ফুলসজ্জা পর্ব ৫
লেখিকাঃ #অনামিকা_ইসলাম “অন্তরা”
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
আবির অনেকক্ষণ মায়ার হাসোজ্জল মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। নীলিমাও আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপটি করে দাঁড়িয়ে ছিল। অনেকক্ষণ পর__
আবির:- আমি কি সকালে নাকি এখন’ই চলে যাব???
চোখ সরিয়ে নেয় নীলিমা।
আবিরের প্রশ্নোত্তরে বলে___
” এত রাত্রে কোথায় যাবেন?আপনি থাকেন। তারপর কালকে বরং চলে যাবেন।”
আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দাঁড়ানো থেকে নীলিমার দিকে এগিয়ে গেল। তারপর__
” আমরা কোনো ভুল করছি না তো?”
নীলিমা:-……
আবির:- আরেকটু ভেবে দেখা যায় না???
নীলিমা:-……..
আবির:- আমি কি কোনো ভুল করছি? কিংবা আমার কোনো কথা বা কাজে কর্মে কোনো প্রকার কষ্ট পেয়েছ???
নীলিমা:-……..
আবির:- নীলিমা! কোনো কারনে কি তুমি আমার উপর রেগে কিংবা আমায় ভুল বুঝে আছ???
নীলিমা:-……
আবির:- নীলিমা! কথা বলো…..
,
নীলিমা:- মাথা’টা প্রচন্ড ব্যথা করতেছে। আমি একটু রেস্ট নিতে চাই। প্লিজ আমায় বিরক্ত করবেন না…..
,
আবির:- ঠিক আছে। তুমি তাহলে ঘুমাও…..
আবির সরে গিয়ে নীলিমা’কে জায়গা করে দেয়। নীলিমা শুয়ে পরে।
অল্পকিছুক্ষণের ভিতর নিদ্রাদেবী নীলিমার চোখে এসে ভর করে। নীলিমা তলিয়ে যায় ঘুমের জগতে।
আবির নীলিমার পাশে গিয়ে বসল। বেশকিছুক্ষণ নীলিমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আবির। তারপর___
আবির জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। একবার জানালার পাশে তো আরেকবার বিছানায়, একবার বাইরে তো আরেকবার চেয়ারে। এভাবেই কাটল আবিরের সারা’টা রাত। ভোরে নামাজ পরার জন্য মসজিদে যায় আবির। যাওয়ার আগে নীলিমা’কে ডাক দিয়ে বলে যায় নামাজ পরার জন্য। নীলিমা ঘুম থেকে উঠে ওজু করে নামাজ পরে নেয়। আবির তখনও আসছে না।
নীলিমা কুরআন তেলওয়াতে বসে। তেলাওয়াত শেষ করে মায়ের সাথে রান্নাঘরে রান্নার কাজে হেল্প করতে যায় নীলিমা। রান্নার ফাঁক দিয়ে নীলিমার মা নীলিমার হাতে কিছু শীতের পিঠা ধরিয়ে দিয়ে বলে___
” যাহ! জামাইরে নিয়া বসে খা। আবার তো আজকে চলে যাবি। কবে আসবি ঠিক নাই…”
নীলিমা:- মা! আমি আজকে যাচ্ছি না…..
মা:- মানে? যাবি না মানে???
নীলিমা:- যাব না, মানে যাব না….
আর তাছাড়া মা আমার তো হসপিটাল আছে।
মা:- হসপিটালের জন্য অনেকে আছে। তুই জামাইয়ের সাথে যাবি।
নীলিমা:- মা! আমার হসপিটাল আছে তো….আছে কিছু দায়িত্ব। আমি সেগুলো পালনে আর অবহেলা করতে চাই না।
মা:- তোর সংসারও আছে। সংসারের প্রতিও কিন্তু একটা দায়িত্ব আছে। সেটা কিভাবে অবহেলা করবি…? তাই বলছি তুই যাবি। আর হসপিটালের জন্য তুই একা না অসংখ্য মানুষ আছে।
,
নীলিমা:- মাাাাাাাাাাাাাাাা…..
মা:- কোনো কথা নয়।
যাহ। দিয়ে আয় পিঠাগুলো……
,
নীলিমা:- কারে দিব পিঠা???
মা:- কারে দিবি মানে? জামাইরে দিবি।
নীলিমা:- কেউ তো রুমে নেই….
মা:- কোথায় গেছে?
নীলিমা:- নামাজ থেকে আসে নি।
মা:- এখনো আসেনি?
নামাজ তো সেই কখন শেষ হয়ে গেছে…..
নীলিমা:- সেটা’ই তো…..
মা:- লিমা কোথায়? ওকে পাঠা তাড়াতাড়ি…..
অচেনা,অজানা জায়গা। না জানি পথ ভুলে কোথায় চলে গেছে…..
নীলিমা:- মা! আমি যায়…..???
মা:- না…
তোর যাওয়া দরকার নেই। আমি লিমা’কে ডাকছি….
লিমাকে ডাকতে’ই লিমা এসে হাজির হলো। নীলিমার মা লিমাকে দায়িত্ব দিল আবিরকে খুঁজে আনার জন্য। আর নীলিমার হাতে পিঠার প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বলল__
” এই ধর! পিঠাগুলো খেয়ে পানি খেয়ে নে…”
নীলিমা:- মা! আমি খাবো না।আমি এগুলো খায় না…(…….)…..
মা:- বাব্বাহ! আমার মেয়ে মর্ডান হতে হতে তো আর হতে পারে না। এখন মায়ের হাতের খাবার খেতেও অরুচি…..
নীলিমা:- মাাাাাাাাাা….
,
আচ্ছা দাও….
আমি খাচ্ছি।সব খেয়ে সাবাড় করে নিব।
নীলিমা ওর মায়ের হাত থেকে পিঠার প্লেট নিয়ে একটার পর একটা পিঠা খেতেই থাকে তো খেতেই থাকে।
নীলিমার মা সেটা দেখে হাসছে….
খাওয়া শেষ করে নীলিমা ওর মায়ের দিকে তাকালো।
তারপর প্লেট’টা উপুড় করে বলল,
” নেই! কিচ্ছু নেই… “
মা:- আরো খাইবি???
নীলিমা:- নাহ! নাহ!
পরে আবার তোমার আদরের জামাইয়ের ভাগে কম পরবে…..
মা:- সেটা আমার কেমন কথা…???
নীলিমা:- কিছু না…
তুমি যাও তো এখান থেকে।
আমি রান্না করব…….
মা:- এই নে কর।
,
নীলিমার মা রান্নাঘর থেকে চলে যাচ্ছিল, হঠাৎ করে আবার ফিরে আসল নীলিমার কাছে।
ওনার ফোনটা নীলিমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল__
” জামাইয়েট নাম্বারে কল দিয়ে দে তো একটা। দেখি জামাই কই আছে…?”
নীলিমা মায়ের থেকে ফোন’টা নিয়ে আবিরের নাম্বার’টা ডায়াল করে দিল। পর পর দু’বার রিং হওয়ার পরও আবির কল রিসিভ করেনি। নীলিমার মা এবার নীলিমার হাতে ফোন’টা দিয়ে বলল__
” লিমার নাম্বারে কল ঢুকা”
কথা’টা বলতে বলতে’ই লিমা কল করে। নীলিমা ওর মায়ের কাছে ফোন’টা দিয়ে দেয়। ওর মা ফোন রিসিভ করলে ওপাশ থেকে লিমা যা বলে___
” মা! দুলাভাই ইটের সাথে হোঁচট খেয়ে পায়ে প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছে। তাই বাড়ি আসতে পারছিল না। নদীর পাড়ে বসে ছিল। আমি ওনাকে নিয়ে হসপিটালে আছি। ওখানকার হসপিটালে নেইনি যদি আপু জেনে গিয়ে কষ্ট পায় তাই। মা! তুমি আপুকে এসব কিছু বলো না। আমরা আসছি।তবে একটু দেরী হবে।আর তাছাড়া শিউলির বাবার মারাত্মক এক্সিডেন্ট হয়ছে।ওনাকে এই হসপিটালে’ই আনা হয়ছে। ওনার খবর শুনেই পরে আসব।”
নীলিমা কথাগুলো একনিঃশ্বাসে বলল। নীলিমার মা ততক্ষণে নীলিমার থেকে দুরে সরে গেছে। লিমার কথার প্রতি উত্তরে শুধু এটুকু’ই বলল___
” আচ্ছা, মা! কি হয় না হয় জানাবি তুই…”
লিমা-
ঠিক আছে বলে কল রেখে দিল।
কথা শেষ করে লিমা আবিরের দিকে তাকালো।
” আপনার জন্য এই প্রথম মায়ের সাথে একটা “বিগ মিথ্যা” কথা বললাম। এখন বলেন আপনার কেইস’টা কি? আর বাড়িতে গাড়ি রেখে’ই এভাবে পালিয়ে চলে যাচ্ছিলেন কেন?”
আবির:- আসলে লিমা আমি….(…)….
লিমা:- একমিনিট ভাইয়া….
আমি একটা কথা বলতে চাই….
আবির:- জি, বলো…..
লিমা:- যদিও আমায় আপনি ছোট্ট বোনের মত আদর-স্নেহ করেন কিন্তু এই মুহূর্তে আমাকে আপনার বন্ধু ভাবতে হবে। এমন বন্ধু যার সাথে মনের সব কথা নির্দ্বিধায় বলে ফেলা যায়। I mean best friend ভেবে মনের না বলা কথাগুলো আমায় বলতে হবে। পারবেন???
আবির:- কি আর হবে বললে?
যা হবার তো হয়ে’ই গেছে…….
লিমা:- কি হবে বা কি হয়ে গেছে সেটা না হয় পরে’ই ভাবেন। এই মুহূর্তে আপনি আমার কৌতূহলী মনের কৌতূহল মেটাতে সাহায্য করেন। বাকি’টা আমি দেখব….
লিমার কথা শুনে আবির ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করল বিয়ের পর থেকে একে একে ঘটে আসা সব ঘটনা। আবির কালকের রাত্রের ঘটনা পর্যন্ত বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।”
লিমা ড্যাবড্যাব করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
” দুলাভাই এত কিছু হয়ে গেল অথচ আমরা জানলাম না?”
আবির:- ভেবেছিলাম যা হয়েছে সবটা মিটিয়ে নিব। আমার নীলিকে বলব, নীলি! যা হয়েছে সব ভুলে গিয়ে চলো নতুন করে জীবন শুরু করি। আর তাই এর জন্য সবরকম প্ল্যানও করেছিলাম। কিন্তু ও যে এভাবে আমার প্ল্যানে জল ঢেলে দিবে বুঝতে পারিনি।
লিমা:- দুলাভাই!
ভালোবাসতে কোনো দিন-ক্ষণ লাগে না। লাগে না কোনো উপলক্ষ্য। আপনি ব্যাটা বোকা। না হলে এমন আহম্মকের মত কাজ করতেন না।
ও যায় করুক।
আপনি কেন সেসব নিরবে মেনে নিলেন? কেন ওকে ঠাস করে থাপ্পর মেরে কাছে টেনে নেননি?
একটা জিনিস আমি বুঝতেছি না! লেখাপড়া কি মানুষ করে না???
তার জন্য কেউ সংসারকর্ম বাদ দিয়ে দেয়? হায় আল্লাহ!
এই লেখাপড়ার জন্য আপনি ওকে এভাবে এতটা বছর আলাদা রুমে রাখলেন?
ভাইয়া!
আপনি কি মানুষ না এলিয়েন গো???
এইভাবে বিয়ে করেও বউ ছাড়া থাকলেন কি করে?
দুলাভাই!
আপনাকে তো আমি ভিষণ রসিক মনের মানুষ ভাবতাম।
ভাবতাম ভালো’ই হয়েছে।
আমার গম্ভীর, বেরসিক আপুর কপালে একটা রসিক বর জুটেছে। কিন্তু আপনি তো দেখছি আপুর যে উপরের লেবেলের….
যেই মেয়ে লজ্জার জন্য ঠিকমত বাড়ির কারো সামনে বসেই খেত না,মেহমান এলে রুম থেকে বের হতো না, ছেলেদের সামনে হাটতে গিয়ে হাটুতে হাটু আঘাত খেত, মাটির দিকে তাকিয়ে কথা বলত সেই মেয়ে আপনাকে কিস করেছে।
ভাইয়া এ যে অন্ধ ব্যক্তির মহাকাশ জয় করার মত,
এত বড় জয় অর্জন করছে কোথায় আপনি ওকে পুরস্কার দিবেন তা না করে সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরলেন?
আপনার তো দেখছি কোনো ফিলিংস’ই নেই……
আপনি জানেন ও কত কতটা লাজুক???
,
আর আপনি কিনা সেই লাজুক মেয়ের মুখ থেকে’ই ভালোবাসি কথাটা শুনতে চাচ্ছেন???
ভাইয়া এ যে কখনো পসিবল নয়।
ভাইয়া!
একটা কথা মনে রাখবেন-
” মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না”….
ওরা সবকিছু লুকিয়ে রাখার, সহ্য করার আর নিরবে মেনে নেওয়ার অসম্ভব এক ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়।
আর তাই____
” ভালোবাসি কথাটা আপনার’ই বলার দরকার ছিল…”
আবির:- ওরা তাহলে কোন জিনিস’টা পারে না???
আবির মুখ খুলল এতক্ষণে।
লিমা আবিরের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বলল___
” ওরা সব পারে কিন্তু পারে না অন্য কারো কাছে নিজের ভালোবাসা ভাগ করে নিতে।”
আবির:- Really???
লিমা:- হুম….
আবির:- তাহলে তো এটা প্লাস পয়েন্ট…..
লিমা:- কিসের প্লাস পয়েন্ট???
আবির:- এই যে ওকে কাছে টেনে নেওয়ার…..!!!!
লিমা:- দেশ ছেড়ে পালানোর উদ্ভট ভাবনা তাহলে মাথা থেকে দুর হয়েছে???
আবির:- হুম….
আমার ভালোবাসা আমি জয় করে নিব।
লিমা:- এই না হলে আমার দুলাভাই।
সাবাশ! দুলাভাই। সাবাশ!
আমি আছি আপনার সাথে।
ঠিক তখনি পাশ থেকে লিমার বান্ধবী আশা বলে উঠল__
” আমিও আছি দুলাভাইয়ার সাথে..”
লিমা:- হুম! আমরা আছি আপনার সাথে….
আবির:-
আশা:- তা দুলাভাইকে নিয়ে কি দাঁড়িয়েই থাকবি নাকি বাসায় যাবি???
লিমা:- ওহ, হ্যাঁ!
চলেন দুলাভাই। আর আশা!
তুইও চল। বাসায় শীতকালের হরেক রকমের পিঠা বানাইছে মা।
খেতে পারবি….
আবির:- হুম, আশা!
তুমিও চলো আমাদের সাথে।
লিমা আর আশা আবিরকে নিয়ে বাসায় আসল সকাল ১১টা নাগাদ।
বাসায় আসার পরের কথা বলছি__
নীলিমা হসপিটালে গিয়েছিলল রোগী দেখার জন্য। আবির এসেছে কথা’টা শুনে দৌঁড়ে আসল বাড়িতে।আবিরকে দেখে মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদ’কে হাতে পেয়েছে। দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বড় করে নিঃশ্বাস ফেলল নীলিমা। **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
চোখ খুলতে’ই দেখে সামনে ছোট বোন লিমা দাঁড়িয়ে। লিমা ভ্রু নাচিয়ে নীলিমাকে জিজ্ঞেস করছে__
” কি! ব্যাপার কি? আজকাল ভাইয়াকে দেখছি চোখে হারাস…”
নীলিমা:- মানে???
লিমা:- লুকিয়ে-চুরিয়ে ভাইয়াকে ফলো করিস। ব্যাপার কি???
নীলিমা মুখ ভেংচি দিয়ে বলল__
” হু! আমার বয়েই গেছে!”
লিমা মনে মনে__
” জানি গো জানি আপু। আমি সব জানি…”
নীলিমা রুমে গিয়ে দেখে আবির আর আশা একসাথে বসে পিঠা খাচ্ছে।
নীলিমা:- আশা! কখন এলে???
আশা:- এইতো আপু মাত্র’ই।
তোমাকে রেখে খেয়ে ফেলতেছি আমরা….
নীলিমা:- সমস্যা নাই, খাও….
আমাদের রেখে খাওয়া???
দুলাভাই মানুষটা তো ভালো না….
