নতুন বিয়ের রোমান্টিক গল্প অন্যরকম বউ পর্ব ১
বাসর ঘরে ঢুকেই দেখি বউ নেই!আমি এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলাম।হঠাৎ বাথরুমের দরজা খুলে ঘরে ফিরলেন তিনি,আমি তাকে দেখে বটবৃক্ষের ন্যায় দন্ডায়মান হয়ে গেলাম।সারা জীবন ভাবছি বউ খাটে ঘোমটা টেনে জড়সড়ো হয়ে বসে থাকবে, আমি ঘোমটা আস্তে আস্তে উঠাবো সে লজ্জাবতি পাতার মতো চুপসে যাবে,নিমিলিতলোচনে তাকাবে,আমি তাকে আবিষ্কার করবো,তারপর হয়তো পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবে,আমি খুশি হবো কিন্তু বলবো না না থাক ইত্যাদি ইত্যাদি …..
-আপনি ফ্রেশ হবেন না?যান ঔসব জবড়জং পোশাক খুলে আসুন, রাত ১২.৩০ বাজে আমি ঘুমাবো।
নতুন বউয়ের কথায় আমি আবার পাথর বনে গেলাম।বিশ্বাস করতে পারছি না।নিজের বাড়িতে নিজেকে কয়েদি মনে হচ্ছে।
-আপনি যাবেন না লাইট অফ করবো?শোনেন বিয়ের সময় যাকে দেখেছেন ওটা নকল নীলা, এখন যাকে দেখছেন সে আসল,আটা-ময়দা ছাড়া।
আমি ভেবেছি কি? ভাবছি কি? আর হচ্ছে কি?
-যাচ্ছি, আপনি বসেন।
-শোনেন এইসব আপনি টাপনি না আমাকে তুমি করে বলবেন, আর আপনি আমার থেকে যেহেতু সাত বছরের বড় আমি আপনাকে কিছুদিন আপনি করে বলবো।যান দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসেন।
বাথরুম থেকে বের হতেও কেমন যেন লাগছে,দেরি হলে বকা দেয় কিনা? যা হোক বেরিয়ে খাটে গিয়ে বললাম –
-তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিল আমাদের সেটেল ম্যারেজতো একটু পরিচিত হতে চাই আর কি?হঠাৎ দেখলাম আমি তোতলাচ্ছি।
-শোনেন আমি আপনার বউ হয়ে এসেছি অতিথি নয়।আমার বয়স ২২ বছর আল্লাহ চাহেতো ষাটবছরের আগে মরবো না।তাতে কি আপনার কথা শেষ হবে না?
এবার একেবারে স্ট্যাম্প বোল্ড হয়ে গেলাম।একটু ইতস্ততভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম
-আমাকে তোমার পছন্দ হয়েছে?
-আমি আপনার বউ, খালাতো বোন হয়ে এ বাড়িতে তিনদিনের জন্য বেড়াতে আসিনি, জনাব।
-আপনি সবসময় কি এভাবে রেগে থাকেন?আপনাকে দেখলে কিন্তু ওরকম মনে হয় না।এতো সুন্দর আপনি! পরীর মতো, শুধু ডানা দুটো নেই।
-আবারো আপনি! আর আমি জানি আমি সুন্দরী। আর পরী ফালতু একটা জিনিস যা আমি জীবনেও দেখিনি।আপনি উপমা ঠিকঠাক এবং যেগুলো বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য সেগুলো ব্যবহার করবেন,কেমন?
-কি রকম সেটা?
-এই ধরেন বলবেন তুমি চাঁদের মতো সুন্দর। আমি চাঁদ দেখেছি, নিজেকে মেলাতে পারি, সিম্পল।
এখন আমার নিজেকে গ আকারে গা ধ আকারে ধা মনে হচ্ছে। আমার মেমোরি পুরোপুরি হ্যাং হয়ে গেছে,নিজেই মনে হচ্ছে লাইট অফ করি, ঘুমাই।হঠাৎ মনে পড়তেই বললাম
-শোন তোমার জন্য একটা গিফট আছে।
বলেই ভাবছিলাম বলবে কালকে দিয়েন তো ওসব।কিন্তু না, দেখি দেখি একটু স্মিত হাসি দিয়ে বললো
-আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন না গিফটটা দিবেন?
-আমি একটা রিং বের করলাম,বক্সের উপরে লেখা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড।
-পরিয়ে দাও,তোমার হাত এতো ঘামে ক্যানো?ধন্যবাদ।
এই প্রথম তার হাতটা ধরলাম।বিশ্বাস করেন এতো ভয় জীবনেও পায়নি।আরো একটা স্বস্তির বিষয় আংটির মাপটা ঠিকঠাক ছিলো।আমি যেন রানে ফিরছি আস্তে আস্তে। আচ্ছা একটা কথা বলি
-তুমি দেখলাম একদমই কাঁদলে না বাবার বাড়ি থেকে আসার সময়?
-ন্যাকামি আমার একদম পছন্দ না।কাঁদলে কি হতো আমার বাবা-মা আমাকে রেখে দিত? না আপনি রেখে আসতেন?
-না তোমার কথায় যুক্তি আছে,কিন্তু সবাই কাদেঁতো।যারা বিয়েতে কাদেঁনা তারা নাকি অনেক নিষ্ঠুর হৃদয়হীন মনে হয়?না শুনেছি আর কি।
-আমাকে কি সবার মতো মনে হচ্ছে?আর ওসব হৃদয়-টিদয় বলে কিছু নেই একসাথে থাকতে থাকতে একটা অভ্যাস হয়ে যায় এই যা,আপনার সাথেও অভ্যস্থতা হয়ে যাবে। আর বাথরুমে স্যান্ডেল কই?আর বালিশ এতো শক্ত ক্যানো?
-আচ্ছা কালকে সব দেখি ঠিকঠাক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
-কালকে না আজকে, এখন রাত ১.৩০ মিনিট। সকালে উঠতে হবে,বড়ি ভর্তি লোক।
-আচ্ছা তুমি প্রেম-ট্রেম করোনি কখনো?
-আপনাদের ছেলেদের এই বাতিকগুলো খারাপ।আজকেই আমার জীবন কাহিনী সব জানতে হবে?হ্যাঁ ছিলো তাও তিনটা,তবে তিনমাসের বেশি টেকেনি কোনটা?
আমার মুখটা কালো হয়ে গেছে।ভাবছি আল্লাহ আমার এই বিয়ে টিকবেতো।আগে ভাবতাম লেখাপড়া সবথেকে কঠিন তারপর দেখলাম জব পাওয়া কঠিন এখন দেখি বিয়ে টিকিয়ে রাখা তার থেকেও শতগুণ কঠিন।যা হোক কালোমুখে জিজ্ঞেস করলাম
-কেন টেকেনি সম্পর্কগুলো?
-আচ্ছা আমি যদি বলতাম না না কি বলেন প্রেমতো দূরের কথা আমার ছেলে বন্ধুও ছিলো না আপনি নিশ্চয় অনেক খুশি হতেন।এখন আপনার লাল মুখ কালো হয়ে গেছে ওসব অনেক কথা, আাসেন ঘুমায়।
-আমরা কি সত্যি ঘুমিয়ে পড়বো?না মানে আমার অনেক প্ল্যান ছিলো।
-আচ্ছা বুঝতে হবেতো আমি অনেক ক্লান্ত আর ছেলেরা এমন ক্যানো জীবনের সব কিছু তারা বাসর রাতেই করতে হবে?
আমি হতভম্ব হয়ে বসে আছি হঠাৎ লাইট অফ হয়ে গেছে। আমি শুয়ে পড়লাম।হারানোর বেদনা জীবনে অনেক পেয়েছি।কিন্তু প্রাপ্তির মাঝেও অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা অন্যরকম।মনটা খুব খারাপ।হঠাৎ একটা হাত এসে আমার বুকে পড়লো………..
।চলবে……………..
অন্যরকম বউ গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে