#ষষ্ঠত্রিংশ #Yasira_Abisha (#Fatha)
-হ্যালো আপু
– দেশে মাত্র এসে ল্যান্ড করলাম, পাপা খাইসে রাতে?
– হুম আপু
রুহির এদিকে ভয় লাগছে কারণ বড় বোনকে কিছুই জানায়নি সে আর এদিকে বিয়ে করে রুহি কিছু সময়ের ব্যাবধানে নিজের স্বামীর সাথে চলে এসেছে। সব মিলেই রুহির ভয় হচ্ছে আর কিছুটা অস্থিরতা ও কাজ করছে, মেঘাকে কিভাবে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা রুহি।
-আচ্ছা আমি আর আম্মু বাসায় আসতেসি, মেইবি আধা ঘন্টা লাগবে।
– আচ্ছা আপু বাই
– বাই।
রুহি ফোনটা রেখে দিলো তবে এসির ভেতরে ও ওর ঘাম হচ্ছে, হাসিখুশি মুখটা মুহুর্তের মধ্যেই ম্ল্যান হিয়ে গেলো।
ইরাদ রুহির এরকম হুট করে বদলে যাওয়া চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করলো,
– কি হয়েছে?
– না কিছু না।
ইরাদ এবার আলতো করে রুহির হাতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,
– বলুন রুহি
ইরাদের হাতটা ধরায় রুহি আস্থা পেয়ে এবং নিজেকে সামলাতে না পেরে,
রুহি এবার ভয়ে কান্না করে দিলো।
ইরাদের হাতটা শক্ত করে ধরে রুহি বললো,
– আপু বাসায় চলে আসবে আধা ঘন্টার মধ্যেই
-হুম?
– উনি আর মামনি? আমার ভয় লাগছে তারা যদি খুব রাগ করে? বুঝতেই পারছিনা কি হবে।
– বাসায় যাবেন এখন?
– এখন?
– হুম আপনি চাইলে আমরা এখন বাসায় যাবো, আপনি যদি একান্তে তাদের সাথে কথা বলতে চান তাও সই, আমি আপনাকে দিয়ে আসবো। কিন্তু এভাবে মন খারাপ করলে চলবে না, অন্তত আজকের দিনে মায়াবতী। আপনার খুশিতেই আমি খুশি, আপনি যা চাইবেন তাই হবে। অনেক ভালোবাসি আপনাকে, কোনোভাবেই আপনার চোখে পানি আমি সহ্য করতে পারিনা, আর আমার কারণে কোনোদিন আমি কোনো অশ্রু ঝরতে দিতে চাইনা আর।
রুহি এবার ইরাদকে জড়িয়ে ধরে,
– আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি, আমাকে সারাজীবন এভাবে আগলে রাখবেন তো?
– হুম সারাজীবন। আপনি আমাকে ভালোবাসতে পারবেন তো সারাজীবন?
– হুম সারাজীবনই বাসবো হয়তো মরে যাওয়ার পরেও বাসবো। কারণ আপনি যে আমার স্বপ্নের পুরুষ এবং আমার পরম ভালোবাসার মানুষ।
– ওকে আমার আদরী, এখন চিন্তা না করে একটা সুন্দর ঘুম দেন।
– এখনি ঘুমায় যাবেন?
– হুম আমার বউটাকে বুকে নিয়ে এখন ঘুমায় যাবো শান্তিতে। এর থেকে বেশি আর কি হতে পারে?
রুহি ইরাদের বুকে মাথা দিয়ে চোখ বুঝতেই যেনো ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।
.
মেঘা ও সাহারা বেগম বাসায় ফিরে এসে দেখে সোবহান সাহেব এখনো ঘুমান নি, উনাকে দেখতে বেশ খুশি লাগছে,
মেঘা- বাবা তোমাকে বেশ খুশি দেখাচ্ছে
সাহারা- হ্যাঁ আমি না থাকলে তোর বাবাকে এমনই খুশিই দেখায়।
মায়ের কথা শুনে মেঘা খুব হাসে আর বলে,
– তোমাদের টম এন্ড জেরীর মতো চলতেই থাকে
– তোর মায়ের কথা তো এমনই, তবে আমার একটা কথা আছে তোমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
সাহারা- কিসের?
– আমাদের রুহির বিষয়ে।
মেঘা- হ্যাঁ বাবা রুহির জন্য আমারো একটা সারপ্রাইজ আছে ওর জন্য অনেক সুন্দর একটা গাউন এনেছি, কি যে সুন্দর লাগবে ওকে পড়লে। কোথায় রুহি?
