# আরশিযুগল প্রেম পর্ব ২৫
# লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা
# পর্ব- ২৫
বেলা প্রায় দেড়টা। রাদিবা আহমেদের মুখ থমথমে। চৈত্রের শেষের দিকে আবহাওয়াতেও কেমন একটা গুমোট ভাব। সেই সাথে বিশ্রী ভ্যাপ্সা গরম। রাদিবা আহমেদের ভ্রু জোড়া কুঁচকানো। জানালার বাইরে তাকিয়ে আনমনে কিছু একটা ভাবছেন উনি। বাইরে আজ প্রচন্ড রোদ। একদম চোখ ঝলসে যাওয়ার মতো রোদ। এমন ঝলসানো রোদে বেশিক্ষণ দৃষ্টি ধরে রাখতে পারলেন না রাদিবা। চোখের ভেতরের শিরা-উপশিরাগুলো চিনচিন করে উঠতেই চোখ-মুখ কুঁচকে চুলোয় বসানো সবজিতে খুন্তি নাড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
সবজিটা হালকা পুড়ে গিয়েছে। রাদিবা তিক্ত মুখে চুলো নিভিয়ে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে রইলেন। মনটা আজ ভালো নেই তার। স্বামীর এমন মিনমিনে স্বভাবটা মাঝে মাঝেই অসহ্য ঠেকে তার। নিজের মেয়ের বিয়ে নিয়ে একটা কথা বলার প্রয়োজনও যে মনে করে না, সে আবার কেমন বাবা? পুরুষদের কি এমন মিনমিনে শান্ত স্বভাবে মানায়?
নিজের ভালো লাগা, মন্দ লাগা বলে কি কোনো কথা নেই? এই বুড়ো বয়সেও তাকে বাবার কথামতো চলতে হবে কেন? রাদিবা তেজ নিয়ে সবজিগুলো বাটিতে তুলে রাখে। কড়াইটা পাশে রাখার সময় ইচ্ছে করেই আওয়াজ করে। সংসার করার সব আশ যেন মিটে গেছে তার।শাহিনুজ্জামান সাহেবের এমন দায়ছাড়া পিতাভক্তি দেখলে মাঝে মাঝেই সংসারটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেশান্তর হতে ইচ্ছে করে রাদিবার। ছেলে-মেয়েদের টানে পড়েই তো এ বাড়ির মাটি কামড়ে পড়ে থাকা, নয়তো কি আছে এই সংসারে?
নিজের ইচ্ছেই কিছু করার স্বাধীনতাটুকু নেই। রাগে-দুঃখে শরীরটা জ্বলে ওঠে রাদিবার। আনিমুল হকের অহেতুক বাড়াবাড়িটা যেন দিন দিন সহ্যের সীমা ছাড়াচ্ছে। নাতনী কোলে বসে একটু কান্নাকাটি করলেই ঠিক হয়ে যাওয়া বিয়েটা পিছিয়ে দিতে হবে? ভালো ছেলে কি হাঁটে-ঘাটে পাওয়া যায় নাকি? বিসিএস পাশ করা একটা ছেলে শুভ্রতার মতো সাধারণ মেয়ের জন্য দাঁত কেলিয়ে অপেক্ষা করবে? আসল কথা হলো, আনিমুল হক তার বাপের বাড়ির মানুষদের সহ্যই করতে পারে না। বড় ভাইজান দেখেশুনে পাত্র নিয়ে এসেছে বলেই আনিমুল হকের এতো টালবাহানা। নাতনীর প্রতি দরদ যেন উতলে পড়ছে। দরদ না তো ছাই, সব এদের নাটক। রাদিবার ছেলে-মেয়ের বিন্দুমাত্র ভালো চাইবে নাকি এরা?
কথাগুলো ভেবে রাগে ফুঁসতে লাগলেন রাদিবা। সবজির বাটিটা খাবার টেবিলে নিয়ে রেখে অযথাই ধমকে উঠলেন। শুভ্রতা আর তার বান্ধবীরা মাত্রই খেতে বসেছে। সাদাফের ব্যাপারটা নিয়ে একটু-আধটু ফিসফাসও করছে। এমন একটা সময়ে, রাদিবার হঠাৎ প্রচন্ড ধমকে চমকে উঠলো সবাই। মাথা নুইয়ে চুপচাপ খাবারে মনোযোগী হলো। রাদিবা আহমেদ বিরক্তি নিয়ে নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলেন। এই মুহূর্তে শুভ্রতার গালে কষে একটা চড় বসাতে ইচ্ছে করছে তার। মেয়ে মানুষের এমন গরুর পালের মতো বান্ধবী কেন থাকবে? আর প্রতিদিন বাসায় এনে এমন ফিসফাসই বা করতে হবে কেন?
এই বান্ধবীগুলোই সব নষ্টের মূল। অর্পন মেয়েটাকে তো এমনিতেও পছন্দ নয় রাদিবার। চালচলনে উচ্ছৃঙ্খলতা স্পষ্ট। মুসলমান মেয়ের গায়ে ওড়না থাকবে না, গায়ে ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট থাকবে এটা কেমন ধারার কথা? কে জানে ওর সাথে থেকে থেকে শুভ্রতাও এসব শিখছে কি না! রাদিবার মেয়ে বিষয়ক চিন্তার মাঝেই জোহরের নামাজ শেষ করে বাসায় ফিরলেন আনিমুল হক। হাতে একটি চিপসের প্যাকেট। ধীর ও গম্ভীর পায়ে ডাইনিং স্পেসটা অতিক্রম করার সময় শুভ্রতার পাশে গিয়ে থামলেন উনি। শুভ্রতা মৃদু হেসে বললো,
—” আসসালামু আলাইকুম, দাদু।”
আনিমুল হক স্নেহভরা চাহনি দিয়ে বললেন,
—” ওয়ালাইকুম আসসালাম। খেতে বসে সালাম দিতে নেই দিদিভাই।”
শুভ্রতা মৃদু হেসে বললো,
—” মনে রাখবো দাদু।”
আনিমুল হক চিপসের প্যাকেটটা শুভ্রতার পাশে রেখে বললেন,
—” মনে রেখো।”
শুভ্রতা মিষ্টি হাসলো। আনিমুল হক গম্ভীর পায়ে ডাইনিং পেরিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালেন। বাসা থেকে বেরুলেই শুভ্রতার জন্য এটা ওটা আনা তাঁর স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর গম্ভীরতার আড়ালে ঢাকা থাকতে থাকতে আদর-ভালোবাসাগুলো যেন অনেকটাই ভুলতে বসেছেন তিনি। আনিমুল হকের ধারণা, তিনি ভালোবাসতে ভুলে গেছেন। আচ্ছা? ভালোবাসার জন্য কি মানুষের আলাদা করে কিছুর প্রয়োজন হয়? প্রথম যৌবনে সম্পা এবং ছেলেদের প্রতি তাঁর ভালোবাসাটায় কি আলাদা কিছু ছিলো? হয়তো ছিলো, আনিমুল হক এখন আর মনে করতে পারেন না। শুভ্রতার প্রতি তাঁর মাত্রাতিরক্ত স্নেহটাও ঠিক প্রকাশ করতে পারেন না। আনিমুল হক ডাইনিং ছেড়ে যেতেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে রান্নাঘরে ছুঁটলেন রাদিবা। আনিমুল হক ঠিক দুটোই দুপুরের খাবার খান। সেই হিসেবে সময়টা তো প্রায় হয়ে এসেছে।
খাবার ঘর থেকে রাদিবা সরে যেতেই ফিসফিস করে বলে উঠলো অর্পন,
—” এই শুভি? সাদাফ ভাই যে তোর কল রিসিভ করেছে সেটা তুই কাল রাতে আমাদের জানাস নি কেন শুনি? আমরা কতো টেনশনে ছিলাম জানিস?”
শুভ্রতা মৃদু শ্বাস টেনে নিয়ে বললো,
—” জানানোর মতো পরিস্থিতিতে ছিলাম না তখন।”
অর্পন মুখ ফুলিয়ে বললো,
—“থাকবে কিভাবে? নতুন নতুন প্রেম। বুঝি তো, সব বুঝি। প্রেম শুরু হতেই আমরা পরিস্থিতির বাইরে না? এখন সাদাফ ভাইই তোর সব?”
শুভ্রতা আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
—” আস্তে অর্পন। মা রান্না ঘরেই আছেন। শুনতে পেলে আর আস্ত রাখবে না।”
পাশ থেকে ফিসফিস করে বলে উঠলো পুষ্পি,
—” ওর কথা বাদ দে তো। তোদের মধ্যে কি কথা হলো সেটা বল আগে। কফির জন্য জিগ্যেস করেছিস? দেখা করবি কবে?”
