ওহে প্রিয় .
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৩৮
_________________
বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো হ্যাভেন। হাভু নামটায় ভীষণ এলার্জি তার। এই নামটার জন্যই ছোট সময় প্রচন্ড রেগে নানুবাড়ি আসাই বাদ দিয়েছিলো। হ্যাভেন নামটা নানুমনির ভালো লাগতো না। তাই সে শর্টকাটে ভালোবেসে হাভু বলেই সম্বোধন করেছিলো। শুধু নানুমনির মুখে এ নামটি নিয়ে কোন বিরোধিতা করেনি কারণ নানুমনিকে সে ভীষণ ভালোবাসে। কিন্তু যখন হ্যাভেন বাদ দিয়ে সবাই এ নামেই ডাকতে শুরু করে এমনকি ভাই,বোনরা সহ নানুবাড়ির সকল বন্ধুবান্ধবরাও এ নামেই ডাকে কেউ কেউ আবার হাসির পাত্রও বানায় তখন প্রচন্ড ক্ষেপে যায় সে। সকলের সঙ্গে রাগারাগি করে কিছু সময়ের জন্য এ নামটি ভুলাতে পারলেও হুটহাট ভুলবশত তারা ঠিক হাভু বলেই ডেকে ফেলতো। তাই রাগ করে বন্ধু দের সঙ্গে মেলামেশা বাদ দিলো। কিন্তু রিদির বড় ভাই রিজভী যখন বাড়ির ভিতরেও তাকে ভুলবশত এ নামে ডেকে ফেলে মেজাজ চরমভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় যার ফলে বেশ কয়েকমাস নানুবাড়ি আসাও বাদ দেয়৷ তারপর থেকেই সকলকে কড়া করে নিষেধ করা হয়েছে এসব নামে না ডাকতে। নানুমনি ডাকলেও অন্য কেউ যেনো এ নামে সম্বোধন করার সাহস না দেখায়। যদি ভুলক্রমে কেউ এ সাহস দেখায় তো তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
আজ সাহস দেখিয়েছে আহি। শাস্তি তারও পাওয়ার কথা কিন্তু আহি কি করে জানলো তাকে হাভু নামে ডাকা হতো? নিশ্চয়ই এর পিছনে নানুমনি বা অন্য কেউ আছে? মানা যায় এসব তার বউয়ের সামনে প্রেস্টিজ একেবারে পানচার করে দিলো। এই মেয়েটাও তো কম দুষ্টু নয়। শেষমেশ হাভু তার সঙ্গে আবার ভাই? হাভুটা না হয় কারো থেকে শুনেছে ভাইটা কে যুক্ত করতে বলেছিলো? হাজব্যান্ড আমি তার আমাকে ভাই বলা একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো না?
আহি বিরক্ত ভঙ্গিতেই চেয়ে আছে হ্যাভেনের দিকে। অথচ সে যে কি ভুল করে ফেলেছে ঘুণাক্ষরেও টের পাচ্ছে না। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই হ্যাভেনের চিন্তান্বিত বিস্ময়ভরা চেহেরা নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। তবে একরাশ ক্রোধ ফুটে ওঠলো চোখেমুখে। বসা থেকে ওঠে বিছানায় এক হাঁটু গেড়ে বসে আহির দিকে তেরে গিয়ে কাঁধে শক্ত করে চেপে ধরলো।দৃষ্টিজোরা দৃঢ়। আচমকাই এমন কিছু হওয়া তে চমকে গেলো আহি। চোখ দুটো তে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে৷ এক ঢোক গিলে নিজের ভয়টা নিবারণের চেষ্টা করলো, মুখ ফুটে কিছু বলার জন্য ওষ্ঠ জোরা ফাঁক করতেই হ্যাভেন ক্রোধান্বিত স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
– ‘আই এম ইউর হাজব্যান্ড ডোন্ট কল মি ব্রাদার ড্যাম ইট’।
জ্বরে শরীরের সমস্ত শক্তি ক্ষীণ হয়ে এসেছে৷ পুরো শরীরজুরে টনটনে এক ভাবের সৃষ্টি হয়েছে। হ্যাভেনের শক্ত হাতের চাপে সেই ব্যাথা যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। কোনরকমে হ্যাভেনের ক্ষিপ্ত চেহেরার দিকে দৃষ্টিপাত করে ভাঙা আওয়াজে বললো,
-‘ আহ লাগছে ছাড়ুন, ব্যাথা পাচ্ছি ‘।
আহির ব্যাথা পাওয়া,ঠান্ডায় কন্ঠস্বরের বিকৃতি, টনক নাড়িয়ে দিলো হ্যাভেনের। মূহুর্তেই চোখমুখে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে মনে মনে নিজেই নিজেকে গালি দিলো। নিজের ক্ষিপ্ত আচরণ টা এতো করেও ত্যাগ করতে পারছেনা। সেই আগের হ্যাভেন কি সে কিছুতেই হয়ে ওঠতে পারবে না? যে ক্ষিপ্ততার জন্ম হয়েছে এক কলঙ্কময়ী নারীর জন্য সেই ক্ষিপ্ততাকে কি এই পবিত্রময়ী নারীর জন্য ত্যাগ করতে পারবে না? চোখ বন্ধ করে লম্বা এক শ্বাস ছেড়ে আহিকেও ছেড়ে দিলো হ্যাভেন। থমথমে মুখো ভঙ্গিতে বিছানা ছেড়ে ওঠে পিছন ঘুরে ক্ষীণ স্বরে ‘আমি মা’কে পাঠাচ্ছি’ বলেই রুম ত্যাগ করলো।
.
