#ইশরাত_জাহান_জেরিন
পর্ব ২৬
” চিনি কতখানি দিবো চায়ে? আর তুমি এই অবেলায় চা খাবে?”
“ইচ্ছে মতো দে। খাওয়াবো তো তোকেই।”
“মানে?”
“চা বানা জলদি।”
ফারাজ চিত্রার জন্য পাশেই বিদেশি কি একটা খাবার রান্না করছে। রান্নায় সামান্য একটু লবণ দিয়ে ঢাকনা দেয় সে। তারপর হেলান দিয়ে হাত দুটো বুকে গুঁজে সরু চোখে তাকায় নিরুর দিকে। নিরু একটু পর পর চুল ঠিক করছে,আপনাআপনি আবার হাসছে। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ফারাজের দিকে। ফারাজের শার্টের দুই হাতা কনুই অব্দি তোলা। নিরু ভালো করে একবার তার দিকে তাকায়। তার শুধু দৃষ্টি আটকে যায় সুদেহী, সুদীর্ঘ, সৌম্যদর্শনের ন্যায় এই সুদর্শন পুরুষের উপর! বরাবরই আটকায়। এ নতুন কিছু নয়।
“চাপের কাপটা চিত্রার হাতে তুই তুলে দিয়েছিলি?”
“ইশ আমাদের মাঝে আবার ওর কথা কেন? স্পেস চাই ওর থেকে।”
“তুই আগে স্পেসের স্পেলিং কর। সেটা তো পারবি না। এখন বল চিত্রার হাতে চায়ের ট্রে তুই তুলে দিয়েছিস?”
নিরু খানিকক্ষণ নীরব থেকে চোখ নামিয়ে ক্ষীণ স্বরে বলল, “হু।”
ফারাজ পাশের চুলায় রাখা ফুটন্ত চায়ের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসল। তারপর গভীর কণ্ঠে বলল,
“এই গরম চা যদি কারো গায়ের ওপর পড়ে তাহলে কি হবে?”
“পুড়ে যাবে ত্বক।”
“ট্রাই করে দেখতে হবে তবে।”
কথাটা বলা মাত্রই নিরুর কব্জি টেনে হাতটা ফুটন্ত চায়ের পাতিলে ডুবিয়ে দিল সে। নিরু যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠতেই ফারাজ তার মুখের ওপর এক তীব্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। গম্ভীর স্বরে দাঁত চেপে বলল,
“সাইন্ড যেন আমার কান অব্দি না আসে। তাহলে এই রান্না ঘরেই পুড়িয়ে মারবো।”
ভয়ে নিরু নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরল, কিন্তু তীব্র যন্ত্রণা তার চোখে-মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠল। হাত ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেও সে পারল না। ফারাজের শক্তির সঙ্গে পেরে ওঠা তার সাধ্যের বাইরে।
“আর কখনো চিত্রাকে দিয়ে কিছু করাবি? বল বল জলদি বল। যতদেরি করবি তত যন্ত্রণা পোহাতে হবে। তোর সাহস কি করে হয় আমার বউকে ট্রে নিয়ে পাঠানোর?”