লিমার আরো দুইটা ক্লাসমেট+বান্ধবী চলে এলো।
এরা সবাই একসাথে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সবাই একসাথে কোচিং ও করে ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য। ওরা সবাই ঢাকায় থেকে পড়বে বলে প্ল্যান করেছে। আর সেটা একসাথে ম্যাচে । নিজেরা রান্না করে খাবে। লিমার প্ল্যান অনুযায়ী যা বুঝা যায় তা হলো__
” রিমা ওদের সাথে যখন ভার্সিটিতে পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হবে, তখন বাধ্য হয়েই নীলিমা ঢাকায় যাবে। কারণ__
নীলিমা ওর ওর প্রাণের চেয়েও বেশী ভালোবাসে। আর সেই বোন ম্যাচে থেকে পড়াশুনা করবে।এটা ও চাইবে না নিশ্চয়। আর ঠিক তখন’ই সুযোগ হবে ওদের মিলিয়ে দেওয়ার।”
সবাই মিলে একসাথে পিঠা খেয়ে আড্ডা দিচ্ছে আবিরের সাথে।
নীলিমা দুরে বসে আবিরকে আড়চোখে দেখছে।
আবির সেটা লক্ষ্য করে যখনি তাকাই নীলিমা তখনি চোখ ফিরিয়ে নেয়। পর পর তিনবার চোখে চোখ পরার পর আবির বলেই ফেলল__
“লিমা!
তোমার বোনের কি কোনো সমস্যা আছে চোখে???”
আশা:- কেন ভাইয়া???
আবির:- না মানে তোমাদের আপু বার বার এদিকে তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে।কিন্তু ধরতে পারতেছি না। তাকালে দেখি ও অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তাই বললাম ওর চোখে কোনো সমস্যা আছে নাকি….
,
লিমা:- সমস্যা মানে ভাইয়া???
লিজা:- কি বুঝাতে চাচ্ছেন দুলাভাই? সমস্যা মানে কি???
,
আবির:- I mean ট্যাঁরা….
,
লিমা:- কি???
,
আবির:- জি…
সবাই:-
নীলিমা:-
নীলিমা:- আপনি কি কথা’টা আমাকে বলছেন???
আবির:- নাহ….
আপনি কি ট্যারা নাকি?
আপনাকে কেন ট্যারা বলব?
নীলিমা:- তো…
কাকে বলছেন???
আবির:- আমার বউকে….
নীলিমা:-
নীলিমা উঠে চলে যাচ্ছে।
আবির পিছন থেকে ডাক দিল।
” Hey you!Listen to me”
নীলিমা:- আমাকে বলছেন???
আবির:- জি….
নীলিমা:- বলুন।
আবির:-
নীলিমা:- কি হলো???
বলুন…..
আবির:- Actually কথাটা খুব গোপনীয়। যা আমি একান্ত’ই
আপনার সাথে বলতে চাচ্ছিলাম….
নীলিমা:- Oh….
,
লিমা, আশা, নদী-দীঘি তোমরা একটু বাইরে যাবে???
সবাই একত্রে:- ওকে আপুমণি….
আমরা যাচ্ছি। তোমরা বরং একান্তে সময় কাটাও একটু…
লিমাসহ সবাই বাহিরে চলে গেল।
আবির বসা থেকে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
নীলিমা আবিরের এই দরজার দিকে এগিয়ে যাওয়া দেখে কিছুটা আশ্চর্য হয়। তাকিয়ে দেখতে থাকে আবির কি করে?!!!
আবির যখন দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা ঠাস করে লক করে দেয় নীলিমা তখন চমকে যায়।
দরজা লক করে আবির নীলিমার দিকেই এগিয়ে আসছে।
এটা দেখে নীলিমার বুকের ভেতর ধুকধুকানি শুরু হয়ছে। নীলিমা মনে মনে ভাবছে__
” হায় আল্লাহ! কিসের পাল্লায় পরলাম আমি? কি করতে চাচ্ছেন ওনি?”
আবির নীলিমার কাছে, খুব কাছে চলে আসলে নীলিমা কাঁপা স্বরে আবিরকে জিজ্ঞেস করে__
” কি করলেন এটা?”
আবির মুচকি হেসে বলে__
” কিছু করিনি, তবে এখন করব।”
নীলিমা:- কি করবেন?(ভীরু কন্ঠে)
আবির:- অনেক কিছু….
,
এই শুরু করলাম……
কথাটা বলেই আবির নীলিমার পিছনে ঘাড়ের কাছে স্পর্শ করে। নীলিমার সারা শরীর অজানা শিহরণে শিহরিত হয়ে উঠে।
মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
নীলিমার হৃদস্পন্দন ক্রমাগত বেড়ে’ই চলছে।
,
আবিরের হাতটা নীলিমার ঘাড় থেকে একটু নিচে নেমে যায় নীলিমা তখন ওর চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে।
আবির নীলিমার পিছন থেকে সরে এসে নীলিমার সামনে এসে দাঁড়ালো।নীলিমা তখনো চোখ বন্ধ করে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
আবির:- ইয়ে মানে আমি বলছিলাম কি তোমার জামার নিচের ছোট কাপড়’টা দেখা যাচ্ছে…..
নীলিমা চোখ মেলে তাকালো।
তারপর___
” কি?
কি বলছেন???”
আবির:- তোমার ছোট কাপড়’টা….