রিজভীর রুমের সিঙ্গেল সোফাটাতে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে হ্যাভেন। তার থেকে তিন হাত দূরে দু’কান ধরে কাঁদো কাঁদো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে রিদি। রিদির বামপাশে দু’হাত দূরে হিয়া অদ্ভুত মুখে ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখোভঙ্গিটা এমন যে না পারছে হাসতে আর না পারছে কাঁদতে। তবে মেয়েটার সামনে বিয়ে বিয়ের সাত দিন আগে এমন স্মরণীয় ঘটনা ঘটবে জানলে আগেভাগেই ছোটখাটো একটা সেলিব্রেশন করে ফেলতো। এ মূহুর্তে তার ইচ্ছে করছে সুন্দর সুন্দর কিছু ফটোশুট করতে বা এই ফাটাফাটি দৃশ্যটুকু ভিডিও করে রিদির হবু বরকে সেন্ট করতে। কিন্তু ভাইটাকে যমের মতোন ভয় পাওয়াতে এই অসাধ্য টা সাধন করতে পারছেনা। দেখা যাবে এমন কিছু করতে গেলে রিদিকে দারুণ ভাবে রুম থেকে বের করে দিয়ে রিদির স্থানে তাকে দাঁড় করিয়ে দেবে। তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে দৃশ্য টুকু একা একা উপভোগ করাই শ্রেয় মনে করলো।
-‘ কি… সিস্টার তুমি কি তোমার পানিশমেন্টের ভিডিও হওয়ার অপেক্ষা’তে আছো ‘? ঠাট্টার স্বরে কথাটি বলেই তৎক্ষনাৎ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-‘ যা বলেছি চুপচাপ কর বিশ বার ওঠবোস করবি একবারো কম নয় পুরো বিশ বার। এতে ব্যায়ামও হয়ে যাবে সারাজীবন মনেও থাকবে যেখানে সেখানে যা তা বলার শাস্তি কি হতে পারে নাও স্টার্ট ‘।
হ্যাভেনের ধমক খেয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে প্রায় কেঁদে দিয়েই ওঠবোস শুরু করলো রিদি। হ্যাভেন মুচকি হেসে চুল গুলো আঙুলের ফাঁকে নিয়ে পিছন দিক আঁচড়ে নিলো। তারপর বেশ আয়েশের ভঙ্গিতে সোফায় পিঠ এলিয়ে দিয়ে হিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-‘ তুই মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে আমার জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়। আমার আদুরে হবু বিবাহিতা বোনটার পানিশমেন্ট দেখতে দেখতে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বো তখন একটু গলা ভিজিয়ে নিতে হবে না ‘?
.
