কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব ১১
:
জট
লেখিকা : #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)
ক্যান্ডেলকে গেস্টরুমে শোয়ালো ইভান।
কাধ গাড়িয়ে যাওয়া জামার অংশ কাধে তুলে দিতেই চোখ পিটপিটিয়ে তাকালো ক্যান্ডেল।
আধ খোলা চোখে ইভানকে দেখে খানিক কপাল কুচকালো। অনেক ধীর গলায় বিড়বিড়িয়ে বলল, “Pervert.”
ভ্রু কুচকালো ইভান।
আরো কিছু বিড়বিড়িয়ে আস্তে আস্তে পুনরায় চোখ বন্ধ করে ফেললো ক্যান্ডেল।
ইভান নিজের কাধ থেকে ওর হাত ছাড়িয়ে নিতেই আবার পিটপিটিয়ে চোখ খুলে তাকালো ক্যান্ডেল।
ইভান হাতটা নামিয়ে রাখতে না রাখতেই ক্যান্ডেল ওর কলার চেপে ধরলো।
অবাক হয়ে গেলো ইভান।
“আমাকে অপমান করার সাহস কে দিলো তোমাকে?” জড়ানো গলায় অভিযোগ করলো ক্যান্ডেল।
আরো বলল, “আমি মোটেই কাজের না? আমি কিছু পারি না? …আমি পারি। আমার যথেষ্ট যোগ্যতা আছে।”
“এক্সট্রা কথা না বলে ঘুমাও।” ইভান গম্ভীর চোখে তাকিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিলো।
ক্যান্ডেল চোখ কুচকালো। আরো কিছু বললেও ইভান পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে গেলো রুমটা থেকে। বাহির থেকে লাগিয়ে দিলো দরজাটা।
মেয়েটাকে কোনো বিশ্বাস নেই। সেদিনের মতো কিছু করেও বসতে পারে।
তাছাড়া এখানে আনার কারণে কাল সকালে কী কী করবে তারও ঠিক নেই। নির্ঘাত পস্তাতে হবে কাল! মুখ দিয়ে “তিক” করে বিরক্তসূচক শব্দ বের করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো ইভান।
প্রয়াস সকাল সকাল তিয়াসাকে চেক আপ করালো পুরোপুরি। সমস্ত রকম টেস্ট করিয়ে তবেই ফিরে এলো ওকে নিয়ে।
কাল পরশুর মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। আপাতত সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়ে এটুকুই জানা গেছে যে তিয়াসার সত্যিই মানসিক সমস্যা আছে। এজন্যই বয়সের তুলনায় অস্বাভাবিক ব্যবহার করে।
হস্পিটাল থেকে বাসায় ফিরতেই রেখা বলল, “স্যার একজন দেখা করার জন্যে আসছে। বলে পুলিশ ইস্টিশন থেকে নাকি!”
পুলিশ স্টেশন শুনেই প্রথমেই রিপোর্টের কথা মাথায় এলো প্রয়াসের। তিয়াসার জন্য থানায় রিপোর্ট লিখিয়ে এসেছিলো।
“কোথায়?”
“বসার ঘরে।”
তিয়াসার দিকে একবার তাকালো প্রয়াস।
তিয়াসাও প্রতিবারের মতোই ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো।
প্রয়াস চোখ সরিয়ে এগিয়ে গেলো বসার ঘরে। ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়লো লোকটাকে। সে উঠে দাঁড়াতেই সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে আগাগোড়া চোখ বুলিয়ে নিলো প্রয়াস।
চিকনচাকন গড়নের এক মধ্যবয়সী পুরুষ মানুষ। সাদাসিধে পোশাক পরিহিত। দ্বিধান্বিত মুখোভাব।
এই লোক কি তাহলে তিয়াসার পরিবারের কেউ? খোঁজ পেয়ে এসেছে?
