কনে বদল পর্ব ৪
“আপনার সাথে চারু কখনোই মোবাইলে কথা বলেনি।”
“কী বলেন! আমি তো ওর সাথে মোবাইল কথা বলেছি।”
“না, ওটা চারু ছিল না।”
“তাহলে কে ছিল!”
“আমি, আমিই আপনার সাথে কথা বলেছিলাম।”
নীরুর কথা শুনে কেমন বিরক্ত লাগল! কী শুনছি এ সব। হুবু বোনের জামাইয়ের সাথে শালি কথা বলতেই পারে। কিন্তু চারু পরিচয়ে কেন! ভাবতেই কেমন লজ্জাও লাগছে! ” পরিচয় বলেননি তো কখনো? “
“চারুই আমাকে আপনার নাম্বার দিয়ে বলেছিল একটু বাজিয়ে দেখ তো। আমার ইচ্ছে ছিল না চারু জোর করত। আপনার সাথে বলা কথা চারু পাশে বসে শুনত কখনো না থাকলে ওকে বলতে হতো।”
“তারমানে কী চারু শুরুতেই বিয়েতে রাজি ছিল না?”
“না,না, তেমনটা তো মনে হয়নি, বরং দারুণ খুশি ছিল। বিয়ের শপিং করেছে আমাকে নিয়ে। বিয়ে নিয়ে কত পরিকল্পনা ছিল ওর। শেষে এসে কী এমন হলো জানি না!
বিয়ের আগেরদিন সকালে তাড়াহুড়া করে বের হলো। জিজ্ঞেস করায় বলল, “জরুরি একটা কাজ আছে।”
দুপুর হওয়ার পর যখন এলো না। বাসার চিন্তা করছে! এ সময়ে ওর লেখা চিরকুট পেল বাবা। চিরকুট পেয়ে ওনার অবস্থা খারাপ! আগামীকাল বিয়ে সব আত্মীয় স্বজনকে বলা হয়েছে! সব আয়োজন সম্পুর্ন। একজন মধ্যেবৃত্ত বাবার কাছে মান সম্মান জীবনের চেয়ে বেশি।”
“আপনি তো আমায় বলতে পারতেন?”
“আমি কী করে জানব বলুন আপনাকে জানানো হয়নি!”
“বাবা তো আপনার মামাকে সব খুলে বলেছেন। আপনার মামাই নাকি এ প্রস্তাব দিয়েছেন। এমনটা বাবা আমাকে জানিয়েছেন।”
“তা-ই নাকি? মামা সব জানত!” এর কথা যদি সত্যি হয়? তাহলে এ মেয়ের তো কোনো দোষ নেই! ওর বাবারই বা কী দোষ দেয়া যায়? মামা কেন আমাকে জানাল না? বিয়ে ভেঙে গেলে আবার বিয়ে করতে রাজি হব না। মামা এমন চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন! না-কি এ মেয়ে মিথ্যা বলছে? অবশ্য মামাকে জিজ্ঞেস করলেও সত্যটা জানা কঠিন!
কারণ মামা সাদামাটা মানুষ। শুনে হয়ত হেসে বলবে, “বিয়ে শাদি আল্লাহর হাতে, এখানে আমাদের হাত নাই!”
জিরি জিরি বৃষ্টি পড়ছে। দোলনায় বসে আছি দুজনে। নীরু কোনো কথা বলছে না। নীরবে দুজনে হালকা বৃষ্টিতে ভিজছি।
“রুমে যান বৃষ্টি জোরে আসবে।
নীরু আমার দিকে তাকাল। নীরুর চোখে বৃষ্টির ফোটা চিকচিক করছে। নীরু কেঁদেছে? কাঁদলেও এখন বৃষ্টিতে তা বুঝার উপায় নেই!
“আপনিও তো যাচ্ছেন না?”
চলেন। উঠে দাঁড়ালাম। নীরুও আমায় দেখে উঠে পড়ল। রুমের দিকে যাচ্ছি আর ভাবছি, চারু আজ এখানে থাকলে কী আমরা রুমে যেতাম? নাকি বৃষ্টি স্নানে এমন রাতটাকে স্মরণ করে রাখতাম!
রুমে ঢুকার সাথে সাথে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। ছাদের রুমটাতে আ্যটাচ বাথরুম আছে। রুমে একটা খাট, একটা ইজিচেয়ার আছে। একটা ছোটো টেবিল। টেবিলে একটা ফ্লাক্স ভর্তি কফি, পাশেই কিছু পিঠা, বিস্কুট, এক প্যাকেট চানাচুর রাখা। এগুলো দেখে একটু হাসি পেল!
