#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব ৫২
❝তুমি মেঘ হয়ে ভাসবে আমার আকাশে,
আমি বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে ঝরবো তোমার হৃদয়ে।❞
অভ্র থামল। থেমে একটা হাসি দিলো। অভ্র হাসলে গালে টোল পড়ে। কি যে ভীষণ রকম সুন্দর দেখায়। রুমের জানালা খোলা। দূরের সমুদ্র সৈকত দেখা যাচ্ছে। অভ্র খাটে এসে আয়েশার পাশে বসল। বসে হাত ছুঁইয়ে চোয়ালের হাত রাখল আয়েশার। গভীর কন্ঠে বলল,”আমায় কোনোদিন ছেড়ে যাবে না তো ঘরনী?”
আয়েশা হালকা হাসল, তারপর চোখ নামিয়ে মৃদু গলায় বলল,”যদি ছেড়ে যাই?”
অভ্রর কণ্ঠ কেঁপে উঠল।”মরেই যাবো।”
আয়েশা চমকে তাকাল।”এভাবে বলো না। মুখে ছোঁড়া কিছু তীর বুকে এসে লাগে।”
অভ্রকে আয়েশা বুকে আগলে নেয়। অভ্র প্রিয়সীর বক্ষ পাঁজরে নিজেকে নিবেদন করার আকুল আবেদন জানিয়ে হাতে চুমু খায়। সেবার সে তার ভালোবাসা-তার পরিবারকে হারিয়ে ছিল তবে এবার আর সেই ভুল হবে না। জানের সঙ্গে লড়াই করে যদি জান রক্ষা করতে হয় তবে না হয় সে তাই করবে। অভ্রকে আরো গভীর ভাবে কাছে টেনে নেয় আয়েশা। অভ্র আবেশে নিখোঁজ হয় ঘরনীর অন্তস্থলে।
জোছনা ঘেরা রাতের আকাশ বেয়ে নিভু চাঁদের আলো সরকার দম্পতির হিয়া ছুঁয়ে যায় অতল প্রণয়ের একমুষ্টি অনুগারে। উত্তাল মৃত্তিকায় তলিয়ে যায় দু’টো। ঘরজুড়ে খেলে যায় ভারী নিশ্বাসের প্রেমময় স্পন্দন। স্পন্দিত হৃদয়ে অতৃপ্ত কামুকার জোগারে হারিয়ে যায় আরো একটি ভালোবাসার গল্প,অপরিপক্ক মুহুর্ত।
–
মাহাদী ভ্যান নিয়ে রাতের আঁধারে মিশে যাচ্ছে। মাশে মাশে ক্রিং ক্রিং শব্দ করছে। সাধারণত এই শব্দটার সঙ্গে কারো কারো আবেগও জড়িয়ে আছে বলা চলে। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য। হুট করে দুপুর বেলা যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে তখন আইসক্রিম ওয়ালা ক্রিং ক্রিং শব্দ তুলে গ্রামের অলি-গলি ঘুরে বেড়ায়। এক বাটি চাল দিয়ে আইসক্রিম নিয়ে খাওয়া হাজারো মানুষের কাছে আজ স্মৃতি তবে মাহাদীর বিষয় আলাদা। তার রাতের আঁধারে শব্দ তুলে ভ্যান নিয়ে চলাচল সম্পর্কে যদি কেউ জানত তবে ভয় পেত ওই শব্দকে। তীব্র জড়তা কাজ করত সবার মাঝে। কারন ওই ভ্যানে স্বয়ং মানুষরুপী একটা জানোয়ার বসে আছে। যার একমাত্র বাসনা অসহায়দের জান নিয়ে পেট চালানো। মাহাদীকে যে করেই হোক মানুষ জোগাড় করতেই হবে। কিন্তু আজ কোথাও সুবিধা করতে পারছে না। বড্ড ঝামেলা বলা চলে। নতুন একটা কাজ দেওয়া হয়েছে তাকে এত ভরসা করে অথচ সে কিচ্ছু যদি না করতে পারে তবে বিষয়টা কেমন গুলিয়ে যাবে না? আকাশ আবার ডাকছে। মাহাদী বিরক্ত হয়ে ছাউনির নিচে ভ্যান রেখে দাঁড়ায়। ভ্যান থেকে গামছা বের করে মুখটা মুছে কাপরের পানি মুছতে শুরু করে। হুট করে তারাহুড়োয় কেউ একজন তার পাশে এসে দাঁড়ায়। একটা ছেলে। বয়স কতই বা হবে? ১৬-১৭? ছেলেটা সিগারেটের শেষ অংশটুকু শোষণ করে মাটিতে ফেলে পায়ে পিষে ফোনটা বের করে। ততক্ষণে বৃষ্টির বেগ বেড়েছে। হুট করে মাহাদীর মাথায় খেলে যায় ভয়ানক লোমহর্ষক পরিকল্পনা। কোনোদিন তো কোনো পুরুষ মানুষকে মারা হয় নি। আচ্ছা পুরুষ মেরে নিজেকে অন্যভাবে প্রমান করলে কেমন হয়? তবে চিন্তা অন্য কিছু নিয়ে। পুরুষ মানুষ এসব পেশায় কাজে লাগে না। তার ওপর এই ছেলে দেখছি এই বয়সে নেশা করে? কিডনি, লিভার কি আদৌও ভালো আছে? নাকি এর পেছনে সময়,শক্ত ব্যয় করা পুরোটাই অপচয় সাব্যস্ত হবে?
