#পঞ্চম_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)
বেকার বয়ফ্রেন্ডকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ের জন্য চাপ দিলাম, একটু কনফিউশান এ ছিলাম যে ও রাজি হবে কি না? কারণ ভাই-বোনদের মধ্যে ও হচ্ছে মেঝো ওর বড় ভাই বিয়ে করে নি, ছোট বোনকেও বিয়ে দেওয়া বাকি সরকারি চাকরি করা বাবা আর গৃহীনি মা, এই মধ্যবিত্ত পরের একজন মানুষই উপার্যন করতো। সবকিছু মিলে আমি ভাবনায় ছিলাম ইরাদ আমাকে কি বিয়ে করবে? নাকি বিয়ের কথা বলার পরে ও সব ভুলে যাবে অন্য ছেলেদের মতো। তাকে আমি তিনদিন সময় দিয়েছিলাম ভাবার জন্য। এই তিনদিন কেটে যাওয়ার পরে আমি আমার মোবাইল অন করি,
মোবাইল অন করার সাথে সাথে দেখি তার অনেকগুলো মেসেজ,, অনেকগুলো ভয়েজ মেসেজ। বুঝতে পারলাম এই কয়দিন সে খুব অস্থির ছিল আমার জন্য। আমিও একটু ভাব নিয়ে তাকে রিপ্লাই করলাম না। ঠিক পাঁচ মিনিট পরে দেখলাম সে আমাকে কল করেছে।
– হ্যালো মেঘা কেমন আছো? তুমি কেন ফোন বন্ধ করে রেখেছিলে তুমি জানো আমি কত টেনশন করছিলাম তুমি কতদিন ক্লাসেও আসোনি আমার জান বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম? তুমি কি জানো না তোমাকে না দেখলে আমি অস্থির হয়ে যাই?
আমি শুধু নীরব হয়েই তার কথাগুলো শুনছিলাম
-মেঘা তুমি এখনো কথা বলছো না, উত্তর তো দিবে কিছু?
-আমি তোমাকে তিনদিন ভাবার সময় দিয়েছিলাম বিয়ে করবে আমাকে?
ইরাদ বেশ কিছুখন চুপ করে রইলো।
এবং এরপর বলল
-হ্যাঁ ঠিক আছে বিয়ে করব।
আমার খুশি আর কে দেখে? আমি অনেক খুশি হয়ে গেলাম।
পরদিন ক্লাস শেষে আমি ইরাদকে বললাম
-চলো।
ইরদবললো
-কোথায়?
-কোথায় আবার কাজী অফিসে?
-কাজী অফিসে কেন যাব?
-বিয়ে করার জন্য.
তুমি তো রাত্রে বললে যে বিয়ে করবে, এখন ভুলে গিয়েছো?
-না, আমি ভুলে যাইনি কিন্তু এভাবে তো চুপ করে বিয়ে করা যায় না, তাই না? বিয়ে করতে হলে তো অবশ্যই বাসায় সবাইকে জানাতে হবে।
-আমি এতকিছু জানি না আমি বিয়ে করবো এখন মানে এখনই করব।
-কিন্তু তোমার বাসা আমার বাসায় কাউকে তো কিছু জানানো হয়নি, এভাবে নিজেরা ডিসিশন নিলে ঠিক না।
-কেন প্রেম করার সময় যে মা বাবাকে জিজ্ঞেস করে প্রেম করেছিলাম আমরা?
ইরাদ নিশ্চুপ।
-হ্যাঁ, যেহেতু আমরা প্রেম করার সময় কালকে জিজ্ঞেস করিনি তাই আমার মনে হয় না এখন বিয়ে করার সময় সবাইকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
-মেঘা এটা ঠিক হবে না।
তোমার পরিবার আমাকে নাও মেনে নিতে পারে তুমি খুব ধনী, বিয়ে করার আগে অন্তত একবার আমার বাসায় এসে সবাইকে দেখে নাও, তুমি অ্যাডজাস্ট করতে পারবে কিনা আর তোমার পরিবারের ও আমাকে দেখার একটা বিষয় আছে যত যাই হোক তুমি তাদের মেয়ে।
-দেখাশুনা পরেও হবে আর তাছাড়া আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই আমি তোমার সাথে গাছতলায়ও থাকতে পারবো।
-না, জীবনটা সহজ না তুমি আর একবার ভাবো।
-তারমানে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না?