দুপুরের দিকে খাবার খেয়ে ওষুধ খেয়ে আবারও ঘুমিয়েছিলো আহি। ঘুম ভাঙলো একেবারে সন্ধ্যার পর৷ আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি দুপুরের মতোন এবারও বিছানার পাশে হ্যাভেনকে বসে থাকা অবস্থায় দেখতে পেলো। দৃষ্টিজোরা ফোনে নিবদ্ধ থাকায় আহির যে ঘুম ভেঙেছে বুঝতে পারেনি হ্যাভেন। আহি প্রথমে আশ্চর্য হলেও কিছুক্ষণ পার হওয়ার পর বেশ বিরক্ত বোধ করলো। তার ঘুম ভেঙেছে অথচ মানুষ টা ফোনে এতোটাই বিজি যে তাকে খেয়ালই করছেনা। যদি তাই হবে নাটক করে এ ঘরে এসে বসে থাকতে কে বলেছে? পরোক্ষণেই ভাবলো ‘এর থেকে বেশি কিই আশা করা যায় মানুষ টার থেকে? আমিও না বড্ড পাগল এখনো এতো এক্সপেক্টেশন যে কেনো রাখি ধূর’।
শরীরে ব্যাথাবোধ অনেকটাই কমে গেছে। আগের তুলনায় খানিকটা সুস্থতা বোধও করছে আহি। তবে ঠান্ডাটা কাটেনি। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গার পানি খাচ্ছে আবার গোসল করতে হচ্ছে এসবের জন্যই এমন জ্বর বাঁধলো তার। কিন্তু কি করবে এখানেতো আরো বেশ কিছুদিন থাকতে হবে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওঠে বসলো। সে ওঠতেই হ্যাভেন দ্রুত ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বিচলিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
-‘ ঘুম ভেঙে গেছে ‘ ?
আহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই হ্যাভেন ওঠে তার কাছে আসলো হাত বাড়িয়ে কপাল চেক করলো। তেমন তাপ নেই। স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে গলায় স্পর্শ করার পূর্ব মূহুর্তেই আহি ছিটকে সড়ে গেলো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে কিছু সময় নিশ্চুপ থাকলো। নিজের মনের সঙ্গেই কিসব বোঝাপড়া করে নিয়ে ক্ষুব্ধ কন্ঠে বললো,
-‘ পারলেন না তাইনা? আমার শরীর না ছুঁয়ে থাকতে পারছেন না। বার বার ছলে বলে কৌশলে আমার দেহটাকে নিজের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। এজন্যই এখানে আসতে চাইনি আমি ঠিক একারণেই। এতো নাটক না করে সোজাসুজি বলুন আমার শরীর ছোঁয়ার তাগদ অনুভব করছেন। আপনার চরিত্র অনুযায়ীই ব্যবহার করুন। তবুও নাটক করবেন না ‘।
প্রচন্ড রেগে গেলো হ্যাভেন। মাথা যেনো নষ্ট হয়ে গেলো একেবারে। চোখমুখে ফুটে ওঠলো অস্বাভাবিক ক্রোধ। চিৎকার করে ওঠে বললো,
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার শরীর ছুঁতেই এসেছি তোমার সঙ্গে ইন্টিমেট হওয়াটাই আমার মূল উদ্দেশ্য। তাহলে এখনো চুপ আছি কেনো? আমার তো চুপ করে হাত গুটিয়ে থাকার কথা নয় বরং খোল কাপড় খোল ‘।
গা থেকে ওড়না টেনে মেঝেতে ফেলে দিতেই আঁতকে ওঠলো আহি। মিনমিনে কন্ঠে বললো,
-‘ ছিঃ আপনি এতো জঘন্য ‘।
-‘ আমার থেকেও জঘন্য তুমি এবং তোমার মন মানসিকতা ‘।
-‘ এই মন মানসিকতার জন্মই দিয়েছেন আপনি মি. হ্যাভেন তালুকদার’।
-‘ স্যাট আপ! গলার স্বর টা নিচু করে কথা বলো। এটা কোন ভদ্র পরিবারের মেয়ের আচরণ নয়। জ্বর কমেছে কিনা এটাই চেক করছিলাম এতোটা রিয়্যাক্ট কেনো করছো? যদি শারীরিক চাহিদা মেটাতেই আসতাম তাহলে ঘন্টার পর ঘন্টা হাত,পা গুটিয়ে তোমার পাশে বসে থাকতাম না৷ আমি আমার ভুল স্বীকার করে নিতে জানি বলে এটা ভেবো না আমার ঠিক কে তুমি ভুল বললে সেটাও স্বীকার করে নেবো ‘।
-‘ আপনি আমার ভদ্রতা নিয়ে প্রশ্ন করছেন ‘?
-‘ তুমি আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করছো ‘?
