#বিশ্বাস অবিশ্বাস পর্ব ৪
‘ বাড়িওয়ালার ছেলের রেফারেন্সে মিতু আপুর চাকরি হয়েছে। ওনার নাম সজল সরকার, তিনি তার বন্ধুকে বলে মিতু আপুর জন্য একটা চাকরি যোগাড় করে দিয়েছেন। ‘
‘ আপনি যা যা বলছেন সবকিছু কি তাদের কাছ থেকে জেনে বলছেন? ‘
‘ তাছাড়া আর কীভাবে জানবো বলেন? ‘
‘ আপনি শুরুতেই জিজ্ঞেস করেছেন আমি কে? আমি কিন্তু আমার পরিচয় দেই নাই। তবুও কেন সবকিছু বলে দিলেন? ‘
‘ আপনি সাজু ভাই তাই না? ‘
‘ হ্যাঁ, তারমানে আপনি জানতেন? ‘
‘ জ্বি, আপনি যখন কল করেছেন তখন আমি মোবাইলের কাছে ছিলাম না। আপনি কল করার মিনিট পাঁচেক পরে বাড়িওয়ালা আঙ্কেলও কল করেছিলেন। ‘
‘ কি বললেন তিনি? ‘
‘ তার কলও রিসিভ করতে পারিনি। আপনাকে কল করার আগে মাকে কল দিলাম। তিনি আমার কাছে বললেন যে আফরিন হ!ত্যা ঘটনায় কেউ একজন আমার নাম্বার নিয়েছে। ‘
‘ আপনি ঢাকায় কবে আসবেন? ‘
‘ তিনদিনের ছুটি ছিল, আজকে দ্বিতীয়দিন চলছে। আগামীকাল রাতের ট্রেনে ঢাকায় রওনা দেবো। আসলে আমার বাবা খুব অসুস্থ তাই বাড়ি আসা জরুরি ছিল। ‘
‘ সজল সাহেবের সঙ্গে আফরিনের সম্পর্কটা কতটা মজবুত ছিল? যেহেতু দুদিন আগে আফরিন এখানে এসেছিল। তখন সে সজলের বিষয় কিছু বলেছে! ‘
‘ একটু সমস্যা ছিল, আঙ্কেলের কাছে সজল ভাই সব বলেছিল। আঙ্কেল মানতে রাজি হচ্ছিল না। ‘
‘ আপনার সঙ্গে আমার সামনাসামনি দেখা করে কথা বলা খুব জরুরি। ‘
‘ তাহলে পরশু কথা হবে, যদি বেঁচে থাকি। ‘
‘ এর আগে যদি প্রয়োজন পরে তাহলে আমি আপনাকে কল করবো। আশা করি বিরক্ত হবেন না। ‘
‘ না না সমস্যা নেই, যেকোনো সময় দিবেন। ‘
‘ আপনার বান্ধবীর নাম কি? যিনি আপনার সঙ্গে থাকতেন। সম্ভবত তিনি সিলেটে অফিশিয়াল কাজে গেছে। ‘
‘ ওর নাম শাহানা, ও অলরেডি রওনা দিয়েছে। আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। আপনি ওর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সন্ধ্যা বেলা গেলে পাবেন। ‘
‘ অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ‘
‘ ধন্যবাদ আপনাকে দেওয়া উচিৎ। এরকম ফুলের মতো একটা মেয়েকে যারা হ!ত্যা করেছে তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই আপনার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রইল সাজু ভাই। ‘
‘ রাখি তাহলে, আসসালামু আলাইকুম। ‘
কল কেটে দিয়ে সাজু স্থির দৃষ্টিতে ফয়সালের দিকে তাকিয়ে রইল। ফয়সাল এতক্ষণ সাজু ও তামান্নার কথোপকথন শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে। আগের সেই বিরক্তির চিন্হ তার মুখের মধ্যে নেই। বরং সেখানে ঠাঁই মিলেছে হতাশা আর অসহায়।