“আমি মাহাদী। তোমার নাম?”নির্বিকার ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল।
ছেলেটা মাহাদীর দিকে প্রানহীন প্রস্তর মূর্তির ন্যায় তাকালো। বলল, ” পৃথিবী।” ছেলেটি জবাব দিয়ে আবারও ফোনের দিকে মনোযোগ দিল। যেন তার আগ্রহ নেই দুনিয়ার অন্য কোনো কিছুর প্রতি। মাহাদীর বেশ রাগ হলো। কপট রাগমিশ্রিত চাহুনি নিক্ষেপ করল। মনে মনে হয়তো এতক্ষণে ঠিক করে নিয়েছে পৃথিবীকে কোন পদ্ধতিতে পৃথিবীর বাহিরে পাঠাবে? মাহাদী ছুরি ভ্যান থেকে চুরি বের করে প্যাকেটে ঢুকায়। ছেলেটির দিকে এগিয়ে আসার আগেই ছেলেটি হুট করে দৌড়ানো শুরু করে। মাহাদী বুঝতে পারল না কি থেকে কি হয়ে গেল? এই ছেলে কি তার ছুরি বের করা দেখে ফেলেছিল? এমন তো কখনও হয় নি?শিকার মাহাদী হাতছাড়া কখনই করতে রাজি নয়। মাহাদীর সেই ছেলের পেছন পেছন বৃষ্টিভেজা রাতে অন্ধকারের ভেতর ছুটতে শুরু করে। তবে মুহুর্তেই সামনে জঙ্গলে এসে কেমন যেন গোলকধাঁধায় পরে যায় মাহাদী। এমন রাতে এই এত বড় জঙ্গলের মাঝে কোথায় খুজবে ওই ছেলেকে সে? মাহাদীর মাথায় হাত পড়ল। এই ছেলে তার চেহেরা দেখেছে। একে বাঁচিয়ে রাখলে ঝামেলা লেগে যাবে? মাহাদী বার বার সোহানদের কথা মনে পড়ছে। তারা ভুলের শাস্তি ক্ষমা করে না। দ্বিতীয়বার সুযোগও দেয় না। যদি এই খবর তাদের কানে পৌঁছে যায়? যদি এই ছেলে থানা পর্যন্ত চলে যায়? পাগলের মতো ছন্নছাড়া হয়ে এদিক সেদিক খুঁজতে শুরু করে। সারারাত কেটে যায়। পা আর চলছে না। শরীর কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ভেজা চুপচুপে গায়ে গাছের নিজে বসে সে। আর তারপর? হুট করে জিমুনিতে ক্লান্ত দেহ অবশ হয়ে আসে আর চোখের পাতা না চাইলেও এক হয়ে যায়।
–
সোফায় চিত্রার পাশে বসে আছে ফারাজ। রোজ সটাং হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে। ব্লেজার আর প্যান্ট পড়া সে। বিজন্যাস ওমেন লাগছে। আসলেই এই মেয়ে দেখতে মাশাল্লাহ। ফারাজ কপাল চুলকে চিত্রার দিকে তাকিয়ে পা তুলে দেয় টেবিলের ওপর। চিত্রা বিরক্ত হচ্ছে। এই লোক সোফার সঙ্গে এমন রোমান্স শুরু করেছে কেন? এই বার বসছে তো একবার উঠছে। একবার তো শুয়েই পড়ছে। চিত্রা রোজের দিকে তাকায়। তাকে বসতে বললে রোজ সঙ্গে সঙ্গে ” ক্ষমা করবেন। বস অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত বসতে পারব না।”
ফারাজ ভ্রু কুঁচকে রোজের দিকে তাকায়। রোজ তখনও সটাং হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফারাজের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। একেতো এই মেয়ে লাফ দিয়ে ইতালি থেকে এখানে চলেছে তার ওপর বস বস বলে কানের মাথা খাচ্ছে।
“এই রোজ সিট ডাউন।”
“ওকে স্যার।”
মেয়েটা আশপাশে একবার তাকালো। হয়তো কোথায় বসবে সেটাই ভাবছে।
“এখানে বসো।” ফারাজ ইশারা করতেই রোজ নির্দ্বিধায় তার কথামতো বসল।
কথায় কথায় আস্তে আস্তে চিত্রা জানতে পারল অভ্র যেমন ফারাজের বিশ্বস্ত লোক তেমনই রোজ তার আরেক বিশ্বস্ত লোক। সব জায়গায় পুরুষ মানুষের দরকার পরে না। কিছু কিছু জায়গায় মহিলাদেরও পরে। রোজের দরকার গুলো সেইসব কাজে। রোজের বিষয়ে শুনে চিত্রার খুব ভালো লাগল। এমন ম্যামসাহেব সে আগে কখনও দেখি নি। আর এই মেয়ে তো পুরো বস ভক্ত। আচ্ছা ওয়াশরুম ধরলেও কি ফারাজের থেকে অনুমতি নেয় রোজ?