তিয়াসাও পিছু পিছু ঢুকলো। প্রয়াসের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনের লোকটার দিকে তাকাতেই মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলো একদম। ভয়ে সাদা হয়ে গেলো মুখটা। শরীর কাঁপতে লাগলো থরথর করে।
কয়েক পা পিছিয়ে যেতেই দরজার ধাক্কা লেগে শব্দ হতেই প্রয়াস তাকালো ওর দিকে। ওর অদ্ভুত রকমের ব্যবহার দেখে ভ্রুকুটি করলো।
“কী হয়েছে তোমার?” বলতে বলতে কাছে এগিয়ে যেতেই তিয়াসা প্রয়াসের হাতদুটো আঁকড়ে ধরে হাপরের মতো হাঁপাতে লাগলো। বেশ কাচুমাচু হয়ে গেলো ভয়ে।
হতভম্ব হয়ে গেলো প্রয়াস। সুস্থ স্বাভাবিক মেয়েটার হঠাৎ কী হয়ে গেলো!
তিয়াসা প্রয়াসের বুকে মাথা গুজে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে কাঁদতে লাগলো।
অবাক হলো প্রয়াস। সন্দিহান চোখে একবার মুখ ঘুরিয়ে তাকালো সেই লোকটার দিকে।
তার মুখ দেখে মনে হলো গুরুতর কিছু করে ধরা পড়েছে সে। মুখটা শুকিয়ে গেছে পুরোই।
এই লোকটা যে তিয়াসার সাথে খারাপ কিছু করেছিলো তা বুঝতে দেরি হলো না প্রয়াসের।
তিয়াসার অস্থির ভাব অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তেই প্রয়াস কোলে তুললো ওকে। তিয়াসা কাধটা খামচে জড়িয়ে মাথা গুজলো প্রয়াসের বুকে। চোখ থেকে জল গড়াতে লাগলো অনবরত। শরীর যে কাঁপছে তা অনুমান করতে বেগ পেতে হলো না প্রয়াসের।
প্রয়াস রুমে নিয়ে এসে তিয়াসাকে শুইয়ে দিলেও তিয়াসা কাধ খামচে ধরেই রাখলো ওর। প্রয়াস হাত ছাড়াতে চাইতেই খুব অসহায়ভাবে মাথা নেড়ে ‘না’ করতে লাগলো বার বার।
প্রয়াস গহন চাহনিতে চেয়ে তিয়াসার মাথায় এক হাত গলিয়ে আশ্বাস্ত করে বলল, “যেতে হবে না বলেছি তো! ভয় নেই তোমার। কেউ কোনো ক্ষতি করবে না।”
তিয়াসা ছলছল করা চোখে তাকিয়ে রইলো প্রয়াসের দিকে। সারা শরীর এখনো কাঁপছে। কাধের শার্ট আঁকড়ে ধরে আছে শক্ত করে।
প্রয়াস একবার ওর হাতের দিকে তাকিয়ে ওর হাতের উপর হাত রেখে বলল, “শান্ত হও। কিছু হবে না।”
ইভান বেশ অনেকক্ষণ ধরেই গেস্টরুমের দরজার কাছে কপাল কুচকে দাঁড়িয়ে আছে। সকাল দশটার বেশি বাজতে চলেছে কিন্তু ক্যান্ডেল এখনো ওঠেনি। কয়েকবার নকও করেছে ইভান। সারা শব্দ পায়নি।
মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ফেললো ইভান। তারপর নব ঘুরিয়ে অল্প করে দরজা খুলে শুধুমাত্র মেঝের দিকে তাকালো।
যা ভেবেছিলো তাই!
