কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব ২৬ : #প্রণয়
লেখিকা : #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)
মেঘবিহীন নিষুপ্তি মোড়া গগনে আজ পূর্ণচন্দ্র। জোছনা যেনো ঠিকরে ঠিকরে পড়ছে ধরনীতে। সাফেদরাঙা রোশনাইয়ে বুঁদ হয়ে আছে চারপাশ। যার কিয়দংশ জালানার গ্রীল ভেদ করে এসে গলে পড়েছে ঘুমন্ত ত্রয়ীর উপরে।
ডিভানেই মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে সে।
ইচ্ছে করে নয়। দিব্যি জেগে থেকে অপেক্ষাই করছিলো। তবে আস্তে আস্তে কখন চোখ লেগে এসেছে বুঝতেই পারেনি।
ঘড়ির কাঁটা বারোর ঘরে আসার কিয়ৎপল আগেই রুমটার সামনে এসে দাঁড়ালো নীল। পুরো রুমটা অন্ধকার দেখে অনেকটা অবাকই হলো বোধহয়।
মেয়েটাকে অন্ধকারে রেখে গেছে ওরা!
ভ্রু কুচকে গেল নীলের। পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোনবাতি জ্বেলে সন্ধানী চোখে পা রাখলো ঘরের ভেতরে।
আঁধার ছাপিয়ে কৃত্তিম আলোতে ঘরটা কিছুটা আলোকময় হতেই চোখে পড়লো নিদ্রামগ্ন ত্রয়ীকে।
জড়সড় হয়ে বামকাত হয়ে শুয়ে আছে মেয়েটা। ভর্তি চুড়ি পরা ডান হাতটা বেরিয়ে এসেছে ডিভানের বাহিরে।
তার পাশেই থুতনি ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে আছে এলভি। যদিও আলোর ঝলকানিতে মাথা তুলে তাকিয়েছে সে।
নীল অবাক হলো। কয়েক মুহূর্তের জন্য হতবুদ্ধি হয়ে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ত্রয়ীর দিকে।
যাহ্ বাবা! বউ তার ঘুমিয়ে গেছে! তাও গেস্ট রুমের ডিভানে!
সময় নিয়ে ধাতস্থ হলো নীল। কয়েক মুহূর্ত ঠোঁট কামড়ে চিন্তা করলো কিছু।
ত্রয়ীকে ডাকবে কি ডাকবে না বুঝতে পারলো না।
ওদের ঘর সাজানো সবে শেষ হয়েছে। টাকা পয়সার দেনাপাওনা মিটিয়ে মেয়েটাকে নিতে এসেই দেখে সে কিনা ঘুমিয়ে পড়েছে গেস্ট রুমেই!
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো নীল। অধরকোণে ঠাঁই পেলো অপার্থিব নৈশব্দ হাসি। অবশেষে না ডাকার সিদ্ধান্তই নিলো সে।
ঘুমোচ্ছে ঘুমাক। ক্লান্ত হয়তো।
নীল ফোনের বাতি নিভালো। কাছে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো ডিভানের সামনে, এলভির পাশে।
এলভি এখনো যায় নি। সেই থেকে বসে আছে স্বস্থানে। শুধু ত্রয়ী ঘুমিয়ে পড়ার পর লাইটটা অফ করতে একবার উঠেছিল।
এটা খুব ভালোভাবেই শেখা আছে ওর। নীল ছোটো থেকেই শিখিয়েছে।
আর সুইচগুলোও মেঝে থেকে কম উচ্চতায় হওয়ায় বেগ পেতে হয়না তাকে। ছোটো থাকতে একটু সমস্যা হতো।
ত্রয়ীর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এলভির দিকে একবার তাকালো নীল। ভ্রু বাঁকিয়ে খুব নিচু গলায় ফিসফিসিয়ে বলল, “পাহারা দিতে বলেছিলাম। ঘুম পাড়িয়ে দিতে বলেছি?”
এলভি ড্যাবডেবে চোখে তাকিয়ে লেজ নাড়লো শুধু।
সে তো ঘুম পাড়ায় নি। শুধু ঘুমোনোর পর লাইটটা বন্ধ করে দিয়েছে।
নীল আবার ত্রয়ীর দিকে তাকালো। অন্ধকার সয়ে যেতেই চাঁদের জোছনায় স্পষ্ট দেখতে পেল তার স্নিগ্ধ মুখ। অপার্থিব সৌন্দর্য।
মৃদু হাসলো নীল। একরাশ মুগ্ধতা ভর করলো চোখে। নিমেষহীন চাহনিতে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো।
তারপর হাতের ফোনটা বিছানাতে রেখে সেখান থেকে বালিশ নিয়ে এলো একটা। ডিভানের এক কোণে সেটা রেখে ঝুঁকলো ত্রয়ীর দিকে।
আলতো করে ঘাড়ের নিচে হাত দিয়ে ঘাড় সোজা করিয়ে শোয়ালো ওকে। অতি সন্তর্পণে বালিশটা দিয়ে দিলো মাথার নিচে।
ফলে একটু নড়েচড়ে উঠলো ত্রয়ী। তবে চোখ খুললো না। আরাম করে শুয়ে রইলো।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো নীল। চাদর এনে গায়ে টেনে দিতে গিয়েই খেয়াল হলো ত্রয়ীয় গায়ের গহনাগুলোর দিকে।
গলায়, কানে, হাতে ভর্তি করিয়ে রেখে দিয়েছে ওরা।
অবাক হলো নীল। ভ্রু কুচকে গেল বিস্ময়ে।
বাসররাতে এতোকিছু পরায় কেউ? শুধু শুধু হয়রানিতে ফেলা!
এসব নির্ঘাত কথা আর ওই বাকী বিচ্ছুগুলোর কাজ!
ওদের উপর চরম বিরক্ত হলো নীল।
অগত্যা গহনাগাঁটি খোলার জন্য বসলো সে।
মেয়েটার ঘুমের বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত না ঘটিয়ে খুব আস্তেধীরে সব খুলতে গিয়েই পাক্কা বিশ মিনিট লাগিয়ে ফেললো নীল।
তবে এখানেই শেষ নয়। শাড়ির সেফটিপিন খুলতে গিয়েও আরো পনেরো মিনিট হিমশিম খেতে হলো ওকে।
প্রথমে ভেবেছিলো কাধের কাছের পিনটা খুলে না দিলে ঘুমের ঘোরে নড়াচড়া করলে শরীরে বিঁধে যেতে পারে। আর সেটা খুলতে গিয়েই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল ও।
একটা নয়, সেখানে তিনটা পিন আটকেছে তারা। তাছাড়া বুকের কাছে তিনটা, পিঠের কাছে তিনটা আর কোমড়ের কাছে পাঁচটা।
সর্বমোট চৌদ্দটা! ভাবা যায়!
সাধারণ একটা শাড়িতে এতো এতো সেফটিপিন কেউ মারে!
নীলের ইচ্ছে করলো এখনি গিয়ে ওদের সবগুলোকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে। হয়রানির তো একটা লিমিট থাকে! সেটাও অতিক্রম করে বসে আছে ওরা।
ভাগ্যিস খেয়াল করেছিল। নাহলে নিশ্চিত গায়ে বিঁধতো ত্রয়ীর।
মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো নীল। এই শীতের রাতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে তার।
গহনা আর পিনগুলো বিছানার উপর রেখে ফোনের ফ্ল্যাশলাইটটা বন্ধ করলো ও। পিন খোলার সময় দরকার পড়েছিলো ওটা।
শার্টের হাতায় কপাল মুছে হাঁফ ছাড়লো নীল। ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো দরজার দিকে।
এলভি উলটো ঘুরে বসে আছে সেখানে।
আসলে নীলই পিনগুলো খোলার সময় বাহিরে গিয়ে ওভাবে বসে থাকতে বলেছিলো ওকে। আর সেও বাধ্য ছেলের মতো পালন করেছে।
নীল মুচকি হাসলো। আস্তে করে শিস বাজাতেই চকিতে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো এলভি।
নীল ওকে বিছানায় শুয়ে পড়তে ইশারা করতেই এগিয়ে এলো ও। একলাফে উঠে বসলো বিছানায়। সামনের দুই পায়ের উপর থুতনি রেখে শুয়ে পড়তেই নীল একটা চাদর টেনে দিলো ওর গায়ে। মাথায় একচোট হাত বুলিয়ে দিয়ে নিচুস্বরে বলল, “গুডনাইট।”
এলভি স্বচ্ছ দৃষ্টিতে একপলক তাকিয়ে চোখ বন্ধ করলো।
নীল এগিয়ে গেল ডিভানের কাছে। ত্রয়ীর পাশের অবশিষ্ট জায়গাটুকুতে বামকাত হয়ে শুয়ে হাত আগলে বুকে টেনে নিলো ওকে।
ত্রয়ী ঘুমের আবেশেই গুটিশুটি মেরে লেপ্টে এলো ওর শরীরের সাথে।
নীল নীরব হাসলো। কপালে চুমু এঁকে পলকহীন চেয়ে রইলো ওর মুখপানে।
ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের টাই বাঁধতে বাঁধতেই তিয়াসার দিকে একপলক তাকালো প্রয়াস।
সে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টে। গভীর মনোযোগ ওর গলদেশেই নিবদ্ধ এখন। খুব সুক্ষ্ণ নজরে টাই বাঁধা দেখছে সে।
সবিস্ময়ে মুচকি হাসলো প্রয়াস। ভ্রু উঁচু করে নামিয়ে বলল, “কী দেখো?”
