#গল্প
#চার আনার জীবন পর্ব ১
যে পাত্রের সঙ্গে আমার বড় বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছিল, হলুদের দিনেই বড় বোন অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ায়, সেই ছেলের সাথে আমার বিয়ে পাকা করা হলো। শুধু মাকে একটা কথা বলেছিলাম, যেহেতু তোমরা জন্ম দিয়েছো তাই যা ইচ্ছা করতে পারো। মারতে পারো, কাটতে পারো যা খুশি করতে পারো। তারপর হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলাম।
মাঝে মাঝে মনে হয় মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলেই কি সব ব্যাথা কষ্ট নিরবে সহ্য করে যেতে হবে? সেই ছোটবেলা থেকে নাক-কান ফোঁড়ানো দিয়ে শুরু হলো তীব্র ব্যথার আগমন। তারপর বয়সন্ধিকাল সমাজ সংসার সবকিছুতে নারীকেই কেন মানিয়ে নিতে হবে?
নারীরা কি মানুষের কাতারে পড়ে না?
না, মেয়েরা কোন মানুষের কাতারেই পড়ে না। আর তাইতো মেয়েদের উপরেই সব দায়ভার চাপানো হয়!
সেই আদিকাল থেকেই এরকমটাই শুনে আসছি মেয়ে মানুষের এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না,তাহলে মেয়েরা কি করতে পারবে?
মা- বাবা থেকে শুরু করে সবার বোঝা উচিত মেয়েরা কোন খেলনা পুতুল নয় যে মেয়েদের কোনো অনুভুতি থাকবে না। আজ আমি মেয়ে বলে বাবা-মা তাদের সিদ্ধান্ত আমার উপরে চাপিয়ে দিতে পারলো। কোন প্রতিবাদ করতে পারলাম না, মেনে নিতে হলো তাদের সিদ্ধান্ত।
বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হলে, আমার বাবা নবস্বামীর হাতে হাত মিলিয়ে দিয়ে তাঁর দায়িত্বের বোঝা শেষ করলেন। চলে আসলাম স্বামীর বাড়ি তখন রাত দশটার টার বেশি বাজে।
গত দুইদিন রাগ করে কিছুই খাইনি, তাই পেটে প্রচুর খিদা মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে মনে হচ্ছে পরে যাবো।
বাসর ঘরে সদ্য বিবাহিত স্বামীকে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম আমাকে কিছু খেতে দিতে পারবেন? আজ দুদিন হলো আমি কিছু খাইনা আমার খুব মাথা ঘুরাচ্ছে। কথাটা শোনার পর তার মুখটা হঠাৎ কালো হয়ে গেলো! কিছুক্ষন মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে গেলো। কিছুসময় পর এক প্লেট ভাত ও বাটিতে করে গরুর মাংস নিয়ে আসলো। কত তাড়াতাড়ি যে আমি খাবারটা খেয়েছি আমি নিজেও জানিনা তবে লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
তার পরপরই পেটে অসহ্য ব্যথা শুরু হলো, আমার বুঝতে বাকি রইলো না এটা কিসের ব্যথা। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ব্যথার ওষুধও নাই, না জানি কতক্ষণ এ ব্যথা সহ্য করতে হবে?
আমার স্বামীর নাম পিয়াস। ওই মুহূর্তে পিয়াস আমার শারীরিক খোঁজ খবর না নিয়েই পিয়াস কাছে টানা শুরু করলো! আমি তাকে বললাম দেখুন আবার অসম্ভব পেটে ব্যথা হচ্ছে। দমবন্ধ হয়ে আসছে ব্যথায়। পিয়াস বেশ রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর বেডের কোণে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে পড়ে।
ক্লান্ত আমিও ছটফট করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি যানিনা। পিয়াসের চিৎকারে সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গে।
পিয়াস:- গম্ভীর গলায় বলতে লাগলো এই মেয়ে তোমার সমস্যাটা কি বলতো? কাপড়চোপড় চেঞ্জ না করেই ঘুমিয়ে গেছো!
আমি ক্ষীণ গলায় বললাম, আসলে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল তাই কখন ঘুমিয়ে পড়েছি আমি জানিনা।
পিয়াস:- যাও ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর ডাইনিংয়ে চলো।
আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে কত বড় বদমেজাজির জীবনে আমি এসেছি। তারপর থেকে সংসার জীবনের শুরু হলো। শশুর খুবই ভালো মানুষ আমাকে মেয়ের মত স্নেহ করে। আর পিয়াস শাশুড়ির আচরণটাই পেয়েছে। মাঝে মাঝে পিয়াসের আচরনে ভিতর থেকে তীব্র দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
পিয়াস একজন সন্দেহভাজন মানুষ। যে কারো সাথে হাসিমুখে কথা বললেই সে শুধু সন্দেহ করে। বিয়ের পরে বাপের যাওয়ার পর বন্ধুবান্ধবরা এসেছিল আমার সাথে দেখা করতে। আগের মত ঝাল মুড়ি মাখিয়ে পাঁচজন মিলে বারান্দায় বসে একসাথে খাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম, ওই সময় পিয়াস আসে আমি পিয়াসের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেই। তাদের সঙ্গে কথা না বলে পিয়াস গম্ভীরমুখে বেরিয়ে যায়। ওমনি সাব্বির বলে উঠলো তোর স্বামী এত গম্ভীর দেখলে কিন্তু বোঝা যায় না। ওই কথাটা পিয়াস শুনে ফেলে আর তারপর থেকে ছেলে বন্ধু নিয়ে আমাকে আজেবাজে কথা বলতে শুরু করলো।
একটা সময় ওঁর জন্য বন্ধুবান্ধব সবার সাথেই যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিলাম। ওঁর মনে শুধু সন্দেহ আর সন্দেহ! আরো বেশি সন্দেহটা জাগ্রত হলো সেদিন থেকে যেদিন ও জানলো যে বিয়ে টা আমার অমতে হয়েছে।
প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে গেলাম আমি। আমি কি কারো সাথে প্রেম করতাম কিনা আমার কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল কিনা এরকম নানান কথা।
বাবা-মাকে সব কথা খুলে বলেছিলাম, তাদের কথা বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। মানিয়ে নেওয়াই মেয়েদের কাজ। এতো অল্পতে অধৈর্য হলে সংসার করা যায়না। নিমিষেই চোখের কোণ ভিজে এলো, মনে মনে ভাবলাম বিয়ে দেওয়া পর্যন্তই কি বাবা মায়ের দায়িত্ব শেষ? সন্তান কিসে ভালো থাকবে খুশি থাকবে এটা দেখার দায়িত্ব তাদের নয়? তাদের সম্মান বাঁচানোর জন্য আমার অনিচ্ছায় জোর করে বিয়ে দেওয়া হলো, আর এখন বলছে অধৈর্য হলে চলবে না!! আমি সুখী হলাম কিনা এটা বাবা-মা দেখলো না!
প্রতিজ্ঞা করলাম আজ থেকে আর কোনদিন বাবা-মাকে কিছু বলবো না। নিজের সুখের দায়িত্ব নিজেই নেব।
চলবে______
লেখা—– Rozina Rose
চার আনার জীবন সবগুলো পর্বের লিংক একসাথে