#অষ্টম_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)
আমি যে ছেলেটাকে ভালোবাসি সে আমার থেকে পুরো ১৪ বছরের বড়। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই তবে বাসায় কিভাবে ব্যাপারটা নিবে? এসব নিয়ে একটু টেনশন হচ্ছে। বাবা সবসময় চান আমি একটা ভালো মানুষের সাথে থাকি, সে আমাকে নিয়ে অনেক টেনশন করেন। ভালো একটা জীবনের জন্য বাবা আমাকে কোনোদিন নিজের সাথে রাখেন নি, আমাকে সবসময় আমার বড় মা অর্থাৎ খালার কাছে রেখেই তো মানুষ করলেন অথচ উনি যে আমাকে কতটা ভালোবাসেন সেটা আমি একজন সন্তান হয়ে বুঝি। আমার একটাই চিন্তা বাবাকে নিয়ে উনি কি খুশি হবেন? নাকি রাগ হবেন? আচ্ছা আমি কি আগে থেকে বেশি বেশি ভাবছি? আমি তো আমার ভালোবাসার কথা ইরাদকেই জানাই নি। যাকে ভালোবাসি সেই তো কিছু জানেনা আর আমি আগে থেকে বাসায় কে কিভাবে নিবে বিষয়টা সেটা ভাবছি। কি যে ভাবি আমি, মাথাটা আসলেই গেছে আমার। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মাথায় শুধু ইরাদ স্যারের কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
সকালে ক্লাস করানোর আগে ইরাদ হসপিটালে এসে সিরিয়াস পেশেন্টদের দেখে যায়।সাহিল ও একজন পেশেন্ট আর এখন যেহেতু সাহিলকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে, তাই কেবিনে গিয়েই ওকে দেখে আসে ইরাদ, তখন মেঘাও উপস্থিত ছিলো কিন্তু ইরাদ ওকে দেখেও দেখার ভান করে। সাহিলকে চেক-আপ করে ও বলে
– আপনি কাল চলে যেতে পারবেন, নাও ইউ আর টোটালি ফাইন।
সব শেশে নিজের কেবিনে ফিরে একটা পেশেন্ট এর ফাইল দেখছিলো ইরাদ, তখন দেখলো মেঘা এসেছে ওর কেবিনে। কিছু না বলেই মেঘলা ভেতরে চলে আসে তবে ইরাদের কোনো কথা বলতে ইচ্ছা করছে না মেঘলার সাথে তাই নিজের কাজেই মনোযোগ দেয় ইরাদ। ইরাদকে চুপ থাকতে দেখে মেঘলা নিজে থেকেই বলতে শুরু করে,
– সাহিল টোটালি ফিট হয়ে যাবে তো?
ফাইল দেখতে দেখতেই ইরাদ উত্তর দিলো,
– ৩-৪ মাস সময় লাগবে
– আমি ভেবেছিলাম তুমি সেদিন অপারেশন করবে না। তাই রাতের সময় দিয়েছিলে,
– শিডিউলে ফ্রি যখন সময় পাই তখনই টাইম দেই, ইটস নট ইন মাই হ্যান্ড।
– ভেবেছিলাম তুমি অপারেশনই করবে না, রিভেঞ্জ নিবে আমার প্রতি, আমার হাসবেন্ড এর দ্বারা। ভয় পাচ্ছিলাম।
এবার ইরাদ ফাইলটা বন্ধ করে, মেঘার দিকে তাকিয়ে বললো,
– প্রথমত আপনাকে বলি, আমি একজন রেস্পন্সিবল ডক্টর। নিজের পেশেন্টদের প্রতি এই প্রফেশনের প্রতি আমার একটা কর্তব্য আছে আর আমি পারসোনাল এবং প্রফেশনাল লাইফ কখনোই মিক্স করি না। আপনি আমার একজন পেশেন্টের ওয়াইফ ড্যাটস ইট।
ইরাদের এতো ধীর স্থীর ব্যাবহার দেখে মেঘা ওকে জিজ্ঞেস করলো,
– পেশেন্ট এর ওয়াইফ না হয়ে যদি আজকে এতো বছর পর মেঘা হয়ে একটা প্রশ্ন করি?
