#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_১৭ |১৮+ এলার্ট|
‘ইউ আর শুভ্র’স ওয়াইফ। মাইন্ড ইট।’
তুলি এবার সোজা হয়ে দাঁড়াল। শুভ্রর চোখে চোখ রেখে বললো,
‘শুধুই ওয়াইফ? আর কিছু নই?’
শুভ্র থামলো। তার দৃষ্টির ভাষা বদলে গেলো। কেমন অন্যরকম চোখে তুলিকে ছেঁটে দেখলো। তুলির কপালের চুল আঙুলে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে বললো,
‘ইউ আর শুভ্র’স এভরিথিং,তুলি।ইউ আর মেকিং মি ক্র্যাজি ডে বাই ডে। আমাকে ছাড়া অন্য পুরুষের দিকে অন্য নজরে তাকানো দূরের কথা, ভাবলেও খবর আছে তোমার। ইউ আর কমপ্লিটলি শুভ্র’স, কী মনে থাকবে?’
তুলি শুনে। ভালো লাগা অনুভূতিটা শরীরের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে যায় বিদ্যুতের ন্যায়। তুলি খানিক এগিয়ে আসে। পায়ে ভর দিয়ে শুভ্রর সমান উঁচু হওয়ার চেষ্টা করলে শুভ্র তুলির কোমরে হাত রেখে নিজের মুখ বরাবর উঁচু করে। তুলি শুভ্রর চোখের দিকে চোখ রাখে। শুভ্র প্রশ্নবোধক চোখে চেয়ে থাকে তুলির দিকে। তুলি মাথা নিচু করে মৃদু হাসে। পরপর আবার চোখ রাখে শুভ্রর চোখে। দুজনেই ভেসে যায় একে অপরের চোখের মায়ায়।শুভ্র যেন সম্মোহনে আছে। তুলি চেয়েছিল শুভ্রর মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা বের করতে। অথচ এখনো শুভ্র নিরব। সব বলেছে, অথচ ভালোবাসি শব্দটা বলেনি। কী পা ষাণ সে। তুলি শুভ্রর চোখে চোখ রেখে শোধায়;
‘কিছু বলতে চান আমায়। বলে ফেলুন; সুযোগ কিন্ত বারবার আসবে না।’
শুভ্র তুলির কথার অর্থ না বুঝে ভ্রূ নাড়ায়,’ কী বলব? কোন সুযোগের কথা বলছ তুমি?’
তুলি বিরক্ত হয়ে ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেলে। আহাম্মক একটা। তুলি রেগে সরে যেতে চাইল। কোমর থেকে শুভ্রর হাত জোরপূর্বক সরাতে নিলে শুভ্র ভ্রূ কুচকায়। হাতের বাঁধনে কিছুটা শক্তি প্রয়োগ করে;
‘উহু,ছটফট করে না।’
তুলি রাগ দেখায়, আবারও সরতে সরতে বলে,
‘করবই আমি। আপনি কিচ্ছু বুঝেন না। কিচ্ছু না। ইটস হার্টস মি। আমাকে ছাড়ুন। উফ, এতো শক্ত করে ধরেছেন কেন? ছাড়ুন।’
শুভ্র মৃদু স্বরে হাসল। বাঁকা চোখে চেয়ে দেখল তুলির অবিরাম ছটফট, অভিমানী মুখশ্রী। কী সুন্দর দেখাচ্ছে তুলিকে এ অবস্থায়। শুভ্র মুগ্ধ হয়ে দেখল শুধু। তুলি শুভ্রর নীরব দেখে তাকাল শুভ্রর দিকে।শুভ্র হাসল। তুলির কোমরে হাতটা সাপের ন্যায় পেঁচিয়ে ধরে নিজের সঙ্গে চেপে ধরল ওকে। তুলি প্রথমবারের ন্যায় এত ঘনিষ্ঠতায় শিহরে উঠল যেন। চোখ বুজে আসতে চাইছে। শুভ্র যেমন মা রাত্মক, তার করা একেকটা স্পর্শ তার থেকেও মা রাত্মক। তুলির মনে হচ্ছে,, তার রুহ অব্দি কাঁপছে শুভ্রর স্পর্শের দরুন। শুভ্র এখনো এমন গভীর স্পর্শে ছুঁয়ে রয়েছে। তুলি এবার হাল ছাড়ল, শুভ্রর দিকে কাতর চোখে তাকালে শুভ্র এক আঙুলে তুলির কপালের চুল কানের পেছনে গুঁজে বড্ড অন্যরকম, মোহময় গলায় বলল সুন্দর একটা বাক্য!