“না… কখনো না। ছাড়ো প্লিজ।”
সন্তোষজনক উত্তর পেয়েই ফারাজ নিরুকে ছেড়ে দিল। তার হাত আগুনের ছোঁয়ায় লাল হয়ে ফোসকা পড়ে গেছে। নিরু ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলেও ফারাজ নির্বিকার। সে টিস্যু দিয়ে নিজের হাতটা মুছে চিত্রার জন্য খাবার বেড়ে প্লেটে সাজায়। পকেট থেকে এক বান্ডিল হাজার টাকার নোট বের করে নিরুর হাতে গুঁজে দিয়ে ঠান্ডা কণ্ঠে বলল,
“চিল! টাকাটা রাখ। এতে ব্যথাও সারাতে পারবি আর মনও খুশী করতে পারবি। এনজয়।”
কথাটা বলে ফারাজ যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নিরু আবার নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। তবে ফারাজ চিবুক শক্ত করে ঘাড় ফিরিয়ে তার দিকে শীতল দৃষ্টিতে চাইতেই কান্নার শব্দ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। ফারাজ এক হাত পকেটে গুঁজে অন্যহাতে খাবার প্লেট নিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কিছুই হয় নি। অভ্র, আয়েশা, মিতালিকে বহু আগেই রান্নাঘর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আয়েশা আজ প্রথম দিন কাজে এসেছে, এসব দৃশ্য দেখলে ভয় পেয়ে যাবে। আর যদি চিত্রাকে কিছু বলে দেয়? ফারাজের বিরুদ্ধাচরণ করার ফল কী হতে পারে, সে তো জানেই।
–
মোহনা এক নিবিড় উপন্যাসপ্রেমী। তার একাকীত্বের একমাত্র সঙ্গী বই। বহুবার পড়া জহির রায়হানের “হাজার বছর ধরে” উপন্যাসের পৃষ্ঠাগুলো সে আবার উল্টে যাচ্ছে, তৃষ্ণা মেটে না তার। প্রতিবার পড়লে মনে হয় নতুন করে আবিষ্কার করছে।
“আপা আইমু?”
মোহনা চোখ তুলে তাকাতেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগাটে, চাপা বর্ণের এক কিশোরীকে দেখতে পেল। ভালোবেসে সে মেয়েটিকে ফুল বলে ডাকে। মেয়েটির নাম ফুলি। বয়স তেরো-চৌদ্দ। এই জমিদারবাড়ির মালির ভাতিজি। নারায়ণগঞ্জে থাকে। এবারই প্রথম চাচার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। সেদিন বাগানে গিয়েছিল মোহনা, তখনই চোখে পড়ে ফুলিকে। ফুলির সঙ্গে সেদিন কথা হয় মোহনার। ফুলি বড় বড় দুটো উজ্জ্বল চোখ নিয়ে তাকে বলেছিল,
“আপা আমি আপনার মতো সুন্দর হইবার চাই।”
মোহনা ফুলির মাথায় হাত বুলিয়ে শুধিয়েছে,
“আয়নায় চেয়ে দেখো তুমি আমার থেকেও সুন্দর।”
সেকথা শুনে ফুলি খুব খুশী হয়েছিল। খুশীতে হাততালি দিয়েছিল। জমিদার বাড়ির দক্ষিণে বাড়ির কর্মীদের থাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে। যারা দিন-রাত এখানে থেকে সেবা করে তাদের জায়গা সেখানে হয়। দুলাল মিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ এই বাড়িতে কাজ করে। পরিবার নিয়ে এখানে থাকে। ফুল তো মাত্র ক’দিন হলো এখানে বেড়াতে এসেছে। আবার চলে যাবে। কিন্তু তার এখানে আসা নিয়েই তো মোহনার যত ভয়। এত বোঝানোর পরও কেন দুলাল মিয়া মেয়েটিকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল না? এই বাড়ি বিপদসংকুল। ফুলির এখানে থাকা মানেই ঝুঁকি।
“জলদি ভিতরে আসো।” মোহনা বাইরে একবার উঁকি দিয়ে নিশ্চিত হলো কেউ দেখছে না, তারপর ফুলিকে দ্রুত ঘরে ঢুকিয়ে দিল।
“এই ফুল! তোকে না বলেছি ঘর থেকে বের হবি না? আর তুই এখানে চলে এলি?কেনো রে?”
“আপা কালকেও আপনে আসেন নাই বাগানে। আজকেও আসতাছিলেন না দেইখা চইলা আইলাম।”
“আমার রুম কে চিনিয়ে দিয়েছে?”
“একটা মাইয়া।”
“আসার সময় কোনো পুরুষ মানুষ দেখছিল তোকে?”