দরজা বন্ধ করলো ইভান। মুখ দিয়ে বিরক্তসূচক শব্দ করে কোমড়ে হাত রাখলো।
আজ দরকারি মিটিং ছিলো। সেটা বোধহয় না করা হবে।
ইভান একটু অপেক্ষা করে আবার নক করলো। পূর্বের তুলনায় জোরে আর বেশ কয়েকবার।
ক্যান্ডেল কপাল কুচকে মুখ দিয়ে বিরক্তসূচক শব্দ করলো। নক করার আওয়াজটা তীব্র আর ঘনঘন হওয়ার এবার আর ঘুমিয়ে থাকা সম্ভব হলো না।
ধীরে ধীরে চোখ খুলতে হলো।
বেশ সময় নিয়ে ক্যান্ডেল চোখ ঘুরিয়ে দৃষ্টিসীমার মধ্যের সবটা চোখ বুলিয়ে নিলো। চোখ কুচকে গেলো আপনাআপনি।
রুমটা তার নয়। কিন্তু তবুও চেনা চেনা লাগছে। কোথায় এটা?(লেখিকা লাকি নোভা)
হ্যাংওভারের কারণে ব্যথায় দপদপ করা মস্তিষ্ক খাটিয়ে মনে করার চেষ্টা করতেই চোখের সামনে ভেসে এলো কিছু টুকরো টুকরো ঘটনা।
অমনি হুড়কি খেয়ে উঠে বসলো ক্যান্ডেল। গায়ের চাদরটা চেপে ধরে মেঝের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো।
মুখ হা হয়ে গেলো বিস্ময়ে। শিরশির করে উঠলো সারা শরীর।
চকিতে তাকালো দরজার দিকে। দরজার নক করার আওয়াজ তখনো বিদ্যমান।
ক্যান্ডেল চাদরটা ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে আরেকবার তাকালো মেঝেতে পড়ে থাকা কাপড়গুলোর দিকে।
নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হলো সাথে সাথে।
ইভানের বাসায় আবার কী করে এলো ও! সেদিনের মতো নিজে থেকে?
চিন্তা হতেই শরীর অবশ হয়ে আসতে লাগলো। পুনরায় দরজার দিকে তাকালো ও। মাত্রই দরজার করাঘাত থেমেছে।
ক্যান্ডেল শক্ত গলায় বলার চেষ্টা করলো, “আমি এখানে কেনো? আমাকে এখানে কেনো এনেছো?”
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস ফেললো ইভান।
কোনো উত্তর না পেয়ে ক্যান্ডেল আবার প্রশ্ন ছুড়লো।
“চুপ করে আছো কেনো?”
“ভিতরে আসছি আমি।”
ইভানের কথায় চমকে উঠলো ক্যান্ডেল। হড়বড়িয়ে বলে উঠলো, “না, একদম না।”
“পাঁচ মিনিট দিচ্ছি। ড্রেস পরে বের হও। তোমার জন্য মিটিং ক্যান্সেল করতে হলো। কাল বারবার বলেছিলাম বাসায় যেতে। তা না করে, করলে উলটোটা! আর তোমার কী মাথায় সমস্যা আছে? কমন সেন্স নেই? মিনিমাম সেন্স থাকলে অন্তত এমন কাজ করতে না!”
ইভানের কাটখোট্টা গলার আঁটসাঁট কথায় হা হয়ে গেলো ক্যান্ডেল। লোকটা এমনভাবে কথা বলছে কোন সাহসে!
“জলদি রেডি হও।” আবার বলল ইভান।
কিছু বলতে গিয়েও বলল না ক্যান্ডেল। গাড়ির ঘটনার কথা এখনো মাথায় আছে ওর। লোকটা যদি সত্যি কিছু করে বসে!
আচ্ছা কাল রাতে কী করেছে লোকটা!
চিন্তা করতেই গাল লাল হয়ে গেলো ক্যান্ডেলের। কেমন কেঁপে উঠলো সারা শরীর।
রাগের চেয়ে লজ্জাই বেশি লাগছে। ঝিম মেরে যাচ্ছে মস্তিষ্ক।
“হয়েছে তোমার?”
“না।” চমকে উঠলো ক্যান্ডেল। পাঁচ মিনিট যে পার হয়ে গেছে খেয়ালই হয় নি। (লেখিকা লাকি নোভা)
ক্যান্ডেল মেঝেতে পড়ে থালা কাপড়গুলোর দিকে তাকাতেই বুঝলো ওগুলা আর পরা যাবে না। কারণ সবই বমিতে মাখামাখি। সাথে ভিজে ভিজে অবস্থা।
এখন? কী পরবে ও!
মুখটা মলিন হয়ে গেলো ক্যান্ডেলের। একই সাথে নিজের উপর রাগও হতে লাগলো।
অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে উঠলো ইভান।
বিরক্ত কণ্ঠে বলল, “হয়েছে তোমার?”
নড়েচড়ে বসলো ক্যান্ডেল। অত্যন্ত লজ্জায় পড়ে গেলো ও। এখন কী করে বলবে যে কাপড়গুলো পরার যোগ্য নয়?