শুভ্রতা পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। মিনমিন করে বললো,
—” কিভাবে দেখা করবো? উনার তো অফিস আছে।”
পুষ্পি কপাল কুঁচকে বললো,
—” কেন রে? উনি ছাড়া এই দুনিয়াতে আর কি কেউ অফিস করে না নাকি? কাজ করে যেন পৃথিবী উদ্ধার করে ফেলছে। তোর মুখের ওপর মানা করে দিলো? আর তুই চুপচাপ বসে রইলি? আমি হলে তো ভেজে খেয়ে ফেলতাম। ব্লাডি বিচ।”
শুভ্রতা বিরক্ত হয়ে বললো,
—” পুষ্পি? তোর মুখটা কিন্তু দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ভাষাটা ঠিক কর। আমি উনাকে কফির কথা বললে তো মানা করবেন নাকি? অযথা বাজে বকিস না তো।”
অর্পন অবাক হয়ে বললো,
—” কফির কথা বলিস নি? তো কি বলেছিস তুই?”
শুভ্রতা অর্পনের দিকে একবার তাকিয়েই মাথা নিচু করলো। সাদাফ আর তার বিয়ের কথাটা বান্ধবীদের জানাবে কিনা ভেবে নিয়ে মৃদু গলায় বললো,
—” আমি বলেছি, আমি উনাকে ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করবো না। উনারও হয়তো সেইম ফিলিংস ছিলো তাই উনি বলেছেন উনার বাবা-মাকে দিয়ে বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন। এটুকুই।”
শুভ্রতার কথায় গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলো পুষ্পি,অর্পন আর তনয়া। বার কয়েক চোখ পিটপিট করে একসাথেই চেঁচিয়ে উঠলো,
—” কিহহহহ, আনবিলিভেবল!”
সাথে সাথেই রান্না ঘর থেকে মুখ বের করে ধমকে উঠলেন রাদিবা,
—” কি হয়েছে? কি সমস্যা?”
—” কি কি কিছু না মা। এমনি…”
—” ধিঙ্গি মেয়ে হয়ে এমনি এমনি এমন অসভ্যর মতো চেঁচাচ্ছো কেন? বাসায় দাদু আছেন জানো না? দিন দিন বেয়াদব হচ্ছো। আর একবার যেন উঁচু গলা না শুনি।”
সবাই শক্ত হয়ে বসে রইলো। শুভ্রতা মাথা হেলিয়ে বললো,
—” সরি! আর হবে না।”
রাদিবা আহমেদ অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে সরে যেতেই আবারও শুরু হলো ফিসফাস। পুষ্পি বিস্মিত কন্ঠে বললো,
—” তুই সরাসরি বিয়ের কথা বলেছিস? তুই? আমার একদমই বিশ্বাস হচ্ছে না দোস্ত। আর সাদাফ ভাইও বিনাবাক্যে রাজি হয়ে গেলো? মাই গড! তোরা দুটোই জাদুঘরে সংরক্ষণ করার মতো বস্তু দোস্ত! আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না।”
____________________
ফোন হাতে সারা রুমময় পায়চারী করছে শুভ্রতা। একবার ঘড়ি তো একবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে। ঘড়ির কাঁটা তিনটা ছুঁই ছুঁই। এখন কি সাদাফকে ফোন দেওয়া চলে? সাদাফ কি এখন খুব ব্যস্ত? সকালে অর্পনদের কথাগুলোতে কি সে রেগে আছে? শুভ্রতাকে কেমন মেয়ে ভাবছে ? এতো এতো প্রশ্নে ক্রমেই নার্ভাস হয়ে পড়ছে শুভ্রতা। ফোন দিবে কি দিবে না। কি বলবে কি বলবে না, এসব দ্বিধাদন্দে স্থির কোনো সিদ্ধান্তেই আসতে পারছে না সে। হাজারও দ্বিধা আর অস্বস্তি কাটিয়ে ছোট্ট একা একটা ম্যাসেজ পাঠালো শুভ্রতা, ‘তুমি কি ব্যস্ত?’ ম্যাসেজ সেন্ট হওয়ার দু’মিনিটের মাথায় সাদাফের নাম্বার থেকে কল এলো। শুভ্রতা মুখ ভরে শ্বাস টেনে নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো। বুকে ধরাম ধরাম করে ডাম বাজছে তার। সেই ডামের আওয়াজকে খন্ড খন্ড করে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো সাদাফ,
—” হ্যালো।”
—“হ্যালো। ব্যস্ত ছিলেন?”
