#একাদশ_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)
জীবনে প্রথম পিকনিকে যাবো ফ্যামিলি ছাড়া তাও নিজের জেলায়। কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই না? তাহলে পিকনিকে যাওয়ার কি দরকার? কিন্তু ওইযে ইরাদ। উনার জন্যই তাও যেতে চাচ্ছি, উনি গেলে কিছুটা সময় একসাথে কাটানো যাবে।আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি টেনশনে, ইরাদ যদি না আসে? তাহলে আমি কি করবো পিকনিকে গিয়ে? ভেবে নিলাম সে যদি না আসে তাহলে আমি শরীর খারাপ বলে রয়ে যাবো, ভোর ৫ঃ৩০ এ বাস ছাড়বে। সবাই ৫টায় এসেই মুটামুটি হাজির হতে শুরু করেছে, আমিও ৫ঃ১৫ এর মধ্যে চলে এলাম। বাসে একে একে করে সবাই উঠতে লাগলো, আমি উঠলাম না। শেষ সময় এখন বাসে উঠা লাগবেই আলো ফুটে গেছে চারিদিকে আমার চোখ দুটো শুধু তাকেই খুজে বেড়াচ্ছে। সবার জোরাজোরিতে উঠে পরি বাসে, যখন বাস ছেড়ে দিবে আমার চোখ দুটো ছলছল করছিলো। আমাকে কাদো কাদো অবস্থায় দেখে রাতুল স্যার জিজ্ঞেস করলেন,
– রুহি কি হয়েছে?
– স্যার আমার শরীর খারাপ লাগছে, আমি যাবো না।
– কি সমস্যা?
– স্যার খুব খারাপ লাগছে আমি নেমে যাই প্লিজ
আমার কথা শুনে স্যার বললেন,
– আচ্ছা ঠিক আছে তুমি আসলে ভালো লাগতো তবে হেলথ কামস ফার্স্ট। বাসায় গিয়ে রেস্ট করো।
সবাই চলে গেলো আমি বসে রইলাম গেটের বাইরের সিড়িতে আমার ব্যাগ হাতে নিয়ে। খুব খারাপ লাগছিলো আমি একদম কান্নাই করছিলাম। সে এলো না কেনো? একসাথে একটু ঘুরতে পারতাম।তাকিয়ে দেখি কিছুটা দূর থেকে ইরাদ স্যারের গাড়ি ভেতরে এলো। আমাকে দেখে সে গাড়ি থামিয়ে বেড় হয়ে এলেন
– চলে গেছে সবাই?
– জ্বি
– দেরি করে ফেললাম
আমি উনার কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেলি। -আপনিও দেরি করতে পারেন?
সে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো
– আমিও মানুষ দেরি হতেই পারে
– যেতে চেয়েছিলেন?
-হুম
আমার মাথায় এবার বুদ্ধি এলো, আমি দুষ্টু হাসি দিয়ে বললাম,
– যাবেন স্যার?
সে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
– এখন কি করে?
– হেটেহেটে
– সিলেটে হেটে যাওয়া যাবে না।
সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
আমি মনে মনে হাসলাম কারণ আমার বাসায় যেতে কতোটুকু সময় লাগে, আর কিভাবে যাওয়া যায় তার মিঃ ইরাদ আপনার চাইতে আমি অনেক ভালো করেই জানি। কিন্তু আপনাকে আমি বলবো না ওখানে আমার বাসা। একটু টুর দেই, আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে।
.
আমি আমার ড্রাইভারকে বাসায় গাড়ি রেখে চলে যেতে বললাম আর তাকে দু’দিনের ছুটি দিয়ে দিলাম। কারণ ইরাদ ২৭৩ কিলোমিটারের রাস্তা ড্রাইভ করে যাবে আর তাকে আমার আরো ২৫ কিলোমিটার ভেতরে অর্থাৎ রাতারগুল নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে তো সেখান থেকে আজ ফেরা হয়তো সম্ভব হয়ে উঠবে না। আর ইরাদ যেহেতু চিনে না তাই তার খুজে খুজে যেতে আরো সময় আরো লাগবে আর যত সময় বেশি লাগবে ততো আমার জন্যই ভালো হবে।
গাড়িতে এসে বসলাম আমার সত্যি বলতে একদম বিশ্বাস হচ্ছে না সে আমি আর ইরাদ একসাথে একা এতো দূরের টুরে যাচ্ছি। ভেবেছিলাম সব হাড্ডি গুলো থাকবে কাবাবের সাথে কিন্তু সোনায় সোহাগা হয়ে যাবে এমন , তা আমি কোনোভাবেই ভাবতে পারিনি। তবে আল্লাহ সুবহানা’তালাকে খুব করে ধন্যবাদ দিলাম এতো সুন্দর একটা সময় ও সুযোগ করে দেওয়ার জন্যে আমাকে। গাড়ি চলছে বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে তাও এমন শীতের সময় আমার তো খুব খুশি লাগছে। কিছুক্ষণ পরে ইরাদ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– দেরি হয়েছে কেনো?