-‘ হ্যাঁ করছি ‘।
ক্ষেপে গেলো হ্যাভেন। দু’হাতে আহির দুকাধ প্রচন্ড শক্ত করে চেপে ধরে ক্রোধে ফেটে পড়লো।বললো,
-‘ চরিত্র যদি খারাপই হতো রূপসার মতো মেয়ের জন্য জীবন নষ্ট করতাম না, চরিত্র যদি খারাপই হতো তোমায় বিয়ে করে ঘরে তুলতাম না। আমার স্ট্যান্ডার্ডের অহরহ ছেলেরা কি করে বেড়ায় খোঁজ নিয়ে দেখো। আমার পিছনে, আমার ক্ষমতা,আমার টাকা-পয়সার লোভে কতো মেয়েরা স্বেছায় শরীর বিলাতে আসে একবার খোঁজ নিয়ে দেখো। যদি চরিত্র খারাপই হতো এতোগুলো মাস তোমার সঙ্গ না পেয়ে ঠিক অন্যকারো সঙ্গ খুঁজে নিতাম। এটা জাষ্ট আমার হাতের ময়লা ‘।
স্তব্ধ হয়ে গেলো আহি। হ্যাভেন তাকে ছেড়ে দিয়ে ওঠে দাঁড়ালো মেজাজ টা প্রচন্ড বিগরে গেছে তার। আর এক মূহুর্ত এখানে থাকলে এই মেয়ের গায়েও হাত ওঠে যাবে আজ। তাই রুম ছাড়তে উদ্যত হলো। আহি তার চলে যাওয়া বুঝতে পেরে তৎক্ষনাৎ বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো হ্যাভেনের দিকে এগিয়ে যেতে নিতেই মাথাটা কেমন ঘুরে এলো। চারদিক অন্ধকার হয়ে পড়ে যেতে নিতেই হ্যাভেন আঁতকে ওঠে জাবটে ধরলো তাকে। চোখেমুখে বিস্ময়ের সঙ্গে ভয় স্পষ্ট হয়ে ওঠলো হ্যাভেনের। বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
-‘ এই আহি কি হয়েছে? কেমন লাগছে তোমার কি হলো হঠাৎ ‘?
-‘ কিছু হয়নি আপনি আমাকে ছাড়ুন প্লিজ আমার গা ঘিনঘিন করছে যেসব মেয়েরা আপনার হাতের ময়লা তাদের কাছেই যান। লিভ মি প্লিজ। দুর্বল কন্ঠে উত্তর দিলো আহি।
-‘ এবার সত্যি তোমাকে আমি মার দিব আহি। আমি এতোটা ধৈর্য্যশীল নই সিরিয়াসলি বলছি। এতোটা নির্বোধের আচরণ তোমাকে মানায় না। তুমি কিন্তু বাচ্চা মেয়ে বা ইমম্যাচিওর নও। যথেষ্ট বোঝো তুমি তাই আমার কথার অর্থগুলোও আশা করি বুঝেছো। যদি আমার ওসব কিছুরই নেশা থাকতো তাহলে ঘন্টার পর ঘন্টা এখানে হাত,পা গুটিয়ে বসে থাকতাম না ‘।
-‘ ঘন্টার পর ঘন্টা এখানে কে বসে থাকতে বলেছে আপনাকে ‘?
-‘ তোমার কি মনে হয় আমি অন্যের প্ররোচনায় কাজ করার মানুষ ‘?
শক্ত হাতে আহিকে ধরে আছে হ্যাভেন। আহি মুখ তুলে তার দিকে তাকিয়ে ভেঙচি কাটলো। বললো,
-‘ এ্যাহ সাধু সন্ন্যাসী একেবারে অন্যের প্ররোচনায় কাজ করে না। ঠিকি তো ভাইদের প্ররোচনায় নিজের বউকে বশে আনার জন্য ওঠেপড়ে লেগেছেন ‘।
ওষ্ঠকোনে কুটিল হাসির দেখা মিললো হ্যাভেনের। বুকের ভিতরটায় বয়ে গেলে শীতল শিহরণ। আহিকে সামান্য উঁচিয়ে নিজের কোলে বসালো। চমকে গিয়ে বুক-পিঠে দুহাতে ধাক্কা দিলো আহি। নিচু কন্ঠে বললো,
-‘ কি করছেন ছাড়ুন এমন করলে কিন্তু আমি এখান থেকে চলে যাবো ‘।
পাত্তা দিলো না হ্যাভেন একহাতে আহির পিঠ আঁকড়ে অন্য হাতে চুলগুলো সরিয়ে ঘারে আলতোভাবে চেপে কপালে কপাল ঠেকিয়ে মৃদু স্বরে প্রশ্ন করলো,
-‘ কি বললে ‘?
-‘ বললাম চলে যাবো লজ্জা করেনা এতো কিছুর পরও এভাবে আমাকে স্পর্শ করছেন ‘?