আবির হাত দিয়ে নীলিমাকে ওর ঘাড়ের দিকে দেখায়।
নীলিমা ঘাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর পরনের…. (…….)…. ফিতা দেখা যাচ্ছে।
নীলিমা লাফ দিয়ে আবিরের থেকে বেশ কয়েকহাত দুরে চলে যায়। তারপর ফিতাটা জামার নিচে গুজে দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আবির:-
নীলিমা:-
,
আবির একটু কাশি দিয়ে নীলিমার দিকে তাকালো।
তারপর হাসি’টা কোনো রকম থামিয়ে বলল___
” আমি স্যরি…..”
নীলিমা:- আপনি কখন যাবেন???
আবির:- জানি না….
নীলিমা:- মানে??? আজকে যাবেন না???
আবির:- না, যাচ্ছি না।
নীলিমা:- কিন্তু আপনার তো আজকে যাওয়ার কথা ছিল….
আবির:- সেটা আপাতত আমি ভুলে গেছি। আমার কার সাথে কি কথা হয়েছিল সেটাও ভুলে গেছি। চিরতরে ভুলে গেছি।
নীলিমা:- আচ্ছা….
তাহলে আপনার কি মনে আছে???
আবির:- এই মুহূর্তে আমার মনে শুধু একটা জিনিস’ই ঘুরপাক খাচ্ছে আর সেটা হলো কখন একমাত্র শালিকা ও তার বান্ধবীদের নিয়ে বাসায় যাব। কখন ওদের নিয়ে আড্ডা দিব।
,
নীলিমা:- মানে???
,
আবির:- মানে হলো লিমা ঢাকা যাচ্ছে। ও ওখানে ম্যাচে থেকেই পড়াশুনা করতে চাচ্ছিল। কিন্তু যেহেতু ও আমার একটাই মাত্র শালিকা তাই আমি ওকে হোস্টেল বা ম্যাচে রাখার দুর্সাহস পায়নি। ও আমার বাসায় থাকবে। দরকার হয় সব বান্ধবীদের একসাথে নিয়ে থাকবে।
,
নীলিমা:- ও ম্যাচে থাকবে???
আবির:- বলেছিল তো সেটাই….
তবে এখন আর থাকবে না।
নীলিমা:-
নীলিমা রাগে গজগজ করে রুম থেকে বাহির হয়ে গেল।
দুপুরে লিমাকে একা পেলে এ ব্যাপারে জানতে চাইল।
আবিরের সাথে পূর্ব প্ল্যান অনুযায়ী লিমা নীলিমাকে জবাব দেয়___
” বলছিলাম তো হোস্টেলে’ই থাকব কিন্তু দুলাভাই বলল যে হোস্টেলে থাকতে দিবে না। তোদের বাসায় থাকতে। তাই তোদের বাসায়…(….)…..”
নীলিমা:- চুপ…
একদম চুপ….কার বাসায় থাকবে বলছিস???দুলাভাইয়ের বাসায়???
লিমা:- হ্যাঁ….
নীলিমা:- খবরদার!
আর যাতে এ কথা না শুনি।
লিমা:- কেন আপু???
নীলিমা:- তুই ও বাসায় যাইবি না। ব্যস। আর কোনো কথা বলবি না।
লিমা:- ওহ, আচ্ছা….
নীলিমা:-
লিমা:- আমি তাহলে আশা, নদী-দীঘি ওদের বলে আসি জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে। হোস্টেলে থাকলে আজকেই যেতে হবে।পরে গেলে সিট পাওয়া যাবে না।
নীলিমা:- ঠিক আছে বলে আই….
লিমা মন খারাপ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।
ক্ষাণিকবাদে’ই প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে ভিঁজে’ই লিমা সবার বাসায় গিয়ে বলে আসে বিকেলের দিকে যাতে বাসস্টপে থাকে।
বাসায় এসেই লিমা ওর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছাতে থাকে। কিন্তু বৃষ্টি আর থামার নাম নেই। এ বৃষ্টি শেষ হয় রাত্রে। লিমা কিংবা ওর বান্ধবীরা কেউ যেতে পারেনি সেদিন।
এদিকে বৃষ্টিতে ভিঁজে লিমার অবস্থা নাজেহাল। ঠান্ডা লেগে গেছে।
আর সেই ঠান্ডায় গলাটা জমে গেছে।
রাত্রে লিমা আবির-নীলিমার রুমের দরজায় এসে নক করে।
নীলিমা গিয়ে দরজা খুলে।
লিমা রুমে প্রবেশ করলে নীলিমা প্রশ্ন করে___
” কিছু বলবি?”
লিমা:- আসলে আজকে তো হোস্টেলে উঠার তারিখ ছিল, আজকে যেতে পারিনি। মনে হয় না আর সিট পাব যে।
আমি কি কালকে দুলাভাইয়ার সাথে গাড়িতে করে ঢাকায় যেতে পারি???
নীলিমা:- তোর তো ঠান্ডায় গলা বসে গেছে। এই অবস্থায় ঢাকা যাইবি???
লিমা:- আপু আমার হোস্টেলে সিট না পেলেও কোনো বাসার খুঁজ করতে হবে। তাই…..
নীলিমা:- তুই একা একা বাসায় থাকতে পারবি???
লিমা:- একা একা কোথায়? আশা, নদী ওরা আছে তো….
নীলিমা:- তোরা ঢাকা শহরের কিছুই তো চিনিস না। কোথায় খুঁজবি বাসা???
লিমা:- তার জন্য তো দুলাভাই আছে…
নীলিমা:- ওহ…
,
তা তোদের হেল্প করবেন ওনি???
লিমা আবিরের দিকে তাকিয়ে নীলিমার অজান্তে কিছু একটা ইশারায় বলল। আবির মুচকি হেসে মাথা নেড়ে মুখ খুলল…
আবির:- হ্যাঁ, আমি ওদের বাসা খুঁজে দিতে পারব। কিন্তু একটা শর্ত আছে….. **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
নীলিমা অবাক চোখে আবিরের দিকে তাকালো।
” কিসের শর্ত?”