সাজু বললো ‘ সবই তো শুনলেন তাই না? ‘
‘ জ্বি! ‘
‘ তাহলে যতটুকু জানেন সবকিছু বলেন। নাহলে শুধু শুধু নিজেই বিপদে পড়বেন। ‘
‘ আমি কিছু করিনি। ‘
‘ আমিও জানি যে আপনি সরাসরি কিছু করেন নাই। যেহেতু সেই মুহূর্তে আপনি মিতুর সঙ্গে ছিলেন তাই আপনার জড়িত থাকা অযৌক্তিক। আমি জানতে চাই সজল সরকার ও আপনার বিষয়। সজল সরকারের সঙ্গে আফরিনের ও তার বোনের পরিচয় সম্পর্কে। ‘
‘ তেমন কিছু জানি না। ‘
‘ যতটুকু জানেন ততটুকু বললে অন্তত আপনার সম্মান ও জেলে যাবার মতো পরিস্থিতি থেকে বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘
‘ কিন্তু…! ‘
‘ একটা উদাহরণ দিচ্ছি। এক রাখাল দুটো গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছে। হঠাৎ তার একটা গরু মাঠে দৌড়াতে শুরু করে। রাখাল প্রথমে কিছুক্ষণ চেষ্টা করে। তারপর দ্বিতীয় তথা শান্ত গরুটাকে আস্তে করে বেঁধে রাখে। সমস্ত মাঠে দৌড়াতে দৌড়াতে অবশেষে প্রথম গরুটা ধরতে পারে। তখন সেই রাখাল প্রথম গরুটাকে প্রচুর মারধর করে। কারণ ওই গরুটা তাকে অনেক হয়রানি করেছে। ‘
সাজু একটু থেমে বললো ‘ এতটুকু বলার পরে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। বুঝবেন কারণ আমি জানি আপনি বুদ্ধিমান। এবার বলেন। ‘
‘ সজল আর আফরিন চার মাস আগে বিয়ে করেছে। বিয়ের কথা কেউ জানে না। গোপনে কোর্টে গিয়ে রেজিস্ট্র করে বিয়ে হয়েছে। ‘
‘ আপনি নিশ্চয়ই সাক্ষী ছিলেন? ‘
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ ঠিক আছে তারপর বলেন। ‘
‘ অনেকটা ঝোঁকের বশেই সজল বিয়ে করে। ওর মাস খানিকের মধ্যে কানাডায় যাবার কথা। প্রায় সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। ‘
‘ সজল আর আপনার পরিচয় কতদিনের? মিতু বা আফরিন তামান্নার কাছে বলেছে যে আপনি সজল সরকারের বন্ধু। তার সুপারিশের কারণেই নাকি আপনি মিতুকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ‘
‘ সজল আমার বন্ধু হলেও সে আমার চেয়ে পাঁচ ছয় বছরের ছোট হবে। বছর খানিক আগে হঠাৎ একদিন সজল বললো যে তার পরিচিত এক আপুর একটা চাকরি দরকার। আমাদের অফিসে তখন কিছু নতুন লোক দরকার ছিল। সজল বলার পরে আমি মিতু ম্যাডামকে অফিসে আসতে বলি। ‘
‘ তখন কি সজলের সঙ্গে আফরিনের রিলেশন শুরু হয়েছে? ‘
‘ মনে হয় না। ‘
‘ ওদের হঠাৎ করে বিয়ে করার কারণ কি ছিল? তা আবার নিজেরা লুকিয়ে লুকিয়ে। ‘
‘ সজলের বিদেশে যাবার কথা শুনে আফরিন পাগলামি করতো। বিভিন্ন মানসিক চাপের মধ্যে রাখতো তাই সজল হুট করে জিদ করে বিয়েটা করে ফেলে। ‘
‘ সজল তার বাবার কাছে বলেনি? ‘