“উঁহু।” ফুলি দু’পাশে মুখ ফিরিয়ে নাবোধক জবাব দেয়।
মোহনা ঘড়ির দিকে তাকায়। দুপুরে খেয়ে বাড়ির পুরুষরা বাহিরে বেড়িয়েছে। ইদানীং রাতের থেকে দিনে কাজ করে এরা। নিহানটা ঘরে আছে। এই সময় বউ নিয়ে দরজা এঁটে ঘুমানো তার অভ্যাস। বাড়িতে আর কে আছে? অভ্র? ফারাজ? তাদের নিয়ে ভয় নেই। অন্তত মেয়েলি কোনো বিষয় তো নয়। তবে ভয় হয়। এলাহীদের র*ক্তই তো ধমনীতে বইছে। এদের জন্ম পাপ থেকে আর পাপ তাদের জীবনের একটা অংশ। তবে পাপ কি? কেবলই কি অপরাধ মূলক কাজ করাকে পাপ বলে? উঁহু মিথ্যা বলা,কথা দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করাও তো পাপ। আর মেয়ে জাতকে নিচু করে দেখা,সস্তা মনে করা সেইসব কি? মহাপাপ? মোহনার ঘরে খাবার জিনিসের অভাব নেই। রোশানের রাত জাগলে ক্ষুধা পায়। তাই ঘরে সবসময় হাবিজাবি এনে রাখে সে। মোহনা সেখান থেকে একটা বিস্কুটের প্যাকেট ফুলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি তোর চাচার সঙ্গে কথা বলবো। তোকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে।”
ফুলের নিষ্পাপ মুখটা ছোট হয়ে আসে। সে তো মোহনা আপাকে এত্ত পছন্দ করে,তবুও মোহনা আপা খালি তাকে বাড়ি যেতে বলে। মাত্র দু-চারদিন হলো সে এখানে বেড়াতে এসেছো। জীবনে এত বড় বাড়ি কখনো চোখে দেখে নি। এত জলদি বাড়ি চলে গেলে কেমন করে হয়?
“আপনে সব সময় আমারে যাইবার কন কেন? আমার এই জায়গা ভালো লাগছে। আমি আপনার লগে থাকবার চাই।”
মোহনার চোখ অশ্রুসজল হলো,কিন্তু সে কাঁদলো না। মোহনাদের কাঁদতে নেই। তারা পাথর। তাদের পাথর হয়েই বাঁচতে হয়।
“তুই ওদের চোখে এখনো পড়িস নি। এই বাড়ি তোদের মতো নারীদের জন্য নয়। বিশেষ করে অসহায় নারীদের জন্য। তোর চলে যাওয়াই ভালো। ওদের নজর বাড়ি থেকে শুরু হয় আর বাহিরে গিয়ে শেষ। এসব তুই বুঝবি না।”
মোহনার কঠিন কথা ফুলির মগজে ঢুকল না। সে বিস্কুটের ক্রিম জিহ্বা দিয়ে চেটে মুচকি হাসল।
“এখন তুই চলে যা। এখানে আর আসবি না। আমি বাসায় গিয়ে না হয় তোর সঙ্গে দেখা করে আসবো। আর শুন বাগানে টইটই করবি না। যদি করিস তাহলে আর কখনো তোর সঙ্গে কথা বলব না,দেখাও করবো না।”
“আমি সব শুইনা চলমু আপা। আপনে রাগ কইরেন না।”
মোহনা ফুলিকে একা ছাড়ার সাহস পেলো না। সঙ্গে নিজে গিয়ে ঘর অব্দি পৌঁছে দিবে বলে ঠিক করে।
তবে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় ফারাজ এলাহীর মুখোমুখি হতে হয় তাকে। ফারাজ মোহনার দিকে তাকায় না। তবে মোহনার আড়ালে লুকায়িত বাচ্চা মেয়েটার দিকে একবার দৃষ্টি যায় তার। চেহারায় কোনো অভিব্যক্তি আসে না। সে খাবারের প্লেট হাতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। মোহনা যাওয়ার সময় ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে দেখে। মনে মনে শুধায়,
“হায় আল্লাহ, শকুনের ছায়া যেন এই নিষ্পাপের গায়ে না লাগে।”
–
ফারাজ ঘরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে নিস্তব্ধ হয়ে বিছানায় ঘুমন্ত চিত্রার ওপর। এই সময়ে সে সচরাচর ঘুমায় না। ব্যতিক্রমী এ দৃশ্য দেখে ফারাজের অন্তর একটু ব্যথিত হয়। সারাদিন পরিশ্রমের পরও সে কষ্ট করে নিজ হাতে রান্না করেছে, অথচ তার বিবিজান নিশ্চিন্তে নিদ্রায় নিমগ্ন। খানিকটা খারাপ লাগলেও পরক্ষণেই একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে ফারাজ নিজেকে সামলে নেয়। এসব আবেগ দিয়ে দিন চলবে না। সে ছোটলোক নাকি?
টেবিলের উপর খাবার রেখে ধীরপায়ে এগিয়ে এসে চিত্রার পাশে বসল ফারাজ। অদৃশ্য আকর্ষণে সে নত হয়ে তাকালো স্ত্রীর প্রশান্ত মুখপানে। হঠাৎই দৃষ্টি পড়ল চিত্রার গলার কাছে। চেনা কিছু চিহ্ন লেপ্টে আছে সেখানে । ফারাজ স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল। এসব দাগ অন্য কিছু নয় তারই ভালোবাসার অনির্বচনীয় স্বাক্ষর। মৃদু হাসল সে। অতি সন্তর্পণে সে চিত্রার হাত স্পর্শ করল। যাতে ঘুমের পর্দা না কেঁপে ওঠে। ফারাজ চিত্রার হাত ছুঁয়ে আঙুলের উপর ঠোঁট রাখল গভীর আলিঙ্গনে। তারপর আলতোভাবে হাত সরিয়ে এনে গালের ওপর রাখল। মুহুর্তেই চিত্রার উষ্ণ কোমল ত্বকের স্পর্শ প্রশান্তি ছড়িয়ে দিল তার অন্তরে। তবে এক লহমায় সে অনুভব করল চিত্রার শরীর মাত্রাধিক গরম। হাতের উল্টো পিঠ চিত্রার কপালে ছুঁতেই ফারাজের বুঝতে বাকি রইল না চিত্রার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। তার মানে কি প্রিয়তমা এতক্ষণ বেহুঁশ হয়ে ছিল।
“প্রিয়তমা! এই….এই উঠো। রাগ উঠছে কিন্তু! এই চিত্রাঙ্গনা।”
ফারাজ ব্যাকুল কণ্ঠে ডাক দিল। কিন্তু কোনো সাড়া পেলো না। উদ্বেগের ছায়া গাঢ় হতে থাকল তার চোখে-মুখে। আর দেরি করা চলল না। সে দ্রুত টেবিলের উপর রাখা গ্লাস থেকে একটু পানি তুলে চিত্রার মুখে ছিটিয়ে দিল। শীতল স্পর্শে চিত্রা সামান্য নড়েচড়ে ওঠল। ঠোঁট কেঁপে ওঠল অজানা অস্ফুট স্বরে। তবু চোখ মেলল না। ফারাজ আলতো করে চিত্রার গালে হাত রেখে আবারো বলল,
“দেখি উঠো। গোসল করলে জ্বর সেরে যাবে। তোমার কষ্ট স্বামী হিসেবে আর সহ্য করতে পারলাম না বউ। জলদি মেয়ে দেখো বিয়ে করে তোমার কষ্ট কমিয়ে দিব। স্বামী হিসেবে আমি আবার সহৃদয়বান।”
ফারাজ কথা না বাড়িয়ে চিত্রাকে বাহুডোরে তুলে নিল। চিত্রার অবশ দেহ তার উষ্ণ ত্বকের সংস্পর্শে শীতল। আধখোলা চোখে চিত্রা ফিসফিস করল,
“আমি ঠিক আছি।”
কিন্তু ফারাজ কি এসব শোনার পাত্র? সে কোনো উত্তর দিল না। কোনো দৃষ্টিপাতও নয়। শুধু দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলল। ওয়াশরুমে প্রবেশ করে নিখুঁত ভঙ্গিতে চিত্রাকে ঝর্ণার নিচে দাঁড় করালো। ফারাজ ঝর্ণা ঝেড়ে একটু দূরে এসে দাঁড়ালো। মুহূর্তেই ঠান্ডা চিত্রার জল ছিটকে পড়ল , কপালে, গালে, কাঁপুনি জাগায় সারা শরীরে। ফারাজ নিঃস্পৃহ দৃষ্টিতে চিত্রার দিকে তাকালো। ঝর্ণার ধারায় সে নিজে ভিজতে চায় না। তবে চিত্রার জন্য এই শীতল স্পর্শ অপরিহার্য। জ্বরাক্রান্ত দেহের উত্তাপ নিঃশেষ হবে এই প্রবাহেই। চিত্রার সারা শরীর শিহরিত, ঠান্ডার তীব্রতায় তার ঠোঁট কাঁপছে। দৃষ্টিতে ক্লান্তির ছাপ। জলধারার আঘাতে সে ধীরে ধীরে সংবিৎ ফিরে পাচ্ছে। ফারাজ পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি যতক্ষণ না বলছি ততক্ষণ পর্যন্ত এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে। শরীরকে ভিজিয়ে জ্বরকে তাড়াও।”