‘ইউ হ্যাভ দ্য মোস্ট বিউটিফুল আইজ, তুলি।’
তুলির কানে ঝংকার দিয়ে উঠলো। কী বলল শুভ্র? তুলি চোখ বড়বড় করে শুভ্রর দিকে চাইল। তুলি একটা পত্রিকায় পড়েছে, বিদেশিদের ভালবাসা প্রকাশ করার এক বাক্য হচ্ছে চোখ নিয়ে বলা। যা বললে অপর পাশের মানুষ বুঝে নেয়, সে তোমাকে ভালোবাসে। তুলির চোখের কোণায় পানি জমল খানিক। এতটা সাধনার পর শেষ অব্দি শুভ্র বলল, সত্যি বলল? তুলি আচমকা শক্ত করে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মুখ লুকালো। বিড়বিড় করে বললো,
‘আই লাভ ইউ টু, আই লাভ ইউ সো মাচ।আই-‘
বাকি কথা তুলি আর বলতে পারল না। কান্নায় ভেঙে পড়ল শুভ্রর কাঁধে। শুভ্র শুনছে, আর হাসছে। হালকা হাতে তুলির পিঠে মালিশ করে বুঝাচ্ছে,
~আমি বুঝি সব, আই নো ইউ লাভ মি। ইউ লাভ মি লাইক অ্যা ইনসেন।~
অনেকক্ষণ তুলি কাঁদলো, আর অভিযোগ করল। শুভ্রও ধৈর্য্যবান পুরুষের মতো সব শুনল। অনেকক্ষণ পর তুলি শান্ত হয়ে সরে দাঁড়াল। শুভ্রও ছাড়ল তুলির কোমর। তুলি এবার লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলো। এতোক্ষণ এভাবে দুজন জড়াজড়ি করে ছিলো, ভাবলেই গায়ে কাটা দিচ্ছে। শুভ্র নিজের গায়ের কুঁচকানো শার্টটা টেনে ঠিক করে তুলির দিকে তাকাল। তারপর কৌতুক করে তুলির লজ্জাবনত মুখের দিকে চেয়ে বললো,
‘এই শুভ্রর জন্যে কারও মনে এত ভালোবাসা জমা ছিল! জীবন তো ধন্য হয়ে গেলো আমার।’
তুলি কান্নামুখেও হেসে ফেলল। শুভ্র তুলির সেই হাসির দিকে চেয়ে দেখল। তারপর এগিয়ে এসে তুলির মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে খুব মিষ্টি করে বললো,
’উফ,এই হাসিটা! একদম মারাত্মক!’
তুলি লজ্জায় হেসে উঠে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। শুভ্র নিজের কাঁধের শার্টটুকু তুলিকে দেখিয়ে বলল,
‘দেখো কী অবস্থা করেছ আমার শার্টের। নতুন শার্টটা আমার একদম শ্যাষ।’
তুলি দুহাতে দু-চোখ বাচ্চাদের মতো মুছে বললো,
‘শার্টটা খুলে দিন। আমি ধুয়ে দিচ্ছি।’
কথাটা শুনে শুভ্র দ্রুত সরে গেলো দু কদম। তারপর হইহই করে উঠে বললো,
‘এখনই এসব খোলাখুলি না প্লিজ। আমিই শার্ট ধুয়ে দিব কাল।’
তুলি ভ্রু কুচকে তাকাল শুভ্রর দিকে। তারপে চোখ ছোটছোট করে বললো,
‘আপনি কী জানেন, আপনি সাধরণ ছেলেদের মতো নন?’
শুভ্র ভ্রু কুঁচকালো। প্রশ্ন করল,
‘আমি কেমন?’