আবির:- আমি বাসা খুঁজে দেব ঠিক আছে, কিন্তু ওদের কোনো ক্ষতি হলে তার দায়ভার যেন আমার কাঁধে না আসে।
,
নীলিমা:- মানে???
,
আবির:- মানে সাধারণত বাসা বাড়িতে যারা থাকে তারা অনেকটাই রিস্কে থাকে। আর অধিকাংশ বাসার বাড়িওয়ালা কিংবা বাড়িওয়ালার ছেলেদের দৃষ্টি থাকে খুব খারাপ।
ওদের সেই কু-দৃষ্টি যদি কোনো ভাবে কোনো মেয়েদের উপর পরে তাহকে কেল্লা ফতেহ।
সর্বনাশ নিশ্চিত।
আশা করি, আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি সেটা তুমি বুঝে গেছ!!!
,
নীলিমা:-
লিমা আবিরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে__
” মনে হয় কাজ হয়ে গেছে দুলাভাই…”
নীলিমা:- কি বলছিস???
লিমা:- না মানে বলতে চাচ্ছিলাম আমার কোনো সমস্যা হবে না। আমি নিজেকে রক্ষা করে থাকতে পারব।
,
নীলিমা:- তুই রুমে গিয়ে শুয়ে পর। এ সম্পর্কে কাল কথা বলব তোর সাথে…
,
লিমা রুমে চলে গেল।
আবির দরজা বন্ধ করে নীলিমার দিকে তাকালো। নীলিমার চিন্তিত মুখ দেখে বুঝতে কষ্ট হয়নি এ মুহূর্তে কি চলছে ওর ভেতর। আবির অনেক’টা কাটা গায়ে নুনের ছিটার মত’ই একটা কাজ করল। নীলিমার দিকে তাকিয়ে বিছানায় শুতে শুতে বলল___
” তো আর কি!
আমার বলা তো আমি বলে’ই দিলাম। আমি কালকে ওদের ঢাকা নিয়ে যাচ্ছি। আর বাসাও খুঁজে দেব।
হে আল্লাহ!
তুমি ওদের নিষ্পাপ দেহে কলঙ্কের দাঁগ লাগতে দিও না।
আমিন…..!!!!”
নীলিমা রাগান্বিত চোখে আবিরের দিকে তাকালো।
নীলিমা:-
আবির:-
নীলিমা:- চুপ করে শুয়ে থাকুন। একদম কথা বলবেন না।
আবির:- হক কথা বললেই যত দোষ….
নীলিমা:- আপনি চুপ করবেন???
আবির:- আচ্ছা….
নীলিমা ধপাস করে বিছানার অপর প্রান্তে শুয়ে পরল।
আবির নীলিমার দিকে তাকিয়ে আছে। নীলিমা ওদিকে ঘুরতে যাবে তখন’ই দেখে আবির ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
নীলিমা বালিশ থেকে মাথা উঠিয়ে চোখ বড় বড় করে আবিরের দিকে তাকাই।
নীলিমা:- ব্যাপার কী???
এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
আবির চোখ সরিয়ে নিয়ে মুখটা কালো করে অন্যদিকে ঘুরে শুয়ে পরে।
সেদিন সারা রাত নীলিমা বিছানায় ছটফট করেছে।
সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে সকালে কখন ঘুমিয়ে পরে টের পায়নি। আচমকা একটা দুঃস্বপ্ন দেখে নীলিমার ঘুম ভেঙে যায়। বিছানা থেকে চিৎকার দিয়ে উঠে বসে নীলিমা। নীলিমার চিৎকারে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে ওর মা। জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে???
নীলিমা ওর মাকে প্রশ্ন করে__
” মা! ওরা কি চলে গেছে?”
নীলিমার মা বলে___
” নাহ…
তবে রেডি হয়ে খেতে বসছে।”
নীলিমা:- ওহ…..
মা:- একটা কথা বলব???
নীলিমা:- হ্যাঁ, বলো মা…..
মা:- মেয়েটা খুব অসুস্থ্য। এই অবস্থায় অচেনা অজানা জায়গায় থাকবে। আমার না খুব কষ্ট হচ্ছেরে।
নীলিমা:-…
মা:- মারে….
ও কি তোদের ওখানে থেকে পড়াশুনা করলে তোদের কোনো সমস্যা হবে???
নীলিমা:- মা তুমি এসব কি বলছ?
কষ্ট হবে কেন????
ও থাকবে। শুধু ও নয়।
ওর সব বান্ধবীরা থাকবে ঐ বাসায়।
মা:- সত্যি????
তুই যাচ্ছিস তাহলে???
নীলিমা:- হ্যাঁ, মা….আমি যাব।
নীলিমার মা নীলিমাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরে।
মা:- আমি জানিরে মা তোদের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়েছে। আর সেজন্য’ই তুই যেতে চাচ্ছিলে না।
,
নীলিমা অবাক হয়ে ওর মায়ের দিকে তাকালো।
,
নীলিমা:- মা তুমি….(……)……..????
মা:- কথা পরে হবে। আগে ফ্রেশ হয়ে আয়! খাবি……
নীলিমা:- আচ্ছা, তুমি যাও মা…..
নীলিমা ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে গেলে লিমা প্রশ্ন করে__
” কি ব্যাপার আপু? এত সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলা যে? কোথাও যাবে নাকি?”
নীলিমা:-……
আবির:-
লিমা:- আপুর কি খুব তাড়া???
