#আমার তুমি পর্ব ৬
#তানিশা সুলতানা
“বললাম না বাসায় কেউ নেই। তাও ম্যা ম্যা করছিস কেনো?
তুলতুলের হাতে জামাকাপড় দিয়ে বলে সায়ান।
” পাঁচ মিনিটে চেঞ্জ করে বের হবি। এক মিনিট লেট হলে আবার বৃষ্টির মধ্যে রেখে আসবো।
বলেই হনহনিয়ে চলে যায় সায়ান।
তুলতুল হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। লোকটার তাহলে কান্ডব ঙ্গান আছে।
তারপর মনে পড়ে সায়ানের ঠান্ডা গলায় দেওয়া থ্রেট। তারাতাড়ি চেঞ্জ করতে হবে।
তারাতাড়ি করে উল্টো করে জামা পড়ে দরজা খুলে তুলতুল। হাত পা কুচকে গেছে। জ্বর যে আসবে এটা নিশ্চিত তুলতুল।
কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে সায়ান চলে আসে।
তুলতুল হাত এগিয়ে দেয়। সায়ান তুলতুলের হাত না ধরে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ায়। তুলতুল মাথা তুলে তাকায় সায়ানের দিকে। হাতটা নামিয়ে দেয়। অপমানিত হয়।
“তুই না থাকবি না? চলে যাবি? তাহলে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিস কেন?
” কারণ এখন আমি হাঁটার মতো অবস্থায় নেই। যখন হাঁটতে পারবো তোকে দুই চারটা থাপ্পড় মেরে চলে যাবো।
মনে মনে কথাগুলো আওড়ালেও মুখে বলতে পারে না।
সায়ান দুই কদম এগিয়ে আসে।
“কথা তুই না মানলেও সত্যি যে তাহমিনা তুলতুল সায়ান মাহমুদকে ছাড়া এক পা এগোতে পারবে না।
বলেই কোলে তুলে নেয় তুলতুলকে।
” নাইস জোকস
বিরবির করে বলে তুলতুল। এখন চুপ থাকাটাই বুদ্ধি মানের কাজ। কেনোনা রেগে যদি কোল থেকে ফেলে দেয় তাহলে কোমরটা ভেঙে যাবে। তাই তুলতুল চুপচাপ থাকে।
সায়ান তুলতুলকে বিছানায় বসিয়ে দেয়।
“শুয়ে পড়। আমি একটু পর আসছি।
তুলতুল শুয়ে পড়ে। সায়ান গলা ওবদি চাদর টেনে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
বিকেলে গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে তুলতুলের। ব্যান্ডেজ ভিজে যাওয়াতে আবারও নতুন করে ব্যন্ডেজ করা হয়। পায়ের ব্যাথাও বেড়েছে খুব।
সায়ান খাবার নিয়ে তুলতুলের মাথার কাছে বসে তুলতুলকে ডাকছে কিন্তু ওর হুশ নেই।
সাহেদা বেগম শান সুমু ওরাও বসে আছে তুলতুলের পাশে।
সায়ান মায়ের থেকে চেপে গেছে তুলতুলের পা কেটে যাওয়ার ঘটনা।
“পানি খাবো
একটু নরেচরে উঠে অস্ফুরণ কন্ঠে বলে তুলতুল৷ সায়ান তরিঘরি করে তুলতুলকে পানি দেয়। মাথায় হাত দিয়ে উঁচু করে পানি খাইয়ে দেয়।
” কিছু খেয়ে ঔষধ খেতে হবে।
সায়ান শান্ত গলায় বলে।
তুলতুল পিটপিট করে চোখ খুলে সায়ানকে দেখে কপালে ভাজ ফেলে।
“আপনি আসবেন না আমার কাছে। খুব খারাপ আপনি। আপনার জন্য এখন আমি অসুস্থ।
তুলতুল ভাঙা ভাঙা গলায় বলে।
সায়ান ঢোক গিলে। মায়ের দিকে তাকায়। সাহেদা বেগম শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে। এই শান্ত চাহনিতেই সায়ান ভয় পেয়ে যায়। এটাই ঝড়ের লহ্মণ।
সায়ান আবার শুয়িয়ে দেয় তুলতুলকে।
” আসলে মা হয়েছে কি
সায়ান আমতা আমতা করে মাকে কিছু বলতে যায়।
সাহেদা বেগম হাত উঁচু করে থামিয়ে দেয়।
“এতখনে বুঝতে পারলাম মেয়েটার গাল দুটো লাল কেনো।
তুলতুলের গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন উনি।
” ভাইয়া শুধু শুধু টর্চার করে তুলতুলের ওপর।
সুযোগ পেয়ে সুমুও বলে।
“আমার সাথে বাইরে আয় তুই
বলেই সাহেদা বেগম চলে যায়।
সায়ান জোরে শ্বাস নিয়ে মায়ের পেছন পেছন যায়।
একদম সায়ানের রুমে গিয়ে থামেন উনি। সায়ান চোরের মতো ওনার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে।
” কেনো করলি এমন?
বুকে হাত গুঁজে সরু চোখে তাকিয়ে বলেন উনি।
“মা আমি তুলতুলকে বিয়ে করতে চাই।
সায়ান মাথা নিচু করে বলে।
” সেটা পরে দেখছি আগে বল কারণে অকারণে ওর গায়ে হাত কেনো তুলিস?
“কথা শোনে না আমার। একটা কথা বললে দশটা কথা শুনিয়ে দেয়। এমন করলে চলে বল? আমাকে ইগনোর করে ও। সয্য হয় না আমার।
সায়ান নির্বাক ভাবে বলে কথা গুলো।
ফোঁস করে শ্বাস নেয় সাহেদা বেগম।
” আমি বুঝে গেছি। তুই তুলতুলকে এখানে থাকতে দিতে চাইছিস না। আমার ভাই বিশ্বাস করে তার মেয়েকে আমার আমানত হিসেবে পাঠিয়েছে। আর আমারই ছেলে প্রতিনিয়ত তাকে টর্চার করছে।
“মা তুমি ভুল বুঝছো
” তুই আমাকে ঠিক বোঝাতে আসিস না। কালকেই আমি তুলতুলকে হোস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করবো। আর কি যেনো বলছিলি বিয়ে করবি?
তুই তো তুলতুলের এক নখেরও যোগ্য না। ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এসব বাদ দিয়ে কাজে মন দে।
এক নাগারে কথা গুলো বলে সাহেদা বেগম বেরিয়ে যেতে নেয়।
“তুমি আমার মায়ের আগে ব্রেস্টফ্রেন্ড তাই তোমাকে নিজের ইচ্ছের কথা বললাম। এখন এটাও শুনে রাখো তুলতুল কোথাও যাবে না এই বাড়িতেই থাকবে। আর আমি ওকেই বিয়ে করবো। এটা এনি কস্ট।
চোয়াল শক্ত করে বলে সায়ান।
” সায়ান পাগলামি করবি না একদম। নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
চোখ রাঙিয়ে বলে সাহেদা বেগম।
“তুলতুলকে বিয়ে না করা ওবদি আমি পাগলামি করবোই। ওকেই আমার চাই।
বলেই সায়ান বেরিয়ে যায়। সাহেদা বেগম ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
” বিগড়ে গেছে ছেলেটা।
সন্ধার পরপরই তুলতুলের জ্বর ছুটে গেছে। এখন অনেকটাই ভালো লাগছে। সুমু শান আর তুলতুল বসে গল্প করছে। ফুপি ঝাল ঝাল করে নুডলস রান্না করে এসে দেয়। তুলতুল ওদের সাথে কথা বলার তালে তালে খাচ্ছে।
“ইসসস কত দিন বিয়ের দাওয়াত খাই না।
শান অফসোসের সুরে বলে।
” তুমি বিয়ে করো আমরা দাওয়াত খাই।
তুলতুল মুখে নুডলস পুরে বলে।
“আমি বিয়ে করলে তো আর আমি খেতে পারবো না।
” তুই কেনো খেতে পারবি না?
সুমু কপাল কুচকে বলে।
“গাড়ি আমি তো লজ্জা পাবো। খাবি তো তোরা।
সুমুর মাথায় চাটি মেরে বলে শান।
” তার চেয়ে ভালো হয় বড় ভাইয়া বিয়ে করলে। জমিয়ে মজা করবো আর খাবো।
শানের কথা শুনে তুলতুলের হাসিমাখা মুখটা চুপসে যায়। নুডলস গলায় আটকে যায়। কাশতে শুরু করে। সুমু তারাহুরো করে পানি এসে দেয় ওকে।
“কি হলো তোর?
শান বলে।
তুলতুল পানি খেয়ে লম্বা শ্বাস নেয়।
” তোমার ভাইকে কে বিয়ে করবে? হনুমানের মতো চেহারা, বাঘের মতো কন্ঠ হাতির মতো কান খরগোশের মতো নাক। পুরো বডিটা আস্ত বনমানুষের মতো। ওই চিরিয়া খানার গুইসাপকে কেউ বিয়ে করবে না।
তুলতুল হাত নাচিয়ে বলে।
শান আর সুমু গালে হাত দিয়ে তুলতুলের বিবরণ শুনছে।
“আমি দেখাবো কিভাবে গর্জন তুলে?
ওকে দেখাচ্ছি
শান আর সুমুর চোখ যায় দরজার দিকে। সেখানে সায়ান দাঁড়িয়ে আছে। শান আস্তে আস্তে খাটের নিচে চলে যায়। সুমু চোখ বড়বড় করে তুলতুলকে থামতে বলছে। কিন্তু তুলতুল তো থামবে না। ওই বনমানুষটা জ্বালিয়ে পুরিয়ে জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে দিয়েছে। বলবেই তুলতুল।
” থামতে বলছিস কেনো? ভয় পাস ওই হাতিকে? একদম ভয় পাবি না। আমার পা টা সেরে গেলে আমি ওই লোকটাকে পঁচা পুকুরে চুবানি দেবো। করলার পাতা বেটে খাইয়ে দেবো।
হনুমান একটা। করলার বংশধর
রাগে ফুসফুস করছে তুলতুল।
“আর কিছু বলবি না।
হঠাৎ করে সায়ানের গলা শুনে চমকে ওঠে তুলতুল। বুক টিপটিপ করছে। সত্যি সত্যি সায়ান না কি দেখার জন্য এক চোখ বন্ধ করে ঘাড় বাঁকা করে।
দরজায় ঠেস দিয়ে পকেটে দুই হাত পুরে পায়ের ভাজে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সায়ান।
থমথমে খেয়ে যায় তুলতুল।
সামনে তাকিয়ে দেখে সুমু আর শান কেউ নেই। এরা কই গেলো?
এবার ভয়টা বেরে যায় তুলতুলের। এখন কে বাঁচাবে? ওরা থাকলে না হয় বাঁচার একটা উপায় ছিলো। এখন? এই বনমানুষটা তো খেয়েই ফেলবে তুলতুলকে। পা টাও ভালো না যে দৌড় দেবে।
চলবে
কি লিখেছে নিজেও জানি না। রিচেক দেওয়ার পরেও বানান ভুল হয় আর আজকে রিচেকই দেয় নি। বানান গুলো না দেখে পইড়েন
পরের পর্ব গুলো গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করবো আর বড় করে দেবো।