‘ হ্যাঁ বলেছিল কিন্তু সেটা বিয়ের অনেক পরে। যখন আফরিন প্রেগন্যান্ট হয়ে গেল তখন। ‘
‘ কি বললেন? ‘
‘ ঠিকই বলছি, আফরিন দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। সপ্তাহ খানিক আগে সজল তার বাবাকে সবকিছু জানায়। যেহেতু একটা রিলেশন ছিল, তারপর বিয়ে হয়ে গেছে, এখন সন্তান হবে। তাই আর না জানিয়ে উপায় ছিল না। ‘
‘ সিদ্দিক সরকার মানে সজলের বাবা এদের বিয়ে মেনে নেননি তাই না? ‘
‘ জ্বি তাই। সজলকে অনেক বকাবকি করে। ওই বাচ্চা নষ্ট করে আফরিনকে ডিভোর্স দিতে বলেন সজলের বাবা। কথা না শুনলে সজলের বিদেশে যাবার সবকিছু বাতিল করবেন বলেও হুমকি দেন সিদ্দিক আঙ্কেল। ‘
‘ সজল তখন কি করলো? ‘
‘ কানাডায় যাবার স্বপ্ন সজলের বহুদিন ধরে। তাই সে আফরিনকে বোঝাতে চেষ্টা করে। বাচ্চাটা নষ্ট করতে বলে সজল, কিন্তু আফরিন কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। ‘
‘ তারপরও কি মিতু বা তার স্বামী কেউ কিছু বুঝতে পারেনি? ‘
‘ তাজুল সাহেব পারেননি কিন্তু মিতু ম্যাডাম বুঝতে পেরেছেন। ‘
‘ মিতু কিছু বলে নাই? ‘
‘ সেটা আমি জানি না। আফরিন যখনই বোনের বাসায় বেড়াতে আসে তখন দিনের বেলা তাজুল সাহেব ও মিতু ম্যাডাম অফিসে এলেই সজল তাদের বাসায় যেত। দুপুরে তাজুল সাহেব বাসায় যাবার সময় হয়ে গেলে সেই সময় সজল বাসা থেকে বের হয়ে যেত৷ ‘
‘ এবার কিছুটা বুঝতে পারছি। ‘
‘ কি বুঝতে পেরেছেন? ‘
‘ পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে সেই ডাক্তার সাহেব বলেছেন যে মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে আফরিন কারো সঙ্গে মিলনে লিপ্ত হয়েছে। আমার মনের মধ্যে তখন কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছিল। যেহেতু আপনি বলছেন যে তারা বিয়ে করেছে সেহেতু আমার সেই অস্বস্তি নেই। ‘
‘ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এলে তখন দেখবেন ওর অন্তঃসত্ত্বার কথাও বের হয়ে আসবে। ‘
‘ এবার গতকালের ঘটনা বলেন। কেন সজল সরকার তার স্ত্রী ও তার গর্ভের সন্তানকে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিল৷ ‘
‘ সজল আফরিনকে খু!ন করেনি! ‘
‘ এটা কি আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? ‘
‘ সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার, তবে আমি যা জানি তাই বললাম। গতকাল রাতে আমি সজলকে ভালো করে জিজ্ঞেস করলাম। সে আমার হাত ধরে কেঁদে কেঁদে বললো যে খু!নটা সে করে নাই। আফরিনের সঙ্গে মিলন শেষ করে সে বের হয়ে আসে কারণ তাজুল সাহেব আসার কথা ছিল। ‘