এভাবে খাচ্ছ যে???
নীলিমা:-……..
আবির:-
লিমা:-
খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ।
লিমা ইতোমধ্যেই জেনে গেছে নীলিমার তাড়াহুড়োর কারণ কি???
নীলিমা তাড়াহুড়ো করে ব্যাগপত্র গুছাচ্ছে।
এদিকে লিমার বান্ধবীরা চলে আসলে আবির গাড়িতে গিয়ে বসে। ওদের তিন বান্ধবীকে পিছনে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার জন্য রেডি হয়।
নীলিমা একরকম দৌঁড়ে গাড়ির কাছে আসে। আবির অন্য দিকে ভাব করে তাকিয়ে আছে।
নীলিমা গাড়ির কাছে এসে আস্তে করে বলছে___
” আমিও যাব…”
আবির শুনেও না শুনার ভান করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
নীলিমা এবার আরেকটু জোরে বলল___
” এই যে শুনছেন?!!!”
আবির নীলিমার দিকে তাকালো।
” কিছু বলবে?”
নীলিমা:- আমি উঠব….
আবির:- কোথায়???
নীলিমা:- গাড়িতে….
আবির:- ওহ…
গাড়িতে তো জায়গা নেই।তবুও দেখো পিছনে কোথাও বসা যায় কি না।
লিমা:- ভাইয়া…
পিছনে সম্ভব না জায়গা দেওয়া।
আমাদের’ই জায়গা হচ্ছে না।
আবির:- তাহলে আর কি???
নীলিমা:- একটু জায়গা হবে, প্লিজ….
আবির:- ওরা তো বলল জায়গা হবে না….
নীলিমা:- আপনার সাথে তো সিট খালি আছে। আমি কি ওখানে বসতে পারি…???
আবির:-…….
নীলিমা:- প্লিজ….
আবির:- আচ্ছা,
উঠে বসো….
নীলিমা লাফিয়ে উঠে বসল।
গাড়ি চলছে। পিছনে লিমা এবং ওর বান্ধবীরা বিভিন্ন ধরনের গল্পে মেতে উঠেছে।
শুধু আবির-নীলিমা’ই চুপচাপ বসে যাচ্ছে। তিনঘন্টার রাস্তায় আবির একটা কথাও বলেনি যদিও নীলিমা বার বার বলতে চেয়েছিল।
বলতে চেয়েছিল___
” ওরা কোনো ভাড়া বাসায় নয়,
আমাদের বাসায় থাকবে।”
বেলা ১১টা নাগাদ ওরা গিয়ে ঢাকায় পৌঁছল।
আবির গাড়িতে বসেই বলল___
” লিমা! এই হলো তোমার দুলাভাইয়ার কুড়েঘর। এখানেই তোমার দুলাভাই থাকে। তোমরা ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হও। **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
আমি ততক্ষণে একটু ঘুরে ফিরে দেখে আসি কোথায় ভালো বাসা পাওয়া যায়…”
লিমা:- আচ্ছা, দুলাভাই…..
লিমাসহ লিমার বান্ধবীরা নেমে যায় গাড়ি থেকে।
আবির গাড়ি পিছন দিকে ঘুরাবে তখন দেখে নীলিমা চুপটি করে এখনো সে ভাবে’ই বসে আছে।
আবির:- তুমি???
এখনো বসে আছো???নামবে না?
নীলিমা:- আপনার সাথে কিছু কথা আছে….
আবির:- কথা পরে বলো।
আমি আগে ওদের বাসার খুঁজ করে আসি।
নীলিমা:- আগে আমার কথাটা শুনোন।
আবির:- খুব দরকারী???
নীলিমা:- হুম….
আবির:- তাহলে বলো…..
নীলিমা:- ওরা এখানে থাকলে কি আপনার কোনো সমস্যা হবে???
আবির:- কারা???
নীলিমা:- লিমা ও ওর বান্ধবীরা….
আবির:- তুমি কি চাও???
নীলিমা:- ওরা এখানে থাকুক।
আবির:- তাহলে আর কোনো কথা আছে এখানে???
নীলিমা:-
নীলিমার মুখে বিজয়ের হাসি।
আবির গাড়ি গেইটের ভেতর নিয়ে যায়। নীলিমা গাড়ি থেকে নেমে রুমে চলে গেলে আবির কাজের লোককে টাকা দিয়ে বাজারে পাঠায়।
আবির বাসায় এসে দেখে লিমা ও তার বান্ধবীরা বসে ব্যাগ থেকে জামা-কাপড় বের করে আলমারিতে রাখছে___
” তা শালিকারা কি করা হচ্ছে?”
আশা:- এইতো দুলাভাই জিনিসপত্র বের করছি….
আবির:- তারপর….
নদী- দীঘি….তোমাদের খবর?
জার্নি কেমন হলো???
দীঘি:- অনেক অনেক ভালো হয়েছে দুলাভাই….
আবির:- আচ্ছা, দীঘি!
তোমাদের দু’বোনের থেকে কে কত বছরের বড় ছোট???
লিমা:-
আশা:-
আবির:- কি ব্যাপার?
তোমরা হাসো কেন????
আশা:- আসলে ভাইয়া আপনার প্রশ্ন শুনে হাসি আসল।
আবির:- হাসার কি বললাম আমি?
লিমা:- ভাইয়া ওরা এত বছরের বড় ছোট না, যতটা আপনি ভাবছেন।
আবির:- তো….!!!
নদী:- আমরা দু’জন জমজ বোন ভাইয়া….
আবির:- ওয়াও!!!
জমজ???
I mean twin baby?
আশা:- জি দুলাভাই…..