তিয়াসার ধ্যান ভাঙলো। চকিতে চোখ পিটপিটিয়ে টাইয়ের উপর থেকে চোখ তুলে তাকালো প্রয়াসের দিকে।
তার হাসির বিপরীতে মৃদু হেসে প্রত্যুত্তর জানালো সে।
প্রয়াস কাছে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো। টাই খুলে তিয়াসার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওর দিকে ঝুঁকলো।
অধরসুধায় হাসি ফুটিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল, “নেও, পরাও।”
তিয়াসা চোখ পিটপিটালো। হাতের টাই-টার দিকে একঝলক তাকিয়ে উচ্ছল হাসি ফুটলো ওর ঠোঁটজুড়ে।
চোখের তারায় প্রাণবন্ততা নিয়ে প্রয়াসের দিকে তাকালো ও। অতঃপর নির্দ্বিধায় সেটা পরিয়ে দিতে লাগলো প্রয়াসের গলায়।
প্রথমবার হিসেবে অপারগতা থাকলেও সেটা শুধরে দিলো প্রয়াস।
তিয়াসা খুব ভালোভাবেই পারলো।
প্রয়াসের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাতেই প্রয়াস অধর প্রসারিত করে মৃদু হাসলো। চুলের ভাঁজে হাত রেখে বলল, “ভালো হয়েছে।”
এতটুকু কথাতেই অনেক খুশি হলো তিয়াসা।
প্রয়াস বিছানা থেকে অফিসের ফাইলগুলো হাতে তুলে নিতে নিতে বলল, “একা একা বাহিরে যাবা না। আর কেউ আসলে না দেখে দরজা খুলবা না। ঠিকাছে?”
তিয়াসা মাথা কাত করে সায় জানালো।
প্রয়াস প্রসন্ন হাসলো।
গালের কাছে আলতো করে হাত রেখে বলল, “গুড। কোনোকিছু লাগলে রেখাকে বলো। আসছি তাহলে?”
বলে যেতে উদ্যত হবার আগেই ওর কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো তিয়াসা।
খানিক বিস্মিত হলো প্রয়াস। বোকার মতো তাকাতেই চোখাচোখি হলো তিয়াসার উজ্জ্বল কালো মণিবিশিষ্ট চোখের সাথে।
অনুপলেই চোখের ভাষা পড়তে দেরি হলো না প্রয়াসের। অধর প্রসারিত করে হেসে ফেললো ও।
অতঃপর ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে চুমু খেলো তিয়াসার কপালে।
ঝলমলে হাসির ফোয়ারায় অধর বিস্তৃত হলো তিয়াসার।
এটা তার প্রতিদিনের পাওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ইদানীং। আর নিজ পাওয়া আদায় করে নিতে সে সদা সচেষ্ট।
এক চিলতে রোদ চোখের পাতায় পড়তেই বাজেভাবে চোখ কুচকালো ত্রয়ী। পিটপিট করে খুলতে চেষ্টা করেও রোদের তীব্রতায় আবার মুদে এলো চক্ষু।
চাপা বিরক্তি নিয়ে এক হাত বিস্তৃত করে চোখের উপরে ধরে তীব্র আলোকছটা রোধ করলো ও। এবার আস্তে আস্তে চোখ খুলতে পারলো। নড়েচড়ে উঠতে চাইতেই বুঝলো ও কারো বাহুডোরে আষ্টেপৃষ্ঠে আবদ্ধ।
খানিক চমকালো ত্রয়ী।
ঘুমের রেশ কেটে মস্তিষ্ক সজাগ হতেই ঘাড়ের কাছের তপ্ত নিঃশ্বাস আর উদরের উপর বলিষ্ঠ হাতের উপস্থিত খুব ভালোভাবেই টের পেল ও। অপ্রকৃতস্থ হয়ে উঠলো কিছুটা।
কম্পিত হৃদয়ে বারকয়েক পলক ঝাপটিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। ঘাড় ঘুরিয়ে আড় নজরে তাকাতেই বুঝলো নীল ওর ঘাড় বরাবর মুখ গুজে ঘুমোচ্ছে।
অবাক হলো ত্রয়ী। কয়েক মুহূর্ত বোকার মতো চেয়ে থেকে ঢোক গিলে দৃষ্টি ফিরালো। সন্তপর্ণে কয়েকটা বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেলে আশেপাশে চোখ বুলালতেই চোখ চড়কগাছে উঠলো ওর।
ধাতস্থ হতেই বুঝলো এটা গতরাতের সেই গেস্ট রুমটা। আর সে যে ডিভানে বসে অপেক্ষা করছিলো বর্তমানে সেখানেই শুয়ে আছে।
তাহলে কি ও কাল অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিল!
