# আরশিযুগল প্রেম .
# লেখনীতে — নৌশিন আহমেদ রোদেলা
#পর্ব – ৫৯
বসার ঘরের সোফায় মুখ কালো করে বসে আছে পৃথা। মটরশুঁটির বাটিটা কোলের ওপর রেখে আনাড়ি হাতে খোসা ছাড়াচ্ছে শুভ্রতা। পৃথার আষাঢ় ঘন মুখটির দিকে তাকিয়ে বার কয়েক লুকায়িত দীর্ঘশ্বাসও ফেলছে। সাদাফ কিছুক্ষণ আগেই অফিস থেকে ফিরেছে। সারা গায়ে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিয়েছে সে। টেলিভিশনে খেলা চলছে। সাদাফের মনোযোগী দৃষ্টি টেলিভিশনের পর্দা থেকে সরছে না। শুভ্রতা স্বামীর দিকে তাকিয়ে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল। ক্ষুণ্ণ গলায় বলল,
—-” টিভিটা অফ করবা প্লিজ? বিরক্ত লাগছে।”
শুভ্রতার কথার জবাবে ঠোঁটজোড়া প্রসারিত করল সাদাফ। তারপর আবারও নিমগ্ন হলো টেলিভিশনের স্ক্রিনে। শুভ্রতা মুখ নামিয়ে বলল,
—-” ভাইয়া মানা করে দিয়েছে।”
সাদাফ টেলিভিশনের দিকে দৃষ্টি রেখেই ভ্রু কুঁচকাল। বুঝতে না পেরে বলল,
—-” কি বিষয়ে?”
—-” কি বিষয়ে মানে? বিয়ের বিষয় ছাড়া আর কি বিষয় থাকতে পারে?”
সাদাফ এবার চোখ ফিরিয়ে তাকাল। মৃদু গলায় বলল,
—-” ও আচ্ছা।”
সাদাফের এমন ঠুনকো প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুণ্ন হলো পৃথা। কিছুক্ষণ মুখ ভার করে বসে থেকে বলল,
—-” বাবা যদি উনাকে বলতো…”
পৃথা এটুকু বলতেই আগুন চোখে তাকাল সাদাফ। সাদাফের চোখের দিকে তাকিয়ে পরের শব্দটা উচ্চারণ করার সাহস যোগাতে পারল না পৃথা। মাঝপথে থেমে গিয়ে মাথা নুইয়ে বসে রইলো। পৃথার থেকে চোখ সরিয়ে টেলিভিশন বন্ধ করলো সাদাফ। পৃথার এহেন ব্যবহার আর নির্লজ্জ কথাবার্তায় ভেতর ভেতর ভীষণ রকম বিস্মিত সে। এই মেয়েটা এতোটা নির্লজ্জ, এতোটা বেপরোয়া হয়ে গেল কি করে? মায়ের নিষেধ সত্ত্বেও পৃথাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এনে কি তবে ভুল করে ফেলল সাদাফ? সাদাফের গভীর সুচিন্তিত চোখে দুশ্চিন্তার ছাপ পড়ল। কপাল কুঁচকে এলো অজানা এক আতঙ্কে। এতোবড় মেয়েকে কি মেরে ধরে শাসন করা যায়? নাকি ধমকা ধমকি করে শাসন করা যায়? এই বয়সের মেয়েরা থাকে অতিমাত্রায় সেনসেটিভ। যেকোনো কথা এদের মস্তিষ্কের আগে মনে গিয়ে আঘাত হানে। অল্পতে বিহ্বল হয়। অদ্ভুত সব সিদ্ধান্ত নেয়। সাদাফের বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে নরম গলায় বলল,
—-” প্রতিটি মানুষের জন্য আত্মসম্মানটা তার ফার্স্ট প্রায়োরিটি হওয়া উচিত পৃথা। আর মেয়েদের জন্য এই আত্মসম্মানবোধটা হওয়া উচিত সূর্যের মতো উত্তপ্ত। নারীর প্রধান গর্বের বস্তুই হলো তার আত্মসম্মান। তাই এমন কোনো কথা বা কাজ করিস না যা তোর আত্মসম্মানে তীব্র আঘাত হানবে। আত্মসম্মানে একবার শূল বিঁধে গেলে সেই শূলটা টেনে বের করে আনা ভীষণ কঠিন। আত্মসম্মানহীন পুরুষ মানুষরা সমাজে টিকে গেলেও আত্মসম্মানহীন নারীরা ঠিক টিকে থাকতে পারে না। তারা হয়ে পড়ে কলঙ্কিত নয়তো নিষ্পেষিত। যে নারীর আত্মসম্মানের ধার যত বেশি তীক্ষ্ণ সে নারী তত বেশি সম্মানিত। এই আত্মসম্মানবোধটা ধরে রাখিস, হারাতে দিস না।”
সাদাফের কথার জবাবে মাথা নিচু করে বসে রইল পৃথা। সাদাফের কথাগুলো যে যথার্থ এবং সত্য, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যে মেয়ে বুকে আস্ত এক সর্বনাশা ঝড় নিয়ে বসে আছে। প্রথম যৌবনের শিহরণ যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে বেড়াচ্ছে। সেই মেয়ের কাছে কি এই নীতিবাক্যের আদৌ কোনো মূল্য আছে? এই তীক্ষ্ণ, গভীর অনুভূতির কাছে এই নীতিবাক্যগুলো কি নিতান্তই বিরক্তির কারণ নয়? সাদাফ শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ভেতরের ঘরের দিকে ওঠে যেতেই শুভ্রতার দিকে তাকাল পৃথা। মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে বলল,
—-” ভাবি!”
