কনে বদল পর্ব ৬
নীরুকে নিয়ে বাড়িতে এসেছি। মামা চাচ্ছেন আমরা হানিমুনে যাই। কক্সবাজারের বিমানের টিকেট কেটে রখেছেন শুধু তাই নয় কক্সবাজারে হোটেল বুকিং দিয়েছেন!
আমার যেতে ইচ্ছে করছে না! ইচ্ছে করছে অফিসে গিয়ে কাজে ডুব দিই। কিন্তু সেটা মনে হয় সম্ভব না। আমার মা তা হতে দিবে বলে মনে হয় না। মায়ের কথা আমি ফেলতে পারব না।
আমার মা নাহার বেগম একজন ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ। সাধারনত মেয়েরা খুব ইমোশনাল হয়। কিন্তু আমার মা খুবই ঠান্ডা মানুষ। আমার মাকে আমি কখনো রাগতে দেখিনি। সবার সাথে হেসে কথা বলেন।
মায়ের মাঝে কি যেন একটা আছে। এমন হেসে কথা বলা মানুষটার কথা অমান্য করার সাহস কারো হয় না! ভুল করলেও মা কারো ওপর রেগে যান না! আবার খুব সহজে ক্ষমা করে দেন তাও না। ভুল করলে সাজা দিবেন সেটা হাসি মুখে!
বাবা মারা যাওয়ার পর পুরো পরিবার মা একা সামলিয়েছে। অনেক মহিলা স্বামীর ব্যবসা চালাতে পারেন না। আমার মা বাবার ব্যবসা শুধু চালিয়েছেন তা নয় বরং বাবার চেয়ে অনেক উন্নতি করেছে।
সকালে শুয়ে আছি একা। নীরু খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে যায়। মা আসল আমার রুমে। বিয়ের আগে প্রতিদিন মা আমার রুমে আসত। বিয়ের ঝামেলায় মা একয়দিন আসেনি! বিয়ে নিয়ে মায়ের সাথে কোনো কথাও হয়নি এখনো, বিশেষ করে নীরুর ব্যাপারটা। মামাই মনে হয় মা কে সব বলেছেন।
মা এসে আমার খাটে বসে বলল,” কিরে এখনো ঘুমাচ্ছিস?”
আমি উঠে বসতে চাইলাম মা হাতের ইশারায় নিষেধ করল। মা আমার মাথায় বুলাতে বুলাতে বলল,” কেমন লাগল নীরুদের বাড়ি?”
“ভালোই মা! নীরুর বাবা-মা খুব ভালো মানুষ! “
মা একটু হেসে বললেন, “আর নীরু?”
আমি কিছুই বললাম না। একটু শুধু হাসলাম।
“মেয়েটা খুব লক্ষী, আমার তো খুব পছন্দ হয়েছে! “
আমি মায়ের মুখের দিকে তাকালাম মায়ের মুখে কেমন তৃপ্তির হাসি।
“হ্যাঁ রে তোর কি এখনো ওই মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে? “
বুঝলাম মা চারুর কথা বলছে।
“কি জানি নাম–? যাকে তুই প্রথমদিন দেখেছিলি।”
“চারু মা।”
“হ্যাঁ চারু। চারু মেয়েটাকে তো আমার দায়িত্বজ্ঞানহীন মনে হচ্ছে! মাম-মামী কে না হয় পছন্দের কথা বলতে পারেনি। নীরুকে বলতে পারত? তোকে জানালেও তো হতো। তা না মামাকে বিপদে ফেলে চম্পট মারল!
এমন মেয়ে আমার ছেলের বউ হয়নি ভালোই হয়েছে! আল্লাহ যা করে মানুষের মঙ্গলের জন্যই করেন।
তারচেয়ে নীরু মেয়েটা কত ভালো! কয়দিনে কেমন সবার সাথে মিশে গেছে।
মা দেখি নীরুকে সত্যি সত্যি পছন্দ করে ফেলেছে! এ মেয়ে এত অল্প সময়ে মায়ের মন জয় করল কী করে!