-‘ বাড়াবাড়ি করো না আহি আমি পরপুরুষ নই ‘।
-‘ নিজ পুরুষও নন ‘।
-‘ ঠিক কিছু সময় পূর্বে তুমি নিজ মুখে বলেছো তুমি আমার বউ তাহলে নিজপুরুষ হলাম না কি করে ‘?
শিউরে ওঠলো আহি। হ্যাভেনের তপ্ত শ্বাসগুলো তার পুরো মুখশ্রীতে যেনো লেপ্টে যাচ্ছিলো। অতিপরিচিত উত্তপ্ত শ্বাসগুলো যেনো আজ ভীষণ অপরিচিত লাগছে। হয় না এমন চেনা তবুও অচেনা? আজকের এ মূহুর্তে অনুভব করা প্রতিটি নিঃশ্বাসে যেনো মিশে আছে অন্যরকম এক মাদকতা৷ যা তাকে খুব করে কাছে টানছে। হ্যাভেনের কন্ঠধ্বনিতে যেনো মাখামাখি হয়েছে অজস্র অনুভূতিদের। যা তার বুকের ভিতর সুক্ষ্ম এক ব্যাথার উৎপত্তি ঘটাচ্ছে। চোখ বুজে আবারো দুহাতে হ্যাভেনের বুকে ধাক্কা দিলো ফলে আরো গভীর ভাবে জরিয়ে ধরলো হ্যাভেন। বললো,
-‘ সুস্থ হয়ে ওঠো দূরে দূরেই থাকবো কিন্তু এমন অসুস্থতায় একা ছাড়া সম্ভব না। তোমার মা, বাবা বা বোন নেই এখানে তাই নিশ্চিন্ত মনে কারো ওপর ভরসা করে একা ছাড়তে পারছি না। ভালো আচরণ না করতে পারলে তিক্ত বুলিও শুনিও না সুন্দরী। এটা ঠিক তোমার সাথে যায় না। আর হ্যা কিছুক্ষণ আগের ভেঙচিটা হাজার বার দিও কোন বারণ নেই। সুন্দরী বউয়ের চুমু ইশারা উপভোগ করার ভাগ্য তো হলো না মোহময় এ মুখুশ্রীর বাঁকা ভণিতাই না হয় উপভোগ করি’?
এতোদিনের করা অসভ্যতাগুলো অন্যরকম ছিলো। যা আহিকে বিরক্ত করার পাশাপাশি অসহ্য করে তুলতো। গা ঘিনঘিন করতো খুব। বুকের ভিতর সৃষ্টি করতো একরাশ বিতৃষ্ণা। কিন্তু আজকের বলা প্রতিটি অসভ্যতামোয় ঘেরা বাক্য, এ মূহুর্তে করা স্পর্শ, উত্তপ্ত ভারী নিঃশ্বাসের শব্দগুলো তার বুকের ভিতরটা যেনো এলোমেলো করে দিচ্ছে। রাগ হচ্ছে তবে ঘৃনা নয়। অস্বস্তি হচ্ছে তবে অস্বস্তিগুলোতে মিশে রয়েছে এক সমুদ্র পরিমাণ লজ্জা। কই আগেতো কখনো এমন লজ্জা পায়নি সে’।
-‘ ইশ অসহ্য ছাড়ুন আমায় আপনি কোনদিন শোধরাবেন না। চরম অসভ্য আপনি ‘।
হোহো করে হেসে ওঠলো হ্যাভেন। হাসতে হাসতেই আহিকে কোলে করে চট করে ওঠে দাঁড়ালো। এতোটা আনন্দানুভূতি হচ্ছিল তার যে খুশি তে কয়েক পাক ঘুরানি দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। মাথাটা ভনভন করছে আহির। পুরো পৃথিবীই যেনো ঘুরছে। কিন্তু ওয়াশরুমের দরজার সম্মুখে যেতেই চমকে গিয়ে চিল্লিয়ে ওঠলো,
-‘ এ’কি এটা কি হচ্ছে আপনি আবার আমার ওপর জোর জুলুম করছেন? এখানে কেনো যাচ্ছেন আরে আজব আল্লাহ! ছাড়ুন আমায়’। বলেই হাত,পা ছোড়াছুড়ি করতে শুরু করলো।
চলবে…
আর দু,তিন পার্ট পর গল্পে একটা টুইস্ট আছে। গল্প শেষের দিকেই ধরা যায় বড়োজোর আর দশপার্ট হতে পারে। তার বেশী হবে কিনা সিওর দিতে পারছিনা। তাই শেষ টুইস্টের কাছাকাছিই আমরা আছি।