তুলি এগিয়ে আনল নিজের মুখ শুভ্রের মুখের দিকে। দুজনের নাক ছুঁইছুঁই। শুভ্র ত্যাড়া চোখে চেয়ে নিজের মুখটা হালকা পিছিয়ে নিয়ে তুলির দিকে চাইল।
তুলি হঠাৎ হেসে শুভ্রর নাকে আঙুল দিয়ে টোকা দিয়ে বলল,
‘অনেক লাজুক।’
বলে হেসে সরে গেল তুলি। শুভ্রও প্রথমে কিছুটা অবাক হলো। পরপর হেসে উঠে মাথা চুলকে সোজা হয়ে বসে তুলির দিকে চাইল। তুলি বিছানায় বসল। শুভ্রও এগিয়ে এসে তুলির পাশে বসল। তুলি এখানে ওখানে তাকাচ্ছে বারবার, কিন্তু শুভ্রর দিকে তাকাচ্ছে না। বোধহয় লজ্জাটা তুলিকে এবার মেরেই ফেলবে। শুভ্র তুলির এসব কাণ্ড দেখছে। শুভ্র মুচকি হাসল। তারপর সামনে তাকিয়ে বললো একসময়,
‘আমার জীবনের প্রথম প্রেম তুমি, তুলি। আমি প্রেমের বেলায় খুবই কাঁচা। এটা আমার আম্মুও জানে। আমি মেয়েদের ভয় পেতাম ছোটবেলায়। বড় হলাম, তখন ভয় না বরং মেয়েদের লজ্জা পাওয়া শুরু করলাম। জীবনে কোনো মেয়ের কাছে স্বইচ্ছায় যাইনি, প্রফেশনাল কথা ছাড় আগ বাড়িয়ে কারো সঙ্গে সখ্যতাও নেই। দু-চারটে মেয়ে আমার কাছে ঘেঁষতে চাইলে আমার লজ্জা দেখে নিজেরাই সরে গেছে। আমার জীবনে এই প্রেম, এই ভালোবাসা, ভালোবেসে স্পর্শ করে কাউকে এসব সম্পূর্ণ নতুন। এমন নই যে আমি তোমাকে লজ্জা পাই। তোমাকে দেখলে আমকের লজ্জা লাগে না বটে, বাট তোমাকে স্পর্শ করতে আমার হাত কাঁপে। ভাবি, তুমি হয়তো পছন্দই করছ না, বা অস্বস্তি বোধ করছ। সেইজন্যই তোমাকে স্পর্শ করতে দ্বিধা হয় আমার। এটাকে তুমি ওয়ান কাইন্ড অফ লজ্জাও বলতে পারো।’
তুলি খুব মন দিয়ে শুনল শুভ্র কথা। কোন ছেলের প্রথম প্রেম হওয়া, সেই ছেলের প্রথম প্রেম রূপে তার স্ত্রী হওয়া, ব্যাপারটা তুলির কাছে অসাধারণ লাগল। শুভ্র যে তুলিকে অসম্ভব রেস্পেক্ট করে; স্ত্রী হিসেবে সেটাও তুলির কাছে বড্ড ভালো লেগে গেল। তুলি শুভ্রর দিকে তাকাল। আনমনা হয়ে বলল,
‘আপনি একদম অন্যরকম মানুষ। আমিও এই প্রথম করো প্রতি ফল করলাম। সে মানুষটা আমার জন্যে হারাম নয়, হালাল। ভাবলেই ভালো লাগছে আমার। ভাবতে পারেন, মেয়ে তো তাই মিথ্যা বলছি চরিত্র নিয়ে। কিম্তু সত্যি বলতে আমি সারাদিন পড়াশোনায় এতটা ব্যস্ত থাকতাম, সে সময়টাই মিলে নি। বা কেউ প্রপোজ করলেই ছেলে দেখে সুবিধার মনে হয়নি, তাই প্রেমেও জড়ানো হয় নি আর।’
শুভ্র হাসল। একটা কথা মনে পরে গেলো তার, তুমি চরিত্রের দিকে যেমন, ঠিক তেমন চরিত্রের সঙ্গীও তুমি ভবিষ্যতে পাবে। নিজের জীবনের বেলায় ব্যাপারটা এতটা খাঁটি হয়ে যাবে; শুভ্র বিশ্বাস করতে পারলো না।তারপর ওইদিন সারাটা বিকেল চলে গেলো দুজন গল্প করতে করতে। দুজনের মধ্যে এক অদ্ভুত প্রশান্তি বইছে, সেটা মনেমনে দুজনেই অনুভব করতে পারছে।
______________
সেই রাতে ধুম করে সাজেকের আকাশ ভেঙে হুট করে বৃষ্টি পরতে লাগল। হয়তো প্রকৃতির কোন ভাবনা আছে; এই সদ্য প্রেমে পড়া নতুন দম্পত্তি নিয়ে। শুভ্র-তুলি প্রায় কাকভেজা হয়ে রাতে খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরল। শুভ্র রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে কম্বলের নিচে শুয়ে আফরোজার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছে। শুভ্র ভেবেছে তুলি ওয়াশরুমে, হয়তো গোসল নিচ্ছে। কিন্ত শুভ্র ভুল ছিল।
তুলি গোসলে যায়নি। বরং সে বারান্দায়। শাড়ি পরে অবাধে বৃষ্টিতে ভিজছে। দুহাত দুদিকে মেলে বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে তুলি। বাসায় থাকলে ইয়াসমিন তুলিকে বৃষ্টি থেকে দূরে রাখেন। নাহলে দেখা যায় তুলি মাঝরাত্তিরেও ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টিতে ভেজা শুরু করে। শুভ্র কথা বলার ফাঁকে বারান্দা থেকে গুনগুনিয়ে গান শুনতে পায়। তুলি খুব আনন্দচিত্তে গাইছে;
‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে
পাগল আমার মন নেচে উঠে,হু হু হু’
শুভ্র ভ্রূ কুঁচকালো। আফরোজাকে বললো,
‘আম্মু তোমাকে আমি কাল কল দিচ্ছি। শুয়ে পড়ো তুমি। রাতের ওষুধ মনে করে খেও; ওকে? রাখছি।’
শুভ্র কল কেটে কম্বল ছেড়ে উঠল। ভ্রু কুঁচকে দূর থেকে বারান্দা দিয়ে চেয়ে পায়ে স্যান্ডেজ জড়িয়ে হাঁটা ধরলো বারান্দার দিকে। বারান্দার দরজার সামনে এসে শুভ্র তো হতভম্ব। তুলি একদম ভিজে একাকার অবস্থা। পাগলের মতো বৃষ্টিতে ভিজছে। শুভ্র বারান্দার ভেতরে গেলো না। দূর থেকেই ধমক দিল,
‘তুলি, কী হচ্ছে এখানে?’
তুলি চোখ খুলে শুভ্রর দিকে তাকাল। তারপর হেসে বলল,
‘বৃষ্টি উপভোগ করা হচ্ছে। আপনি জয়েন করবেন?’
শুভ্র চোখ পাকালো। বললো,
‘অসম্ভব। দেখি, তুমি ভেতরে আসো। এত রাতে বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লাগবে। ওয়েদারটা কিম্তু ভালো না। আসো, ভেতরে আসো বলছি।’
তুলি শুনলে তো। বরং সে বিরক্ত হলো। বললো,
‘উফ, আপনি! বাদ দিন। আই লাইক ইট।।’
শুভ্র বিরক্ত হয়ে তুলির বৃষ্টি ভেজা দেখতে লাগল। তারপর; তারপর ধীরে ধীরে শুভ্রর বিরক্ত হওয়া দুচোখে মুগ্ধতা নেমে এলো। কুঁচকানো ভ্রু সোজা হয়ে এলো, বেটে দু চোখ মুগ্ধ হয়ে গোল হয়ে এলো। শুভ্র দরজার সঙ্গে হেলান দিয়ে একদৃষ্টিতে তুলির বৃষ্টি ভেজা দেখতে লাগলো। তুলি, তুলি মেয়েটা কিভাবে এতটা; এতটা আকৃষ্ট করে শুভ্রকে। শুভ্র দেখছে তুলিকে, তো দেখতেই আছে। তুলির চলনভঙ্গী, কথা বলা, হাসা, কান্না, টুকটাক ছেলেমানুষি; এই সব, এই সব শুভ্রকে চুম্বকের মতো টানে। এখন, এই যে শাড়ি পরে তুলি বৃষ্টিতে ভিজছে। শুভ্রর মনে হচ্ছে তার বারান্দায় স্বর্গ এসে ধরা দিয়েছে। শাড়ি গায়ে তার স্ত্রী তার সামনে, তারই ভালোবাসা গায়ে-মনে মেখে দাঁড়িয়ে আছে। এটা ভাবলেই শুভ্র রোমাঞ্চিত অনুভব করে।
আজ দুপুর থেকে তুলির প্রতি শুভ্রর মনোভাব পাল্টে গেছে। তুলিকে কেন যেন এখন আরও বেশি শুভ্রর কাছে এট্রাকটিভ লাগে, বারবার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। লজ্জায় এতোক্ষণ শুভ্র তুলিক স্পর্শ করেনি। কিন্তু এখন, পুরো ঘটনা শুভ্রর বিরুদ্ধে। শুভ্রর মন শুভ্রর বাঁধা শুনছে না। তার লজ্জারা হার মানছে। শুভ্র উদভ্রান্তের ন্যায় দরজা পেরিয়ে বারান্দায় ঢুকে যায়। কাপড়ের স্যান্ডেজ ভিজে চুপসে গেছে। শুভ্রর খেয়াল নেই। শুভ্রর ভিজে চুল বেয়ে বৃষ্টির পানি চোখের কোণা বেয়ে পড়ছে। শুভ্রর সেদিকে মন নেই। সে এগুচ্ছে। তারপর আচমকা পেছন থেকে তুলির হাত টেনে ধরে তুলিকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো। তুলি থমকে গিয়ে শুভ্রর দিকে তাকাল। দুজনের মধ্যে এটুকু ফাঁক নেই। তুলি সম্পূর্ণটাই শুভ্রর দখলে আছে। তুলি চোখ বড়বড় করে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র ঠোঁট বিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। তুলি একবার সেদিকে চেয়ে ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে ফেলল। শুভ্র তুলির ভিজে চুল আঙ্গুল দিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিল। তুলি চোখ বন্ধ করে ফেলল। ভিজে গায়ে এভাবে শুভ্রর গায়ের সঙ্গে লেপ্টে আছে, ব্যাপারটা তুলিকে ভেতরে ভেতরে একদম শেষ করে দিচ্ছে। তুলি শ্বাস নিতে পারছে না।
