#আমার তুমি
পর্ব ২৪
#তানিশা সুলতানা
(যেহেতু সায়ান অফিস থেকে ট্যুরে এসেছে। সেহেতু সায়ান শুধু একা নাহহ বস সহ আরও দশজন এসেছে। পাখি বসের মেয়ে তো ও বাবার সাথে যাচ্ছে।)
চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে তুলতুল। তুলতুল ঘুমতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। শয়তানের হাড্ডি একটা। তুলতুলকে ঘুম পাড়ানোর একমাএ উদ্দেশ্য হচ্ছে মুগ্ধর থেকে দুরে রাখা। না ঘুমলে দুজন ফুসুরফাসুর শুরু করে দেবে। যেটা সায়ানের মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।
অবশেষে কানাডা এসে পৌছায় ওরা। সবাই নেমে যাচ্ছে।
“ওই ওঠ
সায়ান তুলতুলের গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে।
তুলতুল পিটপিট করে চোখ খুলে। সায়ানের হাত জড়িয়ে ঘুমিয়েছে আছে বুঝতে পেরে হাত ছেড়ে দেয়। হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙতে যায়।
বাম পাশে যে মুগ্ধ বসে আছে এটা একদম খেয়াল ছিলো না তুলতুলের। বাম হাতটা একদম মুগ্ধের মাথার ওপর পড়ে। ঠাস করে শব্দ হয়।
মুগ্ধ মন প্রাণ দিয়ে ফোন দেখছিলো। এরকম ভাবে মাথায় আঘাত লাগাতে আহহহ বলে তুলতুলের দিকে তাকায়। তুলতুলও বেশ ব্যাথা পেয়েছে হাতে।
সায়ান বিরক্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। এই মেয়ে যেখানে আছে সেখানে ঝামেলা হবেই।
চোখ মুখ কুঁচকে হাত ঝাঁকাচ্ছে তুলতুল।মাথা ডলছে মুগ্ধ।
” নামতে হবে আমাদের। এখানে তো সংসার পাতা যাবে না।
কর্কশ গলায় বলে সায়ান।
“সরি তুলতুল
মুগ্ধ কিউট একটা হাসি দিয়ে বলে।
” সরি আমার বলা উচিৎ ছিলো।
“ইটস ওকে
মুগ্ধ আগে আগে হেঁটে যাচ্ছে। তার পেছনে তুলতুল আর তার পেছনে সায়ান।
বারো তালা বিল্ডিংয়ের সামনে এসে গাড়ি থামে। ভীষণ ক্লান্ত তুলতুল। গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে সেদিন তাকিয়ে দেখছে সব কিছু। মন প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এতো সুন্দর জায়গা। ইচ্ছে করছে একটু ঘুরে ঘুরে দেখার। কিন্তু এনার্জি নেই।
” সায়ান দেখছো কতো সুন্দর জায়গা? আমার তো এখুনি ঘুরে ঘুরে দেখতে ইচ্ছে করছে।
পাখি সায়ানের হাত ধরে লাফিয়ে উঠে বলে।
সায়ান কিছু বলে না।
“আচ্ছা শোনো পাপা বলছিলো তুমি চাইলে তুলতুল আমার সাথে রুম শেয়ার করতে পারে।
সায়ান ভ্রু কুচকে পাখির দিকে তাকায়।
তুলতুল কাছাকাছিই ছিলো তাই কথা শুনতে পায়।
” আমাকে নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না। আমি আমার থাকার ব্যবস্থা নিজেই করে নেবো। তোমার সাথে আমি রুম শেয়ার করবো না।
তুলতুল অভিমান মিশ্রিত কন্ঠে বলে। কথা বলার সময় চোখের কোনে এক ফোঁটা পানি এসে জড়ো হয়।
“এতে রেগে যাওয়ার কি হলো? সায়ান তো তোমার সাথে কমফোর্টেবল না। আর বন্ধু হিসেবে ওর ভালো লাগা খারাপ লাগার দিকটা দেখার দায়িত্ব আমার।
পাখি বুকে হাত গুঁজে বলে। তুলতুল তাচ্ছিল্য হাসে।
” কোচি খুকি না আমি। আর এখনো ফিটারও খাই না। সব বুঝি আমি। তোমাদের মধ্যে চক্কর চলছে এটা আমি জানি। এখন শাক দিয়ে মাছ থাকতে হবে না।
একদমে বলে তুলতুল। তারপর লম্বা একটা শ্বাস নেয়।
“আমার কোনো পবলেম নেই। হনুমান বর আর সুন্দরী সতিন। সতিন নিয়ে থাকতে আমার পবলেম নেই। একশ কথার এক কথা আমি ডিভোর্স দিচ্ছি না।
উফফফ জমে যাবে ব্যাপারটা। সতিন নিয়ে সংসার কজন মেয়ে করতে পারে বলো তো?
তুলতুল চোখের কোনে জমে থাকা পানি টুকু মুছে ফেলে একটু হেসে বলে।
সায়ান মুখ টিপে একটু হাসে।
পাখি রাগে গজগজ করছে।
” তোমার সতিন আমি হবো না। তোমাকে আমি সরাবোই।
বলেই গটগট করে চলে যায় পাখি।
তুলতুল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। বা পাশ একটা রাস্তা গেছে আর ডান দিক দিয়ে আরেকটা রাস্তা। তুলতুল বা পাশের রাস্তায় হাঁটা শুরু করে।
এতো অপমান আর নিতে পারছে না তুলতুল। একটা বাইরের মেয়ে কেনো ওদের ব্যাপারে কথা বলবে? আর সায়ান কিছুই বললো না? নিজে যা বলার বলবে। মারলে সায়ান মারবে। বকলে সায়ান বকবে। কিন্তু অন্য কেউ কেনো বলবে?
“ওই কোথায় যাচ্ছিস?
সায়ান পেছন থেকে বলে।
তুলতুল পেছনে তাকায় না। জোরে জোরে পা ফেলে হাঁটতে থাকে।
সায়ান দৌড়ে তুলতুলের আগে গিয়ে দাঁড়ায়।
” থাপ্পড় খেতে মন চাইছে তোর?
ধমক দিয়ে বলে সায়ান। তুলতুল কিছু না বলে পায় কাটিয়ে চলে যেতে নেয়। সায়ান আচমকা কোলে তুলে নেয় তুলতুলকে।
তুলতুল বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে সায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে।
“ড্রামা কুইন।
ইচ্ছে করছে ফেলে দেই।
বিরবির করে বলে সায়ান।
রাতে দেরি করে ঘুমানোর ফলে ঘুম ভাঙতে দেরি হয় শানের। সুমু ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে ডেকে গেছে শানকে কিন্তু শানের ওঠার নাম নেই। সোহেল মিয়া অফিসে চলে গেছে। আর সাহেদা বেগম ইশাদের বাসায় গেছে।
ইশা ভোর পাঁচটা থেকে শানকে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু শান রিসিভ করছে না। বেশ রাগ হচ্ছে ইশার।
স্কুল ড্রেস পড়ে বেরিয়ে পড়ে ইশা। উদ্দেশ্য শানের কাছে যাওয়া।
তিন তালায় ইশারা থাকে আর দুই তালায় শানদের বাসা।
শান খালি গায়ে ঘুমিয়ে আছে। যা গরম পড়েছে। তারওপর রাত দুটো থেকে কারেন্ট নেই।
মাথার বালিশটা পায়ের কাছে রেখে কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে শান।
ইশা কলিং বেল না বাজিয়ে বাসায় ঢুকে পড়ে। জানা আছে এখন বাসায় কেউ নেই। ইচ্ছে মতো ঝাড়ি দেবে শানকে। এতোগুলো কল দিলো তাও ধরলো না। মজা দেখাতেই হবে। সাহস বেরে যাচ্ছে। রিলেশনের প্রথম সকালটা তো গুডমর্নিং বাবু দিয়ে শুরু হওয়া উচিৎ।
শানের রুমের সামনে এসে থেমে যায় ইশা। চোখ পড়ে খাটে এলোমেলো হয়ে শুয়ে থাকা শানের দিকে। লজ্জা পায় ইশা। কাল রাতে বাসায় ফিরে একটা মুভি দেখেছিলো। সেখানে বোনের দেবরের সাথে প্রেম করে মেয়েটা। তো রাতে প্রপোজ এক্সেপ্ট করে।সকালে মেয়েটা চুপিচুপি হিরোর রুমে ঢুকে হিরোর এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে ঠিক করে দেয়৷ তারপর হিরোর কপালে আলতো করে চুমু খায়।
ইশা ভেবে ফেলে এখন ইশাও এটাই করবে। কিন্তু কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।
” ইশা একদম লজ্জা পেলে চলবে না৷ তোকে লজ্জাহীন হতে হবে। বড়দের মতে হতে হবে। শান ফ বললেই ফুলসজ্জা বুঝতে হবে। নাহলে শান তোর সাথে ব্রেকআপ করে দেবে।
মনে মনে নিজেকে বোঝায় ইশা।
তারপর লম্বা শ্বাস নিয়ে আস্তে আস্তে শানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
বুকে থু থু দিয়ে শানের মাথায় হাত দেয়। শানের এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দেয়। তারপর মুখটা এগিয়ে নেয় শানের কপালের দিকে।
চোখটা বন্ধ করে ঠাস করে চুমু খায় শানের কপালে।
নরেচরে ওঠে শান। পিটপিট করে চোখ খুলে ইশার লজ্জা মাথা মুখটা দেখে এক লাফে উঠে বসে শান। নিজের দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার করে।
ইশা ভয় পেয়ে যায়। দুই কানে হাত দিয়ে চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে। শানের চিৎকার শেষ হওয়ার পর ইশা কান থেকে হাত সরায়।
“চিৎকার করছেন কেনো? আমরা আমরাই তো।এই যে আমি আপনাকে এই লুকে দেখেছি এটা আমি কাউকে বলবো না। শুধু আমার পঁচিশ জন বান্ধবীকে বলবো। আর আপনার মাকে বলবো।
শান মাথায় হাত দিয়ে ইশার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে আছে।
“দেখলেন আমি কতো রোমান্টিক হয়ে গেছি। কালকে আরও হবো। আস্তে আস্তে আমার রোমান্টিকতা বাড়বে। বাড়তে বাড়তে একদিন আমি অনেক বড় রোমান্টিক হবো। দেখে নিয়েন।
আর হ্যাঁ আমি যে আপনাকে চুমু খেয়েছি এটা আমি সবাইকে বলবো। কেনো বলবো বলেন তো?
বলবো কারণ মা বলেছে জীবনে প্রথমবার কিছু করলে সেটা সবাইকে দেখাতে হয়। সবার সাথে শেয়ার করতে হয়। চুমুটা তো আর সবাইকে দেখাতে পারবে না।তাই শেয়ার করবো।
মিষ্টি হেসে বলে ইশা।
” তুমি কি ভেবে ফেলেছো আমি পাগল না হওয়া পর্যন্ত তুমি থামবে না?
শান অসহায় ফেস করে বলে।
ইশা সে কথায় পাত্তা দেয় না।
“শুনুন এখন থেকে এখন থেকে আপনি পুরো কথা বলবেন না। একটু খানি বলবেন৷ যেমন বলবেন ” গ” আমি বুঝে নেবো আপনার গরম লাগছে।
শান হা করে তাকিয়ে আছে ইশার দিকে।
“তুমি আমাকে ফু
” থামেন থামেন থামেন
ইশা থামিয়ে দেয় শানকে।
“ফুলসজ্জা বলতে চাইছেন তো?
কেমন পারলাম বলুন?
কর্তার টেনে বলে ইশা।
শান বিরক্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
” আল্লাহ আমাকে বাঁচাও
“আল্লাহ আপনাকে কেনো বাঁচাবে?
আপনি যান রেডি হয়ে আসুন। আজকে আমরা ফাস্ট ডে রিলেশনশিপ সেলিব্রেট করবো।
তুলতুল গুনগুনিয়ে গান গাইছে আর লাগেজে শাড়ি খুঁজছে। কমলা রংয়ের একটা সিল্কের শাড়ি নেয় তুলতুল। আজ একটু সাজুগুজু করবে। নতুন শহরে এসেছে না সাজলে হয়?
সায়ান গেছে পাখির সাথে কথা বলতে। পাখি রেগে বম হয়ে আছে। রুমের জিনিস ভাংচুর করছে।তাই সায়ানের বস ওকে কল করে যেতে বলেছে।
তুলতুলের তো মনে মনে বেশ আনন্দ হচ্ছে। ওদের মধ্যে ঝগড়া তো লাগিয়ে দিতে পেরেছে।
ওয়াশরুমের দরজাটা ভিড়িয়ে রাখে তুলতুল৷ লক করে না। ভীষণ ভয় করে ওর। লক করলে যদি খুলতে না পারে।শাড়িটা রুমে রেখে গেছে তুলতুল। ব্লাউজ আর পেটিকোট নিয়ে গেছে। এমনিতেও তুলতুল খুব ভালো শাড়ি পড়তে জানে না। তারওপর ওয়াশরুমে শাড়ি পড়াটা খুব ঝামেলার।
শাওয়ার শেষ করে ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে নেয় তুলতুল। তোয়ালে দিয়ে চুল মোড়াতে যাবে আর তখনই হুরমুরিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে সায়ান। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে তুলতুল সায়ান দুজনই।
সায়ান বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। তুলতুল লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে নেয়।
” আআআপনওি এএএখানে কেনো এসেছেন?
ববব…র হন তারাতাড়ি?
থেমে থেমে বলে তুলতুল।
“তুই লক করিস নি কেনো?
আর আমাকে অর্ডার করার তুই কে?
বের হবো না আমি।
তুলতুলের দিকে এক পা এগিয়ে এসে বলে সায়ান। ভরকে যায় তুলতুল।
” দদদেখুন ভালো হচ্ছে ন কিন্তু।
আআপনি খুব খারাপ।
আঙুল তুলে বলে তুলতুল।
“আচ্ছা তাই না কি?
তাহলে অসব্ভ্যতামি করে বাথটাবে ডুবিয়ে মেরে ফেলি তোকে?
তুলতুল আতঙ্কে ওঠে। এখন কি সত্যি মেরে ফেলবে না কি?
সায়ান সুইচ টিপে দেয়। বাথটাবে পানি পড়বে। তুলতুলের ভয় বেরে যায়।
এখন কে বাঁচাবে?
” দেখুন আমার এখনো নাতিনাতনির মুখ দেখা বাকি। প্লিজ মারবেন না।
আকুতি ভরা কন্ঠে বলে তুলতুল।
“তাই?
ঠিক আছে তাহলে নাতিনাতনির মুখ দেখার ব্যবস্থা করে দেই?
এরা বলেই সায়ান দেয়ালের দুই পাশে হাত দিয়ে আটকে দেয় তুলতুলকে।
” আমার সাথে বেইমানি করার শোধটা আজকেই নিয়ে নেবো।
প্রতিশোধ নেওয়ার মোহ্মম সময় এটাই।
বলেই তুলতুলের ঘাড়ে মুখ গুঁজে সায়ান। তুলতুল জমে যায়।
এই প্রথম সায়ান এতোটা কাছে। আজ না সায়ানের চোখে আছে কোনো রাগ আর না আছে কোনো হিংস্রতা। আছে শুধু গম্ভীরতা।
এই গম্ভীর ভাবটাই তুলতুলকে আরও বেশি ভয় পাইয়ে দিচ্ছে।
চলবে……….