-আমি তো সেটা বলিনি আমিতো তোমাকে অবশ্যই বিয়ে করতে চাই মেঘ আমিতো তোমাকে অনেক ভালবাসি কিন্তু তারপরও আমি তোমার জন্য বলছি।
-আমার জন্য ভাবতে হবে না এখন জলদি চলো বিয়ে করতে।
আমার চাপে পড়েই ও আমাকে বিয়ে করে এবং এবং আমাদের দুজন বন্ধু হয়েছিলো সাক্ষী,
বাড়ি যাবার পালা
-আচ্ছা, ইরাদ শুনো তুমি আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে যাও।
ও আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-আমি তোমাকে পৌছে দিয়ে চলে যাব মানে?
-কেন তুমি বাসায় যাবে না আমার বাসায় থাকবে নাকি?
-আমি তো সেটা বলিনি কিন্তু তুমি তো আমার বাসায় থাকবে।
-কোন?
আমি হেসে দেই এবং ওকে বলি
-আরে না পাগল আর কিছুদিন যাক, তারপরেই না হয় জানাব নে আমি চাইনা কোনো সমস্যা হোক।
সেদিন বিয়ের পর আমি আমার বাসায় চলে আসি, খুব ভালো লাগছিল খুশি লাগছিল যে আমার ইরাদকে আমি বিয়ে করতে পেরেছি। আর সে আমার কতটা বাধুক, যে মাত্র সেকেন্ড ইয়ারে পড়া সত্ত্বেও সে আমার কথায় রাজি হয়ে আমাকে বিয়ে করল। তখন মনে হচ্ছিল যে না আমি কোন ভুল মানুষকে আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিইনি।
পরদিন সকালে আমি যখন কলেজে আসি দেখি ইরাদ গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সাথে আরেকজন ছেলে। আমি জিজ্ঞেস করলাম
-কে উনি?
ইরাদবলল
-উনি আমার বড় ভাই ফাহাদ, কালকে রাতে আমি ভাইয়াকে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে সবটা জানিয়ে দিয়েছি প্রথমে ভাইয়া একটু রাগ করলেও পরে উনি বলেছেন বাসায় ঠিকই ম্যানেজ করে ফেলবেন। আমি চাই মেঘা আমরা বাসায় আজকে জানিয়ে দেই।
-ভাইয়া আপনি ম্যানেজ কি করবেন আমি খুব অট্টহাসিতে হেসে কথাটা জিজ্ঞেস করি।
উনি আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
আমি আবারও বললাম
-আমার মত মেয়ে পেয়েছো, এটা তোমার পরিবার যদি জানে তাহলে দেখবে ঠিকই খুশি মনে মেনে নিবে আহ্লাদে আটখানা হয়ে।
তখন কেন যেন মনে হয় ফাহাদ ভাইয়া আর ইরাদ আমার কথাটা পছন্দ করেনি,
তবে আমি স্পষ্টভাষী আমার মনে যা আসে আমি তাই বলি।
আর কথা তো সত্যি তাদের পরিবারের যে অবস্থা ছিল, সে অবস্থায় আমার মত একজন মেয়ে পাওয়া তাদের চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্যের ব্যাপার।
.
সেদিনের মত আমি আর ইরাদের বাসায় যাইনি, পরের দিন আমি ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম ইরাদের বাসায় যাওয়ার জন্য। আমি ও আর ফাহাদ ভাই মিলে ওর বাসায় গেলাম। ঘটনা জানার পরে প্রথমে সবাই একটু দ্বিমত করলো
কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না,আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড জানার পরেও কেন তারা অমত দেখাচ্ছিলো?