ইরাদ চেয়েছিলো এমন কোনো বিষয় যেনো না উঠে আসে, বা মেঘার সাথে ও দেখা না হয়। কিন্তু না চাইতেও এমন হলো। তাই মেঘাকে না চাইতেও প্রতিউত্তরে ইরাদ বললো,
– হ্যাঁ
-তোমার কি আমাকে দেখে আমার ওপরে রাগ উঠে নি? সত্যি করে বলবে
– নাহ, আমার রাগ হয়নি। আপনার প্রতি এখন আমার আর কোনো ধরনের অনুভূতিই কাজ করে না। না রাগ, না জেদ, কোনো কিছুই না। আপনি আমার পেশেন্ট এর ওয়াইফ। ব্যাস এতোটুকুই পরিচিতি এখন আপনার সাথে আমার। আশা করি আপনি এখন থেকে এভাবেই কথা বলবেন। আর অপরিচিত মানুষকে সাধারণত আমরা আপনি করেই কথা বলি। ইউর হাসবেন্ড উইল বি ওকে সুন ইনশাআল্লাহ। ডোন্ট ওয়ারী, ইউ মে লিভ নাও।
ইরাদ অনেক ফর্মালি সব গুলো কথার উত্তর দিলো মেঘাকে। জিনিসটা মেঘার পছন্দ হয়নি, আসলে এটা মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম, যখম তুমি দেখো কেউ তোমাকে অনেক রিকুয়েষ্ট করে কথা বলে, অনেক কেয়ার করে, অনেক আহ্লাদ দেখায়। তার থেকে সবসময় তুমি আশা করবে সে যেনো এমন ব্যাবহারই করে, তার প্রতি তোমার আচরণ যেমনই থাকুক না কেনো কিন্তু তার আচরণ পরিবর্তিত হতে পারবে না কোনো ভাবেই। মেঘাও এমনটাই আশা করেছিলো, কিন্তু ইরাদের কথা বলা তার প্রতি তাকানো সব কিছুই একদম বদলে গেছে৷ এই জিনিসটা মেঘার মন মেজাজ সব খারাপ করে দিলো।
এদিকে রুহির মাথায় অনেকক্ষণ পরে এলো, আজকে তো আমাদের ক্লাস আছে এবং প্রথম ক্লাসই হচ্ছে ইরাদ স্যারের, তাড়াতাড়ি করে যেতে হবে। উনি যাতে আর কোনো কমপ্লেন করার সুযোগ না পায়। তবে আমি প্রত্যেকটা ভুলি শুধু উনার সামনে করি, কি যে হবে আমার। উনার সামনে একদম খারাপ ইম্প্রেশন পড়ে যাচ্ছে। যে ভয় পাচ্ছিলাম সেটাই হলো আমার সাথে,
আমি ক্লাসে ১০ মিনিট লেট পৌছালাম।
উনাকে দেখবো এরকম দশটা মিনিট আমি নষ্ট করে ফেললাম। রাগে পুরো শরীরটা যেন আমার কাপঁছে আমি কত বড় একটা গাধী? তার উপরে আবার এখন ক্লাসে গেলে উনার বকা খেতে হবে। যন্ত্রণা আমি পাবো, আবার উল্টো উনার কটু কথাও শুনতে হবে। তবে এই উনি মুখে খুব একটা বকে না, শুধু চোখ দিয়ে এমন ভাবে তাকায় যে ভয়ে সবাই শেষ হয়ে যায়। একটা মানুষ কিভাবে যখন হাসে এত ইনোসেন্ট লাগে তাকে দেখতে? এবং যখন অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তখন তাকে দেখলে ভয় করে? মানুষ তার চেহারায় রহস্য আছে, সেটাই উদঘাটন করতে পারিনা। হয়তো তার এই সবকিছুই আমাকে এতোটা টানে। সাহস করে ক্লাসের সামনে গেলাম
-স্যার আসবো ?
ইরাদ চোখের চশমা ঠিক করতে করতে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে
-আপনি পুরো ১৪ মিনিট লেট।
আজকে এমনিতেই ইরাদের মন মেজাজ খারাপ হয়ে আছে, আর তার মধ্যে লেইট করেছে রুহি,
-সসসসস্যার আসলে হয়েছে কি ,,,,
-বলুন কি হয়েছে?
-না, মানে….