চিন্তা করেই সবিস্ময়ে মুখটা হা হয়ে গেল ত্রয়ীর। লজ্জায়, রাগে নিজের মাথা নিজেরই ঠুকতে ইচ্ছে হলো।
এতো বড়ো ভুল কীভাবে করে ফেললো ও! লোকটার জন্য অপেক্ষা না করেই কীভাবে ঘুমাতে পারলো!
অন্যরাও নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে গেছে এটা! শত হলেও তারা নিশ্চিয় ভালো চোখে দেখবে না এটা।
আর নীল!
সে তো নিশ্চিত রাগ করেছে, তাইনা!
ইতিউতি চিন্তা করে মুখটা রঙহীন হয়ে গেল ত্রয়ীর। নিজের প্রতি খুব ক্ষোভ হতে লাগলো। বেশ অনেকক্ষণ তীব্র অনুশোচনায় ভেতরে ভেতরে ছটফটালো ও। কী কী বলে লোকটার কাছে ক্ষমা চাওয়া যেতে পারে তা মনে মনে গোছাতে লাগলো।
সময়ের সাথে সাথে রোদের তীব্রতাও বাড়তে শুরু করেছে। স্পষ্টতই তার অনুপ্রবেশ আরো একধাপ এগিয়েছে। একদম নীলের গালে, গলায় এসে পড়েছে।
যা প্রখর রোদ, নির্ঘাত ঘুম ভেঙে যাবে।
ত্রয়ী তাড়াহুড়ো করলো। হাত বাড়িয়ে পর্দাটা টেনে দিলো।
বাদামি পর্দায় বাধাপ্রাপ্ত হলো সূর্যরশ্মি। প্রখর সোনালী রোদ রুখে দাঁড়িয়ে পড়লো তার আড়ালে।
ত্রয়ী ফের হাত গুটিয়ে নিলো।
লোকটার এতটা ঘনিষ্ঠে থাকায় কেমন লজ্জা হতে শুরু হয়েছে এতক্ষণে। ঘাড়ের কাছের প্রতিটা তপ্ত নিঃশ্বাস শরীরে শিহরণ বইয়ে দিচ্ছে। শ্বাস প্রশ্বাস নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো অতল সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে ও। গভীর থেকে গভীরে।
অথচ ওকে এমন একটা তোড়পাড় করা পরিস্থিতিতে ডুবিয়ে রেখে সে বেঘোরে শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে।
ত্রয়ী ঠোঁটে ঠোঁট চিপে এদিক ওদিক তাকালো। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে করতে হঠাৎ মনে হলো, ‘সময় কতো এখন?’
চিন্তায় চোখ বড়সড় করে হলো নিমিষেই।
রোদের অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক বেলা হয়ে গেছে। এগারোটা তো ছাড়িয়েছে।
এতসময় শুয়ে থাকা কি ঠিক হচ্ছে! একে তো নিয়মের বাইরে গিয়ে আগে আগে ঘুমিয়ে পড়েছিল, এখন উঠতেও বেলা বারোটা বাজিয়ে ফেলছে!
মুখটা ফ্যাকাসে হলো ত্রয়ীর।
বুঝলো, ওঠা দরকার এখন।
নীলকে কি ডাকবে!
দোটানায় পড়লো ত্রয়ী। ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দে কাটিয়ে অতঃপর না ডাকার সিদ্ধান্তই নিলো।
শুধু নিজেই উঠে যাবে ভাবলো।
ভাবনা অনুযায়ীই কাজ করলো ত্রয়ী। চাদরের ভেতরে থাকা হাতটা নীলের হাতের উপর আলতো করে রাখলো ও। ঠোঁট কামড়ে অতি সন্তর্পণে, আস্তে করে সরিয়ে রেখে দিলো হাতটা।
তারপর আলতো করে বিপরীত পাশে চেপে গিয়ে কিছুটা সরে এলো।
সন্ধানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে লোকটার ঘুম নিশ্চিত করে মুখ ফুলিয়ে হাঁফ ছাড়লো।
তবে চাদর সরিয়ে উঠে বসতে যেতেই চমকে গেল ও। চোখ হলো চড়কগাছ।
শাড়ির আঁচল! আঁচল কই গেল ওর!