“কিন্তু তোমার এখানে আসার দরকার কি ছিল ? তোমার কাছে তো আমি সব সপে দিয়ে, দায়িত্ব বুঝিয়ে এখানে এসেছিলাম?”
“বস আসলে আমি অভ্র আর আপনাকে মিস করছিলাম। না এসে থাকতে পারলাম না। আর ওইখানের কাজ শেষ করেই এসেছি। বাকি লোকজন তো আছেই। একটু ওদের কেউ তো কাজ শিখতে দিন।”
চিত্রার মাথায় এসব কাজের কথা ঢুকল না। সে চা নাস্তা বানাতে চলে গেল কিচেনে। রোজ আসায় সে খুশী। তার সঙ্গে কথা বলেও ভালো লেগেছে। কিন্তু! ফারাজ কেনো বলল না তার একটা মেয়ে অ্যাসিস্ট্যান্টও আছে? বললে কি এমন ক্ষতি হতো? চিত্রাকে ফারাজকে খেয়ে ফেলত নাকি?
ফারাজ একবার রান্না ঘরের দিকে তাকাল। তারপর হিসহিসিয়ে রোজকে বলল, “সব গুলে ডিল ওইখানে আটকা পড়ে আছে আর তুমি না জানিয়ে এখানে কেনো চলে এসেছো?তুমি মেয়ে বলে তোমায় ছেড়ে দেবো ভাবছো? আমি ফারাজ গড়তেও জানি, আবার মারতেও।”
রোজ শান্ত গলায় বলল, “বস, আপনি ভালো করেই জানেন আমি কেন এসেছি। আপনি হয়তো আপনার লক্ষ্য ভুলে গেছেন, কিন্তু আমি ভুলিনি। আপনি শিকারের সঙ্গে খেলছেন, বস। শিকারী যদি শিকারকে ভালোবাসে তা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বোকামি। খাদ্যকে ভালোবাসা যায় না। আর খেলায় মাতোয়ারা হওয়া আরও বড় ভুল।”
ফারাজ ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করল,”কবে যাবে?”
“যতদিন না আপনি আসল ফারাজ এলাহী রুপে ফিরছেন। আমি বিশ বছরে আপনাকে কখনও এত এত মিষ্টভাষী হতে দেখি নি। অনেক হয়েছে অভিনয়, এবার এই জগত থেকে নকল ফারাজ এলাহীর মুক্তির পালা। যাকে শেষ করতে এসেছেন তাকেও তো জানতে হবে ফারাজ এলাহী ডেনমার্কের নয় বরং সে হচ্ছে ইতালির সবচেয়ে বড় স…..”
আর কিছু বলার আগেই ফারাজ চটে গিয়ে গলা চেপে ধরল রোজের। দাঁত পিষে বলল, “স্যাট আপ।”
রোজের মুখে একফোঁটাও ভয় নেই। কারণ ছোটবেলা থেকে সে বসকে এই রূপেই দেখে এসেছে। নরম, সৌম্য ফারাজকে তার অচেনা লাগে। তার বস খলনায়ক, আর সেটাই সত্যি। ফারাজের জন্ম হয়েছে খলনায়ক হওয়ার জন্য। নায়কের মতো মূর্খ চরিত্র তার জন্য নয়। ফারাজ এক মুহূর্ত পর বিরক্ত হয়ে তাকে ছেড়ে দিল।
” মেইডকে বলছি তোমার থাকার ব্যবস্থা করতে। এখন সামনে থেকে যাও।”
রোজ থামল না। “আমার অভ্র কোথায়?”
ফারাজ ঠান্ডা গলায় বলল,”তোমার অভ্র? আর ইউ কিডিং মি?সে এখন বিবাহিত।”
“বস বলুন সে কোথায়?”
