#দ্যা ব্লাক বুক
পর্ব ৫
#লেখক- Riaz Raj
——————-
দরজা খুলে রুম থেকে বের হতে যাবো, তখনি দেখি, দরজার সামনে সেই মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যে মেয়েটিকে আমি পাথরের পাহাড়ে, মূর্তিরূপে দেখেছিলাম।
মেয়েটিকে দেখে আমি হতভাগ। যেনো আকাশ থেকে মাটিতে পড়লাম। ১৫৮৮ সাল থেকে এই মেয়ে ২০২০ সালে এলো কিভাবে। আমার মত বইয়ের সাহায্যে নাতো? আমি কিছু বলার আগে মেয়েটি আমায় বলে,
– আব্বা, হটাৎ করে আপনি এতো স্মার্ট আর জোয়ান হয়ে গেলেন কিভাবে? এখন তো আপনার ছেলের চাইতেও,আপনাকে হেব্বি লাগছে।
ওর কথা শুনে খাচ বোবা আমি। বিয়ে করলাম কোনদিন আর বাচ্চা আসলো কোথা থেকে। আর আমার সামনে আমার ছেলের বউ দাঁড়িয়ে আছে? বুঝতে পেরেছি। মেয়েটিকে কিছু না বলে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি, ২০৫৬ সাল। ও এম জি, আমি ভবিষ্যৎ জগতে চলে এসেছি। ছেলের বউ,অর্থাৎ সামনের মেয়েটিকে কিছু না বলে,দরজা অফ করে দিলাম। রুমে নিজের বইটা খুজতে লাগলাম। নিজের বই না,কিন্তু বইটা তো আমার পিছু ছাড়ছেনা। প্রতিনিয়ত আমার সাথে গেম খেলে যাচ্ছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে, অবশেষে টেবিলের নিছে ফেলাম। প্রতিবারের মত বই খুললাম, আলো এলো, অজ্ঞান হলাম, চোখ খুললাম,কিন্তু কাজ হয়নি। আমি রুমেই আছি। উফফ বইটা বরবাদ হয়ে গেছে নাকি। ছেলের বউ এখনো দরজা নাড়াচ্ছে। বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দেখি, আম্মু দাঁড়িয়ে আছে। আমার কপাল ভরা ঘাম দেখে আম্মু বিস্মৃত হয়ে যায়। আর ছেলের বউয়ের জায়গায়,আম্মুকে দেখি আমি অবাক হই। আবার ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি, ২০২০ সাল। অর্থাৎ আমি বর্তমানে আছি। আম্মু প্রশ্ন করে বসে,
– কিরে, তোকে চিন্তিত লাগছে কেনো? কিছু হয়েছে?
– না মা, রুম একটু পরিষ্কার করছিলাম, তাই একটু ঘাম ভরেছে ।
– কাল সারারাত তো দরজাই খুললি না। আর এখন রুম পরিষ্কার করছিস? কি হয়েছে তো বলবি?
– কাল সারারাত মানে? এখন কি সকাল?
– এই, তুই কি বলছিস, সুস্থ আছিস?
– হ্যা, আচ্ছা শুনো, নাস্তা রেডি করো,দরজায় নক দিবানা,আমি আসতেছি।
– ওকে
ধুপ করে দরজাটা বন্ধ করে নিজের রুমে চলে আসলাম। মাথায় হাত দিয়ে ভাবছি, এক রাতে আমি অতীত আর ভবিষ্যৎ পাড়ি দিয়েছি? কিন্তু এসব আমার সাথে কেনো হচ্ছে, আর কি লাভ এই বইয়ের। প্রথম কাজটা নাহয় আমার উপকার হয়েছে। পরে আদিবাসী, গুহা,মূর্তি, ছেলের বউ, এসবের মানে কি। কোন রহস্য লুকিয়ে আছে। উফফ, মাথা ঝিম ধরে যাচ্ছে। আরেক নজর বইটার দিকে তাকালাম। নিষ্পাপ একেবারে বাচ্চাদের মত শুয়ে আছে বইটি। বিছানা থেকে নেমে, বইটা হাতে নিলাম। কেও যেনো না দেখে, তাই আলমারিতে ঢুকিয়ে তালা মেরে দিয়েছি। কলেজের সময় হয়ে গেছে আমার,আগে ক্লাস করে আসি।
ফ্রেস হয়ে নিছে এসে দেখি, খাবার পরিপূর্ণ টেবিল। কয়েকটা গিল দিয়েই,কিছুটা খেয়ে পানি পান করলাম। এরপর সোজা কলেজ। বইটার ব্যাপারে আমার ক্লাসমেট ইসরাতের সাথে কথা বলতে হবে। ও মনে হয় কিছু সমাধান দিতে পারবে। কলেজের গেট বরাবর আসতেই দেখি, আমার ফ্রেন্ড আকাশ আমাকে দেখে হাসতে শুরু করে দেয়। আমি গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকার পর, রবি,রনি, মাহফুজ,আশিক, রবিন, সাইফুল সবাই হাসতে শুরু করে। বুঝলাম না, সবাই আমাকে দেখে হাসতেছে কেন। কিছুক্ষণ পর কলেজের ছেলে মেয়ে সবাই এসে হাসতে শুরু করে। আমাকে কি জুকারের মত লাগছে নাকি। এরা এমন কেনো করতাছে। কারণটা না বুঝলেও, insult fill হচ্ছে আমার। নিছের দিকে মাথা নামিয়ে, সোজা ক্লাসে চলে যাই। ইসরাতকে দেখছিনা, কিন্তু সবাই হাসলো কেন। মুখে কিছু লেগে নেইতো..? তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে, আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার মুখ পুরো ৫০ বছরের লোকদের মত হয়ে গেছে। চাড়মা দলা দলা হয়ে যাচ্ছে, চোখ দুটি কেমন যেনো সাদা রঙে বর্ণিত হচ্ছে । মুখের মধ্যে হাত দিয়ে আমি মুখের চাড়মা টানছি। চাড়মা এতই নরম হয়ে গেছে যে, প্রতিটা টানে হাতে চাড়মা ছিড়ে চলে আসছে। মুখে এবার রক্তের ফোটা ভেসে উঠছে। নিজের চাড়মা নিজেই তুলে ফেলেছি আমি। এখন আবার রক্তও বের হচ্ছে।বুঝতেছিনা কি হচ্ছে এসব। চাড়মা ছিড়ে বের হওয়া রক্তের ঘ্রাণে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। রক্তের ঘ্রাণ কেমন যেনো ভালো লাগছে আমার। খেতে না জানি আরো কত মজা। ভাবতে না ভাবতে কেও যেনো বলে উঠলো,
তুলে ফেলো চামড়া,
নিজের হোগা কামড়া,
কি ভাবছিস তুই ধামরা।
আমি বলে ধমরা
কে বলছিস রে? বলেই চারদিক তাকাতে লাগলাম। কারো দেখা নেই। অনেক খোজার পর আয়নার ভিতর থেকে আমার প্রতিরূপ আমাকেই বলছে,” কি দেখিস,আমি এখানে “।আশ্চর্য বিষয়, আয়নার ভিতর আমার ছবি আমাকেই প্রশ্ন করছে?
আমি হতভম্ব হয়ে আয়নায় তাকিয়ে আছি। আয়নার ভিরত আমার প্রতিচ্ছবি আমাকে বলছে,
– রক্ত খা, যা এখুনি যা। তোর রক্তের প্রয়োজন। রক্ত ছাড়া তোর রুপ যৌবন কিছুই ফিরে পাবিনা।তুই বৃদ্ধ হয়ে যাবি। তিলে তিলে শেষ হবি। কংকাল হয়ে মরবি।
– ওই মিয়া ওই, ফালতু বেডা। থাপড়াইয়া দাত হালাই দিমু। আলিফ লায়লা লাগাইছেন নাকি।
– কাকে প্রশ্ন করছিস তুই? খেয়াল করে দেখ।
বুক ধুক ধুক করে উঠলো। নিজেকে নিজে গালি দিচ্ছি কেনো। আয়নায় তাকিয়ে দেখি আমার চেহারা আরো ভয়ানক হয়ে যাচ্ছে। উঠে যাওয়া চাড়মা,রক্তের ফোটা স্পষ্ট রুপ নিচ্ছে। নিজের জ্বিবাহ দিয়ে আমি নিজের রক্ত খাচ্ছি। ছিহহহ, আমি কি সত্যিই ভয়ংকর কিছু হয়ে গেছি? হতেও পারে, কাল রাত অতীত ভবিষ্যৎ সব ঘুরেছি। এখন এসব হওয়া অস্বাভাবিক না। কিন্তু প্রশ্ন একটা রয়েই গেলো, আমি কেনো পশুত্ব গ্রহন করছি। জানিনা,তবে আমাকে এখন স্বীকার করতে হবে। মানুষ স্বীকার।
সোজা গিয়ে, একটা বাথরুমে ঢুকে পড়লাম। হাত পা কাঁপছে আমার। থরথরানি উঠে গেছে। বাথরুমে আমাকে দেখলেও তো কেও আসতে পারবেনা। তাই আবার দরজার বাহিরে এসে দাঁড়িয়েছি। তখনি দেখি, ইসরাতের আগমন। আল্লাহ, আমি আমার ফ্রেন্ডকেই স্বীকার করবো? কিন্তু ও ছেলেদের বাথরুমে কেনো আসলো। সেটা নাহয় পরে বলা যাবে, আগে আমি মুখ লুকাই। চটপট পকেট থেকে রুমাল বের করে, আমি নিজের মুখে বেধে নিলাম। ততক্ষনে ইসরাত এসে বলল,
– কিরে,তুই মেয়েদের বাথরুমে কি করছিস?
– না মানে ইয়ে, এইটা মেয়েদের?
– হ্যা বুদ্ধু, এখন যা, তাড়াহুড়া করে হয়তো ঢুকে গেছিস। বের হ।
– তুই কই যাবি।
– কই যাবো আবার, বাথরুমে যাবো।
– তো যা..?
– কিন্তু তুই ওয়াশরুম থেকে বের হ।
রাগ উঠে গেছে আমার। ফুঁসতে ফুঁসতে এসে,ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম। ইসরাত আমার কান্ড দেখে হেসে যাচ্ছে। আবার দেখি লজ্জামাখা চেহারাও বানিয়ে ফেলেছে।বুঝলাম না, ও কি ভাবছে। আমি দরজা বন্ধ করেই ওর দিকে এগিয়ে আসি। আমার আগমনে সে জামা খোলা ধরেছে। যাক ভালোই হয়েছে, সে যাই ভাবুক। আমি আজ ঘাড় ফুটো করবো।
সোজা গিয়ে ইসরাতের ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিলাম। ইসরাত কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারেনি। বলবেও বা কিভাবে, ওর কণ্ঠনালী আমি কামড়ে ছিড়ে ফেলেছি। যত কামড়াচ্ছি,তত আমি হালকা হতে লাগলাম। ধীরে ধীরে শক্তি পাচ্ছি।মনে হচ্ছে, এ বুঝি আমি উড়তেও পারবো। ইসরাতের রক্ত খাওয়ার পর দেহটাকে বাথরুমে ছুড়ে ফেলে দেই। ফ্লোরে থাকা রক্ত যেভাবে আছে থাকুক। নিজের মুখ পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখি, আমার চেহারা এতই স্মার্ট আর উজ্জ্বল হয়ে গেছে, যা বলার বাহিরে। এতটা ফর্সা স্লিম ত্বক হয়ে গেছে আমার, বিলিভ হচ্ছিলোনা। তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম থেকে বের হলাম। কেও দেখেনি আমাকে। ব্যাগটা কাদে নিয়ে কলেজ থেকে বের হতেই দেখি, সব মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে হলিউড মুভির কোনো হিরো যাচ্ছে। কিছু মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েও গেছে। কিন্তু আমার কাছে এইটা মোটেও সাধারণ ব্যাপার না। কারণ আমি জানি, আমি কতটা বিপদের গন্ধ পাচ্ছি। আমি হয়তো এদের থেকেই অনেককে স্বীকার করবো। হয়তো কাল নিউজ আসবে, শহরের মানুষদের আক্রমণ করছে কোনো এক অজানা পশু। কিন্তু নিউজ তো ভুল, এসব কোনো পশু না, আমি নিজেই করছি। সব কিছু মূল কারণ সে বই। আজকে বইটাকে আমি পুড়েই ফেলবো। মনে মনে এই রাগটা নিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছি।
রাত ৮ টা বাজে এখন। কলেজ থেকে আসার পর ১৫ টা গুলি খেয়েছি। পিস্তলের বুলেট আমার পিঠ ছিদ্র করে ফেলেছে। এক মহা যুদ্ধ করেছি আমি। তবে এখন মাথাটা ঝিম করে উঠছে, আমাকে এখন বের হতে হবে। আবার কাওকে স্বীকার করবো, ৩৪ নাম্বার স্বীকার।
……
……
চলবে……