—” না। ব্যস্ত ছিলাম না। তুমি ব্যস্ত আছো ভেবে ফোন দিই নি।”
শুভ্রতা কপাল কুঁচকে বললো,
—” আমার আবার কিসের ব্যস্ততা?”
—” যে হারে আমাকে মারার আর কিডন্যাপ করার প্ল্যান করছিলে তাতে তো ব্যস্ত থাকারই কথা।”
শুভ্রতা এবার জিব কাটলো। ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলো সে। সাদাফ টেনে-হিঁচড়ে আগের কথাটা বের করে তাকে লজ্জা দিবে তাতে মোটামুটি নিশ্চিত ছিলো শুভ্রতা।
—” আমি কোথায় প্ল্যান করছিলাম? ওটা তো আমার ফ্রেন্ডরা। আপনি ফোন ধরছিলেন না বলে….”
সাদাফ গম্ভীর গলায় বললো,
—” ওহ্। তারমানে তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে মিলে আমায় নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চলে?”
সাদাফের গাম্ভীর্য ভরা কন্ঠে আৎকে উঠলো শুভ্রতা। সাদাফ ভয়ানক রাগ করেছে এই আশঙ্কায় কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
—” এমন কিছুই না। আসলে…. ”
—” আসলে কি?আর কোন গুন্ডা ভাড়া করলে? ঠিকঠাক কাজ করবে তো?”
শুভ্রতা এবার কেঁদেই ফেলল। কান্নামাখা গলায় বললো,
—” সরি! বিশ্বাস করুন। ওমন কিছুই করি নি আমরা। ওগুলো তো সব কথার কথা ছিলো।”
শুভ্রতার কান্নাভেজা গলা শুনে অবাক হলো সাদাফ। একটা মেয়ে এতো অল্পতে কান্নাজুড়ে দিতে পারে ধারণারও বাইরে ছিলো তার। ব্যস্ত হয়ে বললো,
—” এই মেয়ে? কাঁদছো কেন?”
—” আপনি রাগ করেছেন তাই।”
শুভ্রতার কথায় আবারও অবাক হলো সাদাফ। বিস্মিত গলায় বললো,
—” রাগ করলেই কাঁদতে হবে? আর কে বললো আমি রাগ করেছি? আমি তো মজা করছিলাম রে বাবা।”
শুভ্রতা ফুঁপিয়ে উঠে বললো,
—” সত্যি রাগ করেন নি?”
—” না। রাগ করি নি। কান্না থামাও। আর কখনো এসব তুচ্ছ কারণে কাঁদবে না শুভ্রতা। কান্না মানুষের দুর্বলতা প্রকাশ করে। নিজের দুর্বলতাগুলো ডেকে রাখার জিনিস। এভাবে সবাইকে দেখিয়ে বেড়ানোটা বোকামো।”
শুভ্রতা অবাক হয়ে বললো,
—” সবাইকে কোথায় দেখালাম? শুধু তো আপনাকে দেখালাম।”
সাদাফ গম্ভীর গলায় বললো,
—” আমাকেও দেখাবে না। সবারই ব্যক্তিগত কিছু থাকতে হয় শুভ্রতা৷ তোমার দুর্বলতাগুলো একান্তই তোমার ব্যক্তিগত। ওগুলো কাউকে দেখাতে নেই।”
শুভ্রতা মৃদু গলায় বললো,
—” ওহ্ আচ্ছা। এজন্যই আপনি এতো গম্ভীর।”
সাদাফ মৃদু হেসে বললো,
—” ম্যাসেজে তো তুমি সম্বোধন করা হয়েছিলো। কিন্তু এখন ব্যাপারটা পাল্টে গেলো কিভাবে? তার থেকে তো ম্যাসেজই ভালো ছিলো।”
—” পারি না। লজ্জা লাগে।”
সাদাফ শব্দ করে হাসলো। সকৌতুকে বললো,
—” হায়রে কপাল ! তুমি বলতেই এতো লজ্জা? এতো লজ্জা কোথায় থাকে লজ্জাবতী শুভ্রা?”
শুভ্রতার স্পষ্ট জবাব,
—“চোখে।”
—” আচ্ছা? তাহলে তো চোখ নামক লজ্জা ভান্ডারটা দেখতে হয়।”
—” আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াও তাহলেই তো দেখতে পাবে।”
সাদাফ কপাল কুঁচকে বললো,
—“বাহ্ তুমি এসেছে তবে?”