“সমস্যা কী তোমার? তুমি…?”
“কাপড়গুলো ভিজে গেছে।” ইভানের কথার মধ্যেই কোনোমতে বলে উঠলো ক্যান্ডেল।
“মানে?” ভ্রু কুচকে গেলো ইভানের।
ক্যান্ডেল লজ্জায় অপ্রতিভ হয়ে উঠলো। এর চেয়ে হয়তো মরে যাওয়াই ভালো ছিলো।
ইভান আর প্রশ্ন করলো না। বিষয়টা বুঝে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো একটা।
অতঃপর নিজের একটা শার্ট আর ট্রাউজার এনে দরজায় নক করে বলল, “এটা নেও যতক্ষণ না ড্রেস আসছে।”
বলেই দরজাটা হালকা করে খুলে ভিতরে ফেললো শার্ট আর ট্রাউজারটা।
ক্যান্ডেল বোকার মতো চোখ পিটপিটালো কয়েকবার। সত্যি সত্যিই এই লোকের জামাকাপড় পরতে হবে?
ক্যান্ডেল ফ্রেস হয়ে পরে নিলো শার্ট আর ট্রাউজারটা। আপাতত কিছু খেতে পেলে ভালো হতো। খিদেই পেট চো-চো করছে। বমি আসছে, মাথা ঘুরছে।
কিন্তু ইভানের সামনেও তো যেতে পারবে না ও। খুব অস্বস্তি হবে।
ক্যান্ডেল বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে ভাবতে লাগলো কী করবে।
ঠোঁট কামড়ে কিছু চিন্তা করে দরজা খুলে হালকা উঁকি দিলো ক্যান্ডেল। চোখ বুলিয়ে ইভানকে না দেখে পুরোপুরি দরজা খুললো।
পা টিপে টিপে বের হতেই ইভানের সামনে পড়ে গেলো।
ইভানও ডান দিকের নিজের রুম থেকে বের হচ্ছিলো তখন। ক্যান্ডেল আড়চোখে ইভানকে দেখেই মুখ ঘুরালো অন্যদিকে। ফাঁকা ঢোক গিলে এলোমেলো দৃষ্টিতে তাকাতে লাগলো এদিক ওদিক।
ইভান সরু চোখে তাকালো ওর দিকে। ক্যান্ডেলের জড়সড় ভাব বুঝে পুনরায় ফিরে গেলো নিজের রুমে।
অবাক হয়ে চোখ পিটপিট করলো ক্যান্ডেল। তাকালো ইভানের রুমের দরজার দিকে।
হঠাৎ এত ভদ্র হয়ে গেলো কী করে?
চোখ কুচকে কিছু বিড়বিড় করে ডায়নিং-এর দিকে এগিয়ে গেলো ক্যান্ডেল। একপ্রকার চোরের মতো ইভানের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি নিলো। তারপর টেবিলের বাস্কেটে থাকা ফলগুলোর মধ্যে থেকে একটা আপেল আর একটা প্লেট থেকে দু’টো বাটার টোস্ট তুলে নিলো।
তারপর দ্রুত গেস্টরুমটায় ঢুকে পড়লো।
বিষয়টা যে লজ্জাজনক তা ক্যান্ডেল জানে। অন্যের বাসার খাবার এভাবে খাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু এখন অতশত চিন্তা করার সময় নেই।
খাবার গুলো শেষ করে পানি খাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হলো ক্যান্ডেল।(লেখিকা লাকি নোভা)
দেখে নিলো ইভান আছে কিনা।
নেই দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেলো। একটা গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।
আচমকা আওয়াজে ক্যান্ডেল চমকে উঠলো একপ্রকার।
মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ফেললো ক্যান্ডেল। চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই চোখাচোখি হলো ইভানের সাথে।
চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো ক্যান্ডেল।
ইভান এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। অনলাইনে ড্রেস অর্ডার করেছিলো। সেইজন্যই পার্সেল এসেছে ভেবে লুকিং গ্লাসে না তাকিয়েই দরজা খুলে দিলো ইভান।
আর দরজা খুলে অপর পাশের ব্যক্তিকে দেখে চরমভাবে থমকালো। হতবিহ্বল হয়ে গেলো পুরোই।
মুখ দিয়ে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো, “মা, তুমি!”
