ভাবীর সংসার সিজন ২ পর্ব ৬
অপারেশন থিয়েটারের বাইরে পলি বসে আছে, অঝোরে দুচোখের পানি ঝরে যাচ্ছে! চোখ দুটি ল্যল হয়ে আছে। আজ আবিদের টিউমার অপারেশন হচ্ছে।
কলি বার বার বলছে, পলিপা কেন এমন করছিস দুলাভাইয়ের কিচ্ছু হবেনা, দেখিস। তুই যদি এমন করিস বাচ্চাদের অবস্থা কি হবে!
জাহিদ সব কিছু নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে সাথে তালহা-তামিম আছে।
ডাক্তার সাহেব বেরিয়ে আসলেন, নার্সের হাতে একটি ট্রে, দুই সেন্টিমিটার মতো একটা টিউমার। বেশ জড় পাকিয়ে ফেলেছে। দেখতে ভয়ংকর লাগছে।
ডাক্তার বললেন মিসেস আবিদ, অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে, উনি ভালো আছেন।
আর এটা আমরা টেস্টে পাঠিয়ে দিচ্ছি, টেস্টের রিপোর্ট সুমন কে দেখাবেন। সে ভালো কিছু সাজেস্ট করবে। আমরা ডিউটি আপাতত শেষ। আমি আগামী কাল একবার দেখে যাবো, এর পরেই আমি ছুটিতে চলে যাচ্ছি!
– স্যার, ভয়ের কিছু নেই তো?
– অপারেশন ভালো হয়েছে। এখন রিপোর্ট এর অপেক্ষা! ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু হবে।
– উনার কি অন্য কিছু….
– প্লিজ এসব একদম ভাববেন না! উনাকে যত্নে রাখুন। আসছি!
পলি রেস্টে রুমে, আবিদ কে এক নজর দেখে এসেছে, গালের নিচ থেকে ব্যান্ডেজ করা। নিথর ভাবে ঘুমাচ্ছে, নাকে অক্সিজেন, হাতে সেলাইন চলছে!
নার্স বললেন দূর থেকে দেখে চলে যান, এখানে সেনসেটিভ রোগী এখানে সবাই!
– জি!
পলি দেখে এসে চোখ মুছছে আর বলছে, কলিরে আমার কেন এমন অবস্থা হলো?
– ধৈর্য্য ধর আপা! কিছু হবেনা!
– কেমন করে নিথর হয়ে শুয়ে আছে আবিদ! আমার ভালো লাগছেনা। যে মানুষ রোগের ভয়ে সিগারেট মুখে নিল না! তেলে ভাজা কিচ্ছু খায়না,কোন সময়। তার কি হলো রে কলি!
– আপা, প্লিজ তুই শান্ত হ।
– এই অপারেশনের পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা, আব্বা দিয়েছেন। ওর কাছে কি জমানো টাকা আছে? ব্যাংকে নাকি পঞ্চাশ হাজারের মতো আছে। এটা শুনে, আব্বা এই টাকা দিয়েছেন। ছেলের জন্য অস্থির হয়ে আছেন।
এখন যদি খারাপ রিপোর্ট আসে, আমার আবিদ আর বাঁচবে না! এতো টাকা আমি কোথায় পাব?
কত স্বপ্ন দেখেছিলাম ছেলেরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হলে, ছেলেদের বলবো বাবাকে যেন অনেক টাকা দেয়,খরচ করার জন্য। সারাটা জীবন হিসাব করে করে চলেছে। অল্প আয়ে, কষ্ট করে চলেছে! আর এখন, কি হতে, কি হয়ে গেল রে কলি।
তিন দিন পরে হাসপাতাল থেকে, আবিদ কে বাসায় নিয়ে আসা হলো। অপারেশন ভালো হয়েছে। কিন্তু সারাক্ষণ গলায় একটা হালকা ব্যাথা থাকে। খাইতে চায়না একদম আবিদ, খাইতে গেলেই যেন, গলা আটকে আসে। শুকিয়ে গিয়েছে অনেক।
পলিকে দেখলে মনে হয় জীবন্ত কংকাল হয়ে যাচ্ছে। শরীর শুকিয়ে, চেহারা কেমন যেন কাঠ হয়ে গিয়েছে।
রাহেলা বেগম এই শরীরে জামাইকে দেখতে আসছেন আজ! উনার জন্য সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠা খুবই কষ্ট! তবুও তিনি যাবেন, বলেই মন স্থির করলেন।
সকালে সাঈদ কে কল দিলেন রাহেলা।
বাবা, কেমন আছ?