“গেট আউট অফ হিয়ার।”
ফারাজ রোজকে কষ্ট দিতে পারবে না। অভ্র আর রোজ তার চোখে সমান। অভ্র তার ডান হলে রোজ ফারাজের বাম হাত। খুনাখুনি, অ্যাসাইনেশন, ফাইটিং সব কিছুতেই এই মেয়ে পারফেক্ট। কিন্তু ফারাজের মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারন আছে। এখানে রোজের এইসব কথা বলা অনুচিত ছিল। যদি চিত্রা শুনে ফেলতো। এই মেয়ে এসেছে তো ফারাজের ভালো করতেই কিন্তু ভালোর সঙ্গে তো আবার চিত্রার খারাপত্ব জড়িয়ে আছে। চিত্রা চা নাস্তা নিয়ে রান্নাঘর থেকে ফিরতেই একটু অবাক হয়।
“রোজ কোথায়?”
ফারাজ শান্তভাবে বলল,”ওপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
“হায় আল্লাহ কি করেছেন? ওর কি হয়েছে?”
“রিল্যাক্স, হানি। মেইডকে বলেছি ওপরতলায় ওর থাকার ব্যবস্থা করতে। ও সেখানেই গেছে।”
“ওহ আচ্ছা আমি আরো কি না কি ভাবলাম। আচ্ছা ওর রুমে নাস্তা দিয়ে আসি।”চিত্রা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
“দরকার নেই। ওইটা টেবিলের ওপর রাখো তো।”
চিত্রার হাত থেকে ট্রে কেড়ে নিয়ে টেবিলের ওপর রেখে ফারাজ তাকে নিজের কোলের ওপর বসালো। বলল,
“কোথায় যেন ছিলাম আমরা? লেটস গো, ওয়ান মোর টাইম।”
“উঁহু ছাড়ুন তো। কি যে করছেন। দরজা খোলা। আর এখন বাড়িতে মানুষও আছে।”
“থাকুক না। “
চিত্রা লজ্জা পায়। লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ আড়াল করতেই ফারাজ চিত্রার হাত সরিয়ে ঠোঁটে একেদেয় ভালোবাসার দীর্ঘপরশ। কিন্তু মুহুর্তেই সবটা এলোমেলো যায় তীক্ষ্ণ একটা কন্ঠস্বরে।
“ও মাই খঠ। হেন্ডু বয়ের দেখি লজ্জা শরম নেহি হে। গালাত টাইমে চুমাচুমিং করিং। দিচ ইচ নট করা উচিত উইট মিকে ছাড়া। পিলিজ মোকেও চুমিং করিং হেন্ডু বয়!!!!!!”
–
ভোর চারটার কাছাকাছি। জানালার ফাঁক গলে হালকা ধূসর আলো ঘরে ঢুকছে। আয়েশা অভ্রর বুকে মাথা রেখে গুনগুন করছে। হঠাৎ বুক থেকে উঠে গিয়ে রুমের লাইট ওন করল। ঘরের মধ্যে অনেকগুলো ম্যাগাজিন আর ইংরেজি বই রাখা ছিল। আয়েশা একটা বই হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ উল্টেপাল্টে অভ্রকে বলে ” ডার্ক রোমান্স আবার কি সরকার সাহেব?”
অভ্র এক লাফে উঠে এসে বইটা তার হাত থেকে কেড়ে নিল। “এসব বই তোকে দেখতে হবে না কুদ্দুসের মা।”
“বলো না।”
অভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তাকিয়ে রইল আয়েশার চোখে। বলল,”অন্ধকারের মধ্যে কালা পিরিত করাকেই বলে ডার্ক রোমান্স।”
আয়েশা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে উঠল, “ওহ তার মানে একটু আগে আম….”
কিছু বলার আগেই অভ্র আয়েশার মুখ চেপে ধরল। বলল,”ঘরণী, পঁচা কথা মুখে আনতে নেই। এসব বলা উচিত নয়।”
“কিন্তু পঁচা কাজ করা উচিত? তাই না?”
অভ্র হেসে কাঁধ ঝাঁকাল। মিনমিনিয়ে বলে উঠল,”কাজ না করলে বাবা হবো কেমন করে?
” কিছু বললে নাকি?”
“উহুম। চলো বিছানায় চলো এখনও কত গল্প বাকি। কাল তো শালার কুত্তামার্কা জীবন শুরু। আজ একটু বাঁচতে দাও। কাল তো ওপরেই চলে যাবো ইয়ে মানে কাজে।”
অভ্র আয়েশার হাতে একটা ম্যাগাজিন ধরিয়ে দেয়। আয়েশা বিছানায় চিটপটাং হয়ে শুয়ে পড়ে। আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে সে পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকে। হুট করে এক জায়গায় এসে থেমে যায় তার আঙুল। চোখ আটকে যায় একটা চকচকে পিস্তলের ছবিতে। কৌতূহলি দৃষ্টিতে তাকায় সে। তখনই অভ্র বলে উঠে, “এটা Cabot Guns “The Jones 1911”। বর্তমান সাল ২০২২ অনুযায়ী এর দাম ২২ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। এটার একটা ইউনিক দিক হ…” অভ্রর জবানকে থামিয়ে আয়েশা বলে, “এটার প্রতিটি অংশ হ্যান্ডক্রাফটেড। বিলাসবহুল ইনগ্রেইভিং ও পার্ল হ্যান্ডেলও ব্যবহার করা হয়েছে এতে। আর এটার ভিন্টেজ লুক তো মারাত্মক।” আয়েশার চোখেমুখে মুগ্ধতা সৃষ্টি হয়। তবে অভ্র এক মুহুর্ত থমকে গিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে,”তুমি কি করে জানলে এতকিছু?”
আয়েশা থতমত খেয়ে যায়। তবে পরমুহূর্তেই হেসে জবাব দেয়,”কানা লোক! ছবির পাশেই তো এইসব বলা আছে। সেটা দেখিই বলেছি।”
আয়েশা চোখ টিপে পাল্টা প্রশ্ন ছোঁড়ে, “তবে তুমি কি করে এতসব জানলে?
অভ্র এক গাল হেসে একটা ঢোক গিলে নেয়।”আমিও তো ওই লেখা দেখেই বলেছিলাম।”
–
রোজের ঘুম আসছে না। অভ্রকে এসেই সে অনেকগুলো কল করেছে। তবে ফোন বন্ধ। হানিমুনে গেলে আবার কার ফোন খোলা থাকে? ছোট থেকেই অভ্রকে দেখছে রোজ। একসঙ্গে বড় হয়েছে অথচ দেখো বিয়ে করেছে বলেই নি। একটু কষ্ট লাগছে তবে বেশি না। আবার অনেক বেশি। কেনো লাগছে নিজেও জানে না। আপাতত রোজ এখানে যেই কাজে এসেছে তাকে সেটাই করতে হবে। আর নয় যত দ্রুত সম্ভব ফারাজকে তার লক্ষে পৌঁছাতে হবে। বসকে বসের মতোই ভালোলাগে। এইসব ভালোবাসা তার জন্য নয়। আর এমন মেয়ের সঙ্গে তো কখনই নয় যে বসের সবটা শেষ করার জন্য উঠে পড়ে নেমেছে। বসকে সব শেষ করে আগে ইতালি যেতে হবে তারপর নয় হয় প্রিয় দেশ ডেনমার্কের সফর হবে। রোজ বিছানায় শুয়ে পরে। একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে, ” খেলা তো অনেক আগেই শুরু হয়েছিল এখন সমাপ্তির পালা।”
–
আজ বেলা হয়ে গিয়েছে। মাহাদী বাড়ি ফিরে নি এখনও। চিন্তা হচ্ছে মারিয়ার। কাল ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পারে সে চার মাসের গর্ভবতী। অথচ এতদিন উপলব্ধিও করতে পারে নি। প্রথম সন্তান তো! শরীর মোটেও ভালো যাচ্ছে মারিয়ার। তবুও সে মা হবে এটার অনুভূতি মুখে প্রকাশ করার মতো নয়। সোহাগ রাত করে বাড়ি ফিরেছে। আসলে হারালে সবাই হারিয়ে যাওয়া জিনিসের মর্ম বুঝে। এতদিন জান্নাতকে সহ্য করতে পারত না কিন্তু এখন ভেতরে ভেতরে তারও হয়তো অপরাধ বোধ কাজ করছে। কিন্তু এখনও একটা বিষয় রহস্যই রয়ে গেলো। যদি জান্নাতকে সে ভালোই বাসত না তবে সেদিন রাতে চিত্রাকে ফেলে উদাও হয়ে গিয়েছিল কেন? আর হুট করে নিখোঁজ হয়ে এই নতুন মেয়েকেই বা বিয়ে করে বাড়ি এনেছে কেন? মারিয়া সোহাগকে ডাকার জন্য তার রুমে যায়। নাস্তা বানিয়েছে সে। সোহাগের পছন্দের নাস্তা। বৃষ্টির কারনে চিনা হাঁসটা বাতের ব্যথায় ভুগছিল। শেষে জবাই না করে পারে নি মারিয়া। সেটাই চুইঝাল দিয়ে ভুনা করেছে। সঙ্গে ছিটরুটি করেছে। বৃষ্টির দিন। পরিবেশ শীতল। খেত কিন্তু দারুনই লাগবে। কিন্তু সোহাগের রুমে উঁকি মেরে কেনো জানি আর ডাকতে ইচ্ছে করল না। ছেলেটা ক’দিন যাবৎ ঠিক করে ঘুমায় না। আজ ঘুমিয়েছে ঘুমাক। যতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকবে ততক্ষণ দুঃখ ভুলে থাকবে। মারিয়া শাশুড়ীর ঘরে নাস্তা দিয়ে নিজের ঘরে যাওয়ার আগ মুহুর্তে দরজায় ঠকঠক শব্দ হয়। মাথার কাপড়টা ভালো করে দিয়ে দরজা খুলতেই মাঝ বয়সী কালো মতে করে একটা লোককে দেখতে পায়। লোকটাকে দেখে মারিয়া সালাম দিয়ে জিজু করে, “কাকে চাই?”
