ভাবীর সংসার সিজন ২ পর্ব ৫
পলির মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে, ঠিক সামনেই এসি চলছে। তবুও মাথা বেয়ে ঘাম পড়ছে৷ এতো অসহায় লাগছে নিজেকে। কেন যে, এমন হলো! তারা সাজানো সংসারে হঠাৎ কি হয়ে গেল!
আবিদ হাতে করে এক টা কেক, আর এক বোতল পানি নিয়ে এসে পাশে বসলো। পলিকে বললো নাও, খেয়ে নাও। রিপোর্ট দিতে দেরী হবে।
– না, আমার ভালো লাগছেনা, তুমি খাও। তানিমের এতো দেরী হচ্ছে কেন?
– রিপোর্ট আট্টায় দিবে, এখনো আধা ঘন্টা বাকি! তানিম কে শুধু শুধু কল দিলে কেন? আমরা আছি দুজন।
পলি পানির মুখ খুলে, একটু পানি খেয়ে নিল, মনে হলো গলাটা অনেক ক্ষণ ধরে শুকিয়ে আছে। পানি টা খেয়ে বেশ আরাম লাগছে।
রিপোর্ট হাতে নিয়ে আবিদ আসার পরেই, ডাক্তারের চেম্বারে তাদের ডাক পড়লো।
পলি, তানিমের উপর বেশ বিরক্ত হয়ে আছে। কিন্তু সে পুরান ঢাকার জ্যামে আটকে ছিল দুই ঘন্টা। এখন কাছাকাছি চলে এসেছে। সে আসছে বাসে, তাই এই সময় লাগছে!
ডা.সুমন কুমার সাহা বললেন কেমন আছেন আবিদ সাহেব?
– আলহামদুলিল্লাহ!
– আমি দরজা খোলা অবস্থায়, আপনার হাতে ফাইল দেখে, আমার এসিস্ট্যান্ট কে বললাম, আপনাকে কল করতে।
– ধন্যবাদ আপনাকে।
– আপনি কি করেন?
– আমি একটা স্কুলে আছি।
– বাহ! কি বিষয় পড়ান?
– ম্যাথ!
– ছেলে-মেয়ে?
– দুই ছেলে।
– কি করছে তারা?
– টুইন। একজন বুয়েটে, অন্যজন স্যার সলিমুল্লাহ মেফিকেলে।
– ব্রিলিয়ান্ট! আপনি গর্বিত পিতা!
পলি চরম বিরক্ত হয়ে বললো ওর কি কোন সমস্যা আছে?
ডাক্তার মাথা তুলে বললেন, যেহেতু গলায় ব্যাথা আছে, সমস্যা তো অবশ্যই আছে। সমস্যা হলেও সমাধান ও আছে।
– কি হয়েছে ওর?
মিসেস আবিদ, এতো অধৈর্য্য হলে, হবে না! একটু শান্ত হয়ে বসুন।
পলির ফোনে কল আসছে, তানিমের। পলি বার বার কেটে দিচ্ছে।
আবিদ সাহেব, সৃষ্টিকর্তা কিছু কিছু সময়, আমাদের কিছু অসুখ দিয়ে টেস্ট করেন। আমরা কি তাকে ভুলে গিয়েছি কি না! বয়ের কিছু নেই, আপনার গলায় ২ সেন্টিমিটারের মতো একটা টিউমার আছে। আবারওবলছি ভয় পাওয়ার কিছু নেই, মাইনর সার্জারী। এখন, সার্জারী পরে একটা টেস্ট দিবে, সেটা আমাকে দেখাবেন, সার্জারীর ডাক্তার দেখবে, তবুও আমাকে দেখাবেন।
– কি আসতে পারে রিপোর্টে?
– এখনো কিছুই বলা যাচ্ছেনা, তবে৷ আবারও বলছি৷ নিরাময় যোগ্য! আপনারা কাইন্ডলি, সময় নষ্ট করবেন না, আমার সিনিয়র স্যার প্রফেসর আতাউল্লাহ গনি, সার্জারী বিভাগের ভালো ডাক্তার। রাস্তার উল্টো পাশের বিল্ডিং এর তিন তলায় বসেন, আমি কার্ড লিখে দিচ্ছি, টেক্সট করে দিচ্ছি, আপনারা আজই দেখান। এজ সুন এজ পসিবল আপনারা সার্জারী করান। সার্জারীর পর রিপোর্ট আমাকে দেখাবেন, আশা করছি রিপোর্ট ভালো আসবে।
– ভয়ের কিছু নেই তো?
– ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের বাবা! আপনি ভয় পেলে হবে?
– আমার কিছু হয়নি তো?
– এখন পর্যন্ত ভালো আছেন। ওহ! আরেকটা কথা, আমিও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র, এজন্য আপনার জন্য আমার আলাদা শুভাশিস রইলো। যেকোনো প্রয়োজনে কল দিবেন, ভালো থাকুন।
আবিদ বের হওয়ার পর, পলি বললো স্যার সত্যি করে বলুন ওর কি হয়েছে?
– ছোট্ট টিউমার, স্যার বলবেন না প্লিজ। আপনি উনাকে যত্নে রাখুন, মানসিক সাহসে রাখুন। আরেকটা কথা, সব পরিস্থিতে আপনি সাহস রাখবেন। ভালো থাকুন।
আবিদ ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে মুখ শুকনো করে বসে আছে। পলির দেখে, খুব মায়া হচ্ছে! কেন এমন হলো তার জীবনে? কেন!
পলি বললো চলো, গনি সাহেব কে দেখিয়ে আসি।
– আজ না পলি। আমার ভালো লাগছেনা!
– না, আজই।
– আমার কাছে ভিজিটের টাকা হবেনা।
– আমার কাছে আছে।
আবিদ অসহায় হয়ে বললো আমি কি বাঁচবো না পলি?
– আমি তো তোমাকে মরতে দিব না! নাতি পুতি নিয়ে খেলাটা বাকি আছে। আমাদের আনন্দের দিন, সামনে, সেটা দুজনে এক সাথে দেখবো ইনশাআল্লাহ।
তানিমের ফোন বাজছে, পলি ফোন ধরে বললো এতোক্ষণ লাগলো তোমার বাবা?
– আম্মু সরি, আমি জ্যামে পরেছিলাম। কয় তলায় আসবো?
– আমরা আসছি, নিচে।
তানিম বাবার রিপোর্ট দেখে, ছবি তুলে বন্ধুদের দিয়ে জানার চেষ্টা করছে, গুগুলে দেখছে কি হতে পারে! মুখ শুকনো হয়ে গিয়েছে তার!
সার্জারীর ডাক্তার বললেন আমি পড়শু দিন ফ্রি আছি, সেদিন করতে চাই। এর আগে, কিছু টেস্ট আছে, সেগুলো করিয়ে কাল রিপোর্ট দেখালে, আমি কনফার্ম করবো। আর, আমি আগামী সপ্তাহে দেশের বাইরে যাচ্ছি৷ তাই পড়শু ছাড়া আমি ফ্রি নই। যেহেতু সুমন পাঠিয়েছে, তাই আমি এই মুহুর্তে করছি, সার্জারী। আর আপনাদের দেরী করার অপশন নাই। সুতরাং সব টেস্ট করে কাল দেখান।
পলি বাসায় এসে, অন্য রুমে গিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে, লাইট বন্ধ করে হাউমাউ করে কাঁদছে। কি হয়ে গেল তার আবিদের!
সারারাত তার ঘুম হয়নি। তাহাজ্জুদ পড়ে হাউমাউ করে কেঁদেছে পলি, আল্লাহ আমার আবিদ কে সুস্থ করে দাও, আর আমি কিছুই চাইনা!
পলি দেখেছে, আবিদের ও ঘুম আসছেনা, কিন্তু সে শক্ত মানুষ সহজে কিছুই বুঝতে দিচ্ছেনা।
পলির চিন্তায় কিছুই ভালো লাগছেনা৷ এই সার্জারীর যে টাকা এটা সে কোথায় পাবে? আবিদের যা বেতন তা দিয়ে চলে সংসার। ছেলেদের টিউশনি কয় টাকা? তাছাড়া সার্জারীর পর কি হয় তার!
সব মিলিয়ে খুবই দুঃচিন্তায় পরেছে পলি, কিছুই খেতে রুচি নেই। সকাল বেলা, আবার আবিদ কে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওন্স হলো, বাস চলছে, আর পলি ভাবছে তার প্রিয় মানুষ টা সুস্থ হয়ে যাবে তো!
অন্য কোন খারাপ কিছু আসবেনা তো! পথের ধারের আচার বিক্রেতা লোকটিকেও আজ তার চেয়ে সুখী লাগছে। সে বার বার বলছে আল্লাহ আমার আবিদ কে রোগ মুক্তি দাও, আর কিছুই চাওয়ার নেই, আমার!
চলবে…..
আন্নামা চৌধুরী
–