ভ্যাবাচেকা খাওয়া দৃষ্টিতে কোমরের অংশ থেকে চোখ ঘুরতেই থমকে গেল ও।
নীল ঠিক একদম ওর আঁচলের ওপর ঘুমোচ্ছে!
কী লজ্জাজনক কারবার। সারারাত এভাবে আঁচল ফেলে ঘুমিয়ে ছিলো নাকি ও!
বিস্ফোরিত হলো ত্রয়ীর চোখমুখ। মুহূর্তের জন্য লজ্জার সাগরে ডুবে মরে যেতে ইচ্ছে হলো বোধহয়।
ছি ছি!
এমনটা না হলেও পারতো…!
আচমকা আরো কিছু খেয়াল হলো ত্রয়ীর। খুব দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিলো নিজের সর্বাঙ্গে।
গায়ের গহনাগাঁটি, আর শাড়ির সেফটিপিন? নেই তো! কোথায় গেল?
হা হয়ে চিন্তা করতে গিয়েই চোখ পড়লো বিছানায়। সেখানেই এগুলোকে জড়স্তুপ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে অবাক হলো। ‘ওখানে গেল কীভাবে!’
সেকেন্ড পেরুলো না। তার আগেই উত্তরটাও নিজেই পেয়ে গেল।
চোখ কপালে উঠলো। অকস্মাৎ লজ্জা নামক বলয়ে তুমুলভাবে আবিষ্ট হলো ত্রয়ী। পুরোদস্তুর কেঁপে উঠলো শরীরটা।
লালচে আভা জড়িয়ে গেল মুখটা। হাঁসফাঁস করা নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার প্রচেষ্টা চালালো। নিজেকে বুঝ দিলো।
সে এখন তার স্বামী, অন্য কেউ তো নয়! তাছাড়া সে তো খারাপ কিছু করে নি। তাইনা!
হ্যাঁ, তাই-ই তো। তাই।
মেয়েলি মন তাও লজ্জায় বুঁদ হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। নতমুখে এদিক ওদিক তাকালো ত্রয়ী। ঘেমে ওঠা মুখটা হাতের উলটো পিঠে মুছলো। নাজুক চাহনিতে লোকটার দিকে একপলক তাকালো। তারপর ঢোক গিলে কম্পিত হাত বাড়ালো শাড়ির আঁচলের অংশে। খানিক ঝুঁকে আলতো করে টেনে নিতে চাইতেই নড়েচড়ে উঠলো নীল।
চমকে উঠলো ত্রয়ী। মনেপ্রাণে লোকটার না ওঠার প্রার্থনা জানিয়েও লাভ হলো না।
ঘুম ঘুম চোখ মেলে তাকিয়েই ফেললো সে।
নিদ্রা জড়ানো সেই গভীর চোখে চোখাচোখি হতেই লাল জবার মতো রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো ত্রয়ীর মুখখানা। ধড়ফড়িয়ে দৃষ্টি সরালো ও।
কয়েক সেন্টিমিটার ব্যবধানে থাকা পুরুষটি
পূর্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়েছে বুঝে ঝট করে চাদরটা বুক অব্দি টেনে চেপে ধরলো ত্রয়ী।
নাভিশ্বাস উঠে গেল ওর। এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে কোনমতে বলল, “আমার… আমার শাড়ির উপর আপনি…। একটু উঠবেন?”
নীলের কান অব্দি কথাগুলো পৌঁছালো কিনা তা বোঝা গেল না।
কারণ সে উত্তর দিলো না। পলকও ফেললো না। শুধু চেয়ে রইলো অনিমিষ নেত্রে।
ত্রয়ী অন্যত্র দৃষ্টি ফিরিয়ে রেখেও তা বুঝলো। সাথে লোকটা এখন কী করতে পারে তাও আঁচ করতে পারলো। আর পারলো বলেই লজ্জায়, আড়ষ্টতায় মিলেমিশে একাকার হয়ে পড়লো ও।
নীল হাত বাড়ালো। কোমড় পেচিয়ে ত্রয়ীকে বুকের উপর টেনে আনতেই সলজ্জ ভঙ্গিতে গুটিশুটি মেরে লেপ্টে গেল ও। সজোরে ধকধক করা হৃদপিণ্ডটা তার গতি সমান তালে বাড়িয়ে দিলো।
“ত্রয়ী?”
নীলের আচমকা আচ্ছন্ন, ভরাট কণ্ঠের ডাকে শিউরে উঠলো ত্রয়ী। নিঃশ্বাস আটকে এলো। গায়ে কাঁটা দিলো যেনো।
এই প্রথম বোধহয় লোকটা নাম ধরে ডাকলো তাকে।
ত্রয়ী ঢোক গিললো। ধাতস্থ হয়ে অস্ফুটে বলল, “হু?”