লোকটা গলা খাঁকারি দিয়ে জবাব দেয়,”মাহাদী আছে? আমি ওর কারখানা থেকে বলতাছি। স্যারে আমারে পাঠাইছে।”
মারিয়া কিছুটা অবাক হয়ে বলে,”মাহাদী তো এখনও কারখানাতেই। ফিরে নি তো।”
লোকটা থমকে যায়।”কারখানায়?”
“হুম।”
“কিন্তু হেয় তো এক মাস দুই মাস ধইরা কামেই আসে না। বাধ্য হইয়া স্যার আমারে আজকে তার বাড়িতে পাঠাইছে।”
মারিয়ার মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে আসে,”কিহ!”
–
জানালার সামনে গালে হাত রেখে চুপটি করে বসে আছে মেয়েটা। কি বিষন্ন তার মন। বজ্র আষাঢ়ের ঘোর বরষাদিনে ভেজানো দরজায় মৃদু শব্দের সাথে মেঝেতে সন্তর্পনে পা ফেলে মেয়েটির সামনে এসে দাঁড়ালো। সেই কাছে আসা মেয়েটিকে কি মূক বিহবল করে রাখতে সক্ষম হয়েছিল? না হলেই ভালো। বজ্রর অনুভূতি মেয়েটির জন্য কেবলই শূন্য। বজ্র পার্শ্বচোখে মেয়েটির এলোচুলের একবার চাইল। আগেও ঠিক ভাবে কথা হয় নি। বড্ড ইতস্তত বোধ নিয়ে বজ্র জিজ্ঞেস করল,
“খাওয়া হয়েছে দুপুরের?”
মেয়েটি ধীরে মাথা নাড়ে,”ইচ্ছে করছে না।”
“না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। পরে ওকে আমি কি জবাব দিবো?”
মেয়েটির গলায় অভিমানের স্পর্শ,”আপনি ভালোবাসেন তাও এত সুযোগ থাকতে তাকে নিজের করে নিলেন না কেনো?”
বজ্র হালকা হাসল। মৃদু কণ্ঠে বলল, “ভাগ্যের ওপর হাত নেই কারো। তাকে আমি মুক্ত করে ভালোবেসেছি। যদি নসিবে থাকে সে,তবে আপনা-আপনি আসিবে।”
মেয়েটি চুপ করে। একটু পর প্রশ্ন করে,”সে কখনও আপনার চোখে চোখ রেখে মন পড়ে নি?”
বজ্র এবার কোনো উত্তর দেয় না। কাজের মহিলা মনসুরা খাবার দিয়ে যায় তাকে। বজ্র শান্ত গলায় বলে, “আমি কিছুদিন আসতে পারব না। তবে কোনো অসুবিধা হবে না তোমার আসা করছি। আর ফোন তো দিয়েছি৷ দরকার পড়লে কল করো।”
মেয়েটি জবাব দেয় না। আবারও নিথর দৃষ্টি মেলে জানালার ওপারের বিস্তৃত মেঘলা আকাশের দিকে। মন হয়তো বলছে ওটা আকাশ নয় তোরই প্রতিচ্ছবি।
–
মেহেদীর যখন জ্ঞান ফিরে যখন সে নিজেকে সোহানের আস্তানায় আবিষ্কার করে। বাইরে প্রকৃতি ক্ষোভে ফুঁসছে। দিগন্তজোড়া ঝড়ের মাতম, বাতাসে কাঁপছে প্রকৃতির প্রতিটি কপাট। দেশজুড়ে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস ইতোমধ্যেই হাওর আর নদীবেষ্টিত অঞ্চলগুলোকে নাজুক করে তুলেছে।
এত প্রতিকূলতার মধ্যে পুরনো ঘাটের নির্জন জলে নৌকা ভিড়িয়ে স্থবির হয়ে বসে আছে সোহান ও তার সঙ্গীরা। বাতাসে ভেসে আসে চাকাতির ধার করার কর্কশ শব্দ। সেই শব্দ মাহাদীর অচেতন অনুভূতিকে বিদীর্ণ করে জাগিয়ে তোলে। অস্ফুট দৃষ্টিতে চোখ মেলে ধরা বাস্তবতার নির্মমতা উপলব্ধি করে সে। তার সমগ্র দেহ রক্তজলে নিমজ্জিত। নোনা ঘামে মিশে থাকা পঁচা রক্তের তীব্র গন্ধে বমনেচ্ছা চেপে রাখা কঠিন হয়ে ওঠেছে।
মাহাদী দৃষ্টিকে কেন্দ্রীভূত করে লাশটির দিকে। কোথায় যেন অদ্ভুত এক চেনাচেনা অনুভব। মুহূর্তেই তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে ওঠে। একেবারে কোঠর ছেড়ে ছিটকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। পৃথিবী?পৃথিবীর লাশ না? কিন্তু সে মরলে কেমন করে? মাহাদী আঁটকে উঠে এবার ছিটকে দূরে সরে যায়। এই গন্ধে আর টিকতে পারছে না সে। আচমকা সোহানের গলার স্বর ভেসে আসে। “খবর কি মাহাদী?” সোহানের পাশে আরো দু’জন মানুষ বসে আছে। তাদেরকে এর আগে কখনও দেখি নি মাহাদী। সোহান সাদা পাঞ্জাবি, সাদা লুঙ্গি পড়েছে। লুঙ্গি উঠিয়ে রেখেছে হাঁটু অব্দি।
“ভা…ই আমি এখানে কিভাবে? কোনো ভুল হয়েছে কি?”