সাহারা- মেঘা ও মনে হয় ঘরে, ডেকে নিয়ে আয় আর তাহলে তোর বাবা আর তুই মিলে সারপ্রাইজ দে ওকে।
– ঠিক আছে
সোবহান- রুহি বাসায় নেই।
সাহারা- হসপিটালে?
– না ওর জামাই বাড়িতে
– জামাই বাড়ি?
– হুম, রুহির পছন্দের ছেলের সাথে আজ রাতেই ওর বিয়ে দিয়েছি আমি।
সাহারা- কি বলছো? আমরা কেউ ছিলাম না, ছেলে কেমন কোনো খোঁজ খবর ও নিলাম না, এভাবেই মেয়েকে তুলে দিলে? তাছাড়া ভাই ও নেই রুহির বিয়ে এভাবে দিয়ে দিলে কিভাবে?
– ওর সাথে কথা বলেই আমি দিয়েছি, আর ছেলে অনেক ভালো আমি সব খোঁজ নিয়েছি, হোক ছেলে ঢাকার কিন্তু আমার চ্যানেল কি কম? সে ছেলে কেমন আমি চিনতে বা খোঁজ নিতে ভুল করি নি। একটা মিডেল ক্লাস ফ্যামিলি থেকে সে আজকে বিশ্বের কয়েকটা বড় ডাক্তারের একটা ডক্টর হয়েছে নিজের যোগ্যতায় আর দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম। ছেলে দেখে তোমরা কোনোভাবেই রিজেক্ট করতে পারবে না।
– তাহলে আমাদের না জানিয়ে কেনো বিয়ে দিতে গেলে? তোমার সাথে এতো গুলো বছর সংসার করে এসেছি কোনো কাজই তুমি তাড়াতাড়ি করো না যদি কোনো বিশেষ কারণ না থাকে। আর কেনই বা রুহিকে এভাবে বিয়ে দিলে, আমাদের অবর্তমানে নাহয় তারপরেও মানা যায় কিন্তু ওর বাবার অবর্তমানে ও বিয়েটা দিয়ে দিলে?
– তোমরা কারণ জানতে যেহেতু চাচ্ছো তাহলে শুনো, আমি কোনো কাজই কোনোদিন কারণ ছাড়া করি না আর এই রকম একটা “Gem” আমি চাইনি আমাদের পরিবার থেকে হাত ছাড়া হয়ে যাক। তার পুরো সুন্দর জীবনের মাঝেও একটা কালো দাগ আছে, সেটার জন্য তুমি বা মেঘা যদি সমস্যা করতে তাই আমি কিছুই জানাই নি তোমাদের তবে রুহির বাবাকে জানিয়েছিলাম, ও সম্মতি দেওয়ায় বিয়েটা আজকে দিয়েছি। আমার পছন্দের ওপরে ওর কোনো কথা নেই কারণ মেঘার বিয়েতেও আমি কিছুই বলিনি সবটা ওর পছন্দেই হয়েছিলো। আর রুহি মেঘা আমার জন্য একই, আমি থাকতে কোনোদিন খারাপ কারো হাতে মেয়েকে অন্তত তুলে দিতাম না।
– বাবা তার অতীত কি?
– ছেলেটা ছিলো সাধারণ একটা মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির, অসম্ভব মেধাবী ছিলো আর নরম মনের একটা মানুষ ছিলো। সে যখন মেডিকেলে পড়াশোনা করতো সে সময়ে একটা ধনী পরিবারের মেয়ের সাথে তার প্রেম হয় এরপর বিয়ে। কিন্তু ৫-৬ মাস সংসার করার পরে মেয়েটার মনে হয় সে তার জন্য ঠিক না, এবং সে আর থাকতে পারবে না ছেলেটার সাথে। এরপর তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। আর এই কারণে তোমরা অবশ্যই তাকে মেনে নিতে না, তাই আমি জানাইনি।
– তুমি কি করে জানলে মেয়েটার দোষ ছিলো ওই ছেলে তো মিথ্যাও বলতে পারে।
-মিসেস সোবহান আপনি কি আমাকে চিনেন না?