সেকেন্ড দুয়েক নিস্তব্ধতায় কাটলো। নীল কোমরের উপরে রাখা হাতটা ত্রয়ীর চুলের ভাঁজে গলিয়ে দিয়ে একই স্বরে বলল, “এভাবে কাঁপছো কেন তুমি?”
ত্রয়ী থতমত খেল। ভদ্রতার খাতিরে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অস্বীকার করলো, “ক…কই? না তো।”
“কাঁপছো না?” নিঃশব্দে হেসে মৃদুস্বরে ফের প্রশ্ন ছুড়লো নীল।
উৎকট লজ্জায় চোখমুখ কুচকে ফেললো ত্রয়ী।
ইস্, লোকটা বুঝে গেল! ধুর!
টুকটুকে গালে নিশ্চুপ রইলো ও।
সে কি ইচ্ছে করে কাঁপছে নাকি! সে তো কাঁপতে চায় না। কিন্তু এভাবে আস্ত একটা পুরুষ মানুষের সংস্পর্শে আসলে সে ঘাবড়াবে না?
তার কি এসবে অভ্যেস আছে নাকি!
“তুমি এখনো আমাকে ভয় পাও?” ফিচেল গলায় জিগ্যেস করলো নীল।
ত্রয়ী টু শব্দ করলো না। নীল উত্তরের আশাও করলো না। কারণ বলতে গেলে সে এখন আর কোনো কথাই বলবে না। এটাই ওর লাজুক বউয়ের স্বভাবসুলভ নিয়ম।
নীল মুচকি হাসলো। হুট করে গড়িয়ে মেয়েটাকে পাশে শুইয়ে দিতেই চোখ ছানাবড়া হলো ত্রয়ীর।
নীল ওর কাছাকাছি এসে ঠোঁট কামড়ে ভ্রু বাঁকিয়ে বলল, “আমাকে রেখে ঘুমিয়ে পড়লা কীভাবে গতরাতে?”
ত্রয়ীর টনক নড়লো। মুখটা একটু মলিন হলো আপনাআপনি। অপরাধীর মতো বিড়বিড়ানো স্বরে বলল, “ভুল হয়ে গেছে। আসলে আমি ঘুমাতে চাই নি। কীভাবে করে যেনো…!”
ত্রয়ী চুপ করলো। এসব যদি অযুহাত মনে করে লোকটা? বিশ্বাস না করে?
ওর ভাবনা মিথ্যে হলো। নীল ওর কপালের চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলল, “ঠিক আছে, অত ভেব না।”
ত্রয়ী অবাক হলো। পরক্ষণেই ঠোঁটে সুক্ষ্ম হাসি ফুটলো ওর। চোখ নামিয়ে নিলো।
নীল নির্বিঘ্নে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলো ত্রয়ীকে। মোহাবিষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে দেখতে দরজায় কড়া নাড়লো কেউ।
চমকে উঠলো দুজনেই।
দরজার করাঘাত বৃদ্ধি পেল। সাথে ভেসে এলো চিকন, মেয়েলি কণ্ঠস্বর। ফিচেল গলার বলল, “উঠবা না আজ তোমরা? শুধু বাসরই হবে! বউভাত হবে না?”
বলেই হেসে উঠলো ওরা।
ত্রয়ী হকচকালো। চটপট বাদিকে ঠেস দেওয়া নীলের হাতটা সরিয়ে উঠে বসে শাড়ির আঁচল টেনেটুনে নিলো।
নীলও উঠে বসলো। কুচকানো কপালে তাকালো দরজার দিকে।
ফিরে ত্রয়ীর দিকে একপলক তাকিয়ে চোখাচোখি হলো।
ত্রয়ী চোখ নামাতেই অনিচ্ছায় মগ্ন নীল দরজা খুলতে গেল।
ত্রয়ী ডিভান থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ততক্ষণে। এলভিও বারান্দা থেকে রুমে ঢুকে এসেছে।
নীল বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতেই ওদের সবাই ভদ্র ভান ধরে একটু চুপে গেল। ঠোঁটে মিটিমিটি হাসি ঝুলিয়ে ত্রয়ীর দিকে তাকালো একপলক। সাথে সাথে হাসি আরো প্রশস্ত হলো ওদের।
ত্রয়ী অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। ওরা কীসের জন্য হাসছে বুঝতে পেরে রক্তিম হয়ে এলো মুখটা।
একজন বলল, “বাসর ঘর পছন্দ হয়নি?”