শুভ্রতার মুখে কালো মেঘ জমলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—-” দেখো পৃথা, আমি তোমার পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছি। তোমার আবেগ, অনুভূতি সবই সত্য। কিন্তু একপাক্ষিকভাবে কি কিছু হয় বলো? তাছাড়া, ভাইয়ার উপর যতটা প্রেশার ক্রিয়েট করার করেছি আমি। এর বাইরে কিছু সম্ভব না। আমি চাই ভাইয়া ওর নিজের মতো থাকুক। তুমি ওকে নিয়ে আর ভেবো না পৃথা। তোমার কষ্ট হবে জানি কিন্তু….”
কথার মাঝে হঠাৎই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল শুভ্রতা। বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো তীক্ষ্ণ দীর্ঘশ্বাস। একদম অন্যরকম গলায় বলল,
—-” মানুষের সব চাওয়া পূরণ হয় না পৃথা। আমাদের হাতে করার মতো অনেক কিছু থাকলেও দিনশেষে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিচ্ছু করার থাকে না। মানুষ যেমন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব ঠিক তেমনই কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অসহায়। তাদের এই অসহায়ত্বের কেন্দ্রবিন্দুই হলো, ‘ভালোবাসা’। তার উদাহরণস্বরূপ ভাইয়া, তুমি আর তনয়া!”
পৃথা বুঝতে না পেরে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। খানিকবাদে বুক ভরা বিষাদ নিয়ে সোফা ছেড়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা দিলো। দরজায় খিল দিতে দিতে ধরা গলায় বলল,
—-” আমি একটু ঘুমুবো ভাবি। রাতে খাব না। ডেকো না আমায়।”
শুভ্রতা উত্তর দিল না। নিথর শরীর নিয়ে চুপচাপ বসে রইল। চোখের সামনে সেই ভয়ঙ্কর ভাঙা গড়ার খেলাগুলো আবারও জীবন্ত হয়ে উঠতে লাগল। তনয়ার নববধূ সাজ। কেঁদে আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া মুখ। এক বোতল বিষ ভিক্ষা চেয়ে নিজের মৃত্যুকামনা। তারপর…. তারপর … সেদিনের সেই খবর। ঘন্টাখানেক টানা কান্নামাখা হাহাকার আর শুভ্রবকে এসব না জানানোর আকুতি। শুভ্রতার বুকের কোথাও তীক্ষ্ম চিনচিনে ব্যাথা করে উঠল। আহ্ কি কষ্ট! কি করে সহ্য করে ওরা এই কষ্ট? কি করে কষ্টটাকে কাগজে মুড়িয়ে হাসতে পারে? কলিজাটা কি ছিঁড়ে যায় না ওদের? এতোটা ধৈর্য্যশক্তি কি করে অর্জন করলো ওরা? কি করে? শুভ্রতার বুক ফেঁটে কান্না পায়। শুধু শুভ্রব-তনয়ার জন্য নয়। আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সেই সকল জীবন্ত লাশগুলোর জন্য। যাদের মরে যাওয়ার উপায় নেই আবার বেঁচে থাকারও না। এদের কাছে কান্না বা হাসি বলে আলাদা কোনো শব্দ হয় না।
_______________________
ব্যস্ত রাস্তার একধার ধরে হাঁটছে শুভ্রব। গায়ে সাদা-কালো ফর্মাল পোশাক। গলায় ঝুলছে খয়েরি আর সাদার মিশ্রণে সুন্দর দেখতে টাই। টাইটা তনয়ার দেওয়া। তাদের সম্পর্কের শুরুর দিকে তনয়ার থেকে পাওয়া প্রথম উপহার। তনয়াকে কেন্দ্র করে সবকিছু মুছে ফেললেও এই টাইটা ছুঁড়ে ফেলতে পারে নি শুভ্রব, পারবেও না কখনো। শুভ্রব ব্যস্ত চোখে ঘড়ি দেখে —– ৮ঃ৪০। সামনের বাসস্টপ থেকে বাসটা ধরতে না পারলে ইন্টারভিউটা নির্ঘাত মাটি যাবে আজ। শুভ্রব পায়ের গতি বাড়ায়। কিন্তু কয়েক পা এগুতোই থমকে যেতে হয় তাকে। সামনে থেকে আসা রিকশা থেকে লাফিয়ে ঠিক তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে পৃথা। পৃথার এমন অদ্ভুত ব্যবহারে কপাল কুঁচকালো শুভ্রব। পৃথা রিকশা ভাড়াটা মিটিয়ে দিয়ে হাত ভাঁজ করে দাঁড়াল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
—-” চিনতে পারছেন আমায়? নাকি ভুলে গিয়েছেন?”