চিত্রা ভিজছে। ভিজছে তার সারা শরীর,মন। তপ্ত শরীর ঠান্ডা জলে ধীরে ধীরে শীতল হচ্ছে। ফারাজ চিত্রার দিকে চাইবে না বলে মনস্থির করে। চাইলেই তার ভীষণ আদর আদর অনুভূতি জাগবে। বউটার এমনতেই এসব কারনে জ্বর হয়েছে। এখন যদি আবার সে ভুল করে কিছু বসে তবে হয়তো হাসপাতালে দৌড়াতে হবে। ফারাজ অন্যদিকে তাকায়। কিছুতেই কন্ট্রোল হারালে আজ চলবে না। হাত মুঠ হয়ে আসছে তার। অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আপনাআপনি হাত মুঠ হয়ে আসে তার। শরীরের রগগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে। সেই অনুভূতি হোক ভালোবাসার কিংবা নৃশংসতার।
“শুনছেন। একটু কাছে আসবেন।” চিত্রার দু’চোখ ভরা আকুতি।
ফারাজ মনকে নিয়ন্ত্রণ করে চোখ তুলে তাকায়। উপর থেকে নিচ অব্দি চিত্রার ভেজা শরীরের দিকে চেয়ে একটা শুষ্ক ঢোক গিলে। তার কন্ঠমণি বারংবার উপরনিচ ওঠানামা করছে। চিত্রা নিজ থেকেই ফারাজকে কাছে ডাকছে? ফারাজ কি করে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? ডাকার উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন ফারাজ তো জানে তার কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্য কি? ফারাজ নেশাভরা চোখে গম্ভীর কন্ঠে চিত্রার দিকে চেয়ে নিজের সাদা শার্টের বোতামে হাত রেখে বলল,
“ক্ষমা করবেন বিবিজান। আপনার স্বামী নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ।”
ফারাজ এগিয়ে আসে চিত্রার দিকে। চিত্রার বুঝতে বাকি রয় না ফারাজের যে মতলব সুবিধার নয়। সে এক পা পিছিয়ে যায়।
“দে..খুন এখানে না।”
“উঁহু সবখানেই।” ফারাজ বাঁকা হাসল। হেসে ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে কাছে টেনে নিলো চিত্রাকে। চিত্রা চুপ। প্রতিরোধের ইচ্ছা ছিল হয়তো এখনও আছে, তবে শরীর সেই ইচ্ছার সঙ্গে সাযুজ্য রাখতে পারছে না। জ্বরের ক্লান্তিতে তার হাত দুটো কাঁপছে, চোখ দুটো আধবোজা। ফারাজের আঙুল ধীরে ধীরে উঠে চিত্রার গ্রীবা বেয়ে অধর স্পর্শ করল। স্পর্শ নয়, এ যেন দাবী, এ যেন ভালোবাসায় বুনা অধিকার। ফারাজের ওষ্ঠের পরশ চিত্রাকে ছুঁয়ে যেতেই তার ছোট্ট শরীরটা কেঁপে উঠল। ফারাজ তা দেখে হাসল। শুধালো,
“এখনি ভয় করছে?” থেমে পুনরায় হেসে গান ধরল,
“আভি তো ইয়ে পেহলি মঞ্জিল হ্যায়
তুম তো আভি সে ঘাবরা গায়ে”
চলবে?