থেকে ডাকছি। তুমি শুনছো না। তুমি বাড়ি চলো।
মিষ্টি: দিশা আমাকে একটু একা থাকতে দাও
দিশা: না আমি তোমাকে একা ছাড়বো না।
মিষ্টি: দিশা আমার কথা শোনো।তুমি বাড়ি ফিরে যাও আমি পড়ে যাবো।
দিশা: ঠিক আছে তুমি যেখানে যাবে আমিও সেখানে যাবো
মিষ্টি: দিশা।
দিশা: কেনো কথা নয় চলো বলে দুজনে রাস্তায় দিয়ে হাটতে লাগলো।
অপর দিকে
পরশ আফিসে নিজের রুমে জানালা পাশে দাড়িয়ে বৃষ্টি দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখিছিলো আর ভাবছিলো
পরশ: মিষ্টি কি ভাবে এই নকশা গুলো আকলো। আমি যতোদূর যাদি তাতে ওর বেশি পড়াশুনা করে নি। ইন্টার পরীক্ষায় ইংরেজীতে তিন বার ফেল করেছে। সেই মেয়ে পক্ষে এই নকশা কি করে সম্ভব। না আমি ওকে চিনতে ভুল করছি। না না আমাকে ওর সম্পকে আরে জানতে হবে। কিন্তু কার কাছ থেকে জানবো। আহাদ yes আহাদ। একমাএ আহাদ পারবে ওর সম্পর্কে আমাকে জানাতে। একবার আহাদ কে ফোন করি। বলে ফোনটা হাতে নিয়ে পরশ আহাদের কাছে ফোন দিলো।
আহাদ : হ্যালো ( ফোন রিসিভ করে)
পরশ: আমি পরশ বলছি।
আহাদ: হ্যা পরশ বলো কেমন আছো।
পরশ: ভালো। আহাদ ভাইয়া আমি আপনার সাথে মিট করতে চায়। আপনি কি আমাকে একটু সময় দিবেন please .
আহাদ: হ্যা।
পরশ: thank you ভাইয়া। আমি ১ ঘন্টায় মধ্যে আপনার ওখানে আসছি। বলে ফোন কেটে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
১ ঘন্টা পর
পরশ: আসবো
আহাদ: পরশ এসে ভেতরে এসো।
পরশ: thanks ভাইয়া আমাকে সময় দেওয়া জন্য
আহাদ : আগে বসো আর বলো কি খাবে চা না কপি।
পরশ: কিছু না। আসলে আমি মিষ্টির সম্পর্কে জানতে চাই।
আহাদ: মিষ্টি সম্পর্কে কি জানতে চাই তাহলে পরশ কি মিষ্টির অসুখ সম্পর্কে জানতে চাইবে। কিন্তু পরশ অসুখটা শুনলো কার কাছ থেকে ( মনে মনে) কি জানতে চাই মিষ্টির সম্পপর্কে
পরশ: ভাইয়া আমি যতোদুর জানি ও বেশিদুর পড়াশুনা করেনি। কিন্তু ভাইয়া এই ফাইলে নকশা গুলো ও কি করে আঁকলো। ( ফাইলটা দেখিয়ে বললো)
আহাদ: এই ব্যাপার। পরশ আমার বোনটা একটা অনেক বড় প্রতিভা আছে।
পরশ: কিসের প্রতিভা।
আহাদ: আসলে পরশ। আমার বোনটা পড়াশুনা করেনি ঠিক কিন্তু ও ভালো আর্ট করতে পারতো। ছোটোবেলায় থেকে ও আর্ট করতে পছন্দ করতো। সারাদিন শুধু আঁকতো। একদিন বাবা আফিসের জন্য কিছু নকশা আকতে হবে। বাবা কিছুতে নকশাগুলো সম্পন কমপ্লেট করতে পারছিলো না তখন মিষ্টি এসে বাবাকে বললো বড় বাবা আমি তোমাকে help করবো। বাবা বললো তুই পারবিনা এটা আফিসিয়াল আর্ট। মিষ্টি বললো দেখো না আমি পারবো বলে নকশা আঁকতে লাগলো। যানো পরশ ওর আঁকা নকশাগুলো বাবার কোম্পনী তে অনেক বড় লাভ হয়। আর তখন থেকে বাবা কেনো আফিসিয়াল নকশা হলে মিষ্টিকে সঙ্গে করে নিয়ে আঁকতো। এভাবে ও আফিসিয়াল নকশা আঁকতে শেখে।
পরশ: আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা ও মধ্যে এমন প্রতিভা আছে।
আহাদ: আসলো সবাই আমার বোনটা বাহির দেখি বিচার করে। কিন্তু ওর ভেতটা একদম অন্য রকম। সেখানে শুরু ভালোবাসা ভরে রেখছে।
নার্স: স্যার আপনার ওতির সময় হয়ে গেছে।
আহাদ: তুমি যাও আমি আসছি।
পরশ: আচ্ছি ভাইয়া আমি এখন আসি। বলে পরশ চেয়ার থেকে উঠে দরজায় দিকে যেতে আহাদ বললো
আহাদ: পরশ
পরশ: কিছু বলবেন।
আহাদ: আমার বোনটা তোমাকে খুব ভালোবাসে। তুমি ওকে একটু ভালোবেসো এখন না ভালো না বাসলে আর ভালোবাসার সময় পাবে না। আর ওর একটু খেয়াল রেখেবলে আহাদের চোখের কোনার। পানি চলে আসলো।
পরশ: আসি ভাইয়া বলে পরশ রুম থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে আসলো। এদিকে পরশ রুম থেকে বের হওয়া পর আহাদে চোখের কোনার পানি চোখ বেয়ে পড়তে লাগলো।
পরশ গাড়ি নিয়ে রাস্তায় আসতে আর একটা গাড়ি এসে পরশের গাড়ির সামনে দাড়ালো……..
চলবে………