#আমার তুমি
পর্ব ২০
#তানিশা সুলতানা
সকাল বেলা বুকের ওপর ভারি কিছু অনুভব করতেই কপালে ভাজ ফেলে সায়ান। কোলবালিশ তো এতো ভাড়ি না। তাহলে?
আবার মুখের ওপর চুলের মতো কিছু পড়েছে। হাত দুটো কেউ ধরে রেখেছে।
সায়ান পিটপিট করে চোখ খোলে। বোঝার চেষ্টা করে হচ্ছে টা কি? বুক টাকে কে দখল নিয়েছে?
ভোরের আলো সরে ফুটেছে। রুমটা এখনো আবসা অন্ধকার।
হাত উঁচু করে মুখের ওপরে পরে থাকা চুল গুলো সরায় সায়ান।বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ফেলে সায়ান। চোখ বন্ধ করে দুমিনিট ভাবতে থাকে কে হতে পারে? অতঃপর মনে পড়ে তুলতুলের কথা। নিশ্চয় এই ইডিয়েটটা তুলতুলই।
সায়ান এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তুলতুলকে। একদম ফ্লোরে পড়ে যায় তুলতুল। মুহুর্তেই ঘুম উঠে যায়।
“ককককে কেেেে কককি হয়েছে?
হকচকিয়ে বলে ওঠে তুলতুল।
নরাচরা করতেই বুঝতে পারে কোমরে ভীষণ ব্যাথা পেয়েছে। কোমরে দুই হাত চেপে সোজা হয়ে বসে তুলতুল।
চোখ মুখ কুঁচকে খাটের দিকে তাকাতেই চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে।
তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে একটু হাসার চেষ্টা করে
” মার্ডার কইরেন না প্লিজ। এখনো বরের সাথে হানিমুনে যাওয়া বাকি।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে তুলতুল।
সায়ান তবুও একই ভাবে তাকিয়ে থাকে।
“আসলে হয়েছে কি?
আমি আপনার রুম পরিষ্কার করতল এসেছিলাম। তখন ভুল করে মাথা ঘুরে পরে গেছিলাম। মাএ ঙ্গান ফিরলো। ইচ্ছে করে ঘুমায় নি।
তুলতুল গোল হয়ে বসে বলে।
“থাপ্পড় চিনিস তুই?
থাপ্পড়ে গাল লাল করে দেবো তোর। ইডিয়েট, কমনসেন্সের অভাব তোর?
সায়ান রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে।
” থাপ্পড় চিনি তো। কিন্তু কখনো খায় নি।
আস্তে করে বলে তুলতুল।
সায়ান ঝড়ের গতিতে বিছানা থেকে নামে। তুলতুল সায়ানকে নামতে দেখে তারাহুরো করে উঠে দাঁড়ায়।
সায়ান তুলতুলের দিকে এগোতে থাকে খুব দ্রুত গতিতে আর তুলতুল ও খুব দ্রুত গতিতে পিছতে থাকে। পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যায় তুলতুলের।
সায়ান তুলতুলের দুই পাশে হাত রেখে তুলতুলের দিকে খানিকটা ঝুঁকে। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। কপালের রগ গুলো ফুটে উঠেছে।
ভয়ংকর লাগছে। তুলতুল মাথা তুলে সায়ানের দিকে তাকানোর সাহস পায় না।
সায়ান এক হাতে তুলতুলের গাল চেপে ধরে। তুলতুল ব্যাথা পায় কিন্তু কিছু বলে না। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে।
“সাহস হয় কি করে আমার বুকে মাথা রাখার?
ইচ্ছে করছে তোর মাথাটা কেটে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে। স্টুপিট একটা
আবার মুখে মুখে তর্ক করা হচ্ছে?
মুখটা আমি ভেঙেই ফেলবো আজ।
কর্কশ গলার ধমকে বলে সায়ান।
সায়ানের নিশ্বাস তুলতুলের চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে।
” উমমমমমমমম
তুলতুল সায়ানের হাতের ওপর হাত রেখে ছাড়ানোর চেষ্টা করে শব্দ করে।
“এটা কেমন শব্দ ইডিয়েট
আবারও ধমক দিয়ে বলে সায়ান
তুলতুল চোখের ইশারায় সায়ানের হাত সরাতে বলে। সায়ান সরিয়ে নেয়।
” আপনার মুখ থেকে ভীষণ বাজে গন্ধ আসছে। ব্রাশ করে আসুন প্লিজ।তারপর না হয় কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বকা দিয়েন।
আমতা আমতা করে নাকে হাত দিয়ে বলে তুলতুল।
সায়ান থমথমে খেয়ে যায়। তুলতুলের থেকে সরে আসে। মুখে হাত দেয়। তুলতুলের দিকে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
তুলতুল মিটমিটিয়ে হাসে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে নিজেকে দেখে।
“দিন দিন বিশ্ব সুন্দরী হয়ে যাচ্ছি আমি। ওয়াও তুলতুল ভীষণ কিউট তুই।
নিজেই নিজের গাল টানে তুলতুল।
“প্রেম জেগেছে আমার মনে বলছি আমি তাই
তোমায়,আমি ভালোবাসি,
তোমায় আমি চাই
গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে বিছানা গোটাতে থাকে তুলতুল।
” এটা কেনো গানের স্টেজ না। এটা সায়ান মাহমুদের রুমে। এখানে গান এলাও না।
দাঁত কটমট করে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে সায়ান।
“ও গো সুয়ামি
এভাবে দাঁত কটমট করিবেন না। তাহলে আপনার দাঁত গুলো ভেঙে যাবে। আর দাঁত ভেঙে গেলে আমার পুচকুরা আপনাকে বাবা না ডেকে নানা ডাকবে।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে তুলতুল।
” তোমাকে তো আমি
সায়ান তুলতুলের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে তুলতুল ভেংচি কেটে এ দৌড়ে চলে যায়।
“ডিসগ্রাসটিং
শেষমেশ এই পাবনা ফেরত পাগলাই আমার কপালে জুটলো। কবে যে ঘাড় থেকে নামবে আর কবে একটু শান্তি পাবো
কপাল চাপকে বলে সায়ান।
তুলতুল গাল ফুলিয়ে নাস্তা সাজাচ্ছে। সাহেদা বেগম বকে দিয়েছে তুলতুলকে। বকার কারণ হলো তুলতুল থাকতে সায়ান এতো রাতে বাড়ি ফিরলো কি করে? তুলতুল কোনো কথা বলে নি। শুধু গাল ফুলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
সায়ান ফ্রেশ হয়ে তারাহুরো করে খেতে বসে।
” মা তাড়াতাড়ি খেতে দাও। খুব খিদে পেয়েছে।
প্লেট সিধে করে বলে সায়ান।
“কোনো খাবার পাবি না তুই।
সাহেদা বেগম সায়ানের সামনে থেকে প্লেট নিয়ে বলে।
” কেনো?
কপালে ভাজ ফেলে বলে সায়ান।
“কাল ওতো রাত ওবদি ওই হাঁটু বের করা মেয়েটার সাথে কি করেছিস?
কর্কশ গলার বলে সাহেদা বেগম।
” কাল হিসেব মেলাতে দেরি হয়ে গেছিলো। তারপর জানলাম এক ফ্রেন্ড হাসপাতালে এডমিন। রক্তের প্রয়োজন। আমার রক্তের সাথে ওর রক্ত মেচিং করে গেছে বলে ওকে রক্ত দিতে গেছিলাম।
একটু থামে সায়ান। সাহেদা বেগমের মুখটা চুপসে যায়। ছি ছি ছেলেটাকে কথা শোনালো? আবার সামনে থেকে প্লেটও টেনে নিয়ে গেলো।
“মা তুমি ভালো আমি সারাক্ষণ পাখির সাথে থাকি? সিরিয়াসলি মা?
পাখিকে আমি বেস্টফ্রেন্ড মনে করি। কাজ ছাড়া ওর সাথে খুব কমই দেখা করা হয়। আর ওই মেয়েটা সব সময় আমাকে হেল্প করে। এটাই।
আর তুমি
এটা আশা করি আমি।
সায়ানের মুডটাই নষ্ট হয়ে যায়। তুলতুল বুকে হাত গুঁজে মুখ বাঁকিয়ে সায়ানের কথা শুনছে।
সাহেদা বেগম খেতে দেয় সায়ানকে।
” শান আর সুমু কই?
“বেরিয়ে গেছে সকাল সকাল। বললো ভার্সিটিতে কাজ আছে।
” আচ্ছা
সায়ান খাবার মুখে পুরে নেয়
“মা আমি কিন্তু সন্ধায় বেরিয়ে যাবো।
” তুলতুলও যাবে
“কি করে যাবে? পাসপোর্ট লাগবে। সেটা নেই।
” কে বললো নেই?
সায়ান বড়বড় চোখ করে তাকায় মায়ের দিকে।
“তুলতুলের পাসপোর্ট আছে। আমি ভাইকে কল করে সেটা এখানেও নিয়ে এসেছি। আর কোনো পবলেম?
সায়ান তুলতুলের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে খেতে থাকে।
“উফফফফফ জ্বলেছে
তুলতুল জোরে বলে ওঠে।
সায়ান আর সাহেদা বেগম চমকে তাকায়।
” কি জ্বলছে?
সাহেদা বেগম তুলতুলের কাছে এসে বলে।
“কারো মন
বলেই ফিক করে হেসে ফেলে তুলতুল।
” এই মেয়েটাকে আমি কখন যানি খু*ন করে ফেলবো।
কাটা চামচ মুঠো করে ধরে তুলতুলের দিকে তাক করিয়ে বলে সায়ান।
চলবে?
.