– আসসালামু আলাইকুম মা! কেমন আছ?
– আছি বাবা ভালো। তোমার শরীর কেমন?
– ভালো আছি।
– বউ মা!
– আছে একমত।
– বাবা, আমি আজ পলির বাসায় যাবো চিন্তা করছি।
– কেন?
– পলির জামাইকে দেখা দায়িত্ব, তাছাড়া আবিদ খুব ভালো ছেলে বাবা। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, অনেক ভদ্র।
– তোমার শরীর হবে খারাপ, পরে ডাক্তারে যাবে, কষ্টের কষ্ট, পয়সা ও নষ্ট।
– না, বাবা। আমি যাবো, আর এখন সুস্থ আছি, জাহিদ কার নিয়ে এসেছে।
– ওহ! বড়লোক ছেলের মা তুমি, যাও!
– ও ঋণে আছে বাবা! কিন্তু সবার সবকিছুতেই যাইতে হয়। নাহিদের চাকরি দূরে, শাহিদের নাই টাকা। তুমিও দূরে!
– আমার কাছে মা, এই মুহুর্তে টাকা নাই।
– লাগবেনা বাবা। তুমি দোয়া রাইখো। রাখি এখন!
– আচ্ছা!
শাহিদ সাথে সাথে বললো, ভাইজানের কি টাকার অভাব? কত টাকা পেনশন পেল, এখন প্রতি মাসে ত্রিশ হাজার টাকা পেনশন পায়, বাচ্চা দুইটার ইনকাম। বাসা ভাড়াও পায়, তবুও টাকা নাই। টাকা আছে শুধু জাহিদ আর নাহিদের।
– কথা বলিস না বাবা। লাগবেনা টাকা। আমার কাছে হাজার তিনেক টাকা আছে, তাই দিয়েই যাবো। মেয়েটার হাতে পাঁচ/দশ হাজার টাকা দিলে, শান্তি পেতাম। থাক! চোখের দেখা দেইখা আসি, আর দোয়া তো করছি, আল্লাহ জানি সুস্থ করেন।
জলিও মায়ের সাথে যাচ্ছে পলির জামাইকে দেখতে। তার একা একা যাওয়ার সুযোগ নাই। রনির যা আয়, তা দিয়ে তাদের চলে যায়, কিন্তু ঢাকা যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নাই।
জলি মায়ের সাথে কারে বসে বললো৷, পলির কত ভাগ্য ভালো ছিল, কত গল্প করতাম সবার কাছে। আর, এখন যে কি হলো! আম্মা, আবিদ ভাইয়ের কি ক্যান্সার?
– এই জাহিদ তুই না বললি, আবিদের অপারেশন হইছে গলায়। ও কি বলে?
– ওর মাথা নষ্ট। তুমি ওর কথা শুনতে যাও কেন?
এই জলিপা তোকে এই খবর কে দিল?
– তোর দুলাভাই বললো, এই সব টিউমার ক্যান্সার হলে হয়!
– তোর জামাই কি ডাক্তাএ?
– আরে, আন্দাজ করে বলছে।
– মায়ের সামনে, আন্দাজে ঢিল কম মারবি।
– যা, আর কথাই বলবো না!
রাহেলা বেগম আবার বলছেন জাহিদ, সত্যি করে বল।
– সত্যি বলছি মা, এরকম কিছুই না!
জাহিদ ভাবছে, জলিপার আক্কেল যে আর কবে হবে? কিছু বুঝে না বুঝে অসুস্থ মায়ের সামনে কথা বলে। মা এখন শিশু বাচ্চার মতো অস্থির হয়ে যান। আর সে, মাকে এসব কথা বলছে!
আল্লাহ যেন আবিদের রিপোর্ট ভালো দেন এই দোয়া করছে জাহিদ্ম নয়তো পলির সংসারে শেষ হয়ে যাবে, একটা ভালো রিপোর্টের আশায় সবাই, দোয়া করছে….
চলবে…
আন্নামা চৌধুরী।