#আমার তুমি
পর্ব ১৭
#তানিশা সুলতানা
“হু আর ইউ? আমার রুমে কি করছেন? এখানে ঢোকার পারমিশন দিলো কে?
সায়ান ভ্রু কুচকে চোখ মুখ শক্ত করে বলে।
তুলতুল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সায়ানের দিকে। লোকটার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গেছে না কি? না কি অন্য সমস্যা? স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ।
তবে যাই হোক, ভুলে গিয়ে ভালোই হয়েছে। এবার একে যা বোঝানো যাবে তাই বুঝবে।
উফফফফ কি যে খুশি লাগছে।
তুলতুল এক লাফে উঠে দাঁড়ায়।
” আমি আপনার মামাতো বোন। খুব ভালো মেয়ে আমি। আজকে বিয়ে হয়ে গেছে আমার। বর তাড়িয়ে দিয়েছে বলে এখানে এসেছি।
আমি জানতাম না এটা আপনার রুম। সরি ভাইয়া আর আসবো না।
তুলতুল নেকা কান্না করে বলে তুলতুল। সায়ান সরু চোখে তাকিয়ে আছে।
সায়ানের চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে ঢপটা গিলেছে। তুলতুল মনে মনে একটু হাসে।
“জাস্ট সাট আপ
গর্জে ওঠে সায়ান। তুলতুল কেঁপে ওঠে। ভয়ে দু পা পিছিয়ে যায়।
” আষাঢ়ের গল্প শোনানো হচ্ছে আমাকে? পাগল আমি?
তুলতুলের দিকে তেড়ে এসে বলে সায়ান।
তুলতুল দুই কানে হাত দেয়। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
“প্লিজ আমাকে মেরে ফেলবেন না। আমার এখনো বরের সাথে রোমাঞ্চ করা বাকি।
কাঁদতে কাঁদতে বলে তুলতুল।
তুলতুলের কথা শুনে সায়ান দাঁড়িয়ে যায়। এইরকম মুহুর্তে কেউ এরকম কথা বলতে পারে?
দাঁতে দাঁত চেপে তুলতুলের দিকে তাকায় সায়ান। জাস্ট বিরক্ত লাগছে মেয়েটাকে।
” আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যান।
সায়ান শান্ত গলায় বলে।
“কিন্তু কোথায় যাবো আমি?
তুলতুল নাক টেনে বলে।
” জাহান্নামে যান।
ধমক দিয়ে বলে।
তুলতুল তারাহুরো করে রুম থেকে বেরতে নেয়। দরজা খুলতে গিয়ে আর পারে না।
টানছে তো টানছেই কিন্তু খুলছে না। এবার আরেক দরজা ধমক খেতো হবে।
তুলতুল চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
সায়ান বুঝতে পারে কেউ হয়ত বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
“বেলকনিতে জায়গা আছে।
” শা*লা বেরসিক। আমার ওপর টর্চার করছিস তো? জীবনেও বউ পাবি না।
মনে মনে বলে তুলতুল।
“কালা নাকি?
সায়ান আবার ধমক দেয়।
” কালা না তবে চোখের সামনে লাটসাহেবরা থাকলে শুনতে অসুবিধা হয়।
বলেই তুলতুল বেলকনির দরজা বন্ধ করে দেয়।
নাহলে আবার এই কথার জন্য মার্ডার করে দেবে।
অদ্ভুত লোক। হনুমান একটা।
সায়ান দরজার দিকে দাঁত কটমট করে এক পলক তাকায়। তারপর লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে।
বেলকনিতে বসার মতো একটা মোড়াও নেই। তুলতুল ফ্লোরে বসে পড়ে। আকাশে থালার মতো চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলো তুলতুলের চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে।
আজ ভীষণ খুশি তুলতুল।
আল্লাহর কাছে কখনোই সায়ানকে চায় নি তুলতুল।
তবে ইফাদের সাথে বিয়ে ভাঙার জন্য অনেকবার কেঁদেছে জায়নামাজে।
তুলতুল বরাবরই একজন ভালো মানুষ চেয়েছে জীবনে। যে ভালো না বাসলেও কখনো অপমান করবে না। মাথায় তুলে রাখতে না পারলেও কখনো মাটিতে পিশে মারবে না।
