#অন্যরকম বউ
পর্ব ৫
বাথরুমে ঢুকেই হতবাক হলাম,নীলার সমস্ত শরীরে শ্যাম্পু, গরম পানির ট্যাব হাতড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আমি বললাম, একটু দাঁড়াও আমি গিজারের লাইনটা আগে অন করি।দ্রুত বের হও, নিচে ড্রাইভার অপেক্ষা করছে।এই সকালে গোসলের পর ঘন্টা খানিক মেয়েদের সম্ভবত নিবিড় পবিত্র লাগে।একজন মানুষের রেডি হতে এতক্ষণ লাগে নীলা? তাও এই শীতের দেশে, যেখানে কান, মুখও ঢেকে চলতে হয়।
-তোমরা ছেলেরা ওসব বুঝবে না,একবেলা আমরা না খেয়ে থাকতে পারি কিন্তু না সেজেগুজে বের হতে পারিনা।আপনি যান, আমি আসছি।
সকাল সাতটার জায়গায় রওনা করলাম আটটা পঁচিশে,মেজাজটা খারাপ।কিন্তু ছেলেদের একটা সমস্যা হল, নিজের মেজাজ খরাপ বেশির ভাগ সময় হজম করতে হয়, অন্যথায় সেটা বউয়ের উপর প্রয়োগের পর যে বিপরীত পতিক্রিয়া আসে সেটা বদহজম হয়ে যায়।
-মানুষ এখন কি করে জানেন? ঘুরতে আসে ফেসবুকে ছবি দেওয়ার জন্য।হানিমুন করে দুবাই,সিংঙ্গাপুর,থাইল্যান্ডে মানে হয়?
-কেন কি সমস্যা?
-আমার অতো কমার্শিয়াল জায়গা পছন্দ না,এইযে দেখেন, আঁকাবাঁকা রাস্তার চারপাশে পাহাড় আর পাহাড়,মেঘগুলো ছুয়ে যাচ্ছে এটা কি বুর্জ আল খলিফাতে পাবেন?
আমিও কবিতা লিখতাম, অবশ্য এখনও লিখি, তোমাকে মেঘ নিয়ে একটা কবিতা শোনাই,
মিলছে না!!!
মেঘগুলো কী সুতোয় বোনা?
উড়ছে তবু পড়ছে না!
তোমার হাতের রঙিন নোখের
আদরগুলো মিলছে না!
লম্বা বা গোল বৃষ্টিগুলো
পড়ছে তবু ভাঙছে না!
চুলগুলো তোমার বড্ড পাজি
উড়ছে তবু উড়ছি না!!
চন্দ্র মামা সূর্যি মামা
উঠছে রোজই,থাকছে না!!
তোমার চোখে আমার ছবি
আগের মত লাগছে না!!!
ঢেউগুলো সব আছড়ে পড়ে
ভাঙছে দুকূল থামছে না!!
তোমার আমার মিলন সখি
আগের মত লাগছে না!!!
মিলছে না রে মিলছে না!!!!
-আপনি বেশ ভালো লেখেন।
এই প্রথম নীলা আমার সামনাসামনি প্রশংসা করলো!দুপুর হয়ে গেছে আমরা একটা ধাবায় দুপুরের খবার খেলাম,বেশ ভালো তবে বেশিরভাগ ননভেজ খাবার।নীলাকে বেশ খুশি লাগছে হয়ত ওর পছন্দের জায়গায় এসেছে বলে।শেষ বিকেলের দিক আমরা লাচুং এর আগেই লাচুনং ব্রিজে পৌঁছালাম।অসম্ভব সুন্দর জায়গা। পাহাড় থেকে অঝরে ঝর্ণা নেমে ব্রিজের নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে।বিশাল বিশাল পাথর তার ভেতর দিয়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে স্বচ্ছ সাদা জলধারা ছুটে চলেছে।আমি বললাম কি অসম্ভব সুন্দর না?
–হ্যাঁ তবে কষ্টও আছে।আমার কাছে মনে হয় এগুলো পাহাড়ের বুকচিরে বেরিয়ে আসা কান্না।
-নীলা তুমি কোন কিছু স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারো না?
-আমার কাছে পৃথিবীর অধিকাংশ বিষয়ই আপেক্ষিক মনে হয়।তবে কষ্টের ভেতর দিয়ে যে আনন্দ সেটা উপভোগ সবাই পারে না।
তোমার কথা শুনলে না আমার মাথা ঘোরে। এতো প্যাঁচাতে পারো তুমি।কি চমৎকার দৃশ্য,প্রকৃতির এমন সংমিশ্রণ আমি আগে কখনো দেখিনি।আর তুমি কিনা…
–আপনি কখনো ৬ঘন্টা লেবার পেন নেওয়ার পর সন্তানের মুখ দেখে মায়ের অশ্রুমাখা হাসি দেখেছেন?
আমি চুপ হয়ে গেলাম,এখানে যে রিসোর্টে উঠেছি সেটা অবিকল চিনাদের মতো।উপরে চৌচালা, বাঁশ আর কাঠ দিয়ে তৈরি। পরিপাটি চারিদিকে, অদূর পাহাড় হতে ঝর্ণার শব্দ কানে আসছে।আমি বললাম, নীলা ফেসবুকে কয়টা ছবি দেয়?
-না, ঝগড়া করি বা গল্প সেটারও মহত্ত্ব আছে,আপনি ছবি দিবেন তার পর একটু পরপর দেখবেন কে লাইক দিলো,কে কমেন্ট করলো ওসব পরেও করা যাবে।
-আচ্ছা তুমি ফেসবুকে নিজের ছবি দেওনা কেন?
শোনেন, ফেসবুকের জন্ম শুধু ছবি দেওয়ার জন্য নয়,তার জন্য তো ইনস্টাগ্রাম আছে।ছবিতে শুধু লোকদেখানো মনেভাবেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে।যাক বাদদেন অদ্ভুত কিছু পোকার শব্দ পাচ্ছি, আপনি শুনতে পাচ্ছেন?
হ্যাঁ,আজকে নীলা নিজ থেকে আমার পাশে শুয়েছে।প্রচন্ড শীত,নিশ্বাসের সাথে মনে হচ্ছে সাদা ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমাকে বেশ শক্তভাবে জড়িয়ে ধরেছে।কি অদ্ভুত একটা সম্পর্ক। আমি ভাবছি এভাবেও একটা মানুষ আর একজনের হতে পারে।আমিও ওকে একটু জড়িয়ে ধরতে গেছি আর
-এই নড়বেন না!আমার ভীষণ ঠান্ডা লাগছে তাই এভাবে আছি।
আমি বললাম আমারও ঠান্ডা লাগছে…….
সকালে যখন বের হলাম, অসম্ভব সুন্দর সব জায়গা।সবচেয়ে বড় বিষয়, এতো পরিষ্কার পরিছন্ন সব আশ্চর্য হলাম।নীলা ভীষণ খুশি।আমরা দুপুরে খেয়ে ব্যক করছি মনটা ভীষণ রকমের ভালো।মনে হচ্ছে, এই রাস্তা গুলো শেষ না হলেই ভালো হতো।
হঠাৎ একটা বিকট শব্দ কিছু বুঝে ওঠার আগে নীলা আমার কোলে এসে আছড়ে পড়লো ওর নাকদিয়ে অঝরে রক্ত পড়ছে।আমার সাদা শার্ট লাল হয়ে গেছে,আমি পাগলের মতো চিৎকার করছি……
চলবে……….