সোহান একটা মুচকি হাসি দেয়। হঠাৎ গলা চড়িয়ে সিফাতকে নির্দেশ দেয়, “সবার জন্য সরওয়ালা মালাই চা আন জলদি। ইশকে একটা বিশেষ চা খামু।” সোহান থেমে মাহাদীর দিকে তাকিয়ে বলে, “গায়ে তোর দুই ফোঁটা রক্ত ঢাইলা দিলে স্বাদ কেমন হইব রে?”
মাহাদীর মুখ শুকিয়ে আসে। গলা কাঁপে, চোখ ছলছল করে উঠে,”ভাই আমার দোষ কি বলেন দয়া কইরা।”
সোহান এবার সামনে একটু এগিয়ে আসে।”যারে মারতে পারবি না তারে মারার চেষ্টা করোস কেন? কইছিলাম না একটা ভুল হইলে মাশুল তোর বাড়ি মানুষ পর্যন্ত পৌঁছাইয়া যাইব? মরার ভয় হারাইছোত মানুষ মারতে মারতে?ভালা।”
মাহাদী আন্দাজ করতে পারে পৃথিবীকে হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল নিশ্চয়ই সেই কোনো ঝামেলা লাগিয়েছে। আচ্ছা থানায় গিয়েছিল নাকি এই ছেলে? আর ওর লাশ এখানেই বা কি করছে? ওকে মারল কারা?
সোহান চাকাতিটা হাতে তুলে নিল। চাপাতিতে হাত ছোঁয়াতেই গ্যাচাং করে কেটে গেল আঙ্গুলের বুকের পাশের পাতলা চামড়াটা। সেখান থেকে তাজা রক্ত বেড়িয়ে এলো। সে কিছুক্ষণ সেই রক্তের দিকে তাকিয়ে থাকে অসুস্থ রকমের মুগ্ধতায়। তারপর সেই রক্তাক্ত আঙুল মুখে পুরে নেয়। চোখ বুজে স্বাদ চাখে কোনো নিষিদ্ধ তৃপ্তির। শেষে আঙুলটা টেনে বের করে থুথুর সঙ্গে ছুড়ে ফেলে রক্ত। রিফাতকে বলে,
“সিফাতরে পুরুষের রক্তে স্বাদ নাই রে। মহিলা মানুষের রক্তের স্বাদ চাই আমার। মাহাদীর বউটাকে নিয়া আয় তো। আমার তো এখনও চা খাওয়া বাকি।”
–
ফারাজকে জরুরী কাজে বাহিরে যেতে হয়েছে। রোজও তার সঙ্গেই গিয়েছে। অভ্রটাও আজকে চলে আসবে। সেও সরাসরি ফারাজের কাছেই যাবে। ফারাজকে ছাড়া চিত্রার একটু ভালো লাগে না। কলেজ শেষে আজকে আর ফারাজ আসবে না ভাবলেও খারাপ লাগছে। চিত্রা সিড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে নিচে নামে। ফারাজ না আসলেও বাড়ির গাড়ি পাঠাবে। কয়েকটা তাগড়া গন্ডারের মতো লোক আসবে । ম্যাম ম্যাম বলে সালাম দিতে দিতে মাথা খারাপ করে দিবে। ফারাজ আসলে সবসময় সে ড্রাইভিং করে। চিত্রাতো ফ্রন্ট সিটে জানালার সঙ্গে হেলান দিয়ে বসে থাকে। পা দুটো ফারাজের উরুর ওপর দিয়ে। লোকটা এক হাতে ড্রাইভিং করে অন্যহাতে কি সুন্দর করে হাত বুলিয়ে দেয় পায়ে। পা ধরে বসে থাকে। আজ লোকটা নেই। নিচে নেমে চিত্রা অবাক হয়। সাদা গাড়িটার সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শ্যামবর্নের বজ্র কায়সার। পরনে ফরমাল শার্ট-প্যান্ট। চকচক করছে তার চেহারা। ডাক্তার সাহেব বলে কথা। চুংইগাম চিবচ্ছিল বজ্র। চিত্রা আসতেই সানগ্লাসটা খুলে শার্টের সঙ্গে লাগিয়ে চিত্রার থেকে ব্যাগটা নিয়ে ব্যাক সিটে রেখে বলে,
“আসসালামু ওয়ালাইকুম ভাবী সাহেবা। সামনের সিটে বসবেন কিন্তু। “
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। ফারাজ পাঠিয়েছে?”
” সে না পাঠালে আমার আর সৌভাগ্য কোথায় ভাবীকে রিসিভ করার?”
চিত্রা হাসল। বলল,”বাসায় যাবো না। একটু নদীরঘাটে নিয়ে যান না।”
“কত্ত কষ্টে বৃষ্টি থেমেছে। তাও ভালো আমাদের এখানে তেমন বৃষ্টি নেই। কিন্তু নদীর ঘাটে গিয়ে যদি দেখি বৃষ্টি পড়ছে?”
“পড়লে না হয় ভিজবেন?”
“সত্যি ভিজতে বলছেন তো ভাবী?”
” না থাক বৃষ্টির জলে যদি কারো এলার্জি থাকে,ঠান্ডার সমস্যা থাকে তখন তো দায়ভার আমার ওপর পড়বে।”
বজ্র স্থিত হাসল। চিত্রা পুনরায় বলল, “একটা বয়স পর্যন্ত এই সমস্যা আমার ছিল। পরে ঠিক হয়ে গিয়েছে।”
“আমার বংশের তো সবারই এই সমস্যা ঠিক হয়ে গিয়েছে খালি আমার বেলায় উল্টো।” বলে বজ্র চিত্রাকে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। চিত্রা বসতেই বজ্র গাড়িতে এসে বসে। কিছুদূর যেতেই পুনরায় বৃষ্টি শুরু হয়। এই ফারাজকে ধরে এখন কেলাতে মন চাইছে চিত্রার। এমন ঝড়বৃষ্টির দিনেও সকালে ধরেবেধে কলেজ পাঠিয়েছে। বলে কিনা কলেজে না গেলে পড়ালেখায় মন দিতে পারবে না। ইশ ব্যাটা বেশি জানে। বলেই আপনাআপনি মুখ ভেংচি কাটল চিত্রা। এখন কি আর করার জলদি বাসায় যেতে হবে।
“কোনো শর্টখাট নেই? যা দিয়ে জলদি বাড়ি যেতে পারব?”
“একটা আছে। সবে ওই রাস্তায় একটা সরাইখানা পড়ে। নোংরা জায়গা।”
“আমরা কি আর গাড়ি থেকে নামব নাকি? জলদি বাড়ি চলুন। এই আবহাওয়ায় আর এক মুহুর্ত এখানে থাকতে চাই না বাবা।”
বজ্র রাজি হয়ে সেই রাস্তাতেই গাড়ি ঢুকিয়ে দেয়। চিত্রা হা করে রাস্তার পাশের বড় বড় বাড়িগুলো দৃষ্টি উজার করে দেখে। এসব সুন্দর বাড়ির পেছনেও যে নোংরা গল্প লুকিয়ে তা কে জানত? কিশোরগঞ্জে অনেক পর্যটক আসে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কি নোংরা ব্যবসা চালু করেছে এরা। হুট করে চিত্রা বজ্রকে গাড়ি থামাতে বলে।
“কি হয়েছে?”
চিত্রা দূরের একটা সরাইখানার দিকে বজ্রকে ইশারা করে। বজ্র দৃষ্টিপথ অনুসরণ করতেই থমকে যায়। চোখ বিস্ফারিত হয়ে ওঠে তার। চিত্রাও স্তব্ধ। দুজনেই কিছু সময়ের জন্য বুলি হারিয়ে ফেলে।
সরাইখানার সামনে একটা লোক দাঁড়িয়ে। তার পাশে যেই লোকটা ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে তাকেও চিনে বজ্র-চিত্রা।
“এটা রাজন ভাই না?”
বজ্র শীতল গলায় বলে,”তাই তো দেখতে পাচ্ছি।”
চিত্রা একটু সামনে ঝুঁকে বলে, “কিন্তু সে এমন নোংরা জায়গায় কি করছে?নেমে গিয়ে দেখব?”
বজ্র হাত বাড়িয়ে তাকে থামিয়ে দেয়।”আরে না ভাবী।”
চিত্রা কিছু বলার আগেই রাজন এবং আকবর সরাইখানার ভেতরে ঢুকে যায়। চিত্রা এক মুহুর্ত নিঃশব্দ থেকে বলে, “তাই তো বলি নদী ভাবীকে অবহেলা করার মূখ্য কারন কি?”
চলবে?
(বানান ঠিক করতে পারি নি। ভুল-ক্রুটি ক্ষমা করবেন।)