‘ তাহলে কে হতে পারে খু!নি? আপনার মনের কথা জানতে চাই। ‘
‘ আমি জানি না! ‘
‘ তখন যে নাম্বার দিয়ে কল করে আমাকে উত্তরা থেকে চলে যেতে বলেছেন সেটা কার নাম্বার? ‘
‘ আমি খুবই লজ্জিত ভাই, আসলে সজল শুধু বারবার অনুরোধ করেছিল তাই বাধ্য হয়ে আমি আপনাকে এসব বলে ফেলেছি। ‘
‘ সজল যদি খুন না করে থাকে তাহলে আমার তদন্তের মধ্যে বাঁধা দিচ্ছে কেন? ‘
‘ আসলে যা কিছু হোক আফরিন তো আর ফিরে আসবে না। তাছাড়া সজলের কেন জানি মনে হচ্ছে ওর বাবা কিছু একটা করেছে। ‘
‘ মানে সিদ্দিক সরকার? ‘
‘ জ্বি। দু তিনদিন আগে যখন আফরিন এসেছিল তখন সজলেকে তাজুল সাহেবের বাসা থেকে বের হতে দেখেন তিনি। এর আগে সজল সবকিছু আঙ্কেলের কাছে বললেও আঙ্কেল সেসব কিছুই তাজুল বা মিতু ম্যাডামকে বলে নাই। ‘
‘ কেন? ‘
‘ কারণ তারা যদি জানতো তাহলে যদি আইনের আশ্রয় গ্রহণ করে। তখন আঙ্কেল কিছু করতে পারবে না। সেজন্যই নিজের ছেলেকে দিয়ে সব শেষ করতে চেয়েছিলেন। ‘
‘ আপনি বলেছিলেন আপনি নাকি কিছুই জানেন না ফয়সাল সাহেব। অথচ দেখুন, মামলার রহস্য সবটাই আপনার জানা। ‘
‘ সজলের উঠতে বসতে সকল ঘটনাবলী আমার জানা। সজল সব আমাকে বলে, আমি তারপর মাঝে মাঝে বুদ্ধি দিতাম। ‘
‘ গতকাল খু!ন করার বুদ্ধিটাও কি আপনার? ‘
‘ আমি যদি সেটা বলতাম তাহলে আপনার কাছে এসবের কিছুই বলতাম না। ‘
‘ আজ তাহলে এ পর্যন্তই থাক। সত্য মিথ্যা কতটা তফাৎ সেটা আগে যাচাই করে আসি। আপনার সঙ্গে অনেক কথা হবে। ‘
‘ একটা অনুরোধ করি, আমি আপনাকে সবটা বলার চেষ্টা করেছি। আশা করি আমার হয়রানির বিষয়টা আপনি দেখবেন। ‘
‘ চেষ্টা করবো। একটা সত্যি কথা বলেন তো! আপনি অকপটে এতকিছু কেন বলে দিলেন? ‘
‘ আমি জানি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আফরিন যে গর্ভবতী সেটা ধরা পড়বে। তখন হয়তো আরো বেশি অনুসন্ধান হবে। সেই সূত্রে আফরিনের সঙ্গে সজলের বিয়ের ব্যাপার বের হবে। যেহেতু বিয়ের কিছু কাগজপত্র আফরিনের কাছে ছিল। তাই ওর বাসায় খুঁজতে গিয়ে সেগুলো পাবেন আপনারা। তখন সেখানে সাক্ষী হিসাবে আমাকে পাবেন। ভবিষ্যত বিপদের কথা চিন্তা করে আমি সবকিছু আগে থেকে বলে দিলাম। ‘
‘ শুধু খু!নের বিষয়টা ছাড়া। ‘
‘ সেই বিষয় আমি জানি না। ‘
‘ আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি কি আমার সঙ্গে সজল সরকারের দেখা করাতে পারবেন? আমি একটু তার সঙ্গে দেখা করতে চাই। ‘
‘ সে রাজি হবে কিনা জানি না তবে চেষ্টা করবো। ‘