শুভ্রব ভদ্রতার হাসি দিয়ে বলল,
—-” চিনতে পেরেছি। আপনি পৃথা।”
পৃথা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকল। তারপর হুট করেই বলল,
—-” আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান না কেন? আমি কি দেখতে সুন্দর না?”
পৃথার এমন প্রশ্নে বেশ অপ্রতিভ হলো শুভ্রব। কোথা থেকে একরাশ বিরক্তি এসে হানা দিলো নাকের ডগায়। শান্ত গলায় বলল,
—-” আপনি সুন্দর বা অসুন্দর সেই প্রশ্নটা আসছে না পৃথা। আমি আসলে বিয়েই করতে চাইছি না। না আপনাকে আর না অন্যকোনো মেয়েকে।”
পৃথা ভ্রু নাচিয়ে বলল,
—-” কেন? বিয়ে করতে চান না কেন? এনি প্রবলেম?”
শুভ্রব চরম বিরক্তি নিয়ে বলল,
—-” আমি কারো পার্সোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করতে পছন্দ করি না। আর আমার লাাইফে কেউ ইন্টারফেয়ার করুক সেটাও চাই না। এখন রাস্তাটা ছাড়বেন প্লিজ? দশটাই আমার ইন্টারভিউ আছে। আই হেভ টু গো।”
অপমানে শরীর-মন চনমন করে উঠল পৃথার। বুকের ভেতর থাকা জেদ আর আক্রোশটা বেড়ে দ্বিগুণ হলো। শুভ্রবের দিকে আরো খানিকটা এগিয়ে যেতেই একপা পিছিয়ে গেল শুভ্রব। পৃথা ক্ষোভ নিয়ে বলল,
—-” কি সমস্যা আপনার? আমাকে কি মানুষ মনে হয় না? সেই প্রথমদিন থেকে একের পর এক অপমান করেই যাচ্ছেন তো করেই যাচ্ছেন। কি মনে করেন নিজেকে?”
পৃথার কথায় প্রথম দফায় বেশ অবাক হলো শুভ্রব। কয়েক সেকেন্ড পর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
—-” আপনি হয়তো অসুস্থ পৃথা। বাসায় যান। রেস্ট নিন। আপনার আচরণ স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। আমি আসছি, দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
কথাটা বলে পৃথাকে কোনোরকম পাশ কাটিয়ে গেলো শুভ্রব। পৃথা কিছুক্ষণ শুভ্রবের যাওয়ার দিকে স্থির তাকিয়ে রইলো। এই ছেলের এই ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাবটাকেই সবচেয়ে বেশি অসহ্য লাগে পৃথার। আবার সেই ডোন্ট কেয়ার ভাবটার প্রতি অদ্ভুত শিহরণও জাগে। শুভ্রবের চালচলন খুবই সাধারণ। তার কথাবার্তার ধরনেও আহামরি কিছু নেই। তবুও কেন জানি পলক ফেলতে ইচ্ছে করে না পৃথার। ভালো লাগা আর খারাপ লাগার মাঝে অদ্ভুত এক অনুভূতিতে অাচ্ছন্ন হয়ে থাকে প্রতিটা সময়।
বিছানায় বসে জুতোর ফিতা লাগাচ্ছিল সাদাফ। শুভ্রতাকে বাসায় একা রেখে অফিসে যেতে মন সাইঁ দিচ্ছে না। কিন্তু চাকরী তো আর বউ মানে না। সাদাফ মুখ ফুলিয়ে শ্বাস টেনে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। ডানহাতে ঘড়ি পরতে পরতে বলল,
—-” অর্পি-পুষ্পিদের আমাদের বাসায় চলে আসতে বলো আজ। বান্ধবীরা মিলে আড্ডা হয়ে যাবে।”
শুভ্রতা আলমারি থেকে ময়লা কাপড় বের করতে করতে বলল,
—-” হুহ। পরশো থেকে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা আর ওরা এসে আড্ডা মারুক?”