ইফাদের যে তুলতুলের শরীরে ওপর লোভ দিছো এটা তুলতুল আগেই বুঝতে পেরেছিলো। শুধুমাত্র বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েই বিয়েটা করতে চেয়েছিলো।
তুলতুল জানে সায়ানের জীবনে সুন্দরী স্মার্ট একজন মেয়ের আবির্ভাব হয়েছে। মেয়েটার হাত ধরে পিক তুলে ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে সায়ান। তুলতুল ফেক আইডি খুলে ফলো করতো সায়ানকে।
তুলতুল চাঁদের দিকে তাকিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে।
“জানি কখনো আপনার ভালোবাসা পাবো না। খুব তাড়াতাড়িই ডিভোর্স দিয়ে দেবেন আমায়। তবুও যে কদিন আপনার সাথে থাকবো চেষ্টা করবো ভুল গুলো শুধরে নেওয়ার।
আপনার চোখে আমি জঘন্য অপরাধী। কিন্তু আফসোস নিজেকে কখনো আমার জায়গায় বসিয়ে দেখলেন না।
মুচকি হাসে তুলতুল।
দুনিয়ায় সবারই আপনজন আছে ভালো থাকার কারণ আছে।শুরু আমারই নেই
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে তুলতুল। এই বাড়িতে সকালে সবাই ডিম, ভাজি, আর রুটি খায়।
তুলতুল ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে যায়।
এখনো পুরোপুরি ভোরের আলো ফোঁটে নি। সবে মাএ পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তুলতুল লেহেঙ্গারের ওড়নাটা রুমেই রেখে এসেছে।
মোটামুটি ভালোই রুটি বানাতে পারে তুলতুল। ইউটিউব দেখে শিখেছে। বাড়িতে কখনোই তুলতুলকে রান্না করতে হয় নি। তাই তেমন রান্না জানে না।
কিচেনের লাইট জ্বালিয়ে আটা আলু ডিম পেঁয়াজ সব খুঁজে বের করে। তারপর রান্নার কাজে লেগে পড়ে।
সায়ান ভোরেই ঘুম থেকে ওঠে। একটু হাঁটতে বের হয় আর একটু পুশআপ দেয়। এটাই রুটিন হয়ে গেছে সায়ানের।
আজকেও তাই।
ডগিং সুট পরে বেরুনোর সময় তুলতুলকে রান্না ঘরে দেখে সায়ান। মুহুর্তেই মেজাজ বিগড়ে যায়। এই মেয়ে নিশ্চয় মাকে ইমপ্রেস করার ধান্দায় এসব করছে।
সায়ান এগিয়ে যায় কিনেচের দিকে। তুলতুল ময়দা মাখছিলো। সায়ানকে দেখো মাখা বাদ দেয়।
“আমার মাকে ইমপ্রেস করার জন্য এসব করার দরকার নেই। ডিভোর্স আমি দেবোই। নাটক বাজি বাদ দিয়ে নিজের রাস্তা খুঁজলে খুশি হবো।
সায়ান যেতে নিয়েও থেমে যায়৷ তুলতুলের দিকে তাকায়।
” আমাকে ইমপ্রেস করা ইম্পসিবল। ওড়না ছাড়া ঘুরঘুর করলে ইফাদ ইমপ্রেস হয় সায়ান না।
বলেই সায়ান হনহনিয়ে চলে যায়।
তুলতুলের চোখের কোনে পানি চলে আসে।
” অবশ্যই রাস্তা খুঁজে নেবো। আমিও থাকবো না এখানে।
নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই লজ্জা পায়।ইসস ওড়নাটা যে কেনো আনলো না?
সাহেদা বেগম শানকে দিয়ে তুলতুলের জন্য জামা আনিয়েছে। তুলতুল রান্না শেষ করে একদম শালওয়ার নিয়ে নেয়। প্রচন্ড গরম। এই ভাপসা গরমে জানটা বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম।
শাওয়ার নিয়ে সুতি থ্রি পিছ পড়াতে বেশ হালকা লাগছে তুলতুলের।
সায়ান ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। টিশার্ট খুলতে খুলতে রুমে ঢুকে। তুলতুল ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে।
দরজা খোলার শব্দে পেছনে তাকায়।
খালি গায়ে সায়ানকে দেখে লজ্জা পায় তুলতুল। সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয়।
সায়ান তুলতুলের দিকে না তাকিয়েই ওয়াশরুমে চলে যায়।
চলবে
.