অফিস থেকে বের হয়ে আদনানকে সঙ্গে নিয়ে সাজু ভাই একটা রেস্টুরেন্টে গেল। এখনো দুপুরের খাবার খাওয়া হয়নি। রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুজনেই আগে খাওয়াদাওয়া করে নিল। খাবার শেষ করে বাইক নিয়ে চলে গেল রাজলক্ষ্মীর কফিসিসিয়াসে। এক কাপ ঠান্ডা কফি খেয়ে বের হয়ে থানার উদ্দেশ্যে চলে গেল।
তাজুল সাহেব মনমরা হয়ে বসে ছিলেন। সাজুকে দেখে চোখ তুলে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।
সাজু বললো ‘ আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলতে এসেছি। ‘
‘ বুঝতে পারছি, বলেন। ‘
‘ পরশু রাতে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে আপনার নাকি অনেক ঝগড়া হয়েছে। তারপর গতকাল সকালে উঠে আবারও ঝগড়া হয়। আপনি আপনার স্ত্রীর গালে থা!প্পড় মা!রেন। কিন্তু কেন? ‘
‘ এসব আপনাকে কে বলেছে? ‘
‘ মিতু, আপনার স্ত্রী বলেছে। আপনি তার সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করেন, কিন্তু কেন? ঝগড়ার মূল কেন্দ্রবিন্দু কি? ‘
তাজুল সাহেব চুপ করে রইল। সাজু কিছুটা সময় দিয়ে আবার বললো,
‘ প্লিজ হেল্প মি। বলেন আপনাদের মধ্যে কি হয়েছে সেদিন? ‘
‘ আফরিন, মিতুর বোন। ‘
‘ ভালো করে বলেন। ‘
‘ বাড়িওয়ালার ছেলে সজলের সঙ্গে আফরিনের রিলেশন ছিল আমি জানতাম না। সেদিন মানে পরশু আমি অফিস থেকে ফেরার পরে সিদ্দিক আঙ্কেল আমাকে ডেকে নিয়ে ছাদে যায়। তারপর তিনি বলেন যে তার ছেলের সঙ্গে আফরিনের সম্পর্ক চলছে। কিন্তু তিনি চান না যে এদের এই সম্পর্কটা পরিপূর্ণতা পাক। তারপর তিনি আরও জানান যে আফরিন নাকি গর্ভবতী। এরপর আঙ্কেল আমাকে অনেক অপমানের কথা বলে। ‘
‘ যেমন? ‘
‘ আমি নাকি নিজের স্ত্রীর বোনকে সম্পদের লোভে তার ছেলের পিছনে লাগিয়ে দিয়েছি৷ কদিন পর সজল বিদেশে যাবে তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নাকি সবকিছু আমিই করছি। এসব অপবাদ নিয়ে বাসায় আসি, তারপর মিতুর কাছে সবকিছু বলি। মিতু উল্টো আমার সঙ্গে রাগ করে। তখন কথার মধ্যে কথা চলে আসে। ‘
‘ আপনি এবং আপনার স্ত্রী গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত এসব কাউকে বলেননি কেন? ‘
‘ আফরিন বিয়ের আগেই সজলের সন্তানের মা হতে চলেছিল। এই কথা একটা মৃ!ত মানুষের নামে বলতে মুখে বাধছিল। বেঁচে থাকতে ভুল করে গেছে কিন্তু মৃ!ত্যুর পর তার কুৎসিত ঘটনা কেউ জানুক এটা চাইনি! ‘
‘ উহ, তাই বলে নিজে জেলের ভেতর এসে বসে থাকবেন? আর ওদিকে আসল অপরাধী জেলের বাইরে বসে বাবুগিরি করবে। ‘
‘ আঙ্কেল খুন করতে পারে না। সিদ্দিক আঙ্কেল ও তার স্ত্রী গতবছর হজ্জ করে এসেছে। একজন মানুষ হজ্জ করে এসে এতবড় অপরাধ করবে না তাই না সাজু ভাই? ‘
‘ তাই যদি হতো তাহলে তিনি ছেলে আর ছেলের স্ত্রীকে মেনে না নিয়ে পেটের বাচ্চা নষ্ট করার কথা কীভাবে বলে? ‘
‘ কে কার স্ত্রী? ‘
‘ সজল ও আফরিন বিয়ে করেছিল। ‘
‘ কে বলেছে আপনাকে? ‘
‘ ফয়সাল সাহেব বলেছেন। তিনি ওদের বিয়ের সাক্ষী ছিল। ‘
তাজুল সাহেব কিছু একটা বলতে গেল তার আগেই সাজুর মোবাইলে কল এলো।
‘ হ্যালো সাজু স্যার? আমি রফিক, সরকার বাড়ির দারোয়ান রফিক আমি। ‘
‘ হ্যাঁ রফিক ভাই বলেন। চিনতে পেরেছি। ‘
‘ স্যার দুপুরে তো আপনাকে একটা কথা বলতে পারি নাই। আসলে সাহেবের জন্য সাহস করে উঠতে পারিনি। ‘
‘ কি কথা? ‘
‘ গতকাল তাজুল স্যার বাসায় আসার কিছুক্ষণ আগে আমি ছাদে গেছিলাম। আমাদের সিদ্দিক স্যার দুটো ফুলের টব এনেছিল সেগুলো ছাদে রেখে এসেছিলাম। ‘
‘ আচ্ছা তারপর? ‘
‘ ফুলের টব রেখে নিচে নামার সময় আমি যখন চতুর্থ তলা থেকে তৃতীয় তলায় নামছি তখন দেখি সিদ্দিক স্যার তাজুল স্যারের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ‘
‘ আচ্ছা আচ্ছা তারপর? ‘
‘ স্যার খুব টেনশনে ছিল, চোখে মুখে ভয়ের একটা ছাপ স্পষ্ট ছিল। আমাকে দেখেই আমতা আমতা করে নিচে নেমে গেল। ‘
‘ তখন দরজা খোলা ছিল নাকি বন্ধ? ‘
‘ তা তো জানি না স্যার। ‘
‘ ঠিক আছে, এটুকু বলার জন্য ধন্যবাদ। ‘
‘ স্যার আরেকটা কথা। ‘
‘ হ্যাঁ বলেন। ‘
‘ আপনারা চলে যাবার পরে মানে এই পনের কুড়ি মিনিট আগে স্যার আমাকে ডাক দিয়ে ছাদে নিয়ে গেল। তারপর আমাকে বলে আমি ডযে তাকে ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দেখেছি সেটা যেন আপনার কাছে বা পুলিশের কাছে না বলি। আর সেজন্য তিনি বেশ কিছু টাকা দিবেন বলছেন। ‘
সাজু এবার সকল সন্দেহের দৃষ্টি বাড়িওয়ালা সিদ্দিক সরকারের দিকে গেল। মোবাইল কল কেটে দিয়ে সে সেখানেই চিন্তিত হয়ে বসে রইল।
তবে সাজু কল্পনা করতে পারে নাই যে এরচেয়ে আরো বড় ধাক্কা তার জন্য অপেক্ষা করছে। সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেল হাসান সাহেবের পাঠানো আফরিনের নাম্বারের কললিস্ট দেখে।
সাজুর মনে তখন নতুন প্রশ্ন এলো ‘ আফরিন বাসায় ঢুকতে ঢুকতে তাহলে কার সঙ্গে কথা বলেছিল? কার সঙ্গে বিএফসি তে দেখা করতে চেয়েছিল। ‘
.
.
[ সকলের আগ্রহ দেখে আমি আনন্দিত। থ্রিলার গল্পের এতো বেশি পাঠক পাঠিকা আছে আগে জানতাম না। আর সাজু ভাইয়ের প্রতি সবার ভালোবাসা দেখে তো হিংসা হচ্ছে। ]
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ]
[ গল্পটা ছয় পর্বে সমাপ্ত হতে পারে। ]
.
#চলবে…
লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সাইফ)
উত্তরা, ঢাকা, বাংলাদেশ।