—-” পড়াশোনা করতে তো দেখি নি একদিনও। আড্ডা না মেরেই বা কি গতি হবে তোমাদের? এই এতোগুলো কাপড় জড়ো করছ কেন?”
শুভ্রতা কাপড়গুলো উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে বলল,
—-“ধুয়ে দেব। তোমার সব কাপড়ই কেমন ময়লা হয়ে গিয়েছে দেখো।”
সাদাফ এগিয়ে গিয়ে বিছানার পাশে দাঁড়াল। কাপড়গুলো সরিয়ে রেখে বলল,
—-” এতো পাক্নামো করতে হবে না। আমি অফিস থেকে এসে ধুয়ে দেব। রাখো।”
—-” আরো কিছু! সারাদিন অফিস করে এসে কাপড় ধুবে তুমি? কখনও না। দাও তো আমায়। এই ক’টা কাপড় মাত্র। আধাঘন্টাও লাগবে না।”
সাদাফ দৃঢ় গলায় বলল,
—-” না লাগুক আধাঘন্টা। দশ মিনিট লাগলেও ধুতে দেব না আমি। আমি অফিস থেকে এসে কাপড় ধুতে না পারলে তুমি যে দিন-রাত আরো একজনকে নিজের মাঝে ধারণ করে ঘুরে বেড়াচ্ছ, তুমি কিভাবে পারবে? ক্লান্ত লাগবে না?”
শুভ্রতা হাসল। হাসিমুখে বলল,
—-” এখনও শরীর ভারী হয় নি আমার। এসব ছোটখাটো কাজ করতে পারব আমি। কাপড়গুলো দিয়ে অফিসে যাও তো তুমি। দেরি হচ্ছে তোমার।”
সাদাফ শুভ্রতার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো। কপালে উষ্ণ পরশ দিয়ে মৃদু গলায় বলল,
—-” এখনও ভারী হয় নি, দু’একমাস পরে হবে। তখন তো শুয়ে বসেও শান্তি পাবে না। তাই এই কয়েকমাস একটু রেস্ট নাও। কাপড় আমি এসে ধুয়ে দেব।”
শুভ্রতা ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলল,
—-” না। আমি বসে থাকব আর তুমি কাপড় ধুবে তা হবে না। ভাবতেই কেমন বিশ্রী লাগে।”
সাদাফ পরাজয় স্বীকার করে বলল,
—-” ওকে ফাইন। আমিও করব না তুমিও করবে না। যা করার মেশিনে করবে। দুই এক দিনের মাঝে একটা ওয়াশিং মেশিন কিনে ফেলব এবার।”
—-” কিন্তু… ”
শুভ্রতাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই চোখ রাঙাল সাদাফ। তারপর বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
—-” এতো অবাধ্য হও কেন শুভ্রা? না করি তবুও বারবার নিচু হও। বারবার এভাবে নিচু হয়ে কাজ করবে না, বুঝলে? বাবুর কিছু হয়ে গেলে?”
শুভ্রতাকে চুপ করে থাকতে দেখে হাতের বাঁধনটা শক্ত করে বলল সাদাফ,
—-” আচ্ছা, চলো আজ শপিং এ যাই। তুতুনের জন্য ঘর ভরে খেলনা কিনবো। জামা-কাপড়ও কিনবো। আমার শুভ্রাণীকেও ইচ্ছেমতো খাবার কিনে দেব। শুভ্রাণী কি যাবে? আমার মাঝে মাঝে এই সবকিছুকে স্বপ্ন মনে হয় শুভ্রা। আমাদেরও ছোট্ট একটা বাবু থাকবে ভাবতেই অবাক লাগে। আর কয়েকমাস পর আমাদের মাঝে শুয়ে কেউ একজন ছোট্ট ছোট্ট হাত ছুড়াছুড়ি করে খেলবে, দন্তহীন হাসবে। সবচেয়ে বড় কথা আমাকে সে বাবা ডাকবে। শুভ্রা? আমি ওই পুচকুটার বাবা হবো!”
শুভ্রতা হাসে। পরম আবেশে সাদাফের বুকের ওম মাখে গায়ে। দু’জন যুবক-যুবতীর হৃদস্পন্দন একই তালে বাজতে থাকে। দু’জনে নিঃশব্দ থেকেও একে অপরের আরশিতে দেখতে পায় রঙিন কিছু স্বপ্ন। একটা নতুন, সুন্দর জীবন! সাদাফ ফিসফিস করে বলে,
—-” সেই বর্ষার রাতে, ট্রেন ছেড়ে বোকামো করে আমার পিছু নেওয়ার জন্য থেংক্স শুভ্রাণী। তোমার করা ছোট্ট বোকামো আমাকে আস্ত একটা পৃথিবী এনে দিয়েছে। শুভ্রাময় পৃথিবী!”
#চলবে….