-বলুন তারপরে।
খুব ধীর গলায় ইরাদ আমাকে জিজ্ঞেস করছেন
– স্যার আর হবে না।
-আপনাদের জেনারেশনের এই একটা সমস্যা আপনারা কোন কিছু টাইমলি করেন না। আজকের লেকচারটা কতটা ইম্পরট্যান্ট, এটা আপনারা সবাই জানেন তবুও আপনারা এরকম হেল আমি করেন। আপনাদের ফিউচার আসলে অন্ধকারে যাবে এমন করলে, লাইফে মানুষকে কি করে হেল্প করবেন? নিজেরই কোন হেল্প হবে না।আর আমি নোটিস করেছি, আপনি পড়াশুনা তেমন একটা মনোযোগী নয়। এভাবে করলে কি হবে? যদিও এটা স্কুল না। যে আপনাকে হাতে ধরে শেখাতে হবে। তবুও আমি বলছি কারণ আপনি যে প্রফেশনে যোগ দিয়েছেন এটা এমন একটা প্রফেশন, এখানে ডেডিকেশন দিতে হবে, হার্ডওয়ার্ক দিতে হবে, মনোযোগ দিতে হবে। এরকম যদি করতেই চান তাহলে এই প্রফেশনে না এসে পড়াশোনাই বাদ দিয়ে দিতেন।
রুহির চোখ টলমল করছে,
-জি স্যার।
মনটা খারাপ লাগছে প্রচুর, ইরাদ এতগুলি বকা দিলো।
রুহি খুব আহলাদী টাইপের একটা মেয়ে ওকে কেউ বকে না আর যদি কিছু বলেও তাতে ওর খুব খারাপ লাগে, ও কান্না করে দেয়। আর যদি সেটা ওর আপন মানুষ ওকে বকে তাহলে তো ওর আর কষ্টের সীমা থাকে না।
সারাটা ক্লাসরুম মন খারাপ করে বসে রইল রুহি। কারণ যে পড়াগুলো আজকে ক্লাসে আলোচনা হবে এগুলো সব রুহির পড়া শেষ হয়ে গেছে।
ইরাদ জানতেই পারলো না রুহি ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল।
ও আসলে মনোযোগী ও না।
কিন্ত ইরাদই বা কি করবে? রুহিকে ও যেভাবে সামনে পেয়েছে, যেভাবে দেখেছে, সেই থেকেই ধারণাটা এমন হয়েছে। সেদিন ক্লাস শেষ করে
রুহি একটাবার ও ইরাদের দিকে চোখ তুলে তাকায় নি। বরং সবার আগেই ক্লাস হবার পরে ও বের হয়ে যায় করে।
কিছুদিন পর প্রফ এক্সাম শুরু হলো। সব গুলো এক্সাম, ভাইভা সব হলো, তবে ইরাদ ছিলো না কোনোটাতেই। কারণ, এর মাঝে চিটাগং এর বিশেষ কিছু হসপিটাল থেকে স্পেশাল ডাক পরেছিলো ইরাদের, সেগুলো এটেন্ড করার জন্য ও চলে যায়।
এবং যেদিন রেজাল্ট হলো রুহিদের তারপরের দিন ফিরে আসে। টিচার্স রুমে সবাই বসে ছিলো এমন সময় এক কথা দু’কথায় ইরাদ জিজ্ঞেস করে,
– এবার রেজাল্ট কেমন হলো?
– তেমন ভালো না ৬০% এর মতো পাশ করেছে
– আর ফার্স্ট কে হলো?
– বরাবরের মতোই রুহি
নামটা শুনে ইরাদ একটু থমকে যায়।
– কোন রুহি?
– সেই ক্লাসে তো একটাই রুহি, ফর্সা, লম্বা চুল ওই মেয়েটা
এবার ইরাদ স্পষ্ট ভাবে বুঝলো রুহির কথাই বলছে তাহলে।
– মেয়েটা আমাদের মেডিকেলের নাম করবে সামনে ও খুবই ভালো একজন স্টুডেন্ট।
অন্যান্য টিচারের মুখে ইরাদ খুব নাম শুনলো রুহির এবং বুঝলো যে রুহি আসলে ভালো একজন ছাত্রী। ও তাহলে এতো দিন রুহিকে শুধু ভুলই বুঝে গেছে। আর সেদিন নিজের মন খারাপ ছিলো বিধায় রুহিকে এতোগুলো কথা শুনিয়ে দিয়েছিলো, এখন নিজের কাছেই ইরাদের খারাপ লাগছে। আজকে যদিও রুহিদের সাথে ওর ক্লাস নেই কিন্তু ইরাদ একটু কথা ঠিকি বলবে রুহির সাথে, অন্ততপক্ষে রুহির এই ভালো রেজাল্টের জন্য ওকে অভিনন্দন তো দেয়াই উচিত।
(চলবে… ইরাদ তো জীবনে অনেক কষ্ট করলো, ওকে কি জীবনে আর একবার ভালোবাসার সুযোগ দেওয়া উচিত না?)