– কার?
– আপনার
– কোথায় দেরি হয়েছে?
– কলেজে
হুট করেই খেয়াল এলো আরে হ্যাঁ, আমি যে তার জন্য বাস থেকে নেমে গেছি তা তো উনি জানে না।ভাবছেন আমি দেরি করেছি আর আমিও তাকে এই ভাবনার মাঝেই রাখতে চাই তাই তার সাথে হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়েই বললাম
– আপনার আগেই এসেছি। আপনি কেনো দেরি করলেন?
– ঘুমের জন্য। সারারাত কাল ঘুম হয় নি।
– আমারো রাতে ঘুম হয়নি।
– হ্যাঁ এক্সাইটেড ছিলেন, এই বয়সে এমনই হয়।
কথাটা বলে ইরাদ মুচকি হাসছে। তার ঝরঝরে সিল্কি চুল গুলো বাতাসে উড়ছে, হালকা নীল রঙের একটা শার্ট পরায় তাকে দেখতে বেশ লাগছে। আমি শুধু মুগ্ধতা নিয়ে তাকেই দেখছি।
আমরা যখন বিশ্বরোডের দিকে ঢুকবো তখন সে গাড়ি থামিয়ে ডাব ওয়ালা কে দেখে দুটো ডাব নেওয়ার জন্য বের হলেন এবং আমাকে বললেন কুমিল্লা ঢুকেই কল দিবেন সবাই কোথায় আছে জানার জন্য। নাস্তার সময় গাড়ি থামলে তাদেরকে ধরা যাবে। শুনে তো আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেলো, তবে মাথায় বুদ্ধি এলো আমি তাড়াতাড়ি করে নিজের মোবাইল সুইচ অফ করে ফেললাম। আর উনার ফোনটাও গাড়িতে রেখেই গিয়েছিলেন সেটা হাতে নিয়ে ভাবছিলাম কি করা যায়? সে সময়ই নিজের চুলের মধ্যে হাত বুলাচ্ছিলাম এবং ববিপিনে হাত লাগতেই আইডিয়া এলো। আমার হেয়ার ক্লিপ দিয়ে তার সিম বেড় করে নিলাম ফোন থেকে এবং সে সিমকে উল্টো করে লাগিয়ে দিলাম যেনো কোনোধরনের নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়।
আমি এগুলো করে মাত্র শেষ করলাম আর উনি ফিরে এলেন।
.
গ্রাম্য পরিবেশে ঢুকার পর থেকেই মনটা একদম ভালো হয়ে গিয়েছিলো, আমরা একে একে করে কুমিল্লা পার করলাম সেখানেই প্রায় ১১টা বেজে গিয়েছিলো সকালের। সেখানে নেমে আমি আর ইরাদ নাস্তা করে নিলাম। সবাই আমাদেরকে স্বামী স্ত্রী ভাবছিলো একটা পিচ্চি তো এসে ইরাদকে বললো,
– ভাইয়া ভাবীর জন্য এই ফুলগুলান কিন্না নেন।
আমার কি যে ভালো লাগছিলো, ইরাদতো তখন একদম লজ্জায় শেষ। আমি খুব এঞ্জয় করছিলাম
– না আমরা আসলে…
ইরাদ উত্তর দেওয়ার আগেই আমি তার কথা থামিয়ে দিয়ে বললাম,
– কি কি ফুল আছে দেখি তো?
খুব খুশি মনে পিচ্চি আমার দিকে এগিয়ে এলো, সব গুলো ফুল আমাকে দেখালো।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম
– এখানে কতটাকার ফুল আছে?