কিছুক্ষণ পর ইরাদের মা বললেন,
-ছেলের খুশির জন্য তোমাকে মেনে নিলাম।
কিন্তু কথাটা আমার আত্মসম্মানে খুব লাগে। আমি স্বাভাবিকভাবে কথাটা নিতে পারিনি,
তবু সে সময়ই ইরাদের মাকে উত্তর দেওয়াটা আমি প্রয়োজন মনে করিনি।
আমি ইরাদেএ বাসায় গিয়ে খুব অবাক হই,
কারো ঘরে কোন এসি নেই, খুবই সাধারন একটা ঘরবাড়ি তাদের।
আমি তো এরকম পরিবেশে থেকে অভ্যস্ত না, তারা সবাই একটা বাথরুম ব্যবহার করত।
এই জিনিসটা দেখে আমার যেন মাথা ঘুরে যায় সবমিলে আমি তাদের ঘরের পরিবেশ দেখে একদম অসুস্থ এর মত হয়ে যাই।
যদিও তাদের ঘরবাড়ি একদম চকচকা ঝকঝকা ছিল কিন্তু আমার একদম পছন্দ হয়নি কারণ আমরা এতোটুকু বাড়িতে থেকে বড় হইনি।
আমাদের বাগানটা ও তাদের বাড়ির থেকে বেশি বড় ছিল।
যদিও ইরাদের মা আমাকে কখনো কোনো কাজ করতে বলেননি। স্নেহ করতেন ওর বাবাও। তবে আমি সেখানে থাকতে পারছিলাম না। প্রথম দুই দিন খুব কষ্ট করে কাটাই তারপর আমি সকালবেলা কান্না করে দেই খাবার টেবিলে।
ইরাদের বাবা-মা খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে
-কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেন?
-আমি এভাবে সবার সাথে বাথরুমে যেতে পারিনা।
আমার খুব অসুবিধা হয়
এই কথাটা শুনেই যাদের মা-বাবা দুইজনেই হেসে দেয় এবং
– বলে আচ্ছা ঠিক আছে মা সামনের মাসে আমরা তোমাকে নতুন একটা বাথরুম করে দিব,
তারপরে এমন না করে দেন নি তারা, করে দিয়েছিলেন ঠিকি।
তবে এখানেই সমস্যার পরিসমাপ্তি হয় না কারণ তাদের খাবার দাবার আর আমার খাবার-দাবার অনেক ভিন্ন ছিল। তাদের বাসায় প্রতিদিন সকালে রুটি আর একটা ভাজি থাকত দুপুরে যেকোনো একটা মাছ বা মাংস আর ডাল
আর রাতের বেলা ভাজি ভর্তা ডাল দিয়ে ভাত খেত কিন্তু আমি এসব খাবারে অভ্যস্ত ছিলাম না।
আমি যখন বলতাম ও বলতো ও আমার জন্য বাইরের খাবার নিয়ে আসতো, ঘুরতে নিয়ে যেতো, রুমে একটা এয়ার কুলার লাগিয়ে দিয়েছিলো
আমার কান্না আসলে অপরাধী নজরে বলতো
– জান আর কয়টা দিন কষ্ট করো।
ও আমাকে অনেক ভালবাসত, চেষ্টা করত আমার জন্য সব করতে। কিন্তু আমি পারছিলাম না, সত্যি বলতে ওর পরিবারের লোকদের ও আমার ভালো লাগতোনা,
এর পরের মাস থেকে গ্রীষ্ম কাল শুরু হয়। প্রচণ্ড গরম পরে চারিদিকে আমি গরমে ঘেমে লাল হয়ে যেতাম।
আমি আর পারছিলাম না এভাবে থাকতে এক মাস হয়ে গেছে আমাদের বিয়ের এখন আমার মনে হলো আমার বাসায় কাউকে না কাউকে জানানো উচিত কারণ এ পরিবেশে এভাবে আমি থাকলে মরেই যাব। আমি ইরাদকে কয়েকদিন বলেছিলাম আমরা চলো আমার বাসায় গিয়ে থাকি কিন্তু আমার বাসায় ও থাকতে রাজি হয়নি, আর আমাকে একা ওই বাসায় থাকতে দিতে চাচ্ছিলেন না ওর মা বাবাও।
তখন আমি না পেরে পাপাকে জানাই উনি আমার খালু হলেও বাবার মতো আদর করতেন এবং আমাকে বুঝবেন আমি সেটাও জানতাম, আমার বাবা ছিলেন অনেক রাগী উনি যদি জানতে পারতেন আমাকে মেরেই ফেলতেন এইজন্যই আমি পাপাকে বলি ফোনে সবটা, এবং সেদিন রাতের ফ্লাইটে পাপা ঢাকায় চলে আসেন
আমি শুধু টেনশন করছিলাম কি থেকে কি হয়,
(চলবে.. কাল বড় করে মেঘা আর ইরাদের অতীতের প্লটটা শেষ করে নতুন জীবনের কাহিনি শুরু করবো)