আবির:- ইস!
আমার যে কত্ত ইচ্ছে টুইন বেবির।
লিমা:- হে আল্লাহ!
আপনি আমাদের দুলাভাইকে টুইন বেবির বাবা বানিয়ে দাও…..
সবাই একসাথে:- আমিন…….
নীলিমা গোসল করে রুমের দিকে যাচ্ছিল।
এদের চেঁচামেচির আওয়াজে রুমে প্রবেশ করতে করতে বলল___
” কিরে???!!!
কিসের চেঁচামেচি এত???”
আবির:-
আশা:-
লিমা:-
নদী-দীঘি:-
নীলিমা:- কি হয়ছে তোদের?
হাসছিস কেন????
আবির:- কি হয়েছে এটা তুমি শুনে কি করবা? তুমি বরং গিয়ে দেখে আসো বুয়া কি রান্না করতেছে???
নীলিমা মাথার চুল মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল।
আবির নীলিমার পিছন পিছন ছুটতে লাগল।
নীলিমা আয়নার সামনে গিয়ে চুল আচড়াচ্ছে। আবির পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। নীলিমা আয়নার ভেতর থেকে দেখে আবির পিছনে দাঁড়িয়ে।
নীলিমা পিছন ফিরে তাকালো।
” কিছু বলবেন?”
আবির:- জি…..
নীলিমা:- বলেন।
আবির:- ইয়ে মানে আসলে…..
নীলিমা:- কি হলো? বলুন…..
আবির:- আসলে আমার একটা জিনিস জানার ছিল।
নীলিমা:- বলেন….
আবির:- আমি জিজ্ঞেস করতে চাইনি। কিন্তু আমার কৌতূহলী মন আমায় শান্তি দিচ্ছে না। তাই….
নীলিমা:- বুঝলাম।
আমি বলুন আমার জানা থাকলে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার কৌতূহল মেটাবার।
আবির:- তোমার ঐ ছোট জিনিসের নাম কি???
নীলিমা:- কোন জিনিস???
আবির:- ঐ যে তুমি জামার নিচে পড়…….
আবির হাত দিয়ে নীলিমার ঐদিকে তাক করে যেখানে….(…..)……
নীলিমা লাফ দিয়ে আবিরের থেকে দুরে সরে যায়।ওড়না দিয়ে শরীর ঢেকে নিচের দিকে তাকালো।
আবির:- লজ্জার কিছু নেই।
আমি কিছু দেখিনি।
নীলিমা:-
আবির:- কি হলো? বলো….
নীলিমা:- আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।
আমি দেখি রান্না কতদুর???
নীলিমা কোনোরকম কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
রাত্রে খাওয়ার পরে___
নীলিমা ওদেরকে রুম বুঝিয়ে দিয়ে বিছানা পরিষ্কার করছে আবিরের রুমের। আবির সোফায় এসে বসল।
নীলিমা বিছানা গুছিয়ে আবিরের দিকে তাকালো।
আবির তখন চিন্তিত মনে সোফায় বসে আছে।
নীলিমা:- শুবেন না???
আবির:- (চুপচাপ)
নীলিমা:- শুইবেন না?(জোরে)
আবির:- হ্যাঁ……????
নীলিমা:- আপনি কি কোনো কারণে চিন্তিত???
আবির:- না, না…..
নীলিমা:- ওহ….
,
শুয়ে পরুন…রাত অনেক হয়েছে।
আবির কোনো কথা না বলে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পরল। নীলিমাও লাইট অফ করে শুয়ে পরল।
অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ কেন জানি আবিরকে অন্যরকম লাগছে।
আজকে ওনি কি কোনো কিছু লুকোচ্ছেন আমার থেকে?
ওনি কি কোনো সমস্যায় আছেন???
ঘন্টাখানেক পর নীলিমা লাইট অন করে বিছানায় উঠে বসল।
আবিরের দিকে তাকাতেই চমকে উঠল। আবির একদৃষ্টিতে অন্যদিকে তাকিয়ে তখনো কি যেন ভেবেই চলছে।
নীলিমা আবিরের পাশে গিয়ে বসল।
মনে মনে___
” আমি কি ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিব?”
নীলিমা বার কয়েক আবিরের মাথার কাছে হাত নিয়ে গিয়েও সরিয়ে আনল হাত।
শেষমেষ হাত দিয়ে’ই দিল।
নীলিমা যখন ওর হাত দ্বারা আবিরের মাথা স্পর্শ করল, আবির তখন চমকে উঠে মাথার পাশে তাকালো। তাকিয়ে নীলিমাকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে যায় আবির। শুয়া থেকে উঠে বসে আবির।
আবির:- তুমি??? ঘুমাওনি এখনো???
নীলিমা:- আপনি কি কোনো কারনে চিন্তিত???
আবির:- নাতো।কেন???
নীলিমা:- আপনাকে দেখে চিন্তিত মনে হচ্ছে।
আবির:- সে একটু তো আছে’ই।
নীলিমা:- কোন সে কারণ???
আবির:- বলব???
নীলিমা:- বলেন…..
আবির:- আসলে কথাটা হলো….
আমার না খুব ইচ্ছে হচ্ছে টুইন বেবির বাবা হতে…..
নীলিমা:- কি???
আবির:- জি……
.
#_____________চলবে________________
.
।
#কোনো গল্পের পর্ব খুজে না পেলে সর্বশেষ পোস্ট কমেন্ট করে জানাবেন।
।
।
।
#আপনাদের উৎসাহ পেলে পরবর্তী পার্ট দিবো। আসা করি সবাই লাইক কমেন্ট করে সাথেই থাকবেন।