শুভ্রতা লাজুক হাসলো। সাদাফ আবারও বললো,
—” আয়নার সামনে দাঁড়ালে তো আমার চোখ দেখা হবে। তোমারটা তো দেখা হবে না। আমার চোখে কোনো লজ্জা নেই। লজ্জা খুঁজতে হলে তো তোমারটাই দেখতে হবে।”
শুভ্রতা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললো,
—” উহু। আয়নায় দাঁড়ালে আমার চোখই দেখা হবে তোমার৷ যেমন আমি দেখি, তোমাকে।”
সাদাফ হেসে ফেলে বললো,
—” মজা নয়। আমি সিরিয়াসলি দেখতে চাইছি তোমায়।”
—” আমি মোটেও মজা করছি না। আমি সিরিয়াস। আমাদের প্রেমটা হলো ‘আরশিযুগল প্রেম’। আয়নার সামনে দাঁড়ালে আয়না যেমন আরেকটা আমিকে দেখায়। ঠিক তেমনি তোমাকেও দেখায়। তুমি আমার সাথে আমার প্রতিবিম্বের মতোই মিশে আছো। আমার ঘরের আয়নাটা খুব মন বুঝে বুঝলে? সেই সুপ্ত প্রতিবিম্বটাকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনে।”
শুভ্রতার কথাগুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনলো সাদাফ। মৃদু হেসে বললো,
—” তাই নাকি?”
—” একদম। আর একটা সিক্রেট শুনবে?”
—” হুম অবশ্যই৷”
—” তোমার ঘরের আরশির সাথে আমার ঘরের আরশির ভয়ানক প্রেম চলে। তাই আয়নার সামনে দাঁড়ালেই চট করে সামনে চলে আসো তুমি। এটাকে কি বলে জানো? এটাকে বলে আরশিযুগল প্রেম।”
শুভ্রতার বাচ্চামো কথাবার্তায় হেসে ফেললো সাদাফ। নরম গলায় বললো,
—” তুমি তো দেখি সত্যিই মারাত্মক মেয়ে। ঘরে বসে থেকে আমার ঘরের আয়নাকে প্রেমের জালে ফেলে দিলে?”
শুভ্রতা খুশি হয়ে বললো,
—” হুম দিলাম।”
সাদাফ হাসলো। সতর্ক গলায় বললো,
—” আচ্ছা এবার রাখি কেমন? অফিসে আছি। অফিসে বসে ফোনালাপ বেমানান। বাসায় গিয়ে কল করবো।”
শুভ্রতা মুখ ভার করে বললো,
—” রেখে দিবে?”
—” আপাতত।”
শুভ্রতা মৃদু গলায় বললো,
—” আচ্ছা।”
—” হু। বাই।”
—” শুনো?”
—” হু, শুনছি।”
শুভ্রতা হঠাৎই চুপ হয়ে গেলো। সাদাফ তাড়া দিয়ে বললো,
—” কি হলো? কিছু বলবে? বললে বলো।”
—” সাবধানে থেকো। আল্লাহ হাফেজ। ”
একটানে কথাগুলো বলেই ফোন কাটলো শুভ্রতা। সাদাফ নিজের মনে হাসলো। এই ছোট্ট দুটো শব্দ বলতেই কেউ এতো লজ্জা পায় নাকি, আশ্চর্য! সাদাফ ফোনটা পাশে রেখে কাজে মন বসানোর চেষ্টা চালালো। কিন্তু মনটা ঠিক বসলো না। বারবার একটা কথায় মনে হতে লাগলো, শুভ্রতা বড্ড আবেগী। সেই সাথে সাদাফের প্রতি প্রচন্ড দুর্বল। সাদাফ যতটা ভেবেছিলো তার থেকেও বেশি। অনেক বেশি! শুভ্রতার এই আবেগী মন আর সাদাফের প্রতি তার দুর্বলতাটাই প্রতি মুহূর্তে ভাবিয়ে তুলছে সাদাফকে। ‘অতিরিক্ত’ শব্দটাই ভীষণ মারাত্মক। সাদাফের প্রতি শুভ্রতার দুর্বলতাটা অতিরিক্ত মাত্রাই পৌঁছিয়ে শুভ্রতার কষ্টের কারণ হবে না তো কখনো?
#চলবে…..
[ ভাইয়ের সাথে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড নিয়ে তুমুল যুদ্ধ চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে গল্প দিতে দেরি হলো। নেট ছিলো না। ]