নীল চোখ দিয়ে শাসাতেই হেসে উঠলো ওরা।
শাড়ি-ব্লাউজ সমেত গহনাগাঁটি বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এগুলো পরে নিতে বলো তোমার বউকে। আর তুমিও ভদ্র ছেলের মতো তৈরী হয়ে যাও। একটু পর নিচে অনুষ্ঠান।”
বলেই হাসিঠাট্টা করতে করতে কেটে পড়লো তারা। সাথে এলভিও বেরিয়ে গেল। বেচারার খিদে পেয়ে গেছে এতক্ষণে।
নীল শাড়িটার দিকে একপলক তাকিয়ে কিছু ভাবলো। অতঃপর দুষ্টুমি মাখা হাসি হেসে ফের দরজা বন্ধ করে দিলো।
শাড়িটা ত্রয়ীর কাছে এগিয়ে দিতেই চট করে নিলো ত্রয়ী। পরার উদ্দেশ্য এদিক ওদিক তাকালো। তবে রুমজুরে কোনো ওয়াশরুম দেখলো না বলে খানিক বিপদে পড়ে গেল। ইতস্তত করে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আড়চোখে তাকালো নীলের দিকে।
সেও ঠোঁটের কোণে হেসে, স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল বলেই চোখে চোখ পড়লো। ত্রয়ী দৃষ্টি ঘুরালো। আমতাআমতা করে বলল, “আমি শাড়ি পরবো।”
“পরো।” দায়সারা গোছে উত্তর আসতেই ভ্যাবাচেকা খেল ত্রয়ী।
সময় নিয়ে ঠেলে ঠেলে বলল, “একটু বাইরে যাবেন?”
“আমি তাকাবোনা। তুমি পরো।”
চমকে উঠলো ত্রয়ী। বড়ো বড়ো চোখ মেলে নীলের দিকে তাকাতেই সে সরসভাবে বলল, “তুমি বিশ্বাস করো না আমাকে?”
ত্রয়ীর মুখটা শুকিয়ে গেল। ঢোঁক গিলে জমে যাওয়া দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ও। অসার হয়ে উঠলো হাত পা।
নীল ভ্রু তুললো। বিছানায় বসে পায়ের উপর পা তুলে নাটুকে ভদ্রতায় আরেকবার শুধালো, “করো না বিশ্বাস?”
ত্রয়ীর চোখের পাতা কেঁপে উঠলো। উক্ত প্রশ্নের উত্তরে ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে চেয়েও পারলো না। দৃষ্টি নামালো। হাতের শাড়িটা মুঠোয় আঁকড়ে অবনত মস্তকে দিকভ্রান্ত হয়ে নজর ঘুরাতে লাগলো মেঝেতে। মারাত্মক মুশকিলে পড়লো হয়তো। এভাবে কীকরে শাড়ি বদলাবে ও? লোকটার চোখের সামনে!
অসম্ভব!
যতই বলুক তাকাবে না, ত্রয়ী তো জানে!
এতোদিনে তার নাড়িনক্ষত্র সব জানা হয়ে গেছে ওর।
ত্রয়ী নড়লো না। স্বস্থানে দাঁড়িয়ে ব্যগ্র চোখের দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলো মেঝের পানে। ভাবলো নীল হয়তো যাবে।
কিন্তু তা আর হলো না।
কতক মিনিট পেরিয়েও যখন সে নড়লো না তখন যা বোঝার বুঝে গেল ত্রয়ী। শীতল আবহাওয়াতেও শরীর ঘেমে যেতে লাগলো।
ঢোক গিলে মিনমিনে আওয়াজে কোনমতে বলল, “আপনি একটু যান না!”
“তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না তারমানে?”
“ন..না। আপনি একটু যান প্লিজ।” এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে চটপট উত্তর দিলো ত্রয়ী। সে আসলেই বিশ্বাস করে না। একটুও করে না।
নীল হতাশ ভঙ্গিতে নিঃশ্বাস ফেললো। উঠে ত্রয়ীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি কিন্তু তোমার সামনেই চেঞ্জ করতে পারবো। কারণ আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। দেখবা?”
চোখ বড়োসড়ো হলো ত্রয়ীর। চকিতে তাকালো নীলের দিকে।
একটু সরে গিয়ে ভড়কানো কণ্ঠে বলল, “একদম না।”
নীল নীরব হাসলো। ফিচেল গলায় বলল, “এতো লজ্জা পাও কেন? আর তাছাড়া কাল তো সব আমিই খুললাম। মানে তোমার ওই শাড়ির পিন। অবশ্য তুমি চাইলে তুমিই খুলেটুলে অপেক্ষা করতে পারতা। কিন্তু তা করো নি! কেন? তুমি কি চাচ্ছিলা যে আমি এসে তোমার…।”
“মোটেও না।” বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে বলে উঠলো ত্রয়ী।
“তো?” ভ্রু উঁচিয়ে নামালো নীল।
ত্রয়ী ঠোঁট নাড়িয়ে কারণটা বলতে গিয়েও চুপ করে গেল। গলায় মাঝখানে এসে আটকে গেল শব্দগুলো।
কথারা যে কীসব বলে-টলে মানা করে গেছিলো সেটা কী করে বলবে ও!
কিন্তু না বললে তো আরেক প্যাচে প্যাচিয়ে ফেলবে লোকটা।
উফ! এতো অভদ্র কেউ হয়!
করুণ ভাবে চোখ নামিয়ে ফেললো ত্রয়ী। হার মেনে নিলো হয়তো।
তবে সে যাত্রায় বেঁচে গেল দরজায় টোকা পড়ায়। অহেতুক সব কথাবার্তা চাপা পড়ে গেল কথার কণ্ঠস্বরে।
ত্রয়ী হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেনো। শাড়ি রেখে নিজ থেকেই এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো এবার।
মুখোমুখি হতেই কথা মেয়েটা ভ্রু উঁচালো। কটাক্ষ করে বলল, “ভাবি, এটাতে তো ওয়াশরুমই নেই! ফ্রেশ হবা কী করে! চলো দেখি আমার সাথে চলো। শাড়ি টারি নিয়ে আসো। তাড়াতাড়ি। সবাই এসে গেছে।”
তাড়া দিয়ে বলতে বলতে বেড়িয়ে গেল কথা।
ত্রয়ী বাধ্য মেয়ের মতো ওর পিছু পিছু বেরুতে গিয়েও থেমে দাঁড়ালো। মনে পড়তেই রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিতে ফের ঘরে এলো।
জড়সড়ভাবের সাথে বিছানার কাছে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে হাতে তুলে নীলের দিকে আড়চোখে তাকালো একপলক।
তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে যেতে উদ্যত হতেই হাতটা টেনে ধরলো নীল।
চকিত ভঙ্গিতে ঘুরে তাকালো ত্রয়ী।
চোখাচোখি হতেই নীল মুচকি হেসে বলল, “আজ রাতে আবার ঘুমিয়ে পড়ো না যেনো।”
শীতল সমীরণে ঘুম হালকা হলো ক্যান্ডেলের। গায়ের চাদরটা টেনেটুনে ধীরে ধীরে চোখ মেললো ও। ঘুম ঘুম আবেশের ঘোলাটে দৃষ্টি স্বচ্ছ হতেই পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
আর সেই তাকানোতেই যেনো সর্বনাশ হলো। সর্বগ্রাসী নির্লজ্জ একজোড়া চোখের সাথে দৃষ্টি বিনিময় হয়ে গেল না চাইতেও।
ক্যান্ডেল ভারি অপ্রস্তুত হলো। সজাগ মন মস্তিষ্কে গতরাতের অতিব ঘনিষ্ঠ মুহূর্তগুলো ভেসে উঠতেই অনুরণিত হলো চোখের তারা। কঠোরভাবে অনুভূতি প্রকাশে অনিচ্ছুক মেয়েলি মনটাও গুটিয়ে গেল লজ্জায়৷ রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো গাল দুটো।
দৃষ্টি সরিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো ক্যান্ডেল। অনতিকাল বিলম্বে গায়ের চাদরটায় নিজেকে প্যাকেট করে নিয়ে নেমে গেল বিছানা ছেড়ে।
তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুমে ঢুকে ধড়াম করে বন্ধ করে দিলো দরজা।
হাঁপরের মতো নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে দরজায় পিঠ হেলিয়ে দিলো। হাঁফ ছেড়ে তাকালো সামনের আয়নায়। নিজের প্রতিবিম্বের দিকে।
ভ্রু মৃদু কুঞ্চিত হলো। অবিচল দৃষ্টি গিয়ে আটকালো গলদেশে।
ক্যান্ডেলের চোখের পাতার কম্পিত ভাবটা বাড়লো। ঘনঘন পলক ঝাপটালো ও। চাদরটা গলা থেকে আরেকটু নিচে নামালো।
কাধের, অতঃপর বুকের কাছের প্রণয়ের চিহ্নে নজর পড়তেই শরীর বিবশ হয়ে এলো।
আর তাকিয়ে থাকতে পারলো না। সলজ্জে চোখদু’টি সরিয়ে ফেললো ও। ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি ঠাঁই পেতেই বিড়বিড়িয়ে আওড়ালো, “Pervert!”
(চলবে…)