– ৫৪০টাকা ভাবী
একটা বেলির মালা আর একটা গোলাপ নিলাম এবং এক হাজার টাকার একটা নোট ওর হাতে দিয়ে বললাম,
-বাকি ফুল গুলো তোমার আর এই টাকাটা রাখো সোনামণি
-ভাংতি টেহা নাই, আমি ভাংগাইয়া আনি
-না পুরোটাই তোমার বাবু
বাচ্চাটা ও হাসছে রুহি তাকে নিজের সাথে বসিয়ে খাইয়ে দিলো।
সব গুলো বিষয় ইরাদ পর্যবেক্ষণ করছে। মেয়েটাকে আজকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে ক্রিম কালারের ড্রেসে, খোলা চুল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দেওয়া। অপরূপা একটা মেয়ে সাথে তার মনটাও ভীষণ ভালো। ইরাদ ভাবতেও পারে নি এই মেয়েটার সাথে সময় কাটাতে তার এতো ভালো লাগবে। কি সুন্দর ব্যাবহার, মানুষের প্রতি ভালোবাসা। দিনে দিনে ইরাদ শুধু মুগ্ধ হচ্ছে, কেমন যেনো একটা টান কাজ করে রুহির প্রতি। কতোগুলো বছর হয়ে গেছে ইরাদ প্রেম ভালোবাসা সবকিছু থেকেই দূরে, এমন অনুভূতি কাজ করেনি কারো জন্য। রুহি মেয়েটা ওর আপন না কিন্তু কি যেনো একটা টান কাজ করে। তাই তো আজকে যখন বাস মিস হয়ে গিয়েছিলো তখন ইরাদ ভেবেছে সে বাড়ি ফিরে আসবে কিন্তু রুহিকে কান্না করতে দেখে তার মন ঘুরে গেলো এবং রুহিকে নিয়ে সে চলে এলো। হয়তো এই সম্পর্কটা ইরাদ ও বুঝে না কিন্তু গভীরতা তৈরি হয়ে গেছে, এক অদেখা টান, দায়িত্ব সবকিছু চলে এসেছে এই দুইজন মানুষের মাঝে। সারা রাস্তা সুন্দর সুন্দর গান বাজাচ্ছিলো রুহি আর মাঝে মাঝে নিজের ডায়েরীটা বের করে কি যেনো লিখছিলো। ইরাদ মাঝে মাঝে লুকিং গ্লাস দিয়ে রুহিকে দেখছিলো আর মিটিমিটি হাসছিলো। আজকে দুইটা মানুষই খুব খুশি। এক প্রকার সুখ আর শান্তি তাদের উভয়ের মনে দোলা দিচ্ছিলো।
.
দুপুর ৩টার দিকে ইরাদ আর রুহি সিলেটে প্রবেশ করে। রুহির কি যে একটা শান্তি লাগছিলো নিজের শহরে এসে তা হয়তো রুহি বলে বুঝাতে পারবে না, মুখে একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠেছে রুহির। এমন সময় ওরা মৌলভীবাজারে এসার পরে এক লম্বা জ্যাম পরে গেলো রুহি গাড়ির গ্লাস নামিয়ে বসে রইল তখনই ওর চোখে চোখ পরে সামান্থার।
সামান্থা হলো মেঘার বান্ধুবী, সে রুহিকে দেখায় রুহি আস্তে করে গ্লাসটা তুলে দেয় গাড়ির। ঠিক তখনই মেঘাকে কল দিয়ে সামান্থা বলে,
– মেঘা রুহি কোথায়?
-ঢাকাতে কেনো?
-ওকে আমি একটা ছেলের সাথে দেখলাম গাড়িতে আমাদের এলাকায়ই, তুই একটু খোঁজ নিয়ে দেখ তো। রুহি আসলে কোথায়?
-আমি দেখছি, যদিও ওকে তো কোনো ছেলের সাথে দেখার কথা না।
মেঘা ফোনটা রেখে খুব চিন্তায় পরে গেলো এবং সাথে সাথেই রুহির মোবাইলে কল দেয়। এবং কয়েকবার ট্রায় করায় ও ফোন বন্ধ পেয়ে মেঘার সন্দেহ শুরু হয়।
(চলবে, এখন থেকে টুইস্ট পাবেন গল্পে, আজকের পর্ব কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন)