#আমার তুমি
পর্ব ২৭
#তানিশা সুলতানা
“জ্বলে?
আমাকে পাখির সাথে দেখে বুকে জ্বালাপোড়া করে? কষ্ট হয়? জেলাস হস? পাখিকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে?
রিভেঞ্জ শব্দটা কখনো শুনেছিস নিশ্চয়?
আমারও জ্বলতো। খারাপ লাগতো। কষ্ট হতো। ইফাদ যখন তোর (গলা, কাঁধ, বুক, কপাল, কোমর ছুয়ে বলে) এখান এখানে এখানে এখানে ছুঁয়ে দিতো আমারও খারাপ লাগতো। কষ্ট হতো।
বারবার তোকে না করতাম ওর কাছাকাছি থাকতে।
মনে পড়ে তোর?
চিৎকার করে বলে সায়ান। তুলতুল অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে। চোখ দুটো টলমল করছে।
” এখানে কষ্ট হতো (বুকের বা পাশে হাত দিয়ে)
শ্বাস আটকে আসতো। খুন করে ফেলতে ইচ্ছে হতো।
চোয়াল শক্ত করে বলে সায়ান।
টুপ করে তুলতুলের চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। সায়ান চোখ বন্ধ করে নেয়। দুজন দুজনের শ্বাস গুনতে পারছে। তুলতুল নিজের ডান হাতটা সায়ানের বুকের বা পাশে রাখে।
“তোর জন্য আমার জীবনটা ছারখার হয়ে গেছে। আমার ভাই এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয়। আমার দাদিমা আমাদের সাথে নেই। সব থেকে বড় হ্মতি তুই করেছিস আমার। এবার তোকে আমি কষ্ট দেবো। যতটা আমাকে দিয়েছিস তার থেকেও বেশি।
তুলতুল চুপচাপ সায়ানের বুকে মাথা রাখে। চোখ বন্ধ করে সায়ানের কষ্ট অনুভব করে। মুচকি হাসে তুলতুল দুর্বল হলে চলবে না। সায়ান যদি বুঝতে পারে তুলতুল দুর্বল হয়ে পড়েছে তাহলে পাখির সাথে বেশি করে ঢলাঢলি করবে। আরও বেশি কষ্ট দেওয়ার জন্য।
সায়ান চোখ বন্ধ করে তুলতুলকে অনুভব করছে। তুলতুল বুকে মাথা রাখাতে বুকটা শিতল হয়ে গেছে। পারছে না দুরে ঢেলে দিতে।মন বলছে মেয়েটাকে ছুঁড়ে ফেলে দে। বিবেক বলছে এই মেয়েটার কোনো দোষ নেই। মেয়েটা পরিস্থিতির স্বীকার ছিলো।
তুলতুল সায়ানের বুক থেকে মাথা তুলে। সায়ানের পায়ের ওপর ভয় দিয়ে খানিকটা উঁচু হয়ে সায়ানের এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দেয়। কপালের ঘাম ওড়না দিয়ে মুছে দেয়।
সায়ান গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে।
“রিভেঞ্জ নিচ্ছেন? আমাকে জ্বালাতে চাইছেন?
কিন্তু পারলেন না সায়ান মাহমুদ। কারণ আমি না জ্বলছি আর না জেলাস হচ্ছি। আপনি পাখিকে বিয়ে করে তিন বাচ্চার বাবা হলেও আমার কিচ্ছু এসে যায় না। তবে হ্যাঁ আপনাকে ডিভোর্স আমি দেবো না।
সায়ান তুলতুলের দিকে সরু চোখে তাকায়। তুলতুল সায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে।
” আপনি কি জানেন মিস্টার রিভেঞ্জ আমিও নিতে জানি। মনে আছে আমি যখন ইফাদের সাথে শপিং করতে যাচ্ছিলাম তখন আপনি আমাকে মুখ লুকাতে বাধ্য করেছিলেন।
তো এখন আমার পালা।
বাঁকা হাসে তুলতুল।
সায়ান বড়বড় চোখ করে তাকায় তুলতুলের দিকে।
“বাড়াবাড়ি করবি না একদম। চাপকে সিধে করে দেবো তোকে। মুখে মুখে কথা বলা শিখে গেছিস।
চোখ পাকিয়ে বলে সায়ান।
তুলতুল ফিক করে হেসে ফেলে।
সায়ানের গলা ছেড়ে দেয়। খানিকটা দুরে গিয়ে দাঁড়ায়।
” এটাই আপনার আর আমার মধ্যে পার্থক্য। আমি সম্পর্ককে সম্মান করতে জানি। সম্পর্কের মূল্য বুঝি। তাই তো আপনার এতো অবহেলা সয্য করেও টিকে থাকার চেষ্টা করছি। আর ইফাদকেও বিয়ে করতে রাজি ছিলাম। আপনার জায়গায় অন্য কোনো গেলো থাকলেও আমি তার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। কারণ সম্পর্ক ভাংতে সময় লাগে না। কিন্তু একটা সম্পর্ক গড়তে অনেক সময় লাগে।
গম্ভীর গলায় বলে তুলতুল। সায়ান থমকায়। আজ প্রথমবার তুলতুলে এতো গম্ভীর হয়ে কথা বলতে দেখছে। তবে ভালোই লাগছে। তুলতুল কষ্ট পেলেই সায়ান খুশি হবে।
সায়ান বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে।
এবার তুলতুল চ
শয়তানির হাসি দেয়।
“এবার আপনাকে দেখাবো জেলাস কাকে বলে? আর এটাও দেখাবো আমি জেলাস না। আমার জ্বলেও না। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে জানি। হুটহাট রেগেও যায় না আবার একবার রেগে গেলে সহজে রাগ কমে না।
এক গাল হেসে বলে তুলতুল।
” চলেন আমার সাথে।
তুলতুল সায়ানের হাত ধরে বলে।
“ফ্রীতে শুটিংয়ের মজা অনুভব করাবো।
চোখ টিপে বলে তুলতুল।
সায়ান চোখ পাকিয়ে তাকায়। তুলতুল সেদিকে পাত্তা দেয় না। বা হাত দিয়ে চোখ মুছে সায়ানকে নিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
” তুলতুল বাড়াবাড়ি করিস না। থেমে যা বলছি।
“বাড়াবাড়ি কই করলাম? দেখাতে তো হবে আমি জেলাস না। তাই না?
সায়ানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে তুলতুল।
ওদের বিল্ডিংয়ের পাশেই একটা ক্যাফো আছে। সেখানেই পাখি তুহিন আর সুমন কফি খাচ্ছিলো। তখন সেখানে সায়ানকে নিয়ে উপস্থিত হয় তুলতুল। তুলতুলের ঠোঁটের কোনে লেগে আছে এক চিলতে হাসি। আর সায়ানের মুখটা হয়ে আছে হুতুম পেঁচার মতো।
“তুহিন ভাইয়া উঠুন।
তুলতুল তুহিনের চেয়ার ধরে বলে। সবাই চমকে ওঠে। তুলতুল তারা দিয়ে যাচ্ছে। তুহিন উঠে দাঁড়ায়। তুলতুল সায়ানকে টেনে এসে বসিয়ে দেয় তুহিনের চেয়ারে পাখির পাশে।
সায়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে। মেয়েটা খুব বাড়াবাড়ি করছে। সায়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে করলেই পারতো তুলতুলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে চলে যেতে। কিন্তু সায়ান যাবে না। ও দেখতে চায় সত্যিই তুলতুল জেলাস কি না?
তাই চুপচাপ বসে আছে।
” বুঝলাম না?
তুহিন তুলতুলকে প্রশ্ন করে। পাখি আর সুমন হা করে দেখছে হচ্ছে টা কি?
“আসলে কি হয়েছে?
ভাইয়া পাখি আপুর সাথে সময় কাটাতে চাই ছিলো। কিন্তু তখন আমার খুব জোর পেয়েছিলো ভাইয়াকে ইশারায় বলি। আর ভাইয়া আমাকে নিয়ে রুমে যায়।
তারপর আর কি বলবো? এতো এতো বকা দিলো আমাকে। এখনো না কি পাখি আপুর সাথে কাপাল পিক তোলা বাকি।
তোমরাই বলো পটি কি বলে কয়ে আসে?
আমার কি দোষ?
তাই নিয়ে এলাম। এবার আমি দায়িত্ব নিয়ে কাপাল পিক তুলে দেবো।
সায়ানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে তুলতুল।
সায়ান তুলতুলের দিকেই তাকিয়ে আছে। পাখি তো খুব খুশিতে। খুশিতে গদগদ হয়ে সায়ানের হাত চেপে ধরে।
” আচ্ছা চলুন আমরা চলে যাই। ওনাদের মাঝে আর কাবাবের হাড্ডি হয়ে থাকবো না।
তুলতুল তুহিনকে বলে।
তুহিন আর সুমন সায় দেয়। তুলতুল চোখের ইশারায় সায়ানকে অল দ্যা বেস্ট বলে চলে যায়।
“তুলতুলের মনে কি সত্যিই আমার জন্য কোনো ফিলিং নেই? কোনো অনুতাপ নেই ওর মধ্যে? ভালোবাসে না ও আমায়?
আমিও কি বোকা। তুলতুল একটা বেইমান। এখন দেখেছে আমার ভালো চাকরি আছে। বাড়ি গাড়ি করেছি তাই আমার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
সায়ান তাচ্ছিল্য হাসে।
কিন্তু নাহহহ তুলতুলের মুখ থেকে ভালোবাসি শুনতেই হবে। যে করেই হোক। তবেই তো হবে এই গল্পের সমাপ্তি।
বাঁকা হাসে সায়ান।
” সায়ান কি কফি খাবে বলো?
পাখি লাজুক হেসে বলে।
“তোমার ইচ্ছে।
সায়ান মিষ্টি হেসে বলে।
ধক করে ওঠে তুলতুলের বুকের ভেতরটা। হাসি মুখটা চুপসে যায়। বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা করতে থাকে।
তুলতুল তুহিন আর সুমনের সাথে অন্য টেবিলে বসেছিলো। তুলতুলের ওখান থেকে একদম সোজাসুজি দেখা যাচ্ছে সায়ানদের।
তুলতুল মাথা নিচু করে ফেলে।
“আপনি কি বুঝেন না সায়ান আমার এসব পছন্দ হচ্ছে না। ভালো লাগছে না আমার। খুব কষ্ট হচ্ছে। যতটা কষ্ট আপনি আমাকে দিতে চাইছেন তার থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছে আমার। বুকটা পুরে ছাই হয়ে যাচ্ছে।
কেনো বুঝেন না আপনি?
খুব খারাপ আপনি?
খুব খারাপ।
বিরবির করে বলে তুলতুল।
শান আজকে মিলিকে বাইকের পেছনে বসিয়ে ভার্সিটিতে নিয়ে গেছে। মিলি শানের বেস্টফ্রেন্ড। দুজনের বাড়ি পাশাপাশি হওয়াতে একসাথেই গেছে আজ।
ইশা এটা দেখে ফেলে। ভীষণ রেগে গেছে ইশা। সাথে খুব কষ্ট পেয়েছে। মেয়েটা কি সুন্দর শানের বুকের ওপর হাত রেখেছিলো। কেনো রাখলো? হেসে হেসে কথা বলছিলো। মাঝেমধ্যে শানের পিঠে থাপ্পড় দিচ্ছিলো। শাওও হেসে লুটোপুটি খাচ্ছিলো।
ইশা স্কুলে যাচ্ছিলো। ভার্সিটির পাশ দিয়েই স্কুলে যেতে হয়। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে ইশার। কয়েক ফোঁটা পানিও গড়িয়ে পড়েছে। অটো থেকে দেখেছে ওদের।
ভার্সিটির পাশ দিয়ে অটোটা যাওয়ার সময় ইশা ভার্সিটির গেটের দিকে তাকায়। শান মেয়েটার হাত ধরে হাঁটছে।
” আপনার পাশে অন্য কাউকে দেখার আগে আমি দুনিয়া ছাড়তে চাই। বিরবির করে বলে ইশা। তারপর গা ছেড়ে দেয়৷ ফলে চলতি অটো থেকে পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে যায় ইশা। কিছু পড়ার শব্দে শান মিলি দুজনই পেছনে তাকায়। ইশাকে পড়ে থাকতে দেখে শান চিৎকার দিয়ে ওঠে।
চলবে………….