“তোদের তো রাতে ফ্লাইট? নীরুকে নিয়ে একটু বাহিরে যা। মেয়েটার টুকটাক কেনাকাটা থাকতে পারে।”
“মা রুবিনার সাথে পাঠিয়ে দাও।”
“একি কথা! নতুন বউ রুবিনার সাথে কেন যাবে? যা দ্রুত রেডি হ্।”
রেডি হওয়ার তাড়া দিয়ে মা চলে গেল। উঠে হাত-মুখ ধুয়ে সাদা একটা টিশার্ট আর হালকা নীল রংয়া প্যান্ট পরে বের হলাম। নীরু সাদা-কালো একটা শাড়ি পরেছে। নীরুকে এই প্রথম একটু সময় নিয়ে দেখলাম। মেয়েটার চেহারায় কেমন আলাদা একটা আকর্ষন আছে!
নীরু রুবিনা কে সাথে নিয়ে বেড়িয়েছে। একদিক থেকে ভালোই হলো। মেয়েদের শপিংয়ের সাথী হওয়া বড্ড কষ্টকর!
গাড়ি আমিই চালাচ্ছি নীরু আর রুবিনা বসেছে পিছনের সিটে। আমরা যাচ্ছি বসুন্ধরা শপিংমলে। শ্যামলি থেকে জ্যাম না থাকলে দশ মিনিটের পথ।
নীরু বেশ জমিয়ে গল্প করছে রুবিনার সাথে, মাঝে মাঝে দুজনেই খিলখিল করে হেসে উঠছে। কী এমন মজার গল্প হচ্ছে কে জানে? শুনতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। লুকিং গ্লাসে দেখলাম হাসলে নীরুকে সুন্দরই লাগে!
বসুন্ধরা সিটিতে ঢুকলাম। নীরু কি সব কেনাকাটা করল আমি শুধু বিল দিলাম। আর তেমন কিছু খেয়াল করিনি! বেশ কয়েকবার দুজনের চোখাচোখি হয়েছে, নীরু মিষ্টি করে হাসি দিয়েছে!
শপিং শেষে রুবিনা বায়না ধরল আইসক্রিম খাবে। আইসক্রিম খাওয়ার জন্য আমরা টপ ফ্লোরে গেলাম।
নীরু আর রুবিনা কী সব আইসক্রিম অর্ডার করল। আমারাও আইসক্রিম খেতে ভালো লাগে তবে নামটাম ভালো জানি না। ছোটোবেলা কোণ আইসক্রিমটা খুব ভালো লাগত। এখানে খোলা আইসক্রিম বাটিতে পরিবেশন করে।
আইসক্রিমটা খেতে খারাপ না। খুব মজা করে খাচ্ছে নীরু, আড় চোখে দেখলাম। রুবিনা আমার কাছে ঘেঁষে ফিসফিস করে বলল, “ভাইয়া ভাবিটা কিন্তু বেশ!”