কড়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন ইশারা। মারমুখো ভঙ্গিতে দাঁতেদাঁত চিপে বললেন, “আমাকে বললি মেয়েটার সাথে নাকি তোর কিছুই নেই? তাহলে গতকাল রাতে মেয়েটাকে আবার আনলি কেনো?”
এমন প্রশ্নে একদম বুদ্ধিশূন্য হয়ে পড়লো ইভান। এতসব কী করে জানলো মা?
বিস্ময় কাটিয়ে ওঠার আগেই ইশারা ঝাঁঝানো গলায় বললেন, “সর দরজার সামনে থেকে। আজ তোকে দেখছি আমি!”
ইভান কিছু বলার আগেই ইশারা ওকে সরিয়ে হড়বড়িয়ে ঢুকে গেলেন ভিতরে।
হুট করে একজন মহিলা এভাবে সামনে চলে আসায় ক্যান্ডেল গ্লাস হাতে চেয়ে রইলো বোকা চোখে। ভদ্রমহিলাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অপ্রস্তুতও হয়ে পড়লো বেশ।
ইশারার শক্ত মুখ বদন বিস্ময়ে ছেয়ে গেলো।রিসিপশন থেকে মিথ্যা বলেনি তারমানে। ইভান সত্যিই বিয়ের না করেই একটা মেয়েকে নিয়ে থাকছে। মেয়েটার মুখের দিক থেকে চোখ সরিয়ে গায়ের দিকে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেলেন ইশারা। গায়ে ইভানের পোশাক দেখে মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো তার।
চট করে চেয়ারটা ধরে দাঁড়ালেন তিনি।
ইভান এগিয়ে এসে ধরতে চাইতেই রাগচটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ মুখ কুচকে চেঁচিয়ে উঠলেন, “মেয়েটাকে নাকি চিনিসই না? তাহলে এসব কী? ছি! লজ্জা করলো না তোর?”
“ভুল বুঝছো তুমি।” গম্ভীর চোখে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল ইভান।
তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন ইশারা।
“এতকিছুর পরেও কোন সাহসে অস্বীকার করছিস? ভাবতেও লজ্জা লাগছে আমার যে তোর মতো ছেলেকে আমি জন্ম দিয়েছি!” আহাজারি করে উঠলেন ইশারা।
চমকালো ক্যান্ডেল। ইনি ইভানের মা?
“আগে মাথা ঠান্ডা করো তারপর কথা বলবো। এখন বললেও বুঝবা না।”
ইভানের শান্ত, নির্লিপ্ত ভাব দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলেন ইশারা। তাকেই কিনা শান্ত হতে বলছে!
“বসো আগে। প্রেসার ফল করবে তোমার।” ইভানের কথায় দাঁত কিড়মিড় করলেন ইশারা।
“এসব করার আগে মনে ছিলো না তোর? সরে যা আমার সামনে থেকে।”
ইভান কপাল কুচকে তাকালো।
“ভুল কিছুই করি নি আমি।”
“ভুল তো আমি করেছি তোকে একা ফ্ল্যাটে থাকতে দিয়ে। মেয়ে যখন পছন্দই ছিলো তখন বিয়ে করবো না, বিয়ে করবো না করতি কীসের জন্য? আমি বার বার বলিনি কেউ পছন্দের থাকলে বল? বললে কি আমরা বিয়ে দিতাম না? আর এই মেয়ে তুমি বলো, তোমার লজ্জা করলো না? বিয়ে না করে একটা ছেলের সাথে থাকতে একটুও বাধলো না?”
