
কেয়া পায়েলের পিক
অরোনী, তোমার জন্য~১৩
লিখা- Sidratul Muntaz
দুইতলার লিভিংরুমে এই মুহূর্তে বাড়ির সবাই সমবেত হয়েছে। সকলের চেহারা গম্ভীর। একটা ভয়ংকর কান্ড ঘটে গেছে বাড়িতে। রাহাত মাত্র অফিস থেকে ফিরেছে। তার একমাত্র বউয়ের ভাইয়ের মুখ পুড়ে গেছে। এটা তার জন্য বিরাট দুঃসংবাদ। অথচ নিজের বাড়ির সদস্যদের কারো কিছু হলে রাহাত এতো মাথা ঘামায় না। যতটা বউয়ের বাপের বাড়ির সদস্যদের জন্য মাথা ঘামায়। রাবেয়া ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন।
রুবায়েতের চিৎকার থেমে গেছে। দীপ্তি একটা ছোট পাখা দিয়ে ভাইয়ের মুখে অনবরত বাতাস করছে। রুবায়েতের চেহারা অস্বাভাবিক লাল। দেখলে মনে হবে ভয়ংকর কোনো প্রেতাত্মা। রুবায়েত রিতুকে আশেপাশে খুঁজছে। মেয়েটাকে কাছে পেলে সে নিজেও একটা চড় মারতো। কতবড় বেয়াদব! রিতু দীপ্তির চড় খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে অরোনীর রুমে ঢুকে গেছে। এখনও সেখানেই বসে আছে।
অরোনী বাথরুম থেকে বের হয়েছে অনেকক্ষণ পরে। তার সারা শরীর ভেজা ছিল। এখন শুকনো কাপড় পরে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে শান্তমুখে নিষ্প্রাণ পুতুলের মতো বসে আছে। রাফাত তার গা ঘেষে বসেছে। অরোনীর হাত দু’টো রাফাতের হাতের মুঠোয়। অরোনী থেকে থেকেই কেঁপে উঠছে।
রাফাতের বুকে মাথা ঠেকালে ভয় একটু কমছে। তারপর আবার সেই জঘন্য স্মৃতি মনে করে লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। রিতু তাদের থেকে একটু দূরে বসে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছে। নিজের জন্য না, তার কান্না পাচ্ছে অরোনীর জন্য। রাফাত এখনও ঘটনা জানে না। অরোনী মুখ খোলেনি। শুধু রাফাতকে অনুরোধ করেছে তার পাশে বসে থাকার জন্য। রাফাত তাই বসে আছে। তবে অরোনীর মুখ থেকে তার কিছু শোনার প্রয়োজন নেই।
উড়ো কথা সে যেটুকু শুনেছে তাই যথেষ্ট পরিস্থিতি বোঝার জন্য। এই সামান্য ব্যাপার না বোঝার কিছু নেই। অরোনীর বিধ্বস্ত অবস্থা আর রুবায়েতের পরিণতি দেখলে যে কোনো বুদ্ধিমান মানুষ চট করে বুঝে ফেলবে সব। রাফাত স্থির হয়ে বসে আছে ঠিকই। কিন্তু তার গায়ের শিরা-উপশিরা কাঁপছে। ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে রুবায়েতের গলা টিপে ধরতে। একাধারে চোখেমুখে ঘুষি মেরে তার হুশ উড়িয়ে দিতে। কিন্তু কিছুই করতে পারছে না সে। বাড়ির গুরুজনেরা রুবায়েতকে ঘিরে আছে। উফ, রাফাত কেন কিছু করতে পারছে না?
শীলা কথা বললেন,” তুমি সকালে এই বাড়িতে কেন এসেছিলে রুবায়েত? তোমার কি কোনো কাজ ছিল?”
দীপ্তি শীলার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন শীলা খুব খারাপ কথা বলেছেন। রুবায়েতের এই বাড়িতে আসা যেন খুব সাধারণ ব্যাপার। এই নিয়ে কেউ প্রশ্ন করতেই পারবে না। রাবেয়া বললেন,” আমাদের সাথে গাড়িতে উঠেছিলে না তুমি? তারপর আবার নেমে গেলে কেন? এখানে আসার জন্য?”
রুবায়েত নত কণ্ঠে বলল,” বিশ্বাস করুন আন্টি, আমার কোনো দোষই ছিল না। আপা আমাকে পাঠিয়েছিল।”
সবার নজর দীপ্তির দিকে গেল। শীলা চাচী অবাক হয়ে বললেন,” কি ব্যাপার দীপ্তি?”
দীপ্তি থতমত খেয়ে বলল,” আমার পার্স খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ড্রয়ারে রেখে দিয়েছিলাম তারপর আর নিতে মনে নেই। সেজন্য রুবায়েতকে পাঠিয়েছিলাম এখানে।”
রাহাত হতাশ হয়ে বলল,” তুমি এজন্য রুবায়েতকে কেন পাঠাতে গেলে! অন্যকাউকে পাঠাতে পারতে।”
দীপ্তি উঁচু কণ্ঠে বলল,” অন্যকাউকে পাঠাবো কেন? আর তুমি এমনভাবে বলছো যেন আমার ভাই সত্যি দোষী! ও তো বলছে ও কিছু করেনি।”
শীলা কঠিন গলায় বললেন,” অরোনী এখানে একা আছে। এটা জানার পরেও তুমি তোমার উপযুক্ত ভাইকে এখানে পাঠাবে কেন?”
” অরোনী একা কোথায় ছিল? আপনারাও তো ছিলেন। আর আমাদের মধ্যে ছেলেমানুষ বলতে কেবল রুবায়েত ছিল। ভেবেছিলাম ও এক দৌড়ে যাবে আবার এক দৌড়ে ফিরে আসবে। আমি কি আর জানতাম যে অরোনী এতো কাহিনী করবে?”
শীলা রুক্ষ গলায় বললেন,” তুমি এমনভাবে কেন বলছো? এটা কি অরোনীর দোষ? “
দীপ্তি দায়সারা হেসে জবাব দিল,” আমি কিভাবে বুঝবো কার দোষ? আমি তো এখানে উপস্থিত ছিলাম না।”
ছোটচাচা বললেন,” স্বশরীরে এখানে কেউই উপস্থিত ছিল না মা। কিন্তু কমন সেন্স এখানে সবার মাথায় উপস্থিত আছে। বোঝাই যাচ্ছে কি হয়েছিল।”
দীপ্তি রেগে বলল,” আপনারা কি আমার ভাইকে দোষী ইঙ্গিত করতে চাইছেন?আমি অরোনীর দোষও দিচ্ছি না। কিন্তু রুবায়েত আমাকে যা বলেছে তার সারমর্ম হলো, সে কফি খেতে চেয়েছিল অরোনীর কাছে। তারপর কেটলি থেকে কফিটা ওর গায়ে পড়ে গেছে। এটুকুই ঘটনা। আর বেয়াদবি করেছে রিতু। সে কেন রুবায়েতকে মরিচ গুঁড়া দিল সেটার বিচার আগে হওয়া উচিৎ। “
নির্মল সাহেব বললেন,” যে প্রকৃত দোষী তার অবশ্যই বিচার হবে। কিন্তু তোমার ভাই ফাঁকা বাড়িতে কেন ঢুকবে? এটা একটা অপরাধ। অরোনী একা জেনেও সে কফি খেতে চেয়েছে এটা আরও বড় অপরাধ। আর অরোনী যদি ভুল করেই ওর গায়ে কফি ফেলে দেয় তাহলে ওর মুখ কেন পুড়বে? পোড়ার কথা হাত অথবা পা। কপাল কেন ফাটবে? আর অরোনীই বা এমন অস্বাভাবিক আচরণ কেন করবে?”
দীপ্তি নিশ্চুপ। নির্মল রুবায়েতের দিকে চেয়ে বললেন,” তুমি যে পার্স নিতে এসেছিলে সেই পার্স কি নিতে পেরেছো?”
রুবায়েত ভদ্র গলায় বলল,” জ্বী পেরেছি আঙ্কেল। এইতো পার্স।”
রুবায়েত তার পকেট থেকে পার্স বের করল। এই পার্স আগে থেকেই তার কাছে ছিল। গাড়িতে বসে দীপ্তির ব্যাগ থেকে সে চুরি করেছিল। তারপর দীপ্তির কাছে ভাঙতি টাকা চেয়েছিল। দীপ্তি ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে দেখে তার টাকার ব্যাগ নেই। তখন রুবায়েত আগ বাড়িয়ে বলল,” ফেলে এসেছো মনে হয় বাড়িতে। আমি গিয়ে নিয়ে আসবো?”
দীপ্তি খুশি হয়ে বলল,” যা ভাই।” তারপর রুবায়েত গাড়ি থেকে নেমে যায়৷ দীপ্তি তখন বুঝতে না পারলেও এখন সব বুঝতে পেরেছে। রুবায়েত ভীষণ ঘাড়ত্যাড়া। তাকে দিয়ে একটা ছোট কাজও করানো যায় না। সে হঠাৎ আগ বাড়িয়ে কেন দীপ্তির ব্যাগ নিতে এতোদূর আসতে চাইবে? রুবায়েত তাহলে অরোনীর জন্যই এসেছিল। তাছাড়া ইদানীং অরোনীকে নিয়ে রুবায়েত একটু বেশিই আলোচনা করে।
তখনই দীপ্তির ব্যাপারটা বোঝা দরকার ছিল। সে বোঝেনি৷ আগে বুঝে ফেললে আজকে আর এই বিপদ হতো না। তবে এখন দীপ্তির প্রধান কাজ ভাইকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করা। যেহেতু রুবায়েত তার চাচাতো ভাই। রুবায়েত ধরা খেলে শ্বশুরবাড়িতে সেও মুখ দেখাতে পারবে না। এতোদিনের কুঁড়ানো মান-সম্মান সব খোয়া যাবে। ছোটচাচা একটু ভেবে-চিন্তে বললেন,” আচ্ছা রুবায়েত, সত্যিই কি কফিটা ভুলবশত পড়ে গেছিল নাকি অরোনী তোমার মুখে কেটলি ছুড়ে মেরেছিল?”
এই কথা শুনে চাপা শব্দে হেসে ফেলল উর্মি। আশা সঙ্গে সঙ্গে উর্মিকে চোখ রাঙালেন। ছোটচাচা আবার জিজ্ঞেস করলেন,” তোমার কপালে দাগ কেন?”
রুবায়েত অপ্রস্তুত হয়ে বলল,” আমারই ভুল হয়েছে। আমি ভাবীর সাথে একটা মজা করেছি। ভাবী ভুল বুঝে আমার উপর রেগে গেছেন। কিন্তু তাই বলে যে কেটলি ছুড়ে মারবে এটা বুঝিনি।”
মেঝোচাচা ভ্রু কুচকে বললেন,” কি এমন মজা করেছিলে?”
নির্মল সাহেব শক্ত চোখে চেয়ে আছেন। ইচ্ছে করছে উঠে গিয়ে ছেলেটার গালে দু-চার ঘা এখনি লাগাতে। নির্লজ্জ কোথাকার! রুবায়েত ইতস্তত করে বলল,” এমনিই। সাধারণ একটা মজা। ভাবীর সাথে মানুষ কত মজাই তো করে। আমি বুঝিনি ভাবী যে এতো কনজার্ভেটিভ মাইন্ডের।”
তানজিমা বলল,” রুবায়েত ভাই ঠিক বলেছে। ছোটভাবী সবকিছুতেই বেশি বাড়াবাড়ি করে। সে শুধু শুধু রুবায়েত ভাইকে…”
তানজিমাকে থামতে হলো। বড়চাচা এমনভাবে চোখ পাকিয়েছেন যে বাকি কথা বলার সাহস তার নেই। নির্মল সাহেব ভারী গলায় বললেন,” রুবায়েত, আমার দৃষ্টিতে অপরাধ তুমি করেছো। সেজন্য তোমার শাস্তি প্রাপ্য। কেন তুমি ছোটবউয়ের সাথে মশকরা করবে? এ কেমন দুঃসাহস? “
দীপ্তি প্রতিবাদী গলায় বলল,” বাবা আপনি এসব কি বলছেন?রুবায়েত মানুষটাই এমন। রুমা, নীলিমা, তানজিমার সাথেও তো ও কত মজা করে। ওরা তো কখনও কিছু মনে করেনি। অরোনী সবার মতো ফ্রী মাইন্ডের না এটা তার প্রবলেম। রুবায়েতের কি দোষ? সে তো আর জানতো না অরোনীর স্বভাব সম্পর্কে।”
নির্মল বললেন,” রুবায়েত জানতো না এটাই তার দোষ। সে কেন জানবে না যে মেয়েরা মজা করার বস্তু নয়? রুবায়েত তুমি এখনি কানে ধরে উঠ-বস করো। “
রুবায়েত হকচকিয়ে বলল,” স্যরি আঙ্কেল?”
দীপ্তি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো,” বাবা, আপনি এভাবে অপমান করতে কেন চাইছেন? অরোনী রুবায়েতকে ভুল বুঝেছে এখানে শুধু ওর দোষ কেন হবে? অরোনীও দোষী। কিন্তু আপনার বিচার দেখে মনে হচ্ছে আমার ভাই অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছে!”
নির্মল দীপ্তির কথা অগ্রাহ্য করে বললেন,” তারপর অরোনীর কাছে ক্ষমাও চাইবে তুমি।”
রুবায়েত বলল,” আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে। ভাবীর সাথে মজা করাটা আসলেই উচিৎ হয়নি। সেজন্য অবশ্যই আমি ক্ষমা চাইবো ভাবীর কাছে। ভাবী, অরোনী ভাবী। একটু বাহিরে আসুন প্লিজ।”
এই কথা বলতে বলতে রুবায়েত অরোনীদের বেডরুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রুবায়েতের কণ্ঠ শুনে রাফাত উঠে এলো। বাহিরে বের হয়ে দরজা ভিড়িয়ে দিল যাতে ভেতরের দৃশ্য দেখা না যায়। রুবায়েত তাও চেষ্টা করছে অরোনীকে দেখার জন্য। রাফাত কঠিনমুখে বলল,” কি হয়েছে?”
রুবায়েত সরল কণ্ঠে জবাব দিল,” আমি ভাবীর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।”
” কেন?”
” ছোট্ট একটা মজা করেছিলাম। ভাবী হয়তো কষ্ট পেয়েছেন অথবা আমাকে ভুল বুঝেছেন৷ তাই আমার মনে হচ্ছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। ভাবীকে একটু ডেকে দিন।”
রুবায়েতের কণ্ঠ থেকে এমনভাবে বিনয় ঝরছে যেন সে ভীষণ নির্দোষ। আর নির্দোষ হয়েও অনুতপ্ত বোধ করছে। রাফাত খুব কষ্টে নিজেকে সংবরণ করে বলল,” ক্ষমা চাইতে হবে না। যাও তুমি।”
” না, এটা কিভাবে হয়? আমার নিজের কাছেই এতো খারাপ লাগছে। ভাবী যে এভাবে আমাকে ভুল বুঝবে আমি ভাবিনি। তার পায়ে ধরে ক্ষমা না চাইলে আমার শান্তি লাগবে না। যতক্ষণ ভাবী আমাকে ক্ষমা না করবে আমি এখান থেকে যাবো না। প্লিজ, ভাবী একটু বাহিরে আসুন।”
রুবায়েত পারলে রাফাতকে অগ্রাহ্য করেই ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। এবার রাফাতের ধৈর্য্যের বাঁধ একদম ভেঙে গেল। বাবা, চাচা, কাউকে মানল না। হাত মুষ্টি করে রুবায়েতের বাম চোয়ালে ভয়ংকর একটা ঘুষি মারল। সবাই হতবাক হয়ে গেল। যারা বসেছিল তারাও উঠে দাঁড়িয়ে গেছে। রাহাত কাছে এসে চিৎকার করল,” রাফাত এটা কি করলি?”
রাফাত পর পর আরও দুইটা ঘুষি মারল। রুবায়েত মেঝেতে পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। রুমা আর্তনাদ করে উঠল,” ছোটভাইয়া মেরো না প্লিজ।”
রাফাত শুনল না। রুবায়েতের কলার টেনে আরেকটা দিতে যাচ্ছিল তখনি দীপ্তি চেঁচিয়ে উঠল,
” থামো বলছি। আরে এটা কি ধরণের অসভ্যতা শুরু হয়েছে? কেউ ওকে কিছু বলছে না কেন? আমার ভাইটাকে মেরে ফেলল! বাবা আপনিও কি কিছু বলবেন না?”
কেউ দীপ্তির কথার উত্তর দিচ্ছে না। দীপ্তি হিংস্র চোখে রাফাতের দিকে চেয়ে বলল,” আমার ভাইয়ের গায়ে তুমি কোন সাহসে হাত তুললে? তোমার নামে আমি মামলা করবো। গুন্ডা কোথাকার!”
রাফাত রক্তিম দৃষ্টিতে পালটা প্রশ্ন করল,” আগে বলো তোমার ভাই কোন সাহসে অরোনীর গায়ে হাত দিয়েছে? “
দীপ্তি ফোঁসফোঁস করে বলল,” কে বলেছে? আমার ভাই কখনও এমন কাজ করবে না। অরোনী বললেই হলো? আমি রুবায়েতকে চিনি না? তোমার বউ মিথ্যা কথা বানিয়ে বলছে।”
রাফাত দাঁত খিচে বলল,” অরোনী এখনও আমাকে কিছুই বলেনি। কিন্তু যখন বলবে তখন আমি..”
দীপ্তি ঝটপট বলল,” কিছু বলেনি তাও তুমি ওর গায়ে হাত তুললে? পুরোটা না জেনেই? এখনি ক্ষমা চাইবে তুমি ওর কাছে। “
রাফাত নির্মল সাহেবের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,” বাবা, তুমি কিছু বলবে না?”
নির্মল বললেন,” বাড়ির ভেতর ওকে মারাটা উচিৎ হয়নি।”
দীপ্তি চোখ বড় করে জানতে চাইল,” তাহলে কি বাইরে নিয়ে মারা উচিৎ?”
নির্মল গম্ভীরমুখে মাথা নাড়লেন।
” মারা তো অবশ্যই উচিৎ।” দীপ্তি ক্রোধপূর্ণ কণ্ঠে বলল, ” না জেনে কারো গায়ে হাত তোলা ক্রাইমের পর্যায়ে পড়ে।”
” তাহলে তুমিও ক্রাইম করেছো। পুরো ঘটনা না জেনেই রিতুকে চড় মেরেছো৷ পারবে ওর কাছে ক্ষমা চাইতে?”
রাফাতের কথা শুনে রাহাত বিক্ষিপ্ত মেজাজে ছুটে এলো।
” কি বললি তুই? আরেকবার বল! আমার বউ ক্ষমা চাইবে কাজের মেয়ের কাছে? তুই তো ভালোই হিপোক্রিট। মাকে মাফ চাইতে বলিস বউয়ের কাছে। বড় ভাবীকে মাফ চাইতে বলিস কাজের মেয়ের কাছে। তোর কি দিন দিন বোধশক্তি লোপ পাচ্ছে?”
রাফাত মাথা নিচু করে কঠিনভাবে বলল,” আমার বোধশক্তি ঠিক জায়গাতেই আছে। ভাবী অন্যায়ভাবে রিতুর গায়ে হাত তুলেছে। রিতুর জায়গায় নিলিমা হলেও আমি একই রিয়েক্ট করতাম।”
এই কথা শুনে নিলিমার গা জ্বলে উঠল। এর মানে কি? ছোটভাইয়া রিতুর সাথে তাকে তুলনা করছে! অর্থাৎ এই বাড়ির মেয়ে আর কাজের মেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই? অথচ ঘরের ভেতর থেকে কথাটা শুনেই রিতুর চোখে আবার পানি চলে এলো। তার চোখের এই অশ্রু কৃতজ্ঞতার।
এই বাড়িতে অনেকের কাছেই তো কতবার বকশিশ পেয়েছে সে। কিন্তু সম্মান কারো কাছে পায়নি। আজকে ছোটভাইয়ের কাছে পাওয়া হলো। রাহাত রাবেয়ার কাছে গিয়ে বলল,” মা, তোমাকে আমি আজকেই বলে দিচ্ছি। এই ছেলে তোমার বাড়ির মান-সম্মান ডুবিয়ে ছাড়বে। ওর কথার ধরণ দেখেছো? রীতিমতো দীপ্তি আর রুবায়েতকে জঘন্যভাবে অপমান করেছে। যে আমার বউকে এভাবে অপমান করে তার সাথে আমি এক বাড়িতে থাকবো না। এবার তুমিই ঠিক করো মা, ও বেরিয়ে যাবে নাকি আমি? আজকে এর একটা ফয়সালা অবশ্যই দরকার।”
রাবেয়া একবার বড় ছেলের দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার ছোট ছেলের দিকে। রাহাত হাঁফ ছেড়ে আবার বলল,” আরও একটা কথা তোমাকে বলে দিচ্ছি মা, এই ছেলের সাথে থাকলে তুমি জীবনে আরও অপমানিত হবে। নিজের বউয়ের কাছে তোমাকে মাফ চাওয়েছিল মনে নেই?কয়দিন পর দেখবে তোমাকে দিয়ে বউয়ের পা টেপাচ্ছে৷ তখন কি করবে?”
রাবেয়া হতভম্ব হয়ে যাচ্ছেন। ছোটভাইয়ের প্রতি বড়ভাইয়ের এতো ক্ষোভ! মা হয়ে দুইছেলের এমন বিবাদে তিনি কার পক্ষ নেবেন? দীপ্তি আর অরোনীর মধ্যে রাবেয়া কাউকেই পছন্দ করেন না। অরোনীর সাথে তিনি এখন যেটা করছেন সেটা আলগা আহ্লাদ। দূর্ব্যবহার করে অরোনীকে আর জ্বালানো যাচ্ছে না।
তাই ভালো ব্যবহার করে জ্বালাচ্ছেন! কিন্তু রাফাতকে তিনি প্রচন্ড ভালোবাসেন। আজ পর্যন্ত রাফাত কখনোই তাঁর মনে কষ্ট দেয়নি। কিন্তু রাহাত অনেকবার কষ্ট দিয়েছে। তাই রাবেয়াও ভালোমতো বোঝেন কোন ছেলে তাঁর জন্য সঠিক! তিনি রাফাতের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,” আমার ছেলে আমার কাছেই থাকবে। তুই বেরিয়ে যা!”
রাহাত মায়ের উত্তর শুনে হকচকিয়ে গেল।
চলবে……..
( যেহেতু এটা পারিবারিক গল্প তাই পারিবারিক ঝামেলা তো থাকবেই। এজন্য যদি স্টার জলসা মনে হয় তাহলে আমার কিছু করার নেই। স্টার জলসার কাহিনীও খারাপ না। তবে আমি স্টার জলসা অনুসরণ করছি না। আমি নিজের মতো লিখছি। নিজের ছোট্ট জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু লেখা সম্ভব।)
Aside from mineral imbalance and dehydration, your body is put into survival mode to transition from burning sugar to burning protein and fat for energy daily cialis online