আমি একটু হাসলাম। এ সময় দেখি নীরু আমার দিকে চেয়ে আছে। আমার একটু কেমন জানি লাগল! দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম অন্য দিকে। নীরুর দিকে তাকাতে কেমন জানি লাগছে! ঠিক বুঝতে পারছি না।
গাড়িতে আসার মতোই রুবিনা আর নীরু পিছনে বসল। রুবিনা বলল, “ভাবি তুমি সামনে ভাইয়ার পাশে বসো না।”
আমি লুকিং গ্লাসে দেখছি। নীরু একটু হাসল কিন্তু সামনে এলো না। আচ্ছা ও সামনে আসলে কী আমার ভালো লাগত? মনে হয় খারাপ লাগত না।
আমি ভ্রমণে গেলে মা সবকিছু গুছিয়ে দেয়। অনেক দরকারি জিনিস নিতে আমি ভুলে যাই। মা কেমন করে যেন সব কিছু ঠিক দিয়ে দেয়। এটা যেহেতু নীরু আর আমার একান্ত টুর তাই মা বোধহয় কোনো কিছু বলেনি। নীরুই সব কিছু নিয়েছে ওর মতো করে।
কক্সবাজার পৌঁছাতে রাত হয়ে গেছে। বিমানে খুব বেশি সময় লাগেনি। পুরোটা পথে নীরু তেমন কথা বলেনি। আমিও যে কথা বলার চেষ্টা করেছি তাও না। টুকটাক দুয়েকটা কথা হয়েছে শুধু।
হোটেল সিগালে আমাদের বুকিং ছিল। হোটেলটা বেশ সুন্দর! চেক ইন করে রুমে ঢুকলাম। সমুদ্রের পাশেই রুম। জানালা দিয়ে সমুদ্র দেখা যায়।
রুমটা অনেক বড়ো, একটা কিং সাইজের বেড, পাশে বসার একটা সোফা আছে। বারান্দায় বসার একটা ইজি চেয়ার আছে। বারান্দায় দাঁড়ালে রাতের বেলা সমুদ্রের গর্জন শুনা যায়। রুমটা মনে হয় নীরুর পছন্দ হয়েছে!
সত্যি বলতে আমার কেমন লজ্জা লাগছে! এ মেয়েটাকে নিয়ে হানিমুনে চলে এসেছি, অথচ এর সাথে এখনো ভালো করে আলাপই হয়নি! না নীরুকে এখন খারাপ লাগছে না। বরং একটু একটু ভালো লাগছে!
রুমে ঢুকে নীরু আমাকে হাত-মুখ ধুয়ার কথা বলল। আমি বললাম, “লেডিস ফাস্ট। আপনি আগে সেরে আসুন।”
আমি বারান্দায় এসে বসলাম। আকাশে চাঁদ নেই, মেঘলা আকাশ। এখান থেকে আবছা সমুদ্র দেখা যায়। একটা মৃদু বাতাস গায়ে লাগছে। একটু একটু ঠান্ডা লাগছে।
অনেকটা সময় কাটিয়ে নীরু বেরিয়ে এলো। গোসল করা নীরু কে খুব স্নিগ্ধ লাগছে! মেয়েদের সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে গোসল করার পর। পানি সব ক্লানি,ক্লেশ দুর করে দেয়। কোথায় যেন পড়েছিলাম কথাটা মনে করতে পারছি না। সত্যি নীরুকে খুব সুন্দর লাগছে!
“রাতের খাবার কি রুমে দিতে বলব নাকি গিয়ে খাবেন?”
“রুমে দিতে বলেন।”
“আমি গোসল সেরে আসি ততক্ষণে আপনিই অর্ডার করে দিন। আপনার পছন্দ মতো কেমন।”
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি নীরু বারান্দায় বসে আছে। খাবার অর্ডার করেছে কি-না বুঝতে পারছি না।
কিছুক্ষন পরে খাবার দিয়ে গেল। ভাত সামুদ্রিক মাছ, আর সবজি। মেয়েটা দায়িত্ব নিতে জানে। অন্য মেয়ে হলে বলত, “আপনি বলেন।” অর্ডার না করে অপেক্ষায় বসে থাকত! কিন্তু নীরু নিজের মতো করে অর্ডার করেছে। দুজনে অল্প করে খেয়ে নিলাম। মাছটা খেতে খুব ভালো লেগেছে!
“এখন কি বিচে যাবেন?” নীরু জিজ্ঞেস করল।
“না, একটু বিশ্রাম নিয়ে পরে যাই।”
আমি খাটে শুয়ে পড়লাম। একটু বিশ্রাম নিতে গিয়ে কখন গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছি বলতে পারব না। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। উঠে দেখি নীরু রুমে নেই! ভাবলাম হয়ত বারান্দায় বসে আছে। বারান্দায় গিয়ে দেখলাম সেখানেও নেই! কোথায় গেল এত রাতে!
চলবে–
® নাবিল মাহমুদ