কথাটা বলে একটা হাসি দিলো সোবহান সাহেব।
– শুনো আমি কথা গুলো তার থেকে শুনিনি বরং খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি। কি ধরনের পরিবারের মেয়ে ছিলো আল্লাহই জানে এমন ছেলেকে ফেলে এসেছে বরং টাকা পয়সার জন্যই। তাহলে বিয়ের আগে কেনো ভাবে কি এসব ব্যাপারে? কি ধরনের শিক্ষা পেয়ে মানুষ হয়েছিলো মেয়েটা সেটা সে ও তার পরিবারই মাত্র জানে। আমার মেয়ে হলে আমি তাকে ত্যাজ্য করে দিতাম আর আমি হয়তো লজ্জায় মারাই যেতাম।
কথা গুলো শুনে মেঘার মনটা কেমন যেনো একটা কামড় দিয়ে ওঠে।
সাহারা- সব ঠিক আছে, ছেলে তো আমাদের দেখাবে নাকি তাও দেখাবে না?
– অবশ্যই আমি আজকেই ভিডিও করেছি, বিয়ের সময় এইযে দেখো
সোবহান সাহেব মোবাইলটা সাহারা বেগমের হাতে দিলো,
ভিডিও টা শুরু হতেই রুহিকে দেখা যাচ্ছে যখন সাদা পাঞ্জাবি পড়া ছেলে অর্থ্যাৎ রুহির বরের চেহারাটা স্ক্রিনে ভেসে উঠলো,
তখনই সোবহান সাহেব বললেন,
– ছেলের নাম ডক্টর ইরাদ আহসান।
মেঘার কথাটা শোনার পরে আর স্ক্রিনের ছেলেটাকে দেখার পর আর বুঝতে বাকি রইলো না এটা ওর এক্স হাসবেন্ড ইরাদ। চোখে মুখে মেঘা সবকিছু অন্ধকার দেখতে শুরু করে আস্তে আস্তে যেনো সারাদিনের ধকল আর এই রকম একটা খবর মেঘা সহ্য করতে পারে না এবং অচেতন হয়ে পরে। মেয়ের হুট করে কি হলো সোবহান সাহেব অস্থির হয়ে যায় আর এদিকে সাহারা যেনো মূর্তি হয়ে গেছেন, এ কি হয়ে গেলো মুহুর্তের মধ্যেই। সে কিছুই বলার ভাষা খুজে পায় না।
– মেঘার মা? কিছু তো বলো
– মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে গেছে হয়তো এইজন্যই এমন হলো ডক্টর ডাকেন।
ডক্টর এসে মেঘাকে চেক করে বিপির ইঞ্জেকশন দিয়ে যায়। আর বলে হয়তো উনি স্ট্রেসে এমন হয়েছেন। উনাকে রেস্টে রাখবেন।
সোবহান সাহেব এবার চিন্তা মুক্ত হয়ে ঘুমাতে চলে যান। এবং একপ্রকার জোর করেই সাহারা বেগম কেও ঘুমাতে নিয়ে যান।
রাত প্রায় ৩ঃ৩৫ দিকে মেঘার জ্ঞ্যান ফিরে, মেঘা তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিয়ে রুহিকে কল দেয়।
বেশ কিছুক্ষন ধরে রুহির ফোন ভাইব্রেট করছে ইরাদ তাকিয়ে দেখে ৫বার কল এসেছে স্ক্রিনে আপু লিখা ইরাদ বুঝে ওর বোন কল দিয়েছে। তবে এখন রুহিকে ফোনটা দেওয়া ঠিক হবেনা। এইজন্য সে ফোনটা নিয়ে ঘর থেকে বেড় হয়ে ব্যালকনিতে আসে এবং কলটা রিসিভ করে,
অপর পাশ থেকে মেঘা তখন বলতে শুরু করে
– রুহি তুই আমাদের না জানিয়ে কিভাবে বিয়ে করলি? থাক করে যখন ফেলেছিস এখনো কোনো কিছু হয়নি তেমন, কেউ কিছুই জানেনা কিছুই হবে না তুই বাসায় ফিরে আয় তাড়াতাড়ি। এই ছেলেকে ডিভোর্স দিয়ে দিবি। এর সাথে কোনোভাবেই সম্ভব হবে না তোর সংসার করা।
মেঘার আওয়াজ শুনে ইরাদের এতো চেনা লাগছে, আর মনে হচ্ছে মেয়েটা মেঘা কি না?
– কে বলছেন?
– ইরাদ আমি মেঘা বলছি,
(চলবে… কেমন হলো আজকের পর্বটা? সবার কমেন্ট চাই আর অবশ্যই পুরো গল্পটা শুরু থেকে এই পর্যন্ত কেমন লাগছে?)