শুভ্র তুলির কপালে প্রথমবারের মতো চুমু বসালো। ও চুমু এতটা গাঢ় ছিল যে তুলি শুভ্রর বাহু খামছে ধরল। শুভ্র সরে আসল। তুলি হাপড়ের মতো নিঃশ্বাস নিচ্ছে। শুভ্র অবলীলায় তুলির ঠোঁটের দিকে চেয়ে রইল। বৃষ্টির পানি তুলির ঠোঁট বরাবর আসলে তুলি বারবার তার ঠোঁট দিয়ে পানিগুলো পিষে ফেলছে। মুগ্ধ শুভ্রর গায়ে এই দৃশ্য যেন কারেন্ট বইছে দিচ্ছে। শুভ্র আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। বড্ড ছটফটে গলায় জিজ্ঞেস করল,
‘ক্যান আই কিস ইউ ফর ওয়ানস?’
তুলি উত্তর দিল না। শুভ্রর চোখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে; হঠাৎ অদম্য সাহস দেখিয়ে,সকল মেয়েলি লজ্জা ভেঙ্গে নিজেই উঁচু হয়ে ঠোঁট বসালো শুভ্রর ঠোঁটে। শুভ্র তারপর প্রায় পাগলপারা হয়ে গেলো। তুলিকে রেলিংয়ের সঙ্গে ঠেসে মুখটা দুহাতে আগলে পাগলের মতো চুমু খেতে লাগল। তুলি শুভ্রর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাঁপিয়ে উঠছে বারবার। শুভ্র পাগল হয়ে গেছে একদম। তুলি সামলাতে পারছে না শুভ্রকে, শুভ্রর স্পর্শকে।তুলি নিজেকে শক্ত করলো; তারপর শুভ্রর পাগলামিতে সায় দিতে লাগলো অবলীলায়। শুভ্র হাত বাড়িয়ে তুলির শাড়ির আঁচলের পিন খুলে দিল। তুলি নিজেও কখন যে শুভ্রর শার্টের সব বোতাম খুলে ফেললো নিজেও জানে না। শুভ্র কিছুটা থামল। তুলিকে ছেড়ে একটু সরে দাঁড়ালো। দু-সেকেন্ডে নিজের পরনের বোতাম খোলা শার্টটা খুলে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে আবারও তুলির ঠোঁট চেপে ধরল। তুলি শুভ্রকে সামলাতে বারবার খামছি দিতে লাগল শুভ্রর সারা গায়ে। তুলি একসময় হাঁপিয়ে উঠে জোরপূর্বক নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো শুভ্রর থেকে। তুলি এখন আর শুভ্রর চোখের দিকে চোখ রাখতে পারছে না। শুভ্র খালি গায়ে এভাবে তার দিকে ঘেঁষে আসছে, উফ মরে যাচ্ছে তুলি। শুভ্র আর দেরি করল না। তুলিকে দুইহাতে কোলে তুলে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো। তুলি ঠোঁট কামড়ে থেমে থেমে বলল,
‘আপনি একদমই লাজুক নন। একদমই না।’
শুভ্র তুলিকে বিছানায় শুইয়ে দিল। কপালে চুমু খেয়ে অশান্ত একেকটা নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,
‘এন্ড ইউ আর রেসপনসিবল ফর দিস।’
তারপর আবারো তুলির ঠোঁটে মজে গেলো শুভ্র। রাতটা কেটে গেল আদর সোহাগে। বৃষ্টি থামল। শীতল বাতাস বইল। অদূরে দু এক পাখি ডাকল। শুভ্রতায় ঘেরা এক রাত এভাবেই দুজনের মনে দাগ কেটে গেল।
#চলবে
পড়ুন আর লজ্জায় ডুবুন। নেক্সট পর্ব আসবে ইদের দুদিন পর। ততদিন আমার ঈদের ছুটি