ইশারার প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো ক্যান্ডেল। ইভানের দিকে তাকালো একবার।
“ওর দিকে কী দেখছো?” ইশারার ধমকে তটস্থ হয়ে গেলো ক্যান্ডেল।
ইশারাকে থামানোর জন্য হাত টেনে ধরে সোফায় নিয়ে বসালো ইভান। ভ্রুকুটি করে বলল, “না জেনেই, না শুনেই, কী বলে যাচ্ছো তুমি? আগে শোনো চুপচাপ।”
ইশারা রাগে গা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে চাইতেই ইভান পুনরায় হাত টেনে বসালো।
কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, “ওর সাথে আমার কোনোরকমের কোনো সম্পর্ক নেই। সেদিন ভুল করে চলে এসেছিলো ও। পরবর্তীতে কোম্পানির একটা প্রজেক্টের কাজে আবার দেখা হয়েছে। সম্পূর্ণ coincidence। এর আগে আমরা কেউ কাউকে চিনতাম না। সত্যি! আর…আজ সকালেই প্রজেক্টের একটা কাজেই ও এসেছিলো। কাপড়ে জুস পড়ে যাওয়ার কারণে চেঞ্জ করতে হয়েছে।” বলতে বলতে ক্যান্ডেলের দিকে একনজর তাকালো ইভান।
ভ্রুকুটি করলো ক্যান্ডেল।
“সে তো আমি বুঝতেই পারছি!” কড়া গলায় মুখ বাঁকিয়ে বললেন ইশারা।
“কিছুই বুঝতে পারছো না।”
“আমাকে বোকা ভাবিস না। সেদিনের সিসিটিভি রেকর্ড দেখেছি আমি আগেই। অচেনা হলে অত রাতে আসতো না। আর না তোকে জড়িয়ে ধরতো। আর মেয়েটা যে গতরাতে এসেছে সেটা আমি ভালোভাবেই জানি। খবর না পেয়ে এসেছি ভাবছিস!”
চমকে গেলো ইভান। বুদ্ধিশূণ্য হয়ে পড়লো কয়েক মূহুর্তের জন্য।
“তোর আর একটা কথাও আমি শুনবো না। এখন আমি গিয়ে গতরাতের রেকর্ডিং দেখবো। তোর মিথ্যা বলা আমি ছুটাচ্ছি! চল আমার সাথে।”
হকচকিয়ে গেলো ইভান। ওর মা যে এতকিছু জানে সেটা ভাবতেও পারেনি ও।
এখন যদি রেকর্ডিং দেখে তাহলে সবকিছু হাতের বাইরে চলে যাবে। আর যাই হোক সেটা করতে দেওয়াই যাবে না।
ইশারা উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথে ইভান পথ আটকে দাঁড়িয়ে পড়লো।
“কিছু দেখতে হবে না। আমি বলছি শোনো। গতকাল রাতে ডিনারের পর ও একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো তাই এনেছিলাম।”
অবাক হয়ে তাকালো ক্যান্ডেল। ইভান ওকে নিয়ে এসেছিলো! ও নিজে আসে নি!
ইশারা বিশ্বাস করলেন না। কঠোর গলায় বললেন, “লজ্জা করে না তোর? মাকে মিথ্যা বলে যাচ্ছিস একটার পর একটা?”
অধৈর্য হয়ে উঠলো ইভান। বলল, “Damn! এমন কিছুই আমাদের মধ্যে নেই। আর না ছিলো। ভুল ভাবছো তুমি। তোমার মনে হয় আমি এমন করবো? Like seriously! আমি যদি জানতাম বিষয়টা এত দূর গড়াবে তাহলে আমি ওইদিন রাতে দরজাই খুলতাম না। আর না ওকে ঢোকার সুযোগ দিতাম।”
হা হয়ে তাকালো ক্যান্ডেল। কত সুন্দর মহাপুরুষ সাজছে এখন!
“গতরাতে ওকে আনার উদ্দেশ্য মোটেও খারাপ কিছু ছিলো না। I swear! ও সমস্যায় ছিলো, আমি জাস্ট হেল্প করেছি। এছাড়া আর কিছুই না।”
ইশারা শুনলেন না। কঠোর গলায় বলে উঠলেন, “সব বুঝে গেছি আমি। রেকর্ডিং দেখলে বাকিটাও বুঝে যাব। সর তুই আমার সামনে থেকে। আজ তোর একদিন কী আমার একদিন! নির্লজ্জ!”
বলেই ইভানকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলো ইশারা।
বেজার বিপদে পড়ে গেলো ইভান।
(চলবে…)
লেখিকা লাকি নোভা
গল্প কপি নিষেধ