“আপনি শুয়ে পড়েন। রাত খুব বেশি বাকি নেই।”
“আপনার বুঝি ঘুম পায়নি?”
“সত্যি পায়নি।” ইজিচেয়ারে বসে পড়লাম।
“আমার ওপরে এখনো রেগে আছেন?
কিছুই বললাম না। কী বলার আছে? সব মেনে নিয়েছি তা নয়। সহজে মানতেও পারছি না। রাগতেও পারছি না! কী করব ঠিক বুঝতে পারছি না।
“আপনি বরং শুয়ে পড়েন। আমার ঘুম আসবে না!”
আঃ! আপনি খাটে শুয়ে পড়েন। আমার এ চেয়ারে চলে যাবে।
ঘুম ভাঙ্গলো সূর্যের আলো চোখে পড়ায়। জানালার ফাঁকা দিয়ে সূর্যের আলো এসে চোখে লাগছে। চোখ খুলে দেখি নীরু গুটিশুটি মেরে বাচ্চাদের ঘুমিয়ে আছে।
রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। আজ নীরুদের বাড়িতে যাওয়ার কথা। বিয়ের পরেরদিন বউ নিয়ে নাকি যেতে হয়। ও বাড়িতে আর যেতে ইচ্ছে করছে না।
সকালে সবাই নাস্তা করতে বসেছে। মামা -মামী, ফুফা-ফুফী। মায়ের সাথে নীরু সবাইকে খাবার পরিবেশন করছে। নীরুকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে না। গতকাল আমাদের কী হয়েছে! মামা তো মহা খুশি! বলছে,”বউমা তোমার হাতের শিঙারার স্বাদ কিন্তু এখনো ভুলিনি!”
নীরু হাসছে!
মামী আমাদের হানিমুনে যাওয়ার কথা আলাপ করছে! মামা নাকি কক্সবাজারের টিকেট কেটে রেখেছে!
নীরু কে নিয়ে মা কোনো কথা বলছে না! মাকে খুশিই মনে হচ্ছে! নীরু সকালে এসেই কেমন মায়ের কাজে সাহায্য করছে! মনে হচ্ছ সব স্বাভাবিক! মেয়েরা কত দ্রুত নিজেকে বদল করতে পারে! নাকি মানিয়ে নিতে পারে সব? এই নীরুকে দেখে সবাই কেমন খুশি!
আমার কেমন কেমন লাগছে! এমন তো না চারুর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল। মোবাইলে যত কথা হয়েছে তাও-নাকি নীরুই বলেছে! তবুও কেন এমন লাগে! বুঝতে পারছি না। চারুর কথা জানতে ইচ্ছে করছে! কেন জানি মনে হচ্ছে চারুর কোনো গোপন কথা আছে!
মায়ের কথায় শেষমেশ নীরুদের বাড়ি যাচ্ছি। ও আর আমি পাশাপাশি বসে আছি যাচ্ছি একই গাড়িতে। আমাদের সাথে ছোটোবোন রুজিনাও যাচ্ছে। রুজিনার ধারনা নীরুকে আমার পছন্দ হয়েছে তাই আমি কোনো কিছু বলিনি। অবশ্য রুজিনা আমার সাথে এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। মামা কি সবাইকে ম্যানেজ করে ফেলল! মা তো কোনো কথা বলল না! আমি কয়েকবার বলার চেষ্টা করেছিলাম ভিন্ন কথা বলে এড়িয়ে গেছে!
মা তো তার ছেলের বউ পেলেই খুশি! সে চারু হোক বা নীরু তাতে মায়ের কোনো সমস্যা নেই। সবাই খুশি শুধু আমি ছাড়া! আর নীরু সেকি খুশি? নাকি ঠিক আমার মতো অবস্থা তারও! ঠিক বুঝতে পারছি না। রুজিনার সাথে ভালোই কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে!
আমার সাথে চোখাচোখি হলো কয়েকবার আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। আমি আছি একটা দ্বিধার মধ্যে। সব কিছু শুনার পর নীরুর ওপর রাগ করতে পারছি না। আবার ওর মতো মেনে নিতেও পারছি না। সত্যি মেয়েরা যা পারে আমরা তা কল্পনা করতেও পারি না। একটা কত সহজে বাবার কথায় এমন বিয়ে করে ফেলতে পারে! আমি হলে কী এমনটা মানতে পারতাম? মনে হয় পারতাম